আজকের প্রসাধনী বাজার ছেয়ে আছে নকল প্রসাধনীতে; এত এত নকল প্রসাধনীর ভীড়ে আসল জিনিসিটি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু প্রসাধনীর লেভেল, মোড়ক ও প্যাকেজিং এ এতটাই মিল যে আসল-নকল ভেদ করা সহজ হয় না। তাই জেনে-না জেনে এমন অনেক প্রসাধনী কিনে ফেলি আমরা। এমন সব কসমেটিক্স দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের ফলে ত্বকের উপরিভাগেই শুধু ক্ষতি সাধন করে না; বরং শরীরে নানা রকম অসুখ সৃষ্টি করে থাকে। তাই যে কোনও প্রসাধনী কেনার আগে ভালো করে যাচাই বাছাই করে কেনা উচিত এবং বাসায় ফিরেও ব্যবহারের পূর্বে আরেক দফায় চেক করে নেওয়া দরকার যে উক্ত প্রসাধনীটি আদৌ আপনার জন্য ঠিক আছে কি না। কথায় আছে, চকচক করলেই সোনা হয় না, তাই প্রোডাক্ট এর গেট আপ দেখে মুগ্ধ না হয়ে তাদের উপাদানের দিকে মনোযোগ দিন। আজ আপনাদেরকে এমন কিছু প্রসাধনীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেব যারা বহু বছর যাবত একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে এবং মানুষ জন না বুঝেই সেগুলো কিনে যাচ্ছে, যার ফল কিন্তু ভয়ংকর।
সানব্লকঃ
আমাদের দেশে এমন কোন মার্কেট বা সুপার শপ নেই যেখানে ফেক সানব্লক বিক্রি করা হয় না। অনেক শিক্ষিত মহিলারাও চোখ বন্ধ করে এমন প্রোডাক্ট কিনে আনছেন। লেডি ডায়ানা, রেভ্লন, ডাভ, স্টিভস নামক ফেক সানব্লক গুলো একবার করে হলেও ব্যবহার করেননি এমন নারী খুঁজে পাওয়া বিরল। নামী-দামী সুপারশপ গুলো থেকে শুরু করে গাউসিয়া-চাঁদনি চক সহ কম বেশি সব দোকানেই এসব পণ্য পাওয়া যায়। এগুলো এতটাই সহজ লভ্য যে অনেকেই ট্রাই করার জন্য এনে থাকলেও এক সময় এগুলোতেই অভ্যস্ত হয়ে যান।
স্ক্রাবঃ
সানব্লকের ন্যায় ঐ একই ব্র্যন্ডের নকল স্ক্রাবেরও কমতি নেই বাজারে। এদের গেট আপ দেখলেই বুঝবেন যে এগুলো নকল। সানব্লকের মতই একই রকম মোড়কে এসে থাকে স্ক্রাব গুলো।
মেক-আপঃ
বিভিন্ন নামী দামী ব্র্যান্ডের নকল মেক আপ অল্প দামেই মিলতে পারে আপনার কাছে, কেননা এই জিনিসটি ই মনে হয় সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় আমাদের মার্কেট গুলোতে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পন্যটি হচ্ছে ম্যক। যে কোনও প্রোডাক্ট এর গায়েই দেখা যায় বড় করে ম্যাক লেখা, যেগুলোর সবই নকল। ম্যাক তো আছেই, ক্লিনিক, লরিয়েল, ইস্টে লডার এর মত ব্র্যান্ডও বাদ পড়েনি নকল মেক-আপ এর লিস্ট থেকে। কোলোস্যাল কাজল, ল্যাকমে আইকোনিক কাজল যাই আমরা হাতের কছেই পেয়ে থাকি প্রত্যেকটা ডুপ্লিকেট। বড় বড় বিপণি বিতান থেকে শুরু করে অনেক পার্লারে পর্যন্ত এসব মেক-আপ দিয়েই সাজিয়ে থাকেন বিউটিশিয়ানরা। একবার ভেবে দেখুন তো, এসব প্রসাধনী প্রতিনিয়ত ব্যবহারে আপনার ত্বক কি সুরক্ষা পাচ্ছে নাকি আরো বেশি স্পর্শকাতর ও বুড়িয়ে যাচ্ছে? তাই বলছি কিছু সাবধানতা অবলম্বন করবেন যাতে কিছুটা হলেও নকল প্রসাধনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
জরুরী কিছু কথাঃ
অনেকে হয়ত মনে করছেন যে আমাদের খাবারেই যেখানে এত ভেজাল সেখানে প্রসাধনী আর এমন কী ক্ষতি করবে? তাদের জন্য বলছি, এরা অনেকটা নীরব ঘাতকের মত কাজ করে, কখন যে কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে আপনার দেহে আপনি হয়ত টেরও পাবেন না। মনে রাখুন অবশ্যই-
– যে কোনও ব্র্যান্ড এর পন্য কেনার আগে ভালো করে তাদের ওয়েব সাইট দেখে নিন। ওয়েব সাইটে নেই এমন পণ্য বাজারে যদি দেখতে পান তাহলে ; বুঝতে নিশ্চয়ই বাকি নেই আপনার যে আপনার প্রাপ্ত পণ্যটি নকল।-
– আপনার যারা অনলাইন শপিং করে থাকেন তারা হয়ত দেখেছেন বিদেশ থেকে আমদানীকৃত বেশির ভাগ পণ্যেই মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ লেখা থাকে না। কিন্তু আমাদের দেশে ঐ একই পণ্য কিনতে গেলেই দেখবেন যে তারা তদের ইচ্ছা মত তারিখ দিয়ে রেখেছে। স্মার্ট ফোন গুলোর কল্যাণে এখন বার কোড যাচাই করা যায় বটে, তবে আমাদের দোকান গুলোতে সেটা রেস্ট্রিকটেড করা থাকে, তাই এ প্রযুক্তি ব্যবহারে খুব একটা লাভবান হওয়া যাবে না।
– আপনাদের সুবিধার্থে কিছু নকল পন্যের ছবি দেওয়ার চেষ্টা করেছি ,তবে যেহেতু এসব ছবি ওয়েব সাইটে নেই তাই সবগুলোর ছবি দিতে পারলাম না, এজন্য দুঃখিত।
আশা করি লেখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে এবং কিছুটা হলেও আপনাদের উপকারে আসবে। সবাই ভালো থাকবেন আর দেখে, শুনে, বুঝে প্রসাধনী কিনবনে আর পার্লারে কোন সেবা নিতে গেলে যাচাই করে নেবেন তারা কী ধরনের পণ্য ব্যবহার করছে। আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত এ পর্যন্তই।
লিখেছেনঃ রোজা স্বর্ণা
ছবিঃ সাইন্সমিডিয়াসেন্টার.কো.এনজেড