অফিস হলো দ্বিতীয় বাড়ির মতো। আর সহকর্মীরা হলেন সেই দ্বিতীয় বাড়ির সদস্য। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক ধরে রাখতে চাইলে কৌশলী হতে হবে আপনাকেও। কিন্তু কখনো কখনো কিছু আচরণ আপনাকে সহকর্মীদের জন্য বিরক্তিকর করে তুলতে পারে। এমন কিছু কাজ আছে যা করলে আপনি একজন “টক্সিক কলিগ” হিসেবে পরিগণিত হবেন। আপনার টক্সিক আচরণ যেমন কর্মক্ষেত্রের পরিবেশকে নষ্ট করতে পারে, তেমন তা আপনার ক্যারিয়ারে সফলতার পথেও হতে পারে অন্তরায়। কিন্তু কোন আচরণগুলো আপনাকে সহকর্মী হিসেবে “টক্সিক” করে তুলতে পারে? চলুন জেনে নিই।
সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে যে কাজগুলো করবেন না
১. সবসময় নেতিবাচকতা ছড়ানো
আপনার আশেপাশের কেউ ভালো কিছু করলে তার প্রশংসার বদলে খারাপ দিক খোঁজা বা অফিসের সব বিষয় নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা আপনাকে সহকর্মীদের চোখে অপ্রিয় করে তুলতে পারে। এমনকি অফিসের পরিবেশকে ভারী করে তুলতে পারে। এমন অভ্যাস থাকলে তা পরিবর্তন করুন।
২. অন্যের কৃতিত্ব নিজের বলে দাবি করা
কোনো টিমওয়ার্কের সফলতার পুরো কৃতিত্ব যদি আপনি নিজের বলে চালিয়ে দেন বা অন্যের পরিশ্রমকে ছোট করে দেখান, তাহলে সহকর্মীদের আস্থার জায়গা নষ্ট হয়। এর ফলে আপনি একা হয়ে যেতে পারেন, যা দীর্ঘমেয়াদে আপনার ক্যারিয়ারের জন্যই ক্ষতিকর।
৩. গসিপ ছড়ানো
অফিসে গসিপ করা বা সহকর্মীদের ব্যাপারে নেগেটিভ কথা বলা শুধু সম্পর্ক নষ্টই করে না, বরং আপনার বিশ্বাসযোগ্যতাও কমিয়ে দেয়। একসময় কেউই আপনাকে বিশ্বাস করতে চাইবে না, যা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য বড় বাধা হতে পারে।
৪. কাজের সময় অযথা ফোন বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকা
আপনার দায়িত্ব ফেলে রেখে সারাদিন সোশ্যাল মিডিয়া বা ব্যক্তিগত কাজে মগ্ন থাকলে অথবা কাজের ভান করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় ব্যয় করলে, সহকর্মীদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। এটি শুধু কর্মদক্ষতাকেই বাধাগ্রস্ত করে না, বরং আপনার পেশাদারিত্বকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
৫. নতুন আইডিয়া বা পরিবর্তনের বিরোধিতা করা
যেকোনো নতুন উদ্যোগ বা পরিবর্তন আসলে যদি আপনি সবসময় বিরোধিতা করেন, তাহলে তা টিমের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। অফিসে আধুনিকতা ও উন্নয়নের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা থাকা জরুরি।
৬. অহংকারপূর্ণ আচরণ করা
আপনি যদি সবসময় নিজেকে অন্যদের থেকে বেশি যোগ্য মনে করেন এবং তাদের প্রতি তাচ্ছিল্যপূর্ণ আচরণ করেন, তাহলে কর্মক্ষেত্রে আপনার গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। ভালো সম্পর্ক গড়তে নম্র ও সহযোগিতামূলক হওয়া জরুরি।
৭. দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া বা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া
আপনার দায়িত্ব নিজে পালন না করে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা থাকলে তা সহকর্মীদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। একজন প্রকৃত পেশাদার সবসময় নিজের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করে এবং টিমকে সাপোর্ট দেয়।
৮. সব বিষয়ে অযথা প্রতিযোগিতা করা
সহকর্মীদের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা ভালো, কিন্তু যদি আপনি সবকিছুতেই নিজেকে সেরা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন এবং অন্যদের হেয় করেন, তাহলে তা আপনাকে একঘরে করে দিতে পারে। পেশাদার জীবনে পারস্পরিক সহযোগিতাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৯. অফিসের নিয়ম না মানা বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা
সময়মতো অফিসে না আসা, মিটিংয়ে দেরি করা, কাজ শেষ না করেই চলে যাওয়া বা নিয়মিত অফিসের নিয়ম ভাঙার প্রবণতা থাকলে , আপনাকে অন্যরা নেতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখবে।
১০. সবসময় অভিযোগ করা ও উচ্চস্বরে কথা বলা
অফিসের নিয়ম, বসের সিদ্ধান্ত, কাজের পরিমাণ—সবকিছু নিয়ে যদি আপনি সবসময় কেবল অভিযোগ করেন, তাহলে তা আপনার কর্মস্পৃহা কমিয়ে দেবে এবং সহকর্মীদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এছাড়াও কথায় কথায় রেগে গিয়ে উচ্চস্বরে অথবা ছোট বিষয়ে ধমক দিয়ে কথা বললে কর্মক্ষেত্রে সুসম্পর্ক বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।
একজন ভালো সহকর্মী হতে হলে টিম স্পিরিট, পেশাদারি মনোভাব ও ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখা জরুরি। উপরের যেকোনো লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে থেকে থাকে, তাহলে দেরি না করে এখনই নিজেকে বদলানোর সময় এসেছে! কর্মজীবনে সফলতা কেবল ব্যক্তিগত অর্জনের উপর নির্ভর করে না, বরং আপনি সহকর্মীদের সঙ্গে কতটা ভালোভাবে কাজ করতে পারেন সেটিও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। শ্রদ্ধাশীল, সহায়ক ও দলমুখী (টিম-ওরিয়েন্টেড) মানসিকতা গড়ে তুললে শুধু অফিসের পরিবেশ উন্নত হবে না, বরং আপনার ব্যক্তিগত ও পেশাদার উন্নতিও নিশ্চিত হবে।
লিখেছেন- আহমাদ শাহিদিন শীর্ষ
ছবি- সাটারস্টক