বাড়িতে যে কোনো পোষ্য থাকা মানেই তার জন্য আলাদা যত্ন নিতে হয়। বাড়ির ছোট্ট সদস্যটির প্রতি পেট প্যারেন্টসদের থাকে আলাদা নজর। আর থাকবে নাই বা কেন? সারাদিনের সব ক্লান্তি অবসাদ যে এক নিমিষে দূর করে দিতে পারে এই পোষ্যই! তবে পোষ্য যদি বিড়াল হয় তাহলে ভাবনা একটু বেশি হয়। কারণ বিড়ালের শরীর থেকে প্রচুর লোম পড়ে, সাথে এলোমেলো হয়ে থাকা লিটার বক্স ও খাবারের বাটি গুছিয়ে রাখতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়! আজকের আর্টিকেলে জানাবো পোষা বিড়াল থাকলে ঘর পরিষ্কার রাখার দারুণ ৫টি হ্যাকস নিয়ে।
পোষা বিড়াল থাকলে যেভাবে পরিষ্কার রাখবেন ঘর
১) লোম পরিষ্কার করা
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, বাড়িতে পোষা কুকুর বা বিড়ালের সাথে সময় কাটালে মানুষের মাঝে অক্সিটোসিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যার ফলে মন খারাপ ভাব দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যায়। কিন্তু বিড়াল পালতে গিয়ে সমস্যা শুরু হয় গায়ের লোম পড়া থেকে। প্রায় ৭০ শতাংশ ক্যাট প্যারেন্টস লোম পড়াকে বিড়াল পালার সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে মানেন। ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা বিড়ালের লোম কেবল বিরক্তিকরই না, পরিষ্কার করাও বেশ কঠিন।
এ সমস্যা দূর করতে কার্যকরী সমাধান হচ্ছে নিয়মিত বিড়ালের লোম আঁচড়ে দেওয়া। যদি বিড়ালের জন্য আলাদা চিরুনি না থাকে তবে সাধারণ হেয়ার ব্রাশ দিয়েই কাজ চালানো যাবে। আঁচড়ানোর সময় আলগা হয়ে আসা চুলগুলো হেয়ার ব্রাশের সাথেই চলে আসবে। আর লোম বেশি ঘন বা বড় হয়ে গেলে কিছুটা ছেঁটে দিতে পারেন। এতে বিড়াল নিজেও তার যত্ন নিতে পারবে। কারণ বিড়াল নিজের শরীর নিজেই পরিষ্কার করে। ঘন আর বড় লোম না থাকলে এটি অনেক সহজেই করা সম্ভব।
বিড়ালের লোম যদি রুমে বেশি ছড়িয়ে থাকে তাহলে সবচেয়ে ভালো উপায় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ক্লিন করে ফেলা। মেঝে ছাড়া অন্য জায়গাগুলোতে লোম পড়ে থাকলে টেপ বা রাবার গ্লাভস দিয়েও ক্লিন করা যায়। লোম যদি ভালোভাবে ক্লিন করা না হয় তাহলে বিড়ালের পেটে গিয়ে সমস্যা হতে পারে। তাই সাবধান থাকতে হবে এ বিষয়ে।
২) লিটার বক্সের ব্যবহার করা
বাড়িতে বিড়াল তো নিয়ে এলেন, এবার তাকে লিটারিং এ অভ্যস্ত করাবেন কীভাবে? ৬৮ শতাংশ ক্যাট প্যারেন্টসের মতে, বিড়াল পালতে গেলে এটাই সবচেয়ে কঠিন দিক। কিন্তু ঘর পরিষ্কার রাখতে হলে এ সমস্যার সমাধানও যে জরুরি! তাই সবার আগে বিড়ালের জন্য রেডি করতে হবে লিটার বক্স।
মার্কেট থেকে কিনে অথবা বাড়িতে বড় কোনো বোল দিয়ে লিটার বক্স বানানো যায়। বক্স রেডি হলে তাতে যথেষ্ট পরিমাণ বালি রাখুন। দিনে ৩/৪ বার এই লিটার বক্স পরিষ্কার করতে হতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করে বিড়ালের ব্যবহারের উপর। ডাস্ট প্যান আর ব্রাশ দিয়ে লিটার বক্স পরিষ্কার করতে হবে। মাসে একবার বালি বদলে দিয়ে পুরো বক্স ক্লিন করলে ভালো। তবে এটিও নির্ভর করে বিড়ালের সংখ্যা, সাইজ ও লিটার ব্যবহারের উপর। শুরুর দিকে বিড়ালের লিটার বক্স ব্যবহারের অভ্যাস তৈরি হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কয়েকদিন ব্যবহার করলে বিড়াল নিজেই বুঝে যাবে। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে ঘর ক্লিন করতেও বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না।
৩) জীবাণুনাশক ও এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করা
প্রায় ৬০% ক্যাট প্যারেন্টস মনে করেন, বিড়ালের শরীরের গন্ধে ঘরের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়। আর এই সমস্যা বেশ বিব্রতকর। এর সমাধান করতে হলে নজর দিতে হবে বিড়ালের দিকেই। প্রথমত, নিয়মিত বিড়ালের বড় হতে থাকা লোম ছোট করে নিতে হবে। এতে দুর্গন্ধের মাত্রা অনেকটাই কমে আসবে। এছাড়া সপ্তাহে অন্তত দুইবার ভ্যাকুয়াম ক্লিনিং করলেও গন্ধ থাকবে না।
যদি কার্পেটে বা মেঝেতে লিটারিং এর কারণে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে, সেক্ষেত্রে দ্রুত ডেটল বা স্যাভলন জাতীয় জীবাণুনাশক ব্যবহার করে সেটা ধুয়ে নিতে হবে। অনেকে গন্ধ দূর করতে ঘরে এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করেন। এটাও সহজ পদ্ধতি, তবে সেই ঘ্রাণে বিড়ালের এলার্জি হয় কিনা সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
৪) স্ক্র্যাচিং প্যাড বানিয়ে দেওয়া
ঘরে বিড়াল থাকলে সম্ভবত সৌখিনতা রক্ষা করা অনেক কঠিন হয়। কারণ ঘরের সোফা, পর্দা কিংবা শখ করে বানানো কাঠের আসবাব কোনোকিছুই বিড়ালের আঁচড় থেকে সহজে রক্ষা পায় না। বিড়ালের আঁচড় কাটা বন্ধ করার আসলে কোনো উপায় নেই। এর চেয়ে বরং বিড়ালকে অন্য কিছুতে ব্যস্ত রাখতে পারলেই ভালো হয়।
ক্যাট প্যারেন্টসদের জন্য বিড়ালের আঁচড় থেকে আসবাব রক্ষা করতে হলে স্ক্র্যাচিং প্যাড বানিয়ে ফেলাটাই সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। আপনার ঘরেই কোথাও হয়তো পুরাতন ফোম বা কার্ডবোর্ড পড়ে আছে। সেটি দিয়েই বানিয়ে ফেলুন স্ক্র্যাচিং প্যাড। নজর কাড়ার জন্য রাবারের বল বা স্ট্রেস বলও ব্যবহার করা যায়। বিড়াল লম্বা বা আড়াআড়িভাবে আঁচড় কাটে বলে তার অভ্যাস বুঝে স্ক্র্যাচিং প্যাড তৈরি করতে হবে।
আঁচড় কাটার অভ্যাস কিছুটা হলেও কমানো যায় বিড়ালের নখ কেটে দিয়ে। নিয়মিত নখ ছোট করে রাখলে আসবাবের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। অনেকেই নখ কেটে দিতে চান না। এমন হলে অবশ্যই স্ক্র্যাচিং প্যাডের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
৫) বেকিং সোডা দিয়ে বিছানা পরিষ্কার করা
বেকিং সোডা দিয়ে যেমন অনেক কাজ করা যায়, তেমনই দুর্গন্ধ দূর করতেও এটি বেশ কার্যকর। বিড়ালের বিছানায় অল্প বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিন। এতে বিড়ালের ঘুম যেমন ভালো হবে, তেমনি সেই বিছানা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর সুযোগও আর থাকবে না। তবে পরিমাণ যেন বেশি না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যে রাতে বেকিং সোডা দিচ্ছেন, পরদিন অবশ্যই বিছানা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। যদি রাতে সম্ভব না হয়, তাহলে রোজ সকালে ১ কাপ পানি ও ১ টেবিল চামচ বেকিং সোডা দিয়ে বিছানা ভালো করে ধুয়ে নিলেও দুর্গন্ধের ভয় থাকবে না।
বিড়াল খুব আদুরে একটি প্রাণী। মন খারাপকে নিমেষেই উধাও করে দিতে পারে বিড়াল। নিয়মিত ক্লিনিং না করার কারণে যদি পরিবারের এই পোষ্যটির কোনো সমস্যা হয়, তাহলে কিন্তু আপনারই কষ্ট হবে। তাই নিয়মিত ক্লিনিং অবশ্যই জরুরি। সাথে ঘর পরিষ্কার থাকলে আপনারও মন ভালো থাকবে। আপনার আদুরে বিড়ালটি ভালো থাকুক, সাথে আপনিও।
ছবিঃ সাটারস্টক