বিষণ্ণতায় ডুবে থেকো না! - Shajgoj

বিষণ্ণতায় ডুবে থেকো না!

প্রতিদিনের  মতো  মাথা  বালিশ  পর্যন্ত  পৌছানোর  আগেই  আমি  ঘুমিয়ে  পরেছিলাম।  শেষ  রাতে ঘুম  ভাঙলো। এটা  আমার জন্য কোন ব্যাপারই  না।

ঘুম  আমার পোষ্য,

Sale • Day/Night Cream, Day & Night Cream, Night Cream

    থাকে  আমার থলিতে,

    ডাকলেই চলে আসে।

    তাই আবার  ঘুমিয়ে  পড়ার  চেষ্টা  করলাম,  কিন্তু না, সেদিনই প্রথম  ঘুম আমার  সাথে  বিশ্বাসঘাতকতা  করল।  থলি  ছিঁড়ে  পালালো।  যতোই তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা  করি ততই উল্টাপাল্টা  চিন্তারা সব ছুটে  এসে  থলি  ভরে  দিল। একসময়  অনুভব  করলাম  মাথা  ভর্তি  চিন্তারা  ঘুরপাক খাচ্ছে। ছটফট  করতে করতে  রাত  শেষে  ভোর  এলো,  কিন্তু  ঘুম  এলো না।  ঘুমানোর  প্রচণ্ড  তাড়না  আমাকে  বিহ্বল করে  তুলল,  প্রিয় কিছু  হারিয়ে  ফেলার  মতো  শোকার্ত   মনে  হলো।

    অফিস  ফেরত  প্রচণ্ড  পরিশ্রান্ত আমি বাসায়  ফিরি, ফিরতি  পথে  অফিসে কী কী কাজ হয়নি তাই শুধু মাথায়  ঘূর্ণিপাক  এর  মতো  ঘুরতে  থাকে। কী কী  কাজ  হয়েছে  তার  প্রশান্তিতে  মন  ভাসে  না।  বাসায়  ফিরে  শান্তি  পাই , কিন্তু  স্বস্তি   পাই না  অথবা  স্বস্তি  পাই,  শান্তি  পাই না। আসলে  ঠিক  কী  পাই ,  কী  পাইনা  তাই  বুঝি না। বাচ্চারা কী বলে খুব একটা মনোযোগ দিতে পারি না। আবার ও শুয়ে  পড়ার  সাথে  সাথেই  ঘুমাই, আবার ও মধ্যরাতে ঘুম ভাঙে, আবার ও  চলতে থাকে ঘুমের সাথে যুদ্ধ। প্রতিরাতেই এই  যুদ্ধে আমি হেরে যাচ্ছি। ঘুম আর  ফিরে  আসে না।

    প্রতিরাতের যুদ্ধ বিধ্বস্ত আমি অফিস যাই, কাজে মনযোগ  দিতে পারি না। অবাক  হয়ে ভাবি এই অফিস আমার কত প্রিয় ছিলো। এখন  বাসা ছেড়ে আসতে ইচ্ছে হয় না, কেমন অসহায় বোধ আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে  আটকে ধরে রাখে। গত ১৮ বছরে প্রতিমুহূর্ত  যারা অফিসে আমার কাজের প্রশংসায়  পঞ্চ, ষষ্ঠ,  সপ্তমুখ  থাকতো, আজ সকলে যেন কোন এক গোপন  অভিসন্ধি  নিয়ে নিরব।  এই  নিরবতা আমাকে  কুঁকড়ে  দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমি আমার মধ্যে কাজের স্পৃহা  খুঁজে  পাই না। আমার নিজের  আত্মবিশ্বাস  গিয়ে  ঠেকেছে একেবারে তলানিতে । কোন আড্ডা বা অনুষ্ঠানে কী বলবো, কথা খুঁজে পাই না ।

    বাচ্চারা ইদানিং মজা করে আমার মতো অভিনয়  করতে গিয়ে মুখ  গোমরা  করে দেখায়। আমি বুঝি এটা ওরা মজা করে, তারপর ও মনে মনে খুব অসহায় লাগে। প্রতিদিন ঘুমের সাথে যুদ্ধ, নিজের সব অনাগ্রহ এর সাথে যুদ্ধ করে করে আমি ক্লান্ত। কোন দায়িত্ব  নিতে প্রচন্ড ভয় পাই।সেটা নতুন কোন কাজ হোক, অথবা পরিবারের সকলে মিলে বাসার বাইরে বেড়াতে যাওয়া হোক। ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি দিনে দিনে আতঙ্কগ্রস্ত । ছোট্ট মেয়েটা  যখন  গলা  জড়িয়ে  আহ্লাদী আদরের  কথা  বলে  আমি তখন সেই  মুহূর্তটা  আনন্দিত  হতে হতে আবার শঙ্কিত  হয়ে  পড়ি  মেয়ের  ভবিষ্যৎ  চিন্তায় । সামান্য  ঘুম না হওয়া আমাকে এমন এক পরিস্থিতি তে ফেলবে বিশ্বাস  হয় না। কিন্তু আমার বিশ্বাস  অবিশ্বাসে  সত্যিটা  মিথ্যা  হয়ে  যায় না।

    [picture]

    সত্যিটা  হচ্ছে আমি  আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে  ডুবে  যাচ্ছি  অনিশ্চয়তায়,  আমরা  সত্যিকারের  হাবুডুবু  খাচ্ছি প্রতিমুহূর্তের আশঙ্কায়।  ভুলে যাওয়ার প্রবণতা আমাকে দিনে দিনে  আরো বেশি গ্রাস করে নিচ্ছে। ছোট্ট  ছোট্ট  তথ্য  অথবা প্রয়োজনীয়  কাজের  কথা ভুলে যাচ্ছি। আমি প্রয়োজনীয় কথা  বলা ও ভুলে যাচ্ছি। আপনজনেরা আমাকে দেখে ভাবে আমার ভেতর কিসের যেন পাথর  চাপা কষ্ট আমাকে আরো পাথর  এর মতো নির্লিপ্ত করে তুলছে। কিন্তু কী সেই কষ্ট  আমি  খুঁজে  পাই না।

    নিজেকে  অসুস্থ  মনে  হয়, কিন্তু ডাক্তার  পর্যন্ত দৌড়ানোর  আগ্রহ নেই। কোন এক পথে সব ঠিক হয়ে যাবে, আমি সেই পথ পানে  চেয়ে বসে আছি। প্রতিদিন  মনে  হয় আগামীকাল  ঠিক হবে, কিন্তু  সেই আগামীকাল আর আসে না,  কিছুই ঠিক হয়না।  “এমনতর  সমস্যা” আপনার  আমার  যে কারো  হতে  পারে  যেকোন  সময়। সহজ  ভাষায়  আমরা  যাকে  বলি   ” বিষণ্ণতা “। এমনটা   হতে  পারে  পারিবারিক  কঠিন  সময়ে, প্রিয়জন অথবা প্রিয়  সময় হারিয়ে। হতে পারে  ভবিষ্যৎ  অনিশ্চয়তা  থেকে  আবার  হতে  পারে  নিশ্চিত  একঘেয়ে  জীবনবোধ   থেকে।   হতে  পারে  খুব ছোটবেলার  কোন  টানাপোড়ন  বড়বেলা  পর্যন্ত   বয়ে  বেড়িয়ে   অথবা  মনের  ভেতর  বয়ে  বেড়ানো  একান্ত  কোন অপরাধ  বোধ  থেকে।কর্মক্ষেত্রের  অসহনীয়  চাপ  অথবা   কর্তার অসহনশীল  আচরণ  আপনাকে  অনিশ্চিত  ভয়ের  পথ  ধরে  এমন  বিষণ্ণতায়  টেনে  নিতে  পারে। প্রত্যাশা  এবং  বাস্তবতার  বড়  রকমের  পার্থক্য ও  আপনাকে  নিয়ে  যেতে  পারে  বিষণ্ণতার  বন্ধুর  পথে….. ….

    আরো  আছে পারিবারিক  সম্পর্কীয়  টানাপোড়ন।  যে  কারনেই  হোক , এমন  হলে  প্রথমেই  কারণটা  চিহ্নিত  করার  চেষ্টা  করুন। সেখান  থেকে মনের  মুক্তির  চেষ্টা  করুন। ভালো  লাগার  কাজ  করুন।  প্রিয়জনদের  সাথে  সময়  কাটাতে  চেষ্টা  করুন। একঘেয়ে  রুটিন  বদলে  সামর্থ্যানুযায়ী বেড়িয়ে  আসুন, পারলে  কিছুদিন  ছুটি  কাটান। পরিবারের  যে  কারো  সাথে  সম্পর্কের  টানাপোড়ন  মিটিয়ে  ফেলুন। নিজের  জন্য  ভালোলাগার একটি  সু-অভ্যাস  সৃষ্টি  করুন। তারপর  ও  যদি  অবস্থার  পরিবর্তন  না  হয়,  তবে  এমনি  এমনি  সব  ঠিক  হয়ে  যাবে  বলে  আগামীকালের   অপেক্ষায়  বসে  থাকবেন না।  আমার , আপনার  যারই  হোক  এভাবে   কখনোই আগামীকাল  আসে না, অপেক্ষায়  বসে  থেকে  কিছুই  ঠিক  হয় না। যেকোন  কিছু বিগরে গেলে,  ঠিক  করার  জন্য  নির্দিষ্ট  লোক  লাগে। তা সেটা হোক  কোন যন্ত্র  অথবা  শরীর। আমরা  নিজেদের  শারীরিক যেকোন  অসুস্থতাজনিত কারনে  যেভাবে দৌড়ে ডাক্তারের কাছে ছুটি,   মনের ভেতর এতো এতো চাপা সমস্যা  নিয়ে ও সেভাবেই ছুটতে হবে  ডাক্তার  বাড়ি।

    সামান্য  সর্দিকাশিতে  যে  লোক  ডাক্তারের  পরামর্শ  ছাড়া  কিছু  খায় না  সেই  লোকই  মনের  ভেতর  বাসা বানানো ঘুণপোকা  পুষে  রাখে দিনের পর দিন। যেন  দিনের  পর  দিন  পোষে  রেখেই, একদিন  সব  ঠিক  হয়ে  যাবে।  শারীরিক  সুস্থতার  চেয়ে  মনের  সুস্থতার  প্রয়োজন  কোন  অংশে  কম না। মনে এমনতর  ঘুণপোকা  ঘাপটি  মেরে থাকলে  সবারই উচিত দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ  করা,  নয়তো  এই  ছোট্ট  ঘুণপোকা , একদিন  বিশাল  কুমির  হবে, তারপর  আপনাকে, আপনার  পরিবার  কে  গিলে  খাবে।

    কোন  কারণেই  এই  ঘুণপোকা কে জিইয়ে  রাখবেন না। আপনজনদের পরামর্শ নিন।  ডাক্তার   দেখান।   আপনার ডাক্তার  বুঝবেন,  কী ধরণের চিকিৎসা কতদিন  লাগবে। নিজে নিজে সিদ্ধান্ত  নিবেন না।একবারের  জন্যও  ভাববেন  না  ভালো  সময়  এসে  আপনাকে   ভালো  করে  দিবে।

    মনের  চিকিৎসা  মানেই পাগলের চিকিৎসা  এই  ধারনাগত  ভুল  আমাদের  পায়ে  শিকল  পড়ায়। ডাক্তারে কাছে  না যাবার  শিকল।  সকল  সমস্যা নিজের  ভেতর   লুকিয়ে  রাখার  শিকল।

    এই  শিকল  ছিঁড়তে  হবে, ইচ্ছে  শক্তির  প্রচণ্ডতায়।

    শরীর / মন  যাই হোক,

    “যেখানেই   ক্ষত,  সেখানেই পরিচর্চা।”

    এই  হোক  আমার  আপনার সকলের ভালো  থাকার  স্লোগান।

    কবীর  সুমনের  গানটা  মনে পড়ে গেল :

    স্বপ্নগুলো ছেড়েছ তো কয়েক বছর আগে

    আমার কিন্তু স্বপ্ন দেখতে আজও ভাল লাগে ………

    বন্ধু তোমার ভালোবাসার স্বপ্নটাকে রেখো

    বেঁচে নেবার স্বপ্নটাকে জাপটে ধরে থেকো

    দিনবদলের স্বপ্নটাকে হারিয়ে ফেলো না

    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না হাল ছেড়ো না

    হাল ছেড়ো না বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে

    দেখা হবে তোমায় আমায় অন্য গানের ভোরে।

    ছবি – সিটিবিউটি ডট ইনফো

    লিখেছেন – ইয়াসমিন আখতার মনি

     

    1 I like it
    0 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort