রাতের খাবারের পর মিষ্টিমুখ আর দুপুরের খাবারের পর ভাতঘুম- এই দু’টি জিনিস ছাড়া বাঙ্গালির দিন যেন অপূর্ণ। আমাদের সবার মধ্যেই কমবেশি মিষ্টি/চিনি খাওয়ার প্রবণতা আছে। আমরা চাইলেও মিষ্টি খাবার খাওয়া পুরোপুরি বাদ দিতে পারি না। কিন্তু খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত চিনি এর ব্যবহার শরীরের যে ক্ষতি করে তা সবার জানা থাকলেও এর ফলে স্কিনেরও যে ক্ষতি হচ্ছে তা অনেকেরই অজানা। আজকের লেখায় আমি আপনাদের জানাবো এই চিনি গ্রহণে আমাদের স্কিন কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সুগার শরীরে কেন প্রয়োজন?
এটি হচ্ছে একধরনের কার্বোহাইড্রেট যা আমাদের শরীরে শক্তি জোগায়। এটি কার্বোহাইড্রেট এর একটি সিম্পল ফর্ম। সবচেয়ে কমন একটি টাইপ হচ্ছে সুক্রোজ যা তৈরি হয় গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ মলিকিউলস দিয়ে। ন্যাচারালি এই চিনি আমরা বিভিন্ন খাদ্যের মধ্যে দিয়ে পেয়ে থাকি যেমন, ফলমূল, শাক-সবজি এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার। এছাড়াও বিভিন্ন প্রসেসড ফুড ও বেভারেজ যেমন, সোডা, ক্যান্ডি, কেক, কুকিজে ব্যবহার করা হয় এর স্বাদ বাড়ানোর জন্য। আবার টেক্সচার, কালার ও টেস্ট এর ভিত্তিতে চিনির ধরন ভিন্ন হয়। সাদা চিনি, লাল চিনি, পাউডারড সুগার, কর্ণ সিরাপ এই কয়েক ধরনের চিনি বাজারে পাওয়া যায়। ধরন যাইহোক না কেন এদের কাজ একই-খাবারে মিষ্টতা ও ক্যালোরি প্রদান করা।
চিনি গ্রহণে স্বাস্থ্যের কী ঝুঁকি হতে পারে?
চিনি ব্যবহারের ফলে আমাদের শরীরে কী ক্ষতি হতে পারে তা এতদিনে আমরা সবাই কমবেশি জেনে গিয়েছি। তারপরও আমি আবার মনে করিয়ে দিতে চাই যে অতিরিক্ত চিনি গ্রহণে শরীরে ওয়েট গেইন, ওবেসিটি, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ডেন্টাল প্রবলেমসহ আরো মারাত্মক রোগব্যাধি হয়ে থাকে। আমাদের সবার উচিত পরিমাণ মতো চিনি গ্রহণ করা। ন্যাচারাল যেসব খাদ্যে চিনি আছে তা গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে শর্করার জোগান দেয়া।
খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত চিনি স্কিনের ক্ষতিতে কী প্রভাব ফেলে?
অতিরিক্ত চিনি গ্রহণে আমাদের শরীরে কী ক্ষতি হয় তা অনেকের জানা থাকলেও এর ফলে আমাদের স্কিনে কী ক্ষতি হয় তা আমাদের অনেকের কাছে এখনো অজানা। যে ধরনের ক্ষতিগুলো হতে পারে তা নিয়েই এখন আলোচনা করছি।
১) বয়সের আগে স্কিনে রিংকেলস পড়ে যাওয়া
আমাদের স্কিনে কোলাজেন ও ইলাস্টিন থাকে যা আমাদের স্কিনকে করে নরম ও কোমল। অতিরিক্ত চিনি এই কোলাজেনের সাথে ক্রস-লিঙ্কিং করে স্কিনকে করে শুষ্ক ও অমসৃণ। চিনির সাথে কোলাজেনের এই ক্রস-লিঙ্কিংকে বলা হয় গ্লাইকেশন। এর ফলেই স্কিনে দেখা দেয় রিংকেলস বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস।
২) স্কিনে একনের সমস্যা বেড়ে যাওয়া
অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফলে আমাদের স্কিনে সিবাম প্রোডাকশন বেড়ে যায়। সিবামের প্রোডাকশন বেশি হলেই তা আমাদের একনেকে বাড়ানোর পিছনে সাহায্য করে। এজন্যই একনের পিছনে বিভিন্ন রকমের চিনি জাতীয় স্ন্যাক্স, সোডা, প্রসেসড কার্বোহাইড্রেট দায়ী থাকে।
৩) স্কিনে এলার্জির সমস্যা বেড়ে যাওয়া
কারো স্কিনে যদি এলার্জির সমস্যা থাকে তাহলে একে আরো বেশি ত্বরান্বিত করে শরীরে থাকা অতিরিক্ত চিনি। এছাড়াও একজিমা, রোজেশিয়া, সোরিয়াসিস এর মতো সিরিয়াস স্কিন প্রবলেমকে বাড়িয়ে তোলে এই অতিরিক্ত চিনি।
৪) নেক ও চিন এরিয়া লুজ হয়ে যাওয়া
আমাদের অনেকেরই নেক ও চিন এরিয়া ঝুলে যেতে দেখা যায়। অতিরিক্ত চিনি গ্রহণে আপনার স্কিন লুজ হয়ে যায়। যার কারণে স্কিন ঝুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
৫) স্কিনে হাইপার-পিগমেন্টেশন হওয়া
স্কিনের হাইপার পিগমেন্টেশনও অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফল। শরীরে থাকা অতিরিক্ত চিনি বাড়িয়ে তোলে স্কিনের হাইপার পিগমেন্টেশন।
চিনি/মিষ্টি যেকোনো খাবারকে টেস্টি করে তুললেও অতিরিক্ত চিনি খাওয়া কখনোই শরীরের জন্য ভালো না। শরীরের ক্ষতির পাশাপাশি এতক্ষণ আমরা জানলাম অতিরিক্ত চিনি আমাদের স্কিনে কী ক্ষতি করে। খেয়াল করলে দেখবেন স্কিনের এই সমস্যাগুলো প্রায়ই আমাদের হয়ে থাকে। প্রোপার স্কিনকেয়ার করেও আমরা এর সমাধান অনেক সময় পাই না। কেননা এসব সমস্যার কারণ হিসেবে রয়েছে খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত চিনি যা আমরা নিজেদের অজান্তেই গ্রহণ করছি। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে উপকার থেকে অপকারটাই বেশি হচ্ছে। তাই নিয়মিত ব্যালেন্স ডায়েট করুন,সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। অতিরিক্ত চিনি খাওয়া বাদ দিয়ে শরীর ও স্কিনকে সুস্থ রাখুন।
ছবিঃ সাটার স্টক, সাজগোজ।