সারাদিন আমরা যত কাজ করি তার প্রায় সব ধকল যায় আমাদের দুই পায়ের ওপর দিয়ে। কাজের জন্য রেগুলার বাইরে যেতে হচ্ছে। রাস্তার ধুলোবালির কথা আর না-ই বা বললাম! সব মিলিয়ে আমাদের পায়ে জমে রাজ্যের ময়লা। আর সারা দিনের স্ট্রেস তো আছেই। রোজ ঘরে ফিরে বা গোসলের সময় চটজলদি আমরা পা ধুয়ে নেই ঠিকই কিন্তু তাতে পায়ের পরিপূর্ণ যত্ন হয় না। ফলে দিন দিন পায়ের স্কিন হয়ে যায় কালচে আর নিষ্প্রাণ। তাই সপ্তাহে অন্তত একদিন নিজেই করুন পেডিকিওর। কীভাবে খুব সহজে পায়ের যত্ন নেওয়া যায় সেটাই জানাবো আজ।
পেডিকিওরের বেনিফিটস
পেডিকিওর এ যে প্রসেস ফলো করা হয় তাতে পা শুধু পরিষ্কারই হয় না, পায়ের উপর যে ধকল পড়ে সেটাও দূর হয়। তাই ক্লান্তি দূর করতে পেডিকিওর এর জুড়ি নেই। এক কথায়, স্ট্রেস রিলিফ করে আপনাকে বেশ স্বস্তিও দিবে। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে পার্লারে যেয়ে পেডিকিওর করানো কি সম্ভব? ভালো পার্লারগুলোতে এই সার্ভিস বেশ ব্যয়সাপেক্ষ, আর নিম্ন মানের পার্লারে ভুলভাল ট্রিটমেন্ট নেওয়ার চেয়ে না নেওয়াটাই ভালো। কারণ সেখানে প্রোপারলি হাইজিন মেনটেইন করা হয় কিনা আর ভালো ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ইউজ করা হয় কিনা, সেগুলো নিয়ে মনে দ্বিধা থাকে।
তবে কি পেডিকিওর করাবেন না? অবশ্যই! আপনি নিজেই করবেন, নিজের বাসায় বসে! শুধু জানতে হবে সঠিক নিয়ম আর ধাপগুলো সম্পর্ক। নিজেই করুন পেডিকিওর ৬টি সিম্পল ও ইজি স্টেপসে। আর সাথে সাথেই পেয়ে যাবেন মসৃণ ও মোলায়েম পা।
নিজেই করুন পেডিকিওর
বাড়িতে বসে পেডিকিওর করতে আপনার কিছু জিনিস লাগবে-
- নেইল পলিশ রিমুভার
- কটন প্যাড
- শাওয়ার জেল
- স্ক্রাব
- বাফার
- নেইল ফাইল
- নেইল কাটার
- পিউমিস স্টোন বা ঝামা পাথর
- বডি লোশন
- তোয়ালে
- পছন্দের রঙের নেইল পলিশ, বেইজ কোট ও টপ কোট
প্রথম ধাপঃ
পেডিকিওর এর প্রথম ধাপ হিসেবে আপনাকে প্রথমে নখে লেগে থাকা নেইল পলিশ তুলে ফেলতে হবে। এজন্য একটি কটন প্যাডে নেইল পলিশ রিমুভার দিয়ে ভালোভাবে ভিজিয়ে নিয়ে নখের উপরে চেপে ধরে রাখুন কয়েক সেকেন্ড। রিমুভারে থাকা অ্যাসিটোন খুব সহজেই নেইল পলিশ রিমুভ করবে।
দ্বিতীয় ধাপঃ
এই ধাপটা হচ্ছে পেডিকিওর এর সবচেয়ে রিল্যাক্সিং স্টেজ। এই ধাপের জন্য আপনার লাগবে একটা বড় বোল, যাতে আপনার দুই পা ভালোভাবে ডুবিয়ে রাখার মতো পর্যাপ্ত পানি নেওয়া যায়। নিতে হবে কুসুম গরম পানি, খেয়াল রাখুন যাতে খুব তাড়াতাড়ি পানি ঠান্ডা না হয়ে যায়। এমন বেশি গরম পানি নিবেন না যাতে পায়ের স্কিন পুড়ে যায়। এবার পানিতে মিক্স করুন পরিমাণমতো শাওয়ার জেল। ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে দুই পা ডুবিয়ে রাখুন দশ মিনিট যাতে গোড়ালির শক্ত চামড়া ও নেইলসের কিউটিকল নরম হয়ে আসে।
তৃতীয় ধাপঃ
এবারে স্ক্রাবিং এর পালা। এজন্য আপনি ফুট স্ক্রাব বা রেগুলার বডি স্ক্রাবও ব্যবহার করতে পারেন। এতে ডেড স্কিন সেলস দূর হবে, ট্যানিং থাকলে সেটাও কমে যাবে। ভালোভাবে স্ক্রাবিং এর পরে ফুট ব্রাশ দিয়ে পায়ের পাতা, আঙুলের চারপাশ ঘষে নিন। এরপরে পিউমিস স্টোন বা ঝামা পাথর দিয়ে গোড়ালির শক্ত চামড়া হালকাভাবে রাব করুন। এখন পা ধুয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে মুছে নিন তোয়ালের সাহায্যে।
চতুর্থ ধাপঃ
এই ধাপে নেইল কাটার দিয়ে নখগুলো ট্রিম করে নিয়ে নেইল ফাইল দিয়ে পছন্দমতো শেইপ করুন। এরপর বাফার দিয়ে আরেকবার ঘষে নিন। বাফার না থাকলে স্কিপ করতে পারেন।
পঞ্চম ধাপঃ
এবার আপনার পছন্দমতো ফুট ক্রিম বা বডি লোশন লাগিয়ে পা ম্যাসাজ করুন ১ মিনিট। এতে পায়ের ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং পা মসৃণ ও মোলায়েম দেখাবে। যাদের স্কিন ড্রাই, তারা অবশ্যই ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করুন।
ষষ্ঠ ধাপঃ
সর্বশেষ ধাপে নেইল পলিশ অ্যাপ্লাই করুন। এর আগে কটন প্যাড টোনার বা অয়েল ক্লেনজারে ডুবিয়ে নিন এবং এটা দিয়ে নখ ভালোভাবে মুছুন, যাতে নখে কোনো ডাস্ট পার্টিকেল বা প্রোডাক্ট রেসিডিউ না থাকে। এরপর বেইজ কোট লাগিয়ে নিন প্রথমে, অপেক্ষা করুন শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। তারপর আপনার পছন্দের রঙের নেইল পলিশ নিয়ে প্রথমে হালকা করে এক কোট লাগান, শুকিয়ে যাওয়ার পরে দ্বিতীয় কোট লাগান। ভালোভাবে শুকিয়ে যাওয়ার পরে নেইল পলিশ শাইনি ও লং লাস্টিং করতে টপ কোট লাগিয়ে নিন।
ব্যস, হয়ে গেল আপনার অল্প খরচে পেডিকিওর! এবার আপনার পা দু’টো একদম রেডি! পায়ের নখ পরিষ্কার থাকলে এতে আপনার কনফিডেন্স লেভেলও বাড়বে। তাহলে এখন থেকে নিজেই করুন পেডিকিওর। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।
ছবি- সাটারস্টক