ধরুন, খুব সুন্দর করে সেজেগুজে বিয়ের প্রোগ্রামে গেলেন। এখন হঠাৎ যদি কোনোভাবে পানি লেগে অথবা ঘামের কারণে ফেইসের মেকআপ উঠে যেতে শুরু করে, তাহলে প্রোগ্রামে উপস্থিত এতগুলো মানুষের সামনে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যেতে হবে, তাই না? ওয়াটারপ্রুফ ও স্ম্যাজপ্রুফ মেকআপ এর জন্য কিছু ট্রিকস ফলো করা উচিত। অনেকেই আছেন যারা খুব সুন্দরভাবে মেকআপ করতে পারলেও ঠিক কীভাবে মেকআপ লুকটাকে ওয়াটারপ্রুফ করে তোলা যায় সেই টেকনিকগুলো জানেন না। আজকের ফিচারে আপনাদের জন্য থাকছে ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ লুক ক্রিয়েট করার কিছু টিপস ও ট্রিকস।
ওয়াটারপ্রুফ ও স্ম্যাজপ্রুফ মেকআপ লুকের সিক্রেট
চলুন আগে কিছু বেসিক ইনফরমেশন জেনে নেই। ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ লুক হচ্ছে এমন মেকআপ যেটি পানি কিংবা ঘামের সংস্পর্শে সহজে উঠে আসে না। সাধারণত ক্লেনজিং অয়েল ও ফেইশ ওয়াশ ব্যবহার করে এই মেকআপ রিমুভ করতে হয়। আপনারা এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এই ধরনের মেকআপ বেশ লং লাস্টিং হয়ে থাকে। কি? জানতে ইচ্ছে করছে কীভাবে নিজের মেকআপ লুকটাকে একদম ওয়াটারপ্রুফ ও স্ম্যাজপ্রুফ করে তুলতে পারবেন? চলুন এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
১০টি টিপস অ্যান্ড ট্রিকস
১) মেকআপ শুরুর আগে জেল বেইজড ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন
মেকআপের আগে প্রোপারলি স্কিনকেয়ার করা হলে মেকআপ লুক ফ্ললেস ও লং লাস্টিং হয়। ময়েশ্চারাইজার স্কিনকেয়ারের জন্য ম্যান্ডেটরি একটি প্রোডাক্ট। ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ লুক ক্রিয়েট করার ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজারটি অবশ্যই হতে হবে জেল বেইজড। কারণ এই ময়েশ্চারাইজারগুলো অয়েলি/স্টিকি না হওয়ায় অ্যাপ্লাই করার পর সেপারেটিং এর চান্স থাকে না। সুন্দরভাবে স্কিনে অ্যাবসর্ব হয়ে যায়। আবার একইসাথে ফেইস এনাফ হাইড্রেটেডও থাকে।
২) সিলিকন বেইজড প্রাইমার ইউজ করুন
মেকআপ শুরু করার একদম প্রথম স্টেজ হলো প্রাইমার অ্যাপ্লাই করা। যদি আপনি চান আপনার মেকআপ লুক ওয়াটারপ্রুফ হোক, তাহলে সিলিকন বেইজড প্রাইমার বেছে নিন। এতে মেকআপ লং লাস্টিং হবে এবং ঘামের কারণে মেকআপ উঠে যাওয়ার চান্সও থাকবে না।
৩) মিডিয়াম টু ফুল কভারেজের ম্যাট ফাউন্ডেশন বেছে নিন
ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ লুক ক্রিয়েশনের ক্ষেত্রে সঠিক ফর্মুলার ফাউন্ডেশন বেছে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সাজেশন থাকবে মিডিয়াম টু ফুল কভারেজের ম্যাট ফাউন্ডেশন বেছে নেওয়া। ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাইয়ের সময় আপনারা একটি ট্রিক ফলো করতে পারেন। ফাউন্ডেশনের সাথে অল্প একটু সেটিং পাউডার মিশিয়ে তারপর ফেইসে অ্যাপ্লাই করুন। ভেজা বিউটি ব্লেন্ডার দিয়ে ড্যাব ড্যাব করে অ্যাপ্লাই করে নিন। এতে ইনস্ট্যান্টলি ম্যাট ও স্মুথ ফিনিশ পাবেন। পাশাপাশি ফেইস থেকে ফাউন্ডেশন সেপারেটিংও হবে না!
৪) ফাউন্ডেশন ও কনসিলার ব্লেন্ড করার আগে ফেইসে একবার সেটিং স্প্রে ব্যবহার করুন
সাধারণত সেটিং স্প্রে মেকআপের একদম লাস্ট স্টেজে ইউজ করা হয়। তবে আপনি যদি ওয়াটারপ্রুফ ও স্ম্যাজপ্রুফ মেকআপ লুক ক্রিয়েট করতে চান, তাহলে ফাউন্ডেশন ও কনসিলার অ্যাপ্লাই করে ব্লেন্ডিং শুরু করার আগে ফেইসে সেটিং স্প্রে ব্যবহার করে নিন।
এতে দু’টো বেনিফিট পাবেন-
- ফাউন্ডেশন ও কনসিলার ড্রাই আউট হবে না
- ব্লেন্ডিং শেষ করার পর বেইজ মেকআপ সেপারেট হয়ে যাবে না
৫) ব্লেন্ডিংয়ের জন্য ভেজা বিউটি স্পঞ্জ ইউজ করুন
মেকআপ লুক কতটুকু পারফেক্ট হবে তা অনেকটাই ডিপেন্ড করে আপনি কতটা নিঁখুতভাবে ফেইসে ফাউন্ডেশন ও কনসিলার ব্লেন্ড করছেন তার উপর। অনেকেই ব্লেন্ডিংয়ের জন্য ব্রাশ প্রিফার করেন। তবে স্ম্যাজপ্রুফ ও ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ লুক ক্রিয়েট করতে চাইলে অবশ্যই ভেজা বিউটি স্পঞ্জ/ব্লেন্ডার ব্যবহার করতে হবে।
এক্ষেত্রে আরেকটি ছোট্ট টিপস দেই। যদি বিউটি স্পঞ্জ ভেজাতে পানির বদলে সেটিং স্প্রে ইউজ করেন, তাহলে আপনার বেইজ স্মুথ হবে এবং একইসাথে ফাউন্ডেশন ও কনসিলার একদম পারফেক্টলি সেট হয়ে যাবে। ব্লেন্ডিংয়ের পর মেকআপ প্রোপারলি সেট করার জন্য ভেজা বিউটি স্পঞ্জের সাহায্যেই ফেইসে হালকাভাবে লুজ পাউডার অ্যাপ্লাই করে নিন। এতে পুরো বেইজ মেকআপ লং টাইম ইনট্যাক্ট থাকবে।
৬) ব্রো জেল দিয়ে আইব্রো সেট করুন
আমরা মোটামুটি সবাই আইব্রো এঁকে ডিফাইন করতে পছন্দ করি। আইব্রো আঁকার পর তা যেন সেট থাকে সেটা নিশ্চিত করতে শুরুতে আইব্রো পমেড দিয়ে আইব্রো আর্ট করে নিন। তারপর স্পুলির সাহায্যে একটা ওয়াটারপ্রুফ আইব্রো জেল দিয়ে আইব্রো ভালোভাবে সেট করে নিন।
৭) আই মেকআপের বেইজ হিসেবে ক্রিম আইশ্যাডো বেছে নিন
আই মেকআপ ওয়াটারপ্রুফ করা কিছুটা ট্রিকি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনারা আই মেকআপের বেইজ হিসেবে ক্রিম ফর্মুলার আইশ্যাডো অ্যাপ্লাই করতে পারেন। ক্রিম আইশ্যাডোর উপর যদি পাউডার আইশ্যাডো ব্যবহার করেন, তাহলে যত লম্বা সময়ই মেকআপ লুক ক্যারি করতে হোক না কেন, ক্রিজিং কিংবা আইশ্যাডো উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা একদমই থাকবে না।
৮) আইলাইনার অ্যাপ্লাইয়ের সময় লেয়ারিং টেকনিক ফলো করুন
‘বাইরে বের হলে কিছুক্ষণ পরই আইলাইনার উঠে পুরো ফেইসে ছড়িয়ে যায়‘ – এমন কমপ্লেইন কিন্তু অনেকেরই আছে। আইলাইনার ওয়াটারপ্রুফ ও স্ম্যাজপ্রুফ রাখতে আপনারা ফলো করতে পারেন লেয়ারিং টেকনিক। এই টেকনিকটা হলো প্রথমে লিকুইড আইলাইনার অ্যাপ্লাই করে তা ড্রাই হওয়ার পর ঐ লাইনারের উপরেই আরেক লেয়ার সেইম কালারের বা টোনের ক্রিম আইশ্যাডো অ্যাপ্লাই করা। এতে আইলাইনার ছড়িয়ে যাবে না, বরং আইলুক আরও সুন্দর দেখাবে।
৯) মাশকারা অ্যাপ্লাইয়ের আগে লুজ পাউডার অ্যাপ্লাই করুন
মাশকারা যেন কোনোভাবেই ছড়িয়ে না যায় তা নিশ্চিত করতে ওয়াটারপ্রুফ মাশকারা ব্যবহার করা উচিত, এটা নিশ্চয়ই কমবেশি সবাই জানেন। ওয়াটারপ্রুফ মাশকারা ব্যবহার করার পাশাপাশি একটি ছোট্ট ট্রিক শেয়ার করি। সেটি হলো মাশকারা অ্যাপ্লাই করার আগে একটি ড্রাই স্পুলির সাহায্যে আইল্যাশে অল্প করে লুজ পাউডার দিয়ে নেওয়া৷ এতে মাশকারা স্ম্যাজপ্রুফ হওয়ার পাশাপাশি আইল্যাশে ভলিউমও আসবে।
১০) ক্রিমি ফর্মুলার ব্লাশ ও হাইলাইটার বেছে নিন
সাধারণত পাউডার ফর্মুলার চেয়ে ক্রিম ব্লাশ ও হাইলাইটারগুলো বেশি লং লাস্টিং হয় এবং ঘাম হলেও একদম ঠিকঠাক থাকে। এই কারণেই পরামর্শ থাকবে ক্রিমি ফর্মুলার ব্লাশ ও হাইলাইটার ইউজ করতে। এক্ষেত্রে যদি আপনার কাছে এমন কোনো লিপস্টিক থাকে যেটা ইজিলি ব্লেন্ড করা পসিবল, তাহলে সেটাও ওয়াটারপ্রুফ ব্লাশ হিসেবে ইউজ করতে পারেন।
অনেকেই আছেন যারা মেকআপ ঠিকভাবে করেন ঠিকই, কিন্তু মেকআপ শেষে সেটিং স্প্রে ব্যবহার করতে ভুলে যান। এটি একটি বড় মিসটেক। মেকআপ লং টাইম ইনট্যাক্ট রাখার জন্য মেকআপ শেষে অবশ্যই সেটিং স্প্রে ব্যবহার করুন।
আশা করি, এখন আপনারা বুঝতে পেরেছেন কীভাবে আপনারা খুব সহজে যেকোনো প্রোগ্রাম বা অকেশনে ওয়াটারপ্রুফ ও স্ম্যাজপ্রুফ মেকআপ লুক ক্রিয়েট করতে পারবেন। যদি আপনারা অথেনটিক মেকআপ, স্কিন ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টের হিউজ কালেকশন থেকে নিজেদের পছন্দমতো শপিং করতে চান, তাহলে সাজগোজ হতে পারে আপনার জন্য ভরসার জায়গা। চাইলে আপনারা ভিজিট করতে পারেন সাজগোজের ওয়েবসাইট (শপ.সাজগোজ.কম), অ্যাপ কিংবা যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভারে থাকা সাজগোজের ফিজিক্যাল স্টোরে। আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকবেন সবাই।
ছবি- সাজগোজ