এক সপ্তাহে এক কেজি ওজন কমিয়ে ফেলুন খুব সহজেই!

এক সপ্তাহে এক কেজি ওজন কমিয়ে ফেলুন খুব সহজেই!

Untitled design (8)

প্রশ্ন যখন মেদ কমানোর হয় তখন আমরা হরহামেশাই সেটার সাথে সময়ের একটা বিনুনি গেঁথে দিই। শরীরে মেদ এক বছর ধরে জমুক বা ১০ বছর, ‘ওয়েট লস’র সময় আমাদের চিন্তা থাকে কীভাবে এক মাস বা এক সপ্তাহে নির্দিষ্ট পরিমাণ কেজি শরীর থেকে ঝরানো যাবে। নানা রকম ডায়েট প্ল্যান, ঘরোয়া বা বাইরের এক্সারসাইজ সবই আমরা করি। কিন্তু তাও দেখা যায় দিনশেষে ওজনের সেরকম তারতম্য নেই। এইটার পেছনে একটা বড়ো কারণ হলো ওজন কমার পেছনের ‘সাইন্স’ সম্পর্কে ধারণা না থাকা। আজকে সেই সাইন্সটাই বুঝার চেষ্টা করবো আমরা।

এক কেজি ওজন কমাতে কত ক্যালরি বার্ন করতে হয়?

যারা ওজন কমাতে চান তাদের মধ্যে এই প্রশ্নটা আসাটা খুব স্বাভাবিক যে কতোটুকু ক্যালরি বার্ন করতে পারলে আমার ১ কেজি ওজন কমবে। তাহলে চলুন আগে একটু অংক কষে আসা যাক, এরপর প্রক্রিয়া জানা যাবে কীভাবে এই সংখ্যাগুলোকে আমরা বাস্তবে রূপ দিতে পারি।
এক কেজি ওজন কমানোর জন্য আমাদের মোটামুটি ৭৭০০ ক্যালরি কম গ্রহণ করতে হবে অথবা বার্ন করতে হবে। এর মানে হলো আপনি যদি এক সপ্তাহে একটি হেলদি ডায়েট ও কিছু এক্সারসাইজ ফলো করে এক কেজি ওজন কমাতে চান তাহলে আপনাকে টোটাল ৭৭০০ ক্যালরি ঘাটতিতে থাকতে হবে।

এক সপ্তাহে এক কেজি ওজন কি আসলেই কমানো সম্ভব?

প্রত্যেকের শরীরের গড়ন ও গঠন ভিন্ন, তবে সঠিক উপায়ে চললে খুব স্বাস্থ্যকরভাবেই এক সপ্তাহে এক কেজি ওজন আপনি কমাতে পারেন, এবং সেইটা ফ্যাট লস। শুধু আপনার শরীরের পানির পরিমাণ কমবে না।

এই পর্যায়ে একটু ফ্যাট লস এবং ওয়াটার লস নিয়ে কথা বলা জরুরী।

অনেক সময়-ই দেখবেন কোনো রোগের কারণ বা এক্সারসাইজ/ডায়েট শুরু করার প্রথম কয়েকদিনের মধ্যেই আপনার কয়েক কেজি ওজন হঠাৎ করেই কমে গেছে কিন্তু এরপর সেটা আটকে আছে। ধরুন, আপনি ৭০ কেজি ওজনে থাকা অবস্থায় ডায়েট শুরু করেছেন, প্রথম ১-২ সপ্তাহের মধ্যে আপনার হঠাৎ ওজন কয়েক কেজি কমে ৬৫ হয়ে গেল, কিন্তু এরপর আর ওজন কমছেই না, ৬৫তেই আটকে আছে। এই ঘটনাটা হলো ওয়াটার লস।

কিন্তু আপনি যখন ক্যালরি ঘাটতিতে আছেন (calorie deficeit), তখন ওজন খুব ধীরে ধীরে কমবে। কারণ আপনি কোনো ক্র্যাশ ডায়েট ফলো করছেন না। এবং এইটা টেকসই হবে কারণ আপনার অভ্যেসের মধ্যেই তখন আপনার ডায়েট চলে এসেছে। একইসাথে পুষ্টিরও কোনো কমতি নেই। তাই যদি আপনার খুব বিশেষ কোনো উপলক্ষ্য না থাকে তাহলে ক্র্যাশ ডায়েট না করে ফ্যাট লসের দিকে যাওয়া ভালো একটা উপায় হবে।

আবারও ফিরে আসি এক সপ্তাহে এক কেজি ওজন কমানোর সম্ভাবনা-তে। শারীরিক গড়ন বা গঠন আলাদা হলেও ফ্যাট লসের ক্ষেত্রে কয়েকটা ফ্যাক্টর সবার জন্য সমান, এগুলো হলো-

  • শুরুর ওজন
  • অ্যাকটিভিটি লেভেল
  • পুষ্টির পরিমাণ
  • ঘুম
  • হরমোনাল ফ্ল্যাকচুয়েশন

এই ব্যাপারগুলোকে মাথায় রেখে যদি আপনার ডায়েট প্ল্যান এবং এক্সারসাইজ সাজান তাহলে সেক্ষেত্রে এক সপ্তাহে খুব স্বাস্থ্যকরভাবেই ৭৭০০ ক্যালরি বার্ন করা সম্ভব এবং এক কেজি ওজনও কমানো সম্ভব।

কীভাবে ওজন কমানোর সময়েও পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারবেন?

ওজন কমানো মানে পুষ্টি কমানো না। এই বিষয়টা ওজন কমানোর সময় মাথায় রাখতে হবে খুব ভালোভাবে। নাহলে দেখা যাবে পুষ্টির অভাবে শরীর দূর্বল হয়ে যাচ্ছে, মানসিকভাবে সমস্যা হচ্ছে এবং কয়দিনের মধ্যেই আপনার ওজন কমানোর মিশন থেমে যাচ্ছে। কীভাবে নিশ্চিত করবেন পুষ্টির প্রাপ্যতা নিয়ে-

১. প্রচুর পানি পান করা

যদি হুট করে খিদে পায় আগে এক গ্লাস ভরে পানি পান করে নিন, অনেক সময় দেখা যায় এইটা শুধু তৃষ্ণা ছিলো। আধঘন্টা অপেক্ষা করার পরেও যদি ক্ষিদে পায়, একটু মৌসুমি ফল খেয়ে নিন।

২. ধীরে খান

গবেষণা বলছে খাওয়ার সময় যখন আমরা সময় নিয়ে চিবিয়ে পুরোটা খাই তখন মস্তিষ্ক সিগন্যাল পায় যে অনেক বেশি খাওয়া হয়েছে এবং পেট বেশিক্ষণ ভরা থাকে, যদিও আপনি হয়তো পরিমাণ বাড়াননি খাবারের!

৩. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান

ফাইবার বেশ কাজের একটা উপাদান যখন আপনি ওজন কমাতে চাচ্ছেন। ফাইবার অনেক সময় পর্যন্ত পেট ভরা রাখে এবং এতে ক্যালরি থাকে না। এর সাথে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য সহ অনেক শারীরিক জটিলতার সমাধান দেয়। তো এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইলে ফাইবারের পরিমাণ বাড়িয়ে নিন ডায়েটে।

৪. প্লেট সাইজ কমিয়ে নিয়ে আসুন

প্লেট বড় হলে মন চাইবেই একটু বেশি খেতে কারণ প্লেট ভরে খাবার না হলে আত্মিক শান্তিটা ঠিক আসে না, সারাদিন মনে হয় আবার ক্ষুধা লাগছে! কিন্তু ওজনও তো কমাতে হবে, কী করা যায়? প্লেটের সাইজ কমিয়ে নিন। বড় প্লেটের জায়গায় ছোটো প্লেটে খাবার খেলে প্লেট ভরেও খাওয়া হবে, মন ভরেও খাওয়া হবে আবার ওজনও কমে আসতে শুরু করবে।

৫. প্রোটিন বাড়িয়ে দিন খাবারে

প্রতিবেলার খাবারে কার্বোহাইড্রেট আর ফ্যাট কমিয়ে দিয়ে বাড়িয়ে দিন প্রোটিনের পরিমাণ। এতে করে আপনার সুবিধা দুই দিক থেকে। প্রোটিন আমাদের শরীরের বিল্ডিং ব্লক, তাই প্রোটিন কিছুটা বেশি খেলেও শরীরের জন্য কোনো ক্ষতি নেই। আর প্রোটিন আপনাকে অনেক সময় পর্যন্ত ‘পেটভর্তি আছে’ এমন অনুভূতি দেয়। তাই অস্বাস্থ্যকর আর চিনিতে ভরা স্ন্যাক্স খাওয়ার ইচ্ছেও কমে যায়।

যতো কৌশলই থাকুক না কেনো দিনশেষে ওজন কমাতে আপনাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে আপনার নিজের ইচ্ছে এবং ধারাবাহিকতা। এই দুটো যত বেশি জিইয়ে থাকবে, ওজনও তত দ্রুত কমবে এবং আপনার নিজের আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। তাই ডায়েট, এক্সারসাইজ সবকিছুর সাথে নিজের মনের যত্নটাও জরুরী!

ছবি- সাটারস্টক

5 I like it
1 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort