সাজগোজ নিয়ে তো সবসময় বলা হয় তবে আজকে বলব এমন একটি ব্যাপারে যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই সময়োপযোগী এবং যা সম্পর্কে সবারই সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
পানির অপর নাম জীবন একথা নতুন করে বলার কিছুই নেই। তবে সেই পানিই যদি হয় সমস্যার কারণ তবে পানি নামক সেই জীবন যেন দুর্ভোগ ভোগান্তি ডেকে আনে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশের সর্বত্র ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেলেও এখন পর্যন্ত বিশুদ্ধ সুপেয় পানি পৌঁছতে পারেনি। যদিওবা কিছু কিছু অঞ্চলে ওয়াসার পানি আসে, গ্রীষ্মকালে নানাবিধ কারণে সেই পানি হয়ে ওঠে ব্যবহারের অযোগ্য। লেখকের জানা মতে ব্যবহারযোগ্য বিশুদ্ধ পানির সংকটে খিলগাঁও, সবুজবাগ, মগবাজার, যাত্রাবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ ও মালিবাগ এর বিভিন্ন এলাকা রয়েছে। রাজধানী ছাড়াও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষারীয় পানি ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কম নয়। তাই অনেকটা নিরুপায় হয়েই টিউবওয়েল বা আলাদা পানির মোটর বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে হয়। কোন কোন অঞ্চলের পানিতে থাকে অতিরিক্ত পরিমানে ক্ষার, কোথাও পানি হয় বেশ লবণাক্ত। যা ব্যবহার করাটা একদিকে যেমন স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কারণ, তেমনি লম্বা সময়ের জন্য এরকম পানির ব্যবহার ত্বক ও চুলের ক্ষতির অন্যতম কারণ।
কীভাবে বুঝবেন আপনার পানি ক্ষার?
যদিও কিছু এলাকার পানি স্বভাবতই ক্ষারীয় হয়, তবুও দেখে নিনঃ
-পানি ধারণ করার পর যখন পানির পাত্রের নিচে লালচে হলুদ আয়রন জমে থাকবে
-পানির স্বাদ বেশ ক্ষারীয় হবে
-কলের মুখে আয়রনের স্থায়ী দাগ বসে যাবে
-পানিতে খনিজ পদার্থের তীব্র একটা গন্ধ থাকবে
-পানি ফুটানোর হাঁড়ির তলায় আলাদা পুরু একটা স্তর পড়ে যাবে
-পানির জন্য ফিল্টার ব্যবহার করলে ফিল্টার এর সাদা অংশ খুব দ্রুতই লালচে হবে
খেয়াল করবেন যখন গৃহস্থালির কাজ যেমন কাপর কাঁচা বাসন মাজা ও অন্যান্য ধোয়া মোছার সময় প্রয়োজনের তুলনায় অধিক সাবানের প্রয়োজন হবে।
ব্যবহারের জন্য সব ক্ষার পানিই যে সবসময় ক্ষতিকারক, এমনটি নয়। যাদের পানি মাত্রাতিরিক্ত ক্ষারীয়, তারা অবশ্যই পানি কে ব্যবহার উপযোগী করে ব্যবহার করবেন।
খাবার পানির ক্ষেত্রেঃ
সেই পুরনো বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। পানি ফুটিয়ে পান করা। তবে অতিরিক্ত ক্ষার পানির ক্ষেত্রে পানি ফুটিয়ে, ঠাণ্ডা করে তারও বেশ কিছুক্ষণ পরে দেখা যায় তলায় দ্রবণীয় খনিজ জাতীয় পদার্থ জমে থাকতে। এমনকি পানির উপরেও ভেসে থাকতে দেখা যায়। সাবধানতার সাথে উপরের অন্তত ২ ইঞ্চি পানি ফেলে নিচের অংশে থিতিয়ে থাকা খনিজ গুলো রেখে বাকি পানি খাবার জন্য ব্যবহার করতে হবে।
যে কল থেকে খাবার পানি সংরক্ষণ করা হবে, সেই কলের মুখে ফিল্টার ক্যাপ বসিয়ে আপনি আয়রন বা ক্ষারীয় অন্যান্য খনিজ অনেকাংশেই আটকাতে পারবেন। পরে সেই পানি ফুটিয়ে যথাসাধ্য নিরাপদ করে পান করতে হবে।
*ক্ষারীয় পানিকে সাধারণ পানিতে পরিণত করার জন্য বর্তমানে অনেক নিত্য নতুন মেশিন আবিষ্কৃত হয়েছে, যার ২-১ টা স্যানিটারি ফিটিংসের দোকানে খোঁজ করলে আমাদের দেশেও হয়ত পাওয়া যাবে। কিন্তু সেগুলোর ব্যবহার যেমন ঝামেলাপূর্ণ, তেমনি সময়সাপেক্ষ আর ব্যায়বহুলও বটে। তাই আমি যতটা সম্ভব কম সময় ও ঝামেলাবিহীন পদ্ধতি উল্লেখ করলাম।
চুলের ক্ষেত্রেঃ
ক্ষার পানি ব্যবহার এর কারণে চুল হয়ে পড়ে রুক্ষ, নিষ্প্রাণ, এমনকি অনেকের চুল পড়ার সমস্যাও বেড়ে যায়। চুল ধোয়ার কাজে এই পানি ব্যবহার করা হয় বলে পানিতে থাকা ক্ষারীয় পদার্থ চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ও ঔজ্জ্বল্য কেড়ে নেয়। এ থেকে রক্ষা পেতে যা যা করতে পারেন-
গোসলের সময় শাওয়ার ব্যবহারকারীরা শাওয়ার এর মুখে ফিল্টার ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। বড় হার্ডওয়্যার এর দোকানগুলোতে শাওয়ার ফিল্টার পাওয়া যায়। এতে করে আপনি একইসাথে ত্বক ও চুলকে ক্ষতির হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারবেন।
এখন বর্ষাকাল। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা চুল ধোয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এতে কোন ক্ষারীয় পদার্থ থাকেনা বললেই চলে।
চুলে তেল দেওয়ার সময় ২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙ্গে দিন। এটি পানির কারণে তৈরি হওয়া চুলের রুক্ষতা কে প্রতিরোধ করে।
সপ্তাহে একদিন ৩ ভাগ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ও ১ ভাগ ডিসটিলড ওয়াটার মিশিয়ে চুলে মাস্ক এর মতো লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট, এরপর ঠাণ্ডা পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন।
সাদা সিরকা ২ মগ পানিতে ৩ টেবিল চামচ সাদা সিরকা মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন উপকার পাবেন।
Chelating shampoo ব্যবহার করতে পারেন। এটি পানির কারণে সৃষ্ট রুক্ষতাকে কমিয়ে চুলকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। তবে এর সঙ্গে কন্ডিশনার ব্যবহার করা আবশ্যক। দেশে এই জাতীয় শ্যাম্পু খুব একটা পরিচিত নয় বিধায় খুঁজে নাও পেতে পারেন। অনলাইন পেজে খোঁজ করলে মিলেও যেতে পারে। না পাওয়া গেলে শ্যাম্পুর বোতলের উপকরণে ETDA সমৃদ্ধ কিনা, তা দেখে নিন। কারণ এটি Chelating শ্যাম্পুরই বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
শুধু পানি পান, গোসল বা চুল ধোয়া নয়, দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি কাজে পানি ছাড়া এক মুহূর্তের কথা ভাবা যায়না। তাই নিরাপদ পানি ব্যবহারের চেষ্টা করুন ও সঙ্কটের সময় ছাড়াও সবসময় পানির অপচয় রোধ করুন।
লিখেছেনঃ চৌধুরী তাহাসিন জামান
ছবিঃ দ্যপোকটাইমস.কম