পার্টি বা দাওয়াতে যাওয়ার জন্যে খুব সুন্দর করে সেজেছেন। একদম মন মতো! সাঁজের সাথে মিলিয়ে গেট আপ, ড্রেস আপ সব কিছুই পারফেক্টলি করা শেষ। কিন্তু বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মনে হচ্ছে সাঁজটা যেন আর আগের মতো নেই। মুখ কালচে দেখাচ্ছে আর তখন মনটা একদম খারাপ হয়ে যায়! এমনটি কিন্তু আমাদের অনেকের সাথেই হয়ে থাকে প্রায়ই। শুরুতে মেকআপ মন মতো হলেও যত সময় যেতে থাকে আস্তে আস্তে মেকআপ কালচে হতে থাকে। তাইনা? কিন্তু কেন?
মূলত আমরা যে ফাউন্ডেশন ব্যবহার করি তা অনেক সময় অক্সিডাইজড হয়ে যায়, যার ফলে স্কিন কালচে দেখায়। শুধু ফাউন্ডেশনের জন্যেই যে এমনটি হয় তা নয়। আরও বিশেষ কিছু কারণে এমন হতে পারে। তাই, আজকে জেনে নিব, কেন এমনটি হয় এবং এমন হলে কী করণীয় সে সম্বন্ধে।
প্রথমেই জেনে নেই অক্সিডাইজেশন এফেক্ট কী?
ত্বকে ফাউন্ডেশন অক্সিডাইজড কেন করছে এর একদম নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে আমাদের স্কিনে স্বাভাবিক যে অয়েল বা তেল রয়েছে তা ব্যবহৃত ফাউন্ডেশনের অয়েল এবং ফর্মুলার সাথে একসাথে হয়ে স্বাভাবিক ভাবেই রিঅ্যাক্ট করে। এছাড়াও আমাদের স্কিনের পি.এইচ লেভেলও (Ph Level) এর জন্য দায়ী। পাশাপাশি সূর্যের তাপ, বাতাসের আর্দ্রতা এগুলার প্রভাবেও স্কিন রিঅ্যাক্ট করে এবং এর ফলে ফাউন্ডেশন অক্সিডাইজড হয়ে থাকে।
খুব সহজে বুঝালে, একটি আপেল কেটে রাখার কিছুক্ষণের মাঝেই তা বাতাসের সংস্পর্শে এসে ধীরে ধীরে কালচে হতে থাকে। দেখেছেন নিশ্চয়ই? আমাদের ত্বকে ফাউন্ডেশন ব্যবহার করার পর যে কালচে ভাবটা আসে, এই বিষয়টিও অনেকটা আপেল কালো হয়ে যাওয়ার মতোই।
কীভাবে মুখ কালচে হওয়া রোধ করবেন ?
আমাদের প্রত্যেকের স্কিন টাইপ ভিন্ন। ত্বকের ধরণ আলাদা হওয়ায় স্কিন নিয়ে সমস্যাগুলোও একজন থেকে আরেকজনের ভিন্ন। তবে সমস্যা যেমন আছে তেমনি সমস্যার সমাধানও রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, ফাউন্ডেশন অক্সিডাইজড হওয়া থেকে বিরত রাখার কিছু উপকারী টিপস।
১) প্রাইমার ব্যবহার না করে কোনোভাবেই ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করবেন না
আচ্ছা! আমরা প্রাইমার ব্যবহার করি কেন বলুন তো? প্রাইমার আমাদের স্কিনের বিশেষ কিছু কাজে হেল্প করে। যেমন:
- প্রাইমার ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
- আমাদের ত্বকের অতিরিক্ত সেবাম প্রডাকশনকে নিয়ন্ত্রণ করে মুখের তেলতেলে ভাব দূর করে ।
- প্রাইমার আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
- ত্বকের স্বাভাবিক স্কিনটোন সমানভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে।
প্রাইমার যে শুধু ত্বকের অতিরিক্ত সেবাম প্রডাকশন নিয়ন্ত্রণ করে তা কিন্তু নয়। পাশাপাশি আমাদের ত্বক এবং ফাউন্ডেশনের মাঝামাঝি একটি লেয়ার তৈরি করতে সাহায্য করে। এই লেয়ারটি আমাদের ত্বক থেকে সৃষ্ট অয়েলকে ফাউন্ডেশনের সাথে মিক্স হওয়া থেকে বিরত রাখে। পাশাপাশি কোন ধরনের রিঅ্যাকশন হওয়া থেকেও স্কিনকে মুক্ত রাখে। তাই মেকআপও কালচে হয়ে যায়না।
২) অবশ্যই স্কিন টাইপ অনুযায়ী প্রাইমার সিলেক্ট করবেন
যেকোন স্কিনকেয়ার বা মেকআপ রিলেটেড প্রোডাক্ট কেনার সময় নিজের স্কিনটাইপ অনুযায়ী কেনার চেষ্টা করবেন। প্রাইমারের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। স্কিনটাইপ অনুযায়ী প্রাইমারের ধরণও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন:
- ড্রাই স্কিন হলে হাইড্রেটিং প্রাইমার সিলেক্ট করতে চেষ্টা করুন।
- অয়েলি স্কিনের জন্য ম্যাটিফায়িং প্রাইমার দারুণ কার্যকরী।
- স্কিন টাইপ কম্বিনেশন হলে ত্বকের যে অংশটি ড্রাই সেখানে হাইড্রেটিং প্রাইমার এবং যে অংশটি অয়েলি মনে হয় সেখানে ম্যাটিফায়িং প্রাইমার ব্যবহার করতে হবে।
৩) নিয়মিত বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন মেইনটেইন করতে হবে
প্রপার স্কিন কেয়ার রুটিন মেনটেইন করা এবং আপনি যে প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করছেন সেগুলো আপনার স্কিনকে প্রোটেক্ট করবে কি না এগুলো সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে। পাশাপাশি কোন ইনগ্রেডিয়েন্টস আপনার জন্য ভালো হবে এটা খুঁজে বের করা, হেলদি ডায়েট আর সময়মত বিশ্রাম নেওয়া এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। ত্বকের যত্নের কিছু বেসিক ধাপ মেনে চলতে হবে। যেমন:
- সপ্তাহে কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার স্ক্রাবিং এবং নিয়মিত প্রপার ক্লেনজিং করা।
- টোনিং করা।
- স্কিনের সমস্যা অনুযায়ী সিরাম অ্যাপ্লাই করা।
- স্কিনকে ময়েশ্চারাইজ করা।
- দিনের বেলা সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা।
এই বিষয়গুলো ঠিকঠাক ভাবে খেয়াল রাখতে হবে। স্কিন ভাল থাকলে মেকআপ ব্যবহারের পর স্কিন অক্সিডাইজড হওয়ার মতো সমস্যাগুলো সহজেই প্রতিহত করা যাবে।
৪) স্কিনের পি.এইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখা জরুরি
ফাউন্ডেশন অক্সিডাইজড করার আরেকটি অত্যতম কারণ হচ্ছে যখন স্কিনের পি.এইচ ব্যালেন্স ঠিক থাকেনা। পি.এইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্যে একটি ভাল মানের টোনার ব্যবহার করতে পারেন। আমরা অনেকেই মনে করে থাকি টোনার ব্যবহারের তেমন কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু টোনার আমাদের স্কিনের বিশেষ কিছু সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে। যেমন:
- টোনিং করার ফলে আমাদের ত্বকের বলিরেখা বা এজিং নিয়ে যে সমস্যাগুলো হয় তার সমাধান পাওয়া যায়।
- ত্বকের বাড়তি পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে টোনিং।
- পি.এইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখে।
- অতিরিক্ত তেল, মরা কোষ, ময়লা, মেকআপ দূর করে ত্বকের সজীবতা বজায় রাখে।
- মুখের ক্লান্তিকর ভাব দূর করে উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
- ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ও অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ রোধ করে।
তাই বুঝতেই পারছেন ত্বকের যত্নে টোনার ব্যবহার কতটা গুরুত্বপূর্ণ। স্কিনের পি.এইচ ব্যালেন্স ঠিক থাকলে ফাউন্ডেশনক অক্সিডাইজড হওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিবেনা।
৫) ভালমানের সেটিং স্প্রে এবং সেটিং পাউডার ব্যবহার করতে ভুলবেন না!
মেকআপ পুরোপুরি করা হয়ে গেলে অবশ্যই স্কিন টাইপ বুঝে একটি ভালমানের সেটিং পাউডার ব্যবহার করে মেকআপ সেট করে নিবেন। সবশেষে সেটিং স্প্রে দিয়ে মেকআপটি লক করে নিবেন। যাদের অয়েলি বা কম্বিনেশন স্কিন টাইপ তারা কোনোভাবেই এই স্টেপটি বাদ দিবেন না।
এছাড়াও মেকআপ শেষ করার পর সেটিং স্প্রেটি পুরো মুখে স্প্রে করার বিশেষ কিছু বেনিফিট রয়েছে। যেমন:
- সেটিং স্প্রে মেকআপ লং লাস্টিং করে এবং সারাদিন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
- মেকআপ করার পর মুখ অতিরিক্ত পাউডারি মনে হলে সেটিং স্প্রে মুখে স্প্রে করে নিতে পারেন। এতে নিমিষেই পাউডারি ভাব দূর হয়ে যাবে।
- সেটিং স্প্রে ব্যবহারে স্কিন অনেকটাই গ্লোয়ি এবং ন্যাচারাল লাগবে দেখতে।
তাই যাদের স্কিন মেকআপ করার পর পর কালচে দেখায়, তারা চেষ্টা করবেন কোনোভাবেই সেটিং স্প্রে এবং সেটিং পাউডার ব্যবহার করা স্কিপ না করতে।
এইতো জেনে নিলাম ফাউন্ডেশন অক্সিডাইজড কেন হয় এবং খুব সহজেই কীভাবে এর সমাধান পেতে পারি তা নিয়ে। এ ধরনের সমস্যায় যেন না পড়তে হয় তাই মেকআপ প্রোডাক্টস কেনার আগেই আমরা অনেকেই সতর্ক থাকি। কিন্তু তারপরও কেন এমনটি হয় তা আমরা অনেকেই জানিনা। নিয়মিত প্রপারলি স্কিনকেয়ার করলে এবং মেকআপ করার আগে পরে কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে আশা করছি খুব সহজেইএ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের জন্য অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে আপনারা সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন, যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সুন্দর থাকবেন।