জিনিস পুরনো হলেই সেগুলো আমরা ফেলে দিতে চাই। ভাবি বাতিল জিনিস আর কী ই বা কাজে আসবে! অথচ ফেলে দেয়ার মতো জিনিসপত্র থেকেও চমৎকার সব দরকারি সামগ্রী তৈরি করে নেয়া যায়। বানানো যায় নিজের ব্যবহারের কোনো অনুষঙ্গ, ঘরে সাজিয়ে রাখার শোপিস বা খুব প্রয়োজনীয় কোনো কাজের সামগ্রী। তাতে বেশ অনেকটা সময়ও দিতে হয়। যত্ন পেলে তবেই তো সুন্দরভাবে তৈরি হবে নতুন জিনিসটা! তাই বাতিল জিনিসগুলো চট করে ফেলে না দিয়ে সংগ্রহে রেখে দিন, কখনো হয়তো কোনো কাজে লেগেও যেতে পারে। আজ চলুন এমনই কিছু বাতিল জিনিস এর নতুন ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেই।
বাতিল জিনিস এর নতুন ব্যবহার
পুরনো কাপড়
এই এক বস্তু পাওয়া যাবে কমবেশি সবার ঘরেই। পুরনো বলতে একেবারেই বাতিলের খাতায় নাম লেখানো কাপড়ের কথা বলছি। অনেকদিন আগের কাপড় কিন্তু নষ্ট হয়ে যায়নি, তেমন নয়। যে কারো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যাওয়া কাপড়গুলো বস্তাবন্দী করে ফেলে দেয়ার আগে একটু ভাবুন। কয়দিন বাদে ঘর ঝাড়ামোছা করার কাপড়ের খোঁজ পড়লে তখন কাজে লাগতো না এসব? নষ্ট কাপড়ের ভালো যতটুক অংশই পাবেন, কেটে রেখে দিন। ব্যবহারে নিজের সুবিধা মতো দুই/তিন পরত করে সেলাই দিয়ে নিতে পারেন। ঘরের কোণে ছোট্ট এক টুকরো ফ্লোরম্যাটও বানিয়ে রেখে দিতে পারেন এমন কাপড় থেকে।
কাগজ
খবরের কাগজ নিশ্চয়ই বিক্রি করে দেয়া হয় বা এমনিই দিয়ে দেন কোথাও। সব খালি করে দিয়ে দিবেন না, কিছু কাগজ সবসময়ই জমিয়ে রাখুন ঘরে। পুরনো খাতাপত্রেরও কিছু কিছু রেখে দিন এমন। ভেজা কাগজে আয়না ভালো পরিষ্কার করা যায়, তখন কাজে লাগবে খবরের কাগজ। হুট করে বাসায় ঠোঙ্গার দরকার পড়লে যেকোনো কাগজ ভাঁজ করে পিন লাগিয়ে নিয়ে কাজ চালাতে পারবেন। তাই একেবারেই ঘর পরিষ্কার না করে এসব জঞ্জাল রেখে দিন অল্প কিছু। প্রয়োজনের সময় খুব কাজে দেবে।
পুরনো খবরের কাগজ দিয়ে নতুন আরেকটি জিনিসের ব্যবহার জানাই আপনাদের। আপনারা অনেকেই গাছ লাগাতে ভালোবাসেন। বীজ থেকে চারা করার জন্য হুট করে ছোট টব পাওয়া যায় না। এ সময় কাজে আসতে পারে পুরনো খবরের কাগজ। কাগজ ভাঁজ করে স্ট্যাপল করে বা গ্লু দিয়ে লাগিয়ে নিন। এবার তাতে অল্প মাটি দিয়ে বীজ পুঁতে দিন। কয়েকদিন পানি স্প্রে করুন। এরপর বীজ থেকে চারা হয়ে গেলে কাগজ সহই বড় টবে লাগিয়ে দিন। কাগজ পরে মাটিতে মিশে যাবে। গাছও বড় হতে থাকবে।
পুরনো কেতলি
বাসায় অনেকদিনের ব্যবহার করা কেতলি পড়ে আছে? স্টিলের কেতলি রেখে দিলে জং ধরে যায়, আবার কাঁচের হলে হাতল ভেঙে গেলে ব্যবহার করা যায় না। এমন হলে স্টিলের পুরনো কেতলিতে ছোট ফুল গাছ লাগিয়ে ফেলতে পারেন, কাঁচেরটাতেও পানি দিয়ে তাতে গাছ বা ফুল সাজিয়ে রাখতে পারেন। দেখতে যেমন ভিন্ন লাগবে তেমনই বাতিল বলে ফেলেও দিতে হবে না।
কৌটো
প্রসাধনী ব্যবহারের পর কৌটোটা ফেলেই দেয়া হয়। সব না ফেলে দিয়ে সুবিধা মতন কয়েকটা জমিয়ে রাখুন ঘরে। কোনো তাকের ভেতর রেখে দিন এক কোণায়। ক্রিমের ডিব্বাটা আপনার ক্লিপ, সেফটিপিন, কানের দুল, হেয়ারব্যান্ড রাখার জন্য কাজে লাগতে পারে। ছোট্ট লোশনের বোতলে ভ্রমণে যাওয়ার সময় বড় বোতল থেকে অল্প লোশন, শ্যাম্পু এসব ঢেলে নিতে পারেন। জিনিসপত্রের বোঝা তাতে কিছুটা তো কমবেই।
মগ
প্রিয় মগের হাতলটা ভেঙে গেছে হঠাৎ। বাতিল জিনিসের খাতায় তুলে ফেলে দিচ্ছেন। না ফেললে কিন্তু অনেক কাজেই লাগানো সম্ভব মগটাকে। ছোট্ট কোনো গাছ রাখতে পারেন এমন মগে বা কলমদানি হিসেবে টেবিলেও থাকতে পারে মগটা।
প্লাস্টিকের বোতল
আমাদের সবার বাসাতেই সবচেয়ে কমন একটি জিনিস হচ্ছে প্লাস্টিকের বোতল। বেশ কয়েকটি জমে গেলে সেগুলো একসাথে করে আমরা ফেলে দেই। ফেলে না দিয়ে এই বোতলগুলোতে লাগিয়ে ফেলতে পারেন গাছ। বারান্দায় রাখার জন্য পুদিনা, ধনিয়ার মতো কিছু ছোট ছোট গাছ লাগানোর জন্য প্লাস্টিকের বোতলগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া কালার করে নিলে মানিপ্ল্যান্ট, ফিলোডেনড্রনের মতো গাছগুলোও সাজিয়ে রাখলে বেশ সুন্দর দেখাবে।
সব বাতিল জিনিসকেই পুরোপুরি বাতিল করে দেয়ার আগে তাই আরেকবার ভেবেই নিন, নতুন করে কোনো কাজে লাগানো যাবে কিনা! হয়তো কাজে লেগে গেলো যা কিনা একটু আগে আপনি ফেলেই দিচ্ছিলেন। পুরনো জিনিস নিজের ব্যবহারের সাথে সাথে পরিবেশকেও ভালো রাখে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হলেও এখন থেকেই আমাদের রিসাইক্লিং শুরু করা উচিত।
লিখেছেন – মুমতাহীনা মাহবুব
ছবি – দ্য স্প্রুস, সাটারস্টক