অনেকদিন ধরেই সিরাম কেনার কথা ভাবছেন। কিন্তু কোন সিরামটি আপনার জন্য ভালো সেটা বুঝতে পারছেন না? নাকি মধ্যবিত্ত জীবনে সব খরচের পরে আবার স্কিনকেয়ারের একটা আইটেম বাড়াবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তিত? স্কিন অনেক বেশি সেনসিটিভ, কোনো কিছুই তো মুখে স্যুট করে না; সিরাম কিনে আবার বিপদে পড়বো না তো? এরকম চিন্তায় কি আপনিও আছেন? তাহলে আগামী কয়েকটা মিনিট একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন প্রবলেম টার্গেট করে এবং ত্বকের ধরন বুঝে কীভাবে সিরাম সিলেক্ট করবেন সে সম্পর্কে। সেই সাথে জানা হয়ে যাবে কীভাবে সিরাম অ্যাপ্লাই করে আপনার স্কিনের জন্য সর্বোচ্চ বেনিফিট পাবেন সে বিষয়েও।
ফেইস সিরাম কী?
সবকিছুর আগে চলুন জেনে নিই সিরাম আসলে কী? আমাদের উপমহাদেশের বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিনে আমরা মোটামুটি ফেইস ওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার আর সানস্ক্রিন নিয়েই বেশি কথা বলি। তবে যত দিন যাচ্ছে, পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়াসহ হাজারটা কারণে আমাদের স্কিন প্রবলেমও বাড়ছে। তাই এখন শুধু আর বেসিক স্কিনকেয়ার আমাদের ত্বককে কোমল, মোলায়েম আর তারুণ্যদীপ্ত রাখতে যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন বাড়তি যত্নের।
ফেইস সিরাম মূলত এমন একটি ফর্মুলেশন যেখানে একটি অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট থাকে। অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট আমাদের ত্বকে কোনো ব্যারিয়ার ছাড়াই প্রবেশ করে এবং নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করতে পারে। যেমন- একনে, পিগমেন্টেশন, ডিহাইড্রেশন ইত্যাদি। সিরাম ময়েশ্চারাইজারের চেয়ে ঘনত্বে কিছুটা হালকা ও তরল হয়ে থাকে। তাই সাধারণত স্কিনকেয়ারের স্টেপস হিসেবে ময়েশ্চারাইজারের আগেই আমরা সিরাম অন্তর্ভুক্ত করি। আগেই বলেছিলাম সিরামে অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট থাকে। সেগুলো হচ্ছে-
- নিয়াসিনামাইড
- স্যালিসাইলিক অ্যাসিড
- অ্যাজিলিক অ্যাসিড
- অ্যাসকরবিক অ্যাসিড
- হায়ালুরোনিক অ্যাসিড
- আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (AHA)
- বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (BHA)
- রেটিনল
সিরামে কী কী অ্যাকটিভ উপাদান থাকে সেটা তো জানা হলো। কিন্তু কখন থেকে সিরাম ব্যবহার করা উচিত? সাধারণত আমাদের ত্বক তার স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য হারাতে শুরু করে ত্রিশের কোঠায় যেয়ে, তাই সাধারণত ডার্মাটোলজিস্টরা এই সময়ে সিরাম ব্যবহার করতে বলেন। তবে আপনার স্কিনের প্রয়োজন অনুযায়ী চাইলে ২০ বছর বয়সের পর থেকেও সিরাম ব্যবহার শুরু করা যায়।
কী কী ধরনের ফেইস সিরাম আছে?
সিরামের আদর্শপাঠ তো জানা হলো, এবার চলুন জানা যাক বাজারে এখন কী কী ধরনের সিরাম আছে। মোটামুটি ২০০ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকার সিরাম এখন বাজারে পাওয়া যায়। আর ই-কমার্স সাইটগুলোর বদৌলতে এখন অথেনটিক সিরাম পাওয়াটাও বেশ সহজ। তবে সবার আগে জানতে হবে কোন সমস্যার জন্য কোন সিরাম ব্যবহার করতে হবে। চলুন সেই ব্যাপারেই কিছুটা আলোকপাত করা যাক-
১) ব্রাইটেনিং সিরাম
এই ধরনের সিরামে মূলত হাইপারপিগমেন্টেশন এবং ত্বকের ডিসকালারেশন রোধ করার উপাদান থাকে। অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হিসেবে এগুলোতে উপস্থিত থাকে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড বা ভিটামিন সি এবং নিয়াসিনামাইড। অ্যাসকরবিক অ্যাসিড আমাদের ত্বকের নিচের লেয়ারের মেলানিন প্রোডাকশন কমানোর যে ফ্যাক্টরগুলো সেগুলোকে স্টিমুলেট করে। সাথে তার সঙ্গী নিয়াসিনামাইড আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ডার্ক স্পটকে হালকা করতে সাহায্য করে।
২) অ্যান্টি-এজিং সিরাম
নাম দেখে অবশ্যই বুঝতে পারছেন, এই সিরাম আমাদের ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার জন্য কাজ করে। ফাইন লাইনস ও রিংকেলস প্রতিরোধ করতে এই ধরনের সিরাম ব্যবহার করা হয়। অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হিসেবে এই ধরনের সিরামে থাকে রেটিনল বা ভিটামিন এ এবং সাথে নিয়াসিনামাইড বা ভিটামিন বি৩। ত্রিশের কোঠায় আমাদের ত্বকের কোষগুলোর টার্নওভার বা নতুন কোষ তৈরি হওয়ার মাত্রা কমে যায়, রেটিনল বা ভিটামিন এ আমাদের ত্বকের কোষগুলোর টার্ন-ওভার রেটকে বাড়িয়ে দেয় এবং এর ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ ধীরে ধীরে পড়ে।
৩) হাইড্রেটিং সিরাম
হাইড্রেটিং সিরাম মূলত আমাদের ত্বকের ময়েশ্চারকে ধরে রাখতে আরো বেশি করে সাহায্য করে। এর অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হলো হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, যা কিনা তার নিজের ওজনের ১০০০ গুণ বেশি পানি ধরে রাখার ক্ষমতাসম্পন্ন। তাই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড অতুলনীয়!
প্রবলেম টার্গেট করে ত্বকের জন্য সেরা সিরাম বাছাই
অনেক রকম সিরাম সম্পর্কে তো জানা গেলো, এবার চলুন জেনে নিই কোন স্কিন টাইপে কোন সিরাম ভালো হবে।
ড্রাই স্কিন
ড্রাই স্কিনের জন্য ব্রেক আউটস একটি বড় সমস্যা। এই ধরনের স্কিনের জন্য সেরা অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো হলো আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিড।
সেনসিটিভ স্কিন
সেনসিটিভ স্কিনে অনেক ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহারে লালচে ভাব, শুষ্কতা, র্যাশ এমনকি অ্যালার্জিও হতে পারে। এই ধরনের ত্বকের জন্য ভিটামিন এ, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, সোডিয়াম হায়ালুরোনেট এই অ্যাকটিভ উপাদানগুলো অনেক বেশি কার্যকরী। ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিবেন।
অয়েলি স্কিন
যাদের স্কিন অয়েলি তারা মূলত একনে, পিম্পল এই ধরনের সমস্যাগুলো বেশি ফেইস করেন। তাই এই ধরনের স্কিনের জন্য বেস্ট অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হলো নিয়াসিনামাইড, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি আর হায়ালুরোনিক অ্যাসিড। তাই যে ব্র্যান্ডের সিরামই ত্বকে লাগান না কেনো এই উপাদানগুলো তাতে আছে কিনা একটু চেক করে নিবেন!
নানা ধরনের স্কিন প্রবলেমের জন্য সিরাম হতে পারে একটি রিজনেবল ও হ্যাসল-ফ্রি সমাধান। তবে ত্বকের ধরন বুঝে এবং সমস্যা অনুযায়ী সিরাম নির্বাচন করাটাও বেশ কৌশলের কাজ। তাই একটু সময় নিয়ে নিজের ত্বক পর্যবেক্ষণ করে কোন সমস্যার সমাধান চান, সেটিকে আরো একটু স্পেসিফাই করে খুঁজে নিন আপনার জন্য কোন সিরামটি উপযুক্ত। একইসাথে যদি কোনো ধরনের র্যাশ বা স্কিন প্রবলেম দেখতে পান তাহলে সাথে সাথে ব্যবহার করা বন্ধ করে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন, হতে পারে কোনো উপাদানে আপনার অ্যালার্জি থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে।
এতক্ষণ তো আমরা জানলাম, প্রবলেম টার্গেট করে ত্বকের জন্য কীভাবে বেস্ট সিরাম সিলেকশন করবেন তা নিয়ে। এখন নিশ্চয়ই এ নিয়ে আর কনফিউশন থাকবে না। অথেনটিক স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন সাজগোজে। সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ