গরমে অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতি কেমন হওয়া চাই, বলুন তো? আজ এ নিয়েই লিখতে বসেছি। ঘরে অতিথি নিমন্ত্রণ করেছেন, তাদের সংখ্যাটা নেহাৎ কম নয়, এমন একটা অবস্থায় ঘরের কর্ত্রীর কপালে চিন্তারেখা তো দেখা দেবেই। নিমন্ত্রিতদের সবকিছুই নিজে তৈরি করে খাওয়াবেন বলে ইচ্ছা আপনার। আবার, আপনার রান্নার বেশ সুনাম। তাই দলবল নিয়ে নিজেরাই নিজেদের দাওয়াত করে বসেছে মেহমানরা। আপনার কাছে ভালোমন্দ রান্না খাওয়ার আবদার তাদের। অগত্যা আয়োজনের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়।
গরমে অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতি
খাবারের মেন্যু কী হবে, কোন কোন পদ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, কোন পদটা সবচেয়ে ভাল তৈরি করতে পারবেন বা আপনার মেহমানরা কী কী খেতে পছন্দ করবে, সব ভাবনা এসে জুটবে আপনার মাথায়। তাই একদিনের দাওয়াতে কেমন হতে পারে আপনার আপ্যায়নের ধরন, কী হবে খাবারের অবস্থা, সেসব নিয়েই খানিকটা ধারনা পেতে পারেন এই লেখাতে।
অতিথি এলে প্রথমেই অভ্যর্থনা জানিয়ে কোন একটা পানীয় পরিবেশন করা এক রকম ভদ্রতা। বাঙ্গালী রীতিতে চা-টাই ব্যাপকভাবে চলে বা কখনো খুব সাধারণ লেবু শরবত কিংবা বাজারজাত কোমল পানীয়। এই ক্ষেত্রেও নিজ হাতে বানানো অন্য কোন পানীয় পরিবেশন করুন, যা হবে অনেক বেশি চনমনে। অতিথি তৃপ্ত হবে শুরুতেই। গরমের দিনে কাঁচা আমের টক-ঝাল-মিষ্টি শরবত, তরমুজের শরবত বা বরফঠান্ডা এক গ্লাস লাচ্ছির কোন তুলনা নেই। এসব কিছুই হোক আপনার ওয়েলকাম ড্রিঙ্ক।
অতিথিদের মাঝে বড় সদস্যদের জন্য কাঁচা আম বা তেঁতুলের শরবত বানিয়ে দিন। কিন্তু ছোটদের জন্য রাখুন মিষ্টি কোন ফলের রসের শরবত। তরমুজ, পাকা আম বা কলা দিয়ে স্মুদি হতে পারে বাচ্চাদের জন্য দারুণ কিছু। দুধ এবং আইস্ক্রিমের স্বাদে মিল্কশেকও বাচ্চাদের তৃপ্ত করবে এবং খুব সহজেই বানিয়ে দিতে পারেন এমন যেকোন কিছু। তাছাড়া সবার জন্য ডাবের পানির সাথে লেবু, অল্প লবণ আর চিনি, চাইলে পুদিনা পাতা যোগ করে তৈরি করতে পারেন চমৎকার এক পানীয়।
মূল খাবারপর্বের আগে কিছু হালকা নাশতা থাকা ভালো। নিমন্ত্রণের মজাটা বেশ ভরপুর আসবে যখন অতিথিকে আপনি কয়েক পর্বে খাদ্য পরিবেশন করতে পারবেন। পানীয় দিয়ে সতেজ হবার পরে এক কাপ চা চলতেই পারে; সাথে দুই-এক পদের নাশতা। কম সময়ে করে দিতে পারেন নুডুলস, নুডুলস দিয়ে পাকোড়া, ঝাল কোন পিঠা অথবা পেঁয়াজ-মরিচ আর সরিষার তেলের খাঁটি দেশি স্বাদে হয়ে যাক মুড়িমাখা। হালকা মশলায় আলু সেদ্ধ-কাবলির ঘুগনি করে দেয়া যায়। আসল খাবার যখন বাকিই রয়েছে এই হালকা নাশতার পাট যথাসম্ভব হালকা থাকাই ভালোই।
নাশতার পাট চুকে গেলে কিছু সময়ের বিরতির পরেই আসবে মূল খাবারের পালা। কী রাঁধবেন, খাবার অতিথিদের মনমতো হবে কিনা, আপনি ভালো করে তৈরি করতে পারবেন কিনা এসব চিন্তা তো থাকেই। তবে খেয়াল রাখবেন, খাদ্য তালিকা হবে সময় বুঝে। গরমে অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এ মাথায় রাখবেন। সময় ভুলে যা ইচ্ছা তাই ভূরিভোজন হলো, পরে কিন্তু অসময়ে অসুস্থ হয়ে পড়া লাগতে পারে!
সময়টা যখন অস্থির গরমের, দাওয়াতের প্রধান খাবারপর্বও যথাসম্ভব হালকা থাকা চাই। বিরিয়ানি, পোলাও, মাংসের মশলাদার ভুনা, ডিমের কোরমা এ সমস্ত ভারি খাবার যতোটুক পারেন বাদ রাখুন। বাঙ্গালীর ভূরিভোজ বিশেষত দাওয়াতের খাবার হিসেবে এগুলো আয়োজনে রাখা হয় খুব। আপনি বরং অন্য কিছুই ভাবুন।
পাঁচ-সাত পদের ভর্তা, আমডাল, দুই-তিন রকম ভাজি আর ছোটমাছের ঝালে-ঝোলে আয়োজন হোক আপনার ঘরের দাওয়াতে। সাথে মাংসের একটা পদ থাকুক কম তেল-মশলায়। আলু, ডিম, বরবটি, চিংড়ি মাছ, বেগুন, নারকেল, শুঁটকি ইত্যাদি নানা পদের ভর্তায় মন ভরবে না তেমন বাঙ্গাল অতিথি খুঁজে পাওয়া ভার। গ্রীষ্মকালে আমের টকের বিভিন্ন পদও বেশ মুখরোচক হয়। ডালের সাথে আম দিয়ে যেমন চমৎকার টকডাল বানিয়ে ফেলতে পারবেন, তেমনি পুঁঠি মাছও আমের টকে রাঁধলে খেতে দারুণ হয়। বানিয়েই দেখুন নিজে। মেহমান প্রশংসা না করে যাবে না! বেগুনের আচারি স্বাদের মাখো মাখো রান্নাটা আপনার তৈরি খাবারের আকর্ষন বাড়িয়ে দেবে অনেক। নারকেলের সাথে চিংড়ি, শুকনো মরিচ ভাজা বেটে যে ভর্তাটা করবেন, শেষে কম পড়ে যায় কিনা ভাবতে হবে। কে বলেছে দাওয়াত মানেই পোলাও-কোর্মা?
শেষ পাতের মিষ্টিতে শাহী টুকরা তৈরি করতে পারেন। পাউরুটি, দুধ, চিনি, কনডেন্স মিল্কের শাহী টুকরা ঘরে বানানো মিষ্টি হিসেবে মন্দ হয় না। কিংবা করতে পারেন নারকেল দিয়ে পায়েশ। সুজির বরফি, ডিমের হালুয়াও জমে যাবে শেষ পাতে।
গরমে অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতি অনেক কিছুই বললাম। এমন একটি দাওয়াতের পর অতিথির দল আপনার সুনাম করেই খুশি মনে বিদায় নেবে, নিশ্চিত থাকুন।
ছবি – সংগৃহীতঃ সাটারস্টক