প্রোপার একটি স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করে চলার মেইন গোল হচ্ছে স্কিন হেলদি রাখা বা ত্বকের তারুণ্যকে ধরে রাখা। একটু খেয়াল করে দেখবেন, পরিচিত অনেকেরই বয়স হয়ে যাওয়ার পরেও স্কিন ইয়াংগার লুকিং থাকে। কারণ তারা স্কিনের যত্ন নেন ও হেলদি লাইফস্টাইল ফলো করেন। আবার জেনেটিক্যাল কিছু ব্যাপারও থাকে। আবার অনেকেরই দেখবেন যে অল্প বয়সে স্কিন রিংকেলস, ফাইন লাইনস ইত্যাদি প্রবলেমে ভরপুর! যার ফলে বয়স্ক লাগে দেখতে। বিশেষ করে কপালে বয়সের ছাপ আগে ভিজিবল হয় অনেকেরই। কপালের রিংকেলস ও ফাইন লাইনস অর্থাৎ এজিং সাইনস কীভাবে প্রিভেন্ট করা যায়, সেটা নিয়েই আজকের ফিচার।
অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ার কখন শুরু করবেন?
আমাদের রেগুলার লাইফের স্ট্রেস, বাইরের ধুলো ময়লা ও পল্যুশন এগুলোর জন্য ত্বকে বয়সের ছাপ চলে আসে অকালেই! তাই বয়স ২২-২৫ হলেই স্কিনের একট্রা কেয়ার নেওয়াটা মাস্ট। কারণ এই বয়সের পর থেকে স্কিন ইলাস্টিসিটি কমতে থাকে। কপালে রিংকেল পড়ারও এটাই মেইন কারণ। বয়সের সাথে সাথে রিংকেলস পড়বেই, এটা ন্যাচারাল একটা প্রসেস। আর রিংকেলস পড়ে গেলে সেটা পুরোপুরিভাবে দূর করা যায় না, এটাও সত্য! তবে, যেটা করা যায় তা হলো, স্কিনে প্রি ম্যাচিউর এজিং সাইনস ভিজিবল হওয়া প্রিভেন্ট করতে পারি আমরা। ত্রিশ এর পরেও যেন আয়নায় নিজেকে দেখে মনে হয় সেই বিশ বছরের মত ইয়াংগার লুকিং স্কিন; এটাই আমাদের চাওয়া।
কপালের রিংকেলস ও ফাইন লাইনস প্রিভেন্ট করুন সহজেই
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিন ইলাস্টিসিটি কমে যায়, স্কিন থেকে ন্যাচারাল অয়েল প্রোডিউস হওয়া কমে যায় এবং স্কিনের ভেতরের লেয়ারের ফ্যাট লস হতে থাকে। যার ফলে স্কিনে রিংকেলস পড়া শুরু হয়। এজন্য, অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ার রুটিন শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। প্রতিরোধের চেষ্টা করলে সেটার সুফল অবশ্যই আপনি পাবেন!
১. হাইড্রেটেড থাকুন
যদি প্রশ্ন করা হয়, কপালে রিংকেলস এর অন্যতম প্রধান কারণ কী? উত্তর হবে, ড্রাই ও ডিহাইড্রেটেড স্কিন! অয়েলি স্কিনে অনেক ক্ষেত্রে একটু দেরিতেই রিংকেলস পড়ে। তবে স্কিন ড্রাই ও ডিহাইড্রেটেড থাকলে অনেক ধরনের স্কিন প্রবলেমই আগে আগে আসতে পারে। তাই অবশ্যই স্কিনকে পরিপূর্ণ হাইড্রেশন দিতে হবে। দৈনিক অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন। আপনার স্কিনে স্যুট করে এমন ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ডেইলি দুইবার করে অ্যাপ্লাই করতে হবে। এতে করে স্কিন ময়েশ্চারাইজড থাকবে। এছাড়াও একট্রা প্রোটেকশন চাইলে এমন ধরনের ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ইউজ করতে পারেন, যেগুলো স্পেশালি রিংকেলস প্রিভেন্ট করার জন্যেই তৈরি।
২. দিনের বেলায় অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
একটু আগেই বলছিলাম সানস্ক্রিনের কথা। আপনি কি জানেন, লং টাইম ধরে স্কিন সান এক্সপোজড হলে বা ইউভি রশ্মির সামনে আসলে স্কিনে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিতে পারে অল্প বয়সেই? সান প্রোটেকশন না নেওয়া হলে বয়স বাড়ার আগেই কপালে রিংকেলস দেখা দিতে পারে। তাই ত্বককে সান ড্যামেজ থেকে বাঁচাতে বাইরে বের হওয়ার ২০ মিনিট আগে অন্তত এসপিএফ ৩০ যুক্ত সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করুন, এসপিএফ ৫০ হলে আরও ভালো। দিনের বেলায় বাসাতে থাকলেও সানস্ক্রিন মিস করবেন না।
৩. ভিটামিন সি সিরাম বেছে নিন
মার্কেটে নানা রকমের অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট রয়েছে। তবে এর মধ্যে সঠিক প্রোডাক্টটি খুঁজে বের করতে হবে যেটা আপনার স্কিনের প্রবলেম অনুযায়ী ঠিকঠাক সল্যুশন দিতে পারবে। ফুল ফেইসে মানে গালে, থুতনিতে, কপালে ড্যাব ড্যাব করে সিরাম অ্যাপ্লাই করতে হবে। ভিটামিন সি এমনই একটা ইনগ্রেডিয়েন্ট যেটা স্কিনের রিংকেলস, ফাইন লাইনস প্রিভেন্ট করে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইন রোধ করে। যাদের বয়স ২০+, শুধুমাত্র তারাই স্কিন কেয়ারে সিরাম অ্যাড করতে পারবে। এর আগে বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করতে হবে। দিনে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই ও রিঅ্যাপ্লাই (৩/৪ ঘণ্টা পর) করা কিন্তু মাস্ট।
৪. হায়ালুরোনিক অ্যাসিডযুক্ত প্রোডাক্ট রাখুন স্কিন কেয়ার রুটিনে
বর্তমানে এই নামটা কম বেশি সবার কাছেই পরিচিত, তাই না? হায়ালুরোনিক অ্যাসিড এমন একটি উপাদান যেটা কপালের রিংকেলস প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে। এটি বয়সের ছাপ কমিয়ে স্কিনের ইলাস্টিসিটি বাড়াতে হেল্প করে। সেই সাথে স্কিনে হাইড্রেশনও প্রোভাইড করে। স্কিন কেয়ার রেঞ্জে এই উপাদানটি এখন বেশ ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রোডাক্ট সিলেক্ট করার সময় উপাদানের লিস্টটা চেক করুন।
৫. রেটিনল দিয়ে এজিং সাইনস এর ম্যাজিকাল সল্যুশন
আরেকটা ইফেক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হচ্ছে রেটিনল। রেটিনল এমন একটা স্টার ইনগ্রেডিয়েন্ট যেটা অ্যান্টি এজিং এর ক্ষেত্রে জাদুর মতো কাজ করে। রেটিনল রিংকেলস দূর করতে সাহায্য করে, স্কিনটোনকে ইভেন করে এবং আপনাকে খুব অল্প সময়ে ফ্রেশ ও গ্লোয়িং স্কিন উপহার দিতে পারে! কি বিশ্বাস হচ্ছে না? মাত্র ৪ সপ্তাহে আপনি নিজেই পজেটিভ রেজাল্ট দেখতে পারবেন। এটি ত্বকের কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়াবে, স্কিনকে হেলদি করে তুলবে। রেটিনল রাতের বেলায় স্কিন কেয়ারে ইউজ করতে হয়। দিনে অবশ্যই সান প্রোটেকশন নিতে হবে।
৬. ফেইস ইয়োগা বা ম্যাসাজ
আমাদের ফেইসের এক্সপ্রেশনের কারণে যেমন রিংকেলস পড়ে, তেমনই ফেইস ইয়োগা ও ম্যাসাজের মাধ্যমেও রিংকেলস পড়া প্রতিরোধ করা যায়। ফেইস ইয়োগার জন্য ভিন্ন ভিন্ন পোজ ও এক্সারসাইজ রয়েছে। তবে এই ব্যাপারে সিরিয়াস থাকতে হবে এবং ডেইলি বেসিসে ফেইস ইয়োগা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে আপনি বেনিফিট পাবেন। ফেইস ম্যাসাজের সময় গুয়াশা বা জেড রোলার ইউজ করতে পারেন। ফেইসে কোনো সিরাম বা ফেসিয়াল অয়েল লাগিয়ে নিয়ে জেড রোলারের সাহায্যে ফেইস ম্যাসাজ করে নিন। কপালের রিংকেলস প্রিভেন্ট করতে অর্থাৎ অ্যান্টি এজিং এর ক্ষেত্রে এটি দারুণ কাজ করে।
কিছু সতর্কতা
১) রেটিনল আর ভিটামিন সি একসাথে ইউজ করলে একটি আরেকটিকে ইনঅ্যাকটিভ করে ফেলে। সেক্ষেত্রে একটি সকালে, আরেকটি রাতে ব্যবহার করতে পারেন। রেটিনল রাতে ইউজ করলে, পরের দিন সকালে বেসিক স্কিন কেয়ার করে ভিটামিন সি সিরাম লাগাতে পারেন।
২) একই সাথে দুই বা ততোধিক সিরাম ফেইসে লাগাবেন না ভুলেও! একটি অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট অন্য অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস এর সাথে মিক্স না করাই ভালো। অল্টারনেট ডে তে ইউজ করবেন।
৩) স্কিন কেয়ারে সিরাম অ্যাড করার আগে অবশ্যই বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন ভালোভাবে ফলো করতে হবে। আর নতুন কোনো প্রোডাক্ট ইউজ করার আগে প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া কিন্তু মাস্ট।
এই তো জেনে নিলেন কপালের রিংকেলস ও ফাইন লাইনস প্রতিরোধের উপায়। স্কিন কেয়ার রিলেটেড কোনো প্রশ্ন থাকলে সাজগোজের ফেইসবুক পেইজে ইনবক্স করতে পারেন অথবা কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন। অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস এর জন্য শপ.সাজগোজ.কম আমার ভরসার জায়গা। তাদের চারটি ফিজিক্যাল স্টোর আছে সীমান্ত সম্ভার, যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগরে (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে)। সেখানে গিয়ে দেখে শুনেও কিনে নিতে পারেন আপনার প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট।
ছবি- সাজগোজ