কালের আবর্তনে চুলের সাজসজ্জায় এসেছে বিচিত্রতা। নানা ধরনের স্টাইলিশ হেয়ার কাটে নিজের লুকে চেঞ্জ আনছে অনেকেই, আবার কেউ কেউ চুলে কালার করছেন। ছোট চুলের ট্রেন্ড চললেও লম্বা, কালো ও ঘন চুলের আবেদন কমেনি একটুও! কোমর অবধি এক রাশ কালো চুল থাকবে, বেশিরভাগ মেয়েদেরই স্বপ্ন এটা। কিন্তু দেখা যায় যে চুল বড় রাখতে চাইলে আগা পাতলা হয়ে ফেটে যায়, লালচে দেখায় কিংবা চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। তাহলে উপায়? লম্বা চুলের যত্ন নেওয়ার টিপস অ্যান্ড ট্রিকস শেয়ার করবো আজকের আর্টিকেলে। ঘন, কালো ও মজবুত চুল পেতে একটু বাড়তি যত্ন তো নিতেই হবে!
চুল একটু বড় হলেই কেন আগা ফেটে যায়?
এই প্রশ্নটা অনেকেই করেন! লম্বা চুল রাখতে চায় কিন্তু আগা ফেটে চুলের অবস্থা একদমই খারাপ হয়ে গেছে। এই অভিযোগ আমি অনেকের কাছেই শুনেছি। প্রথমেই নজর দিন আপনার ডায়েট চার্টে। চুল যদি শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাড় করতে না পারে, তাহলে চুলের স্বাস্থ্য খারাপ তো হবেই। চুল, নখ কাটলে ব্যথা পাই না কেন আমরা, জানেন সেটা? কারণ এগুলো মৃত কোষ, শরীরের সব চাহিদা মিটিয়ে নিউট্রিয়েন্ট এই কোষগুলোতে পৌঁছে। চুলের সুস্থতার জন্য প্রোপার ডায়েট কিন্তু মাস্ট।
এছাড়াও লম্বা চুল ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার পেছনে আরও কিছু কারণ আছে। যেমন-
- চুল ওভার ওয়াশ করা
- কন্ডিশনিং না করা
- অদক্ষ হাতে চুলে কালার বা রিবন্ডিং করা
- হিট প্রোটেকটর স্প্রে ছাড়া চুলে রেগুলার স্ট্রেইটনার ইউজ করা
- চুলের যত্নে ভুল প্রোডাক্ট সিলেক্ট করা ইত্যাদি
লম্বা চুলের যত্ন নেওয়ার সহজ উপায়
চুল ঘন, লম্বা ও মজবুত রাখতে সহজ উপায় আছে কি? এই ব্যস্ত শহুরে জীবনে এতো সময় নেই আমাদের, এটা সত্যি। আমাদের নানী-দাদিরা প্রাকৃতিক ও খাঁটি উপাদান ব্যবহার করতেন, সেই সময়ে পল্যুশন, স্ট্রেস, ভেজাল এগুলো কিন্তু কমই ছিল। তাদের চুলও ছিল কোমর পর্যন্ত! আসলে সেই সময়ের সাথে এখনকার বাস্তবতা একদমই ভিন্ন। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের জীবনযাত্রাতেও অনেক চেঞ্জ এসেছে। এখনকার দিনে আমরা সেলফ কেয়ারের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় ফিরে আসি। লম্বা চুলের যত্ন নিতে কোন কোন স্টেপস ফলো করতে হবে, সেগুলো চট করে জেনে নেই চলুন।
চুলের নারিশমেন্টের জন্য অয়েল ট্রিটমেন্ট
মজবুত ও লম্বা চুল পেতে কোকোনাট অয়েলের উপকারিতা সবাই জানেন! এই তেলে আছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিনস। যারা চুল বড় করতে চাইছেন কিন্তু চুলের আগা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, তাদের হেয়ার প্রবলেমের সল্যুশনে হেয়ার অয়েলিং কিন্তু মাস্ট! এটি ক্যারিয়ার অয়েল হিসাবে কাজ করে। নারকেল তেলের সাথে পেঁয়াজের রস ও কালোজিরা গুঁড়ো মিক্স করে চুলে ও স্ক্যাল্পে অ্যাপ্লাই করলে উপকার পাবেন। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন অয়েল ম্যাসাজ করতে পারেন। চুলে তেল লাগিয়ে আধা ঘন্টা রেখে তারপর কোনো মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। এতে চুল হবে নারিশড ও সফট। তাহলে লম্বা চুলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তেল লাগাতে ভুলবেন না!
ডিপ কন্ডিশনিং
লম্বা চুলের জন্য প্রয়োজন একটু এক্সট্রা কেয়ার। চুল বড় হতে থাকলে ফ্রিজিনেস বা রুক্ষতা দেখা দিতে পারে। যাদের চুল ড্রাই ও ডিহাইড্রেটেড, তাদেরই কিন্তু চুলের আগা ফাটা এবং লালচে হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। তাই সপ্তাহে যেদিন সময় পাবেন, চুলে ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক অ্যাপ্লাই করুন। নানা রকম নারিশিং হেয়ার মাস্ক, ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক, হাইড্রেটিং হেয়ার মাস্ক, ড্যামেজ রিপেয়ার মাস্ক এখন পাওয়া যায়। আপনার চুলের প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো একটি বেছে নিন।
চুল মুছতে নরম সুতি কাপড়
খসখসে মোটা তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল পেচিয়ে রাখলে চুলের আর্দ্রতা হারিয়ে যায় খুব সহজেই। গামছা বা তোয়ালে দিয়ে চুল ঝাড়লে সেটা চুলকে ড্যামেজ করে দেয়, কেননা ভেজা অবস্থায় চুল খুবই নরম থাকে। সফট গেঞ্জি কাপড় দিয়ে চুলে চেপে চেপে পানি মুছতে হবে। এই ট্রিকস ফলো করলে আপনার চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ হবে। লম্বা চুল শুকানো এমনিতেই একটু ঝামেলা মনে করে অনেকেই। ফ্যানের বাতাসে চুল শুকিয়ে নেওয়া যায়, খুব দরকার না হলে হেয়ার ড্রাইয়ার ইউজ করবেন না।
লম্বা চুলের যত্নে ঘরোয়া হেয়ার প্যাক
বেসিক হেয়ার কেয়ারের সাথে সাথে সপ্তাহে ১/২ দিন চুলে প্যাক লাগাতে পারেন। ঘন, কালো ও মজবুত চুল পেতে এই হেয়ার প্যাকগুলো খুবই ভালো কাজ করবে। চলুন দেখে নেই কীভাবে ঘরোয়া হেয়ার প্যাক বানিয়ে চুলের যত্ন নেওয়া যায়।
১) আমলা হেয়ার প্যাক
আমলার ফ্যাটি এসিড হেয়ার ফলিকলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়। তাই লম্বা চুলের যত্ন নিতে আমলকী বা আমলা পাউডার খুবই কার্যকরী। টকদই, আমলা পাউডার, ডিমের কুসুম এবং কয়েক ফোঁটা খাঁটি নারকেল তেল একসাথে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। স্ক্যাল্প ও সমস্ত চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে রেখে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। অবশ্যই মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে ১/২ বার এই প্যাকটি লাগালে চুলের বৃদ্ধি তরান্বিত হবে এবং আগা ফাটার সমস্যা রোধ হবে।
২) এগ প্রোটিন হেয়ার প্যাক
চুলের যত্নে ডিমের ব্যবহার নতুন কিছু না! হেয়ার লেন্থ বুস্টিং প্যাক বানিয়ে ফেলতে পারেন ডিম দিয়েই। ডিম, অলিভ অয়েল, অ্যালোভেরা জেল এবং সামান্য দুধ একসাথে মিক্স করে চুলে অ্যাপ্লাই করতে হবে। এবার মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়িয়ে নিন। এভাবে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ওয়াশ করে ফেলুন। এই হেয়ার প্যাক ব্যবহার চুল ন্যাচারালি স্ট্রেইট, সিল্কি ও শাইনি হবে। লম্বা চুলের যে সমস্যাগুলো থাকে, যেমন চুল লালচে হয়ে যাওয়া, নিষ্প্রাণভাব বা রুক্ষতা; এই প্রবলেমগুলো ফিক্স করতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে এই প্যাকটি।
৩) জবা ফুলের প্যাক
যাদের চুল একটু লম্বা হলেই ফ্রিজি অ্যান্ড ড্রাই হয়ে যায়, তাদের জন্য জবা ফুল বা হিবিসকাস খুবই কার্যকরী। জবা ফুল অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, যেটা চুলের রুক্ষ-শুস্কভাব কমিয়ে আনে। এটি প্রিম্যাচিউর হেয়ার গ্রেয়িং অর্থাৎ অকালে চুল পেকে যাওয়া রোধ করে। এতে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকায় চুল মোলায়েম থাকে। জবা ফুলের গুঁড়োর সাথে টকদই ও পাকা কলা দিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার সমস্ত চুলে এই হেয়ার প্যাকটি লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ১/২ বার প্যাকটি লাগাতে হবে। চুল থাকবে ময়েশ্চারাইজড ও শাইনি।
ঘন, কালো ও মজবুত চুল পেতে কীভাবে চুলের যত্ন নেওয়া যায় সেটা আমরা জেনে নিলাম। লম্বা চুলের যত্ন হোক ঘরোয়াভাবেই। হিট প্রোটেকটর স্প্রে ছাড়া চুলে রেগুলার স্ট্রেটনার ইউজ করা যাবে না! এতে চুল ড্যামেজ হয়ে যায়। আর আগেই বলেছি সুন্দর চুল পেতে হেয়ার কেয়ারের সাথে সাথে লাইফ স্টাইলে পজিটিভ চেঞ্জ আনতে হবে, হেলদি ফুড হ্যাবিটে অভ্যস্ত হতে হবে, সময়মতো বিশ্রাম নিতে হবে।
অথেনটিক প্রোডাক্টের জন্য আমার ভরসার জায়গা সাজগোজ। আপনি চাইলে অনলাইনে অথেনটিক হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। তাছাড়া, সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক