চুলের যত্নে আমাদের এফোর্টের যেন কোনো কমতি নেই! চুল হেলদি ও শাইনি রাখতে আমরা সবাই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, হেয়ার মাস্ক ও সিরাম ইউজ করি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, কোনো একটি হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট ইউজ করলে তা চুলে স্যুট তো করে না, উল্টো সেই প্রোডাক্টের কারণে হেয়ার ড্যামেজ আরো বেড়ে যায়। জানেন কি, কেন এমনটা হয়? হেয়ার টাইপ না বুঝে প্রোডাক্ট ইউজ করার কারণে! ঘরে বসে নিজের হেয়ার টাইপ আইডেন্টিফাই করবো কীভাবে, অনেকেই এই প্রশ্নটি করেন।
সত্যি বলতে আমরা সবাই নিজেদের স্কিন টাইপ সম্পর্কে জানলেও হেয়ার টাইপ নিয়ে বেশিরভাগেরই তেমন নলেজ থাকে না। এর ফলে ভুল হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট ইউজ করার কারণে চুল পড়া ও চুল রাফ হয়ে যাওয়ার মতো প্রবলেমগুলো দেখা দিচ্ছে। আজকের ফিচারে আপনাদের জানাবো বিভিন্ন হেয়ার টাইপ সম্পর্কে।
ঘরে বসে নিজের হেয়ার টাইপ বুঝবেন কীভাবে?
আমাদের চুলের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলোর উপর ভিত্তি করে চুলের ধরন বোঝা যায়। যেমন: হেয়ার ডেনসিটি, হেয়ার পোরোসিটি, হেয়ার ডায়ামিটার, কার্ল প্যাটার্ন, হেয়ার গ্রিজিনেস ইত্যাদি। চলুন এবার এই বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
১) হেয়ার ডেনসিটি
হেয়ার ডেনসিটি বলতে আমাদের স্ক্যাল্পে কী পরিমাণে চুল আছে, তা বোঝানো হয়৷ অর্থাৎ স্ক্যাল্পে থাকা ইন্ডিভিজ্যুয়াল হেয়ার স্ট্র্যান্ড মিলিয়েই হেয়ার ডেনসিটি। আপনার হেয়ার ডেনসিটি কতটুকু তা বোঝার জন্য একটি বড় সেকশনে চুল ভাগ করে একপাশে সরিয়ে ফেলুন৷
- এখন যদি ক্লিয়ারলি নিজের স্ক্যাল্প দেখতে পান, তাহলে আপনার হেয়ার ডেনসিটি থিন
- যদি হালকাভাবে স্ক্যাল্প দেখতে পান, তাহলে আপনার হেয়ার ডেনসিটি মিডিয়াম
- একেবারেই স্ক্যাল্প দেখা না গেলে আপনার হেয়ার ডেনসিটি থিক
২) হেয়ার পোরোসিটি
হেয়ার পোরোসিটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যা চুলের ধরন বুঝতে সাহায্য করে। হেয়ার পোরোসিটি বলতে আমাদের চুলের ময়েশ্চার অ্যাবজর্ব ও একইসাথে ময়েশ্চার ধরে রাখার ক্ষমতাকে বোঝানো হয়। সাধারণত হেয়ার পোরোসিটি যত বেশি হয়, চুল তত বেশি ময়েশ্চার অ্যাবজর্ব করতে পারে এবং খুব সহজেই তা ছেড়েও দেয়। যা পরবর্তীতে হেয়ার ড্যামেজের কারণ হতে পারে। আবার যদি চুলে ময়েশ্চার অ্যাবজর্ব করার ক্ষমতা কম থাকে, অর্থাৎ লো পোরোসিটি হেয়ার হয়, সেক্ষেত্রে ফ্রিজিনেস ও রাফনেস দেখা যাওয়ার চান্স অনেক বেশি থাকে।
এখন প্রশ্ন হলো, হেয়ার পোরোসিটি বুঝবেন কীভাবে? খুব সহজ! আপনার একটি চুল এক কাপ পানিতে ছেড়ে দিন এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। এরপর কাপের দিকে খেয়াল করুন৷
- যদি চুল কাপের পানিতে একদমই ডুবে নিচের দিকে চলে যায়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার হেয়ার পোরোসিটি হাই
- আপনার চুল যদি পানির উপর ভাসতে থাকে, তাহলে আপনার হেয়ার পোরোসিটি লো
- যদি চুল একেবারে ডুবে না যায়, আবার পুরোপুরি ভেসেও না থাকে; তাহলে আপনার হেয়ার পোরোসিটি নরমাল
হেয়ার পোরোসিটি নরমাল হলে চুল যতটুকু ময়েশ্চার অ্যাবজর্ব করা প্রয়োজন ততটুকুই করে এবং এই হেয়ার টাইপে ড্যামেজের সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
৩) হেয়ার ডায়ামিটার
চুলের ধরন বোঝার জন্য হেয়ার ডায়ামিটার সম্পর্কে আইডিয়া থাকা উচিত। প্রতিটি চুল কতটুকু প্রশস্ত, সেই পরিমাপকে হেয়ার ডায়ামিটার বলা হয়। আপনার হেয়ার ডায়ামিটার কতটুকু তা বোঝার জন্য একটি হেয়ার স্ট্র্যান্ড আপনার হাতের দু’আঙুলের সাহায্যে হালকাভাবে ধরুন। তারপর খেয়াল করুন।
- যদি দুই আঙুলের মাঝে চুলের অস্তিত্ব সেভাবে অনুভব করতে না পারেন, তাহলে আপনার হেয়ার ডায়ামিটার থিন
- হালকাভাবে চুলের অস্তিত্ব যদি অনুভব করেন, তাহলে হেয়ার ডায়ামিটার মিডিয়াম
- যদি চুলের অস্তিত্ব পুরোপুরি অনুভব করেন, তাহলে আপনার হেয়ার ডায়ামিটার হচ্ছে থিক
৪) কার্ল প্যাটার্ন
কার্ল প্যাটার্ন বলতে মূলত আমাদের চুল বাইরে থেকে দেখতে কেমন সেটি বোঝানো হয়ে থাকে। স্ট্রেইট, কার্লি ও ওয়েভি – এগুলো হলো চুলের একেকটি কার্ল প্যাটার্ন। আমাদের চুল কেমন হবে তা মূলত জেনেটিক্যালি নির্ধারিত হয়। আমাদের দেশের মেয়েদের চুলে মূলত তিন ধরনের প্যাটার্ন দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো হলো-
স্ট্রেইট হেয়ার
জেনেটিক্যালি যাদের হেয়ার টাইপ স্ট্রেইট, খেয়াল করে দেখবেন তাদের চুল সাধারণত বেশ সফট ও সিল্কি হয়ে থাকে। সেই সাথে এ ধরনের চুলের শাইনও তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। তবে হেয়ার স্টাইলিং করতে অনেক সময় অসুবিধা হয়।
কার্লি হেয়ার
যাদের হেয়ার স্ট্র্যান্ড অনেকটা ইংরেজি “এস” অক্ষরের মতো, তাদের চুলকেই কার্লি বা কোঁকড়ানো চুল বলা হয়। কার্লি হেয়ারের ডেনসিটি স্ট্রেইট হেয়ারের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তবে এই ধরনের চুলে ফ্রিজিনেস ও জট লেগে যাওয়ার চান্স অনেক বেশি থাকে।
ওয়েভি হেয়ার
যদি আপনার চুল পুরোপুরি স্ট্রেইট না হয়, আবার একদম কার্লিও না হয়, সেক্ষেত্রে বুঝে নিতে হবে আপনার চুল ওয়েভি। এই ধরনের চুল উপরের দিকে স্ট্রেইট থাকলেও নিচের দিকে হালকা কার্ল বা কোঁকড়ানো ভাব লক্ষ্য করা যায়। এই ধরনের চুলে যেকোনো হেয়ার স্টাইল খুব সহজে করা যায়, দেখতেও বেশ ভালো লাগে।
৫) গ্রিজিনেস
সাধারণত গ্রিজিনেস বা অয়েলিনেস সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ডের অতিরিক্ত সেবাম প্রোডাকশনের কারণে হয়ে থাকে। যদি স্ক্যাল্পে গ্রিজিনেসের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে ড্যানড্রাফ হওয়ার পসিবিলিটি অনেক বেশি থাকে। একটি কমন প্রবলেম হচ্ছে শ্যাম্পু করার পরের দিনই মনে হয় যেন চুলে অয়েল ম্যাসাজ করা হয়েছে!
আপনার চুলের গ্রিজিনেস কতটুকু তা বোঝার একটি সিম্পল ট্রিক রয়েছে। সেটি হলো রাতে ঘুমানোর আগে চুল ওয়াশ করে নরমালি শুকিয়ে নিন। পরদিন সকালে স্ক্যাল্পে একটি টিস্যু পেপার প্রেস করুন৷ তারপর টিস্যুতে কতটুকু অয়েল অ্যাবজর্ব হয়েছে তা খেয়াল করুন।
- যদি টিস্যুতে বেশ ভালোভাবে অয়েল দেখা যায়, তাহলে আপনার স্ক্যাল্প টাইপ অয়েলি
- টিস্যুতে অয়েলের কোনো চিহ্ন যদি না থাকে, তাহলে আপনার স্ক্যাল্প টাইপ ড্রাই
- যদি দেখতে পান টিস্যুতে হালকাভাবে অয়েলের ছাপ পড়েছে, তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার স্ক্যাল্প টাইপ কম্বিনেশন
শেষ কথা
আশা করি, এখন আপনারা খুব সহজেই নিজেদের হেয়ার ও স্ক্যাল্প টাইপ আইডেন্টিফাই করতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী রাইট হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট পারচেজ করবেন। সবসময় মনে রাখবেন, হেয়ার টাইপ যেমনই হোক না কেন, বিউটি রুটিনে অথেনটিক প্রোডাক্টস ইনক্লুড করা মাস্ট।
মেকআপ, স্কিন কেয়ার ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট পারচেজ করার জন্য সাজগোজ আমার ভরসার জায়গা। চাইলে আপনারাও ভিজিট করতে পারেন সাজগোজের ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ফিজিক্যাল স্টোরে। সাজগোজের বেশ কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। এ শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যানকিং স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে ও চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টারে অবস্থিত। এই শপগুলোর পাশাপাশি চাইলে অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্ট।
লিখেছেনঃ সুমাইয়া রহমান দোলা
ছবি- সাজগোজ, langehair.com, hairstylecamp.com, shutterstock.com