আত্মবিশ্বাস মানে হল নিজের প্রতি বিশ্বাস। নিজের যোগ্যতার উপর বিশ্বাস। নিজেকে অন্যের কাছে তুলে ধরার প্রেরণা। স্বাধীনতা, স্বকীয়তা, উৎসাহ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা, সমালোচনার মুখোমুখি হওয়া, ইতিবাচক মনোভাব – সব কিছুই গড়ে উঠে আত্মবিশ্বাসের চাকায়। আত্মবিশ্বাস আর ব্যক্তিত্ব একে অন্যের সাথে জড়িত। আত্মবিশ্বাসের অভাবে ব্যক্তিত্ব দৃঢ় হয় না, তেমনি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস-ও ব্যক্তিত্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আত্মবিশ্বাস অর্জন করা কোন রাতারাতি ব্যাপার নয়। দীর্ঘদিনের চর্চা এবং অভ্যাসে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠে। আত্মবিশ্বাস কেউ কাওকে দিতে পারে না, নিজে নিজেই অর্জন করতে হয়। যেকোনো কাজে সফল হতে হলে আত্মবিশ্বাসী হওয়া জরুরী। আমাদের প্রায়ই বিভিন্ন কাজে বা ভাইভা বোর্ডে শুনতে হয় আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে। ক্ষতি কি যদি আমরা নিজেদের একটু আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া দিতে পারি।
আত্মবিশ্বাস না থাকার বৈশিষ্ট্যঃ
আত্মবিশ্বাস একেক জনের কাছে একেক রকম। কারণ আমাদের সবার জীবনযাত্রা আলাদা, ব্যক্তিত্ব আলাদা। তবু কিছু কিছু ব্যাপার হীনমন্যতার সৃষ্টি করে। যেমন-
০১) কোন কাজ করার আগে অন্য লোকজন কি ভাববে, এটা নিয়ে চিন্তা করা। ফলে কাজটি করা নিয়ে দ্বিধায় থাকা।
০২) কোন কাজে পরাজিত হলে বা ভুল করলে মানতে না পারা। নিজের ভুলগুলো স্বীকার না করা।
০৩) নিজের ভুলগুলোর জন্য নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করা।
০৪) ভুলগুলো থেকে শিক্ষা না নিয়ে একই কাজ পুনরায় করা।
০৫) নতুন কোন উদ্যোগ নিতে গিয়েও পিছিয়ে পড়া।
০৬) নিজের কাজের জন্য অন্যের কাছে মূল্যায়ন চাওয়া।
০৭) নিজেকে অন্যের চেয়ে ছোট ভাবা।
০৮) সব কাজে লজ্জা এবং অস্বস্তি অনুভব করা।
আত্মবিশ্বাস না থাকার কারণঃ
জন্মের পর থেকেই একজন মানুষ আত্মবিশ্বাসী বা আত্মবিশ্বাসহীন হয়ে গড়ে উঠে না, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ-ই মানুষের আত্মবিশ্বাস থাকা এবং না থাকার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন –
০১) অতীত তিক্ত অভিজ্ঞতা
০২) এমন লক্ষ্য স্থির করা যা বাস্তবসম্মত নয়
০৩) বড় হওয়ার সময়টুকুতে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা
০৪) পরিবারের সদস্যদের বিচ্ছিন্ন হওয়া
০৫) অন্যদের কাছ থেকে সফলতার জন্য অনেক বেশি প্রেশার পাওয়া
০৬) যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতি কল্পনা করা
০৭) অনেক বেশি অন্তর্মুখী হওয়া
০৮) ছোটবেলা থেকে অতিরিক্ত শাসনে বড় হওয়া
আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার উপায়ঃ
প্রতিযোগিতার এই যুগে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কোন বিকল্প নেই। কিছু ব্যাপার চর্চা করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা সম্ভব।
০১) নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, কী কী কারণে আপনি নিজেকে অন্যের চেয়ে ছোট ভাবেন, লজ্জা পান অথবা অস্বস্তি বোধ করেন। সম্ভব হলে একটি কাগজে লিখে রাখুন। যখন এই সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাবে, তখন ঐ কাগজটি ছিঁড়ে ফেলতে পারেন।
০২) আপনার প্রিয়জনদের সাথে আপনার সমস্যাটি শেয়ার করুন এবং তাদের সাহায্য নিন।
০৩) আপনার চারপাশ, অতীত অভিজ্ঞতা সব কিছুই বর্তমানের সাথে মানিয়ে নিন।
০৪) পৃথিবীতে কেউই পারফেক্ট নয়। আপনার ভুল গুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে শুরু করুন।
০৫) সবার জীবনেই কিছু না কিছু সফলতা থাকে।ওগুলো শনাক্ত করুন। তার জন্য নিজেকে গর্বিত ভাবুন, নিজেকে ক্রেডিট দিন। আপনি-ও পারেন, এটা নিজেকে জানিয়ে দিন।
০৬) আপনি যেমন আছেন তেমন-ই ইউনিক। আর সবার চেয়ে আলাদা। এজন্য নিজেকে ধন্যবাদ দিন।
০৭) সবসময় পজিটিভ চিন্তা করুন। পারিপার্শ্বিক অবস্থা আপনাকে অনুমোদন না করলেও ইতিবাচক হোন।
০৮) কেউ আপনাকে কোন কমপ্লিমেন্ট করলে তা হৃদয়ে ধারণ করুন এবং ইতিবাচক সাড়া দিন।
০৯) আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখুন এবং নিজেকে হাসি উপহার দিন।
১০) সবসময় মনে করুন আপনি একজন আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি এবং সেভাবেই সবার সাথে আচরণ করুন।
১১) নিজেকে কখনই পারফেক্ট ভাববেন না। এতে নিজের ভুল সংশোধন করা যায় না।
১২) যখন-ই সুযোগ পান, অন্যকে সাহায্য করুন।
১৩) আত্মবিশ্বাস আছে এমন মানুষের সাথে মিশুন।
১৪) কখনই বিষণ্ণতায় ভুগবেন না।
১৫) দরকার হলে আপনার লাইফস্টাইল বদলে ফেলুন। পোশাক থেকে শুরু করে অভ্যাস সব কিছুতেই পরিবর্তন আনতে পারেন।
১৬) আত্মকেন্দ্রিক হওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে আপনি আত্মবিশ্বাসী হতে পারবেন না।
জীবন একটাই। একে আপনি গড়ে তুলুন যেভাবে আপনি চান। আত্মবিশ্বাসী হওয়া আপনার উপর নির্ভর করে। আত্মবিশ্বাসী হোন আর সফলতায় ঝলসে উঠুন।
লিখেছেনঃ সানিয়া
মডেলঃ রুহানা