আমাদের দেশে বাচ্চাদের কৃমির সংক্রমণ খুব কমন একটি বিষয়। কৃমি শুধু বাসার ছোটদের নয়, বড়দেরও হতে পারে। অনেকের ধারনা চিনি বা গুড় খেলে কৃমি হয়, এ ধারণা ভুল। কৃমির সংক্রমণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো অপরিচ্ছন্ন থাকা। ছোট বাচ্চাদের বেশি সংক্রমণ করে সুতাকৃমি। এছাড়াও বক্র কৃমি, গোল কৃমি, হুইপ ওয়ার্ম আমাদের দেশে কমন। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এর কাছ থেকে বিস্তারিত জানবো আজ। চলুন আগে জেনে নেই কী কী উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
লক্ষণ
সাধারণত কৃমির সংক্রমণের কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না। তবে সংক্রমণ বেশি হলে যেসব উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়, সেগুলো হলো-
- ওজন কমে যাওয়া
- পেটে ব্যথা হওয়া
- বমি বমি ভাব হওয়া
- খিটখিটে আচরণ বেড়ে যাওয়া
- মলদ্বারে চুলকানি হওয়া
- চুলকানির কারণে ঘুম কমে যাওয়া
- স্টুলের সাথে রক্ত যাওয়া
- মেয়ে বাচ্চাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং প্রস্রাবের সময় ব্যথা হওয়া
- অন্ত্রে ক্ষত সৃষ্টি করে রক্তপাত করা এবং রক্তশূন্যতা দেখা দেয়া
- খাবারের রুচি চলে যাওয়া, খাওয়া কমে যাওয়া
- খাবার হজম না হওয়াতে ডায়রিয়া হওয়া
- খাওয়ার জিনিস নয় সেসব খেতে চাওয়ার আগ্রহ (যেমন মাটি)
বাচ্চাদের কৃমির সংক্রমণ ও জটিলতা
১) অন্ত্রে কৃমি বেড়ে যেয়ে জমাট বেধে বাওয়াল অবস্ট্রাকশন বা টয়লেটের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়া।
২) কৃমি পিত্তথলিতে বা লিভারে চলে যেয়ে ইনফেকশন বা প্রদাহ সৃষ্টি করা।
বেশি পরিমাণে সংক্রমণ হলে এই ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, কৃমির সংক্রমণ যদি কম থাকে তবে এসব লক্ষণ নাও থাকতে পারে।
কীভাবে বাচ্চা কৃমিতে আক্রান্ত হতে পারে?
দূষিত মাটি, পানি থেকে মানুষ কৃমিতে আক্রান্ত হয় বেশি। বাজার থেকে আনা শাক-সবজি, মাছ, মাংস ঠিকভাবে না ধুয়ে খেলে বা অর্ধ সিদ্ধ খাবার খেলে কৃমির সংক্রমণ হতে পার। সাধারণত মাটি বা পানি থেকে কৃমির ডিম বা লার্ভা বাচ্চা বা বড় মানুষের হাত বা পায়ে লেগে যায়। কিছু সময় এসব লার্ভা হাত থেকে মুখের মাধ্যমে অন্ত্র চলে যায়। কিছু ক্ষেত্রে এসব লার্ভা স্কিনভেদ করে শরীরে প্রবেশ করে।
সংক্রমণ রোধে কী ব্যবস্থা নিবেন?
- নখ বড় রাখা যাবে না
- মাটিতে খেলা পরিহার করুন
- বাসার গৃহপরিচারিকার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন
- ২-৩ দিন পর পর জীবানুনাশক দিয়ে বাসার ফ্লোর পরিষ্কার করা উচিত
- শিশুকে খালি পায়ে না রাখা ভালো
- শিশু যেন ময়লা অবর্জনা হাত না দেয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন
- খাবার আগে এবং টয়লেটের পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন
- পানি ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে ব্যবহার করুন
- ডা: দেখিয়ে নিয়মমতো মেডিসিন খাওয়াতে হবে
- কোন বয়স থেকে, কত মাস পর পর মেডিসিন খাওয়াতে হবে, সেটা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এর কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন
কিছু সতর্কতা ও আমাদের করণীয়
যেহেতু কৃমির সংক্রমণের অন্যতম কারণ হলো অপরিচ্ছন্ন থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা; তাই সেদিকে খেয়াল রাখুন। আগেই জানিয়েছি, কৃমির ডিম ও লার্ভা মাটি থেকে আমাদের হাতে যেতে পারে, পরে সেটি মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। টয়লেট ব্যবহারের পর এবং খাওয়ার আগে শিশুর হাত সাবান দিয়ে ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। এই বিষয়গুলো মেনে চললেই সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়। কিছুক্ষেত্রে কৃমি পায়ের পাতায় লেগে যায়, তাই শিশুকে নোংরা মাটিতে খালি পায়ে হাঁটতে না দেওয়াই উচিত। কৃমি একজনের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে ছড়ায়, তাই পরিবারের সকলে একসাথে কৃমির মেডিসিন খাওয়া উচিত।
সেই সাথে, শিশুর খাবার প্রস্তুতকারী ও পরিচর্যাকারীর পরিচ্ছন্নতা জরুরি। আজ তাহলে এই পর্যন্তই। আবারও চলে আসবো নতুন কোনো টপিক নিয়ে। ভালো থাকবেন।
লিখেছেন- ডা: তাজরিনা রহমান জেনি, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্রগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ
ছবি- সাটারস্টক