রূপচর্চায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার নিয়ে আমরা অনেকেই জানি। রূপচর্চায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল, ছোটছোট সবুজ রঙের স্বচ্ছ ক্যাপসুল, সব ফার্মেসিতে পাওয়া যায়। আর চুল বা ত্বকের কোন সমস্যা দেখা দিলেই, আমাদের অনেকেই ডাক্তারের সাথে কোন কথা না বলে (অথবা কোন বড় আপু, চাচি, মামি, খালার কথা শুনে। এই কেসটাই বেশি দেখি) নিজে নিজেই মুড়ি মুড়কির মত ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেতে পছন্দ করেন!
মনে করেন সকাল বিকাল রূপচর্চায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলেই দুই তিনদিনে মসৃণ উজ্জ্বল ত্বক আর মাথা ভর্তি চুল হয়ে যাবে আপনার! পুরো ধারণাটাই ভুল। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ার অভ্যাস খুব অল্প সময়ে প্রেশারের জটিলতা, অতিরিক্ত ওজন, হরমোনাল ইম্ব্যালান্স সহ আরও অনেক জটিল সমস্যা তৈরি করে। তাই মনে করবেন না এখন চুল পড়ার সমস্যায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেয়ে ডাক্তারের অনেকগুলো খরচ বাঁচিয়ে ফেললেন, নিজের কাছের মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া করুণ এক্সপেরিএন্স থেকে বলছি, এমন কাজ করলে পস্তাতে আপনাকে হবেই।
আমি শুরুতেই সবাইকে সাবধান করে দিতে পছন্দ করি। কারণ অনেকেই প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধের ঝুঁকি গুলো এমন একটা লেভেলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন যেন ডাক্তারদের এত বছরের অভিজ্ঞতা, পড়াশোনার কোন মূল্যই নেই! তাই আজ আরেকবার আপনাদের এই ব্যাড প্র্যাকটিসের ভবিষ্যতের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আজকের লেখায় জানাবো টপাটপ ট্যাবলেট খেয়ে কম কষ্টের ঝুঁকিপূর্ণ পথ ছাড়াও আপনি কীভাবে এই অতি সহজলভ্য ভিটামিন ই ক্যাপসুলের সাহায্যে পেতে পারেন সুন্দর সুস্থ ত্বক, চুল, নখ ইত্যাদি।
কী লাগবে?
কনফিউশন দূর করার জন্য আরেকবার বলে দেই –
(১) আমি কোন কসমেটিক শপে পাওয়া চাইনিজ স্কিন বা হেয়ার ক্যাপসুলের কথা বলছি না। আমি ফার্মেসিতে যে ভিটামিন ই পাওয়া যায় সেই ক্যাপসুলের কথা বলছি, যেগুলো খাওয়া হয়।
(২) এগুলো সবুজ হয় আর হাই পাওয়ারেরগুলো কমলা হয়। কমলাটার দরকার নেই। নিচে যে কাজগুলো করতে বলব তা যদি কেউ ট্রাই করতে চান সবুজটাই যথেষ্ট।
(৩) আর যারা আর্টিকেল পড়ার আগেই প্রশ্ন করবেন-
‘খাওয়ার জিনিস কি মুখে দেয়া যায়?’ তাদের জানিয়ে দিচ্ছি যে, খাওয়ার ক্যাপসুল মুখে, চুলে, হাতে,পায়ে সবখানে মাখা যায়। কারণ এগুলো নির্ভেজাল। সাইড ইফেক্ট হবার সম্ভবনা নেই বললেই চলে।
রূপচর্চায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল কীভাবে ব্যবহার করবেন?
নিচের প্রতিটা টিপসের জন্যই ক্যাপসুল ফুটো করে ফেললে যে তেলটা পাওয়া যায় সেটা আমরা ব্যবহার করব। যেহেতু একটা ক্যাপসুল ফুটো করলে প্রায় আধা চা চামচ তেল পাওয়া যায় আর ভিটামিন ই তেল খুবই ভারী হয় সুতরাং আপনারা একটা ক্যাপসুলের তেল দিয়ে নিজের ত্বকের ধরন বুঝে যেখানে যতটুকু লাগে ব্যবহার করবেন। ড্রাই, আর নরমাল স্কিনের কিন্তু পোয়া বার! আপনাদের জন্য এই ভারী ভিটামিন ই তেল কম খরচেই লাক্সারিয়াস বিউটি ট্রিটমেন্টের রেজাল্ট দেবে… so, go crazy!
(১) ভিটামিন ই স্কিন সিরাম-
দি বডি শপ এর একটা ভিটামিন ই ফেসিয়াল সিরাম আছে। বাজি রেখে বলতে পারি ভিটামিন ই ক্যাপসুল যদি আপনি ত্বকে ব্যবহার করেন তবে বডি শপের সিরামের মতই রেজাল্ট পাবেন। ড্রাই আর নরমাল স্কিনের অধিকারীরা ভিটামিন ই তেল ত্বকে ফোঁটা ফোঁটা লাগিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করে বসিয়ে দিন। আর তৈলাক্ত ত্বকের পাঠকরা, আপনাদের জন্য তেলটা খুবই ভারী হবে। তাই মাত্র এক ফোঁটা তেল প্রথমে দুই হাতে নিয়ে ঘষুন, এরপর হাত দুটো মুখে ৫ সেকেন্ড চেপে ধরুন। হয়ে গেল আপনার সিরাম লাগানো। এভাবে ভিটামিন ই ব্যবহার করলে আপনার আর অন্য কোন নাইট ক্রিম বা সিরাম ব্যবহারের দরকার পড়বে না। আর এই টিপসে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন একটু বয়স্করা। কারণ আপনাদের ত্বকের ফাইন লাইন দূর করতে ভিটামিন ই খুবই ভালো হবে।
(২) ভিটামিন ই হেয়ার সিরাম-
চুল পড়ে যাওয়া বন্ধ করতে আর রিবনডেড বা কালারড চুলের যত্নে ভিটামিন ই খুবই ভালো হবে। বেশি উপকার পেতে ২-৩ টি ক্যাপসুল ভেঙ্গে ভারী তেলটা একটা পাত্রে নিয়ে স্ক্যাল্প আর চুলে লাগিয়ে নিন। সারারাত রেখে পরদিন ধুয়ে ফেলুন। যদি আপনার মনে হয় এই ট্রিটমেন্টটা আপনার জন্য বেশি ভারী হয়ে যাচ্ছে, শ্যাম্পু করলে যাচ্ছে না তবে এক টেবিল চামচ নারকেল তেলের সাথে ১ টা ক্যাপসুল ভেঙ্গে ব্যবহার করুন। খুব সহজে শ্যাম্পু করতে পারবেন।
(৩) ভিটামিন ই নাইট ক্রিম-
জানি ১ম টিপস টা ট্রাই করতে অনেকেই ভয় পাবেন। কারণ ফেসিয়াল অয়েল জিনিসটা এখনও এদেশে তেমন জনপ্রিয় না। তাদের জন্য এই টিপস। আপনার পছন্দের নাইট ক্রিম বা হালকা বেবি ক্রিম নিন। এবার এই কৌটায় ১-২ টি ক্যাপসুলের তেল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার এই ক্রিম রেগুলার ব্যবহারে আপনি এক্সট্রা ভিটামিন ইর গুণটা পাবেন। একই ভাবে আপনার প্রিয় বডি লোশনেও ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
(৪) কনুই আর হাঁটুর জেদি কালো দাগ দূর করতে-
দীর্ঘদিনের পুরনো স্কিন ড্যামেজের দাগ দূর করতে ভিটামিন ইর কোন তুলনা নেই। আপনার কনুই আর হাঁটুতে যদি এমন দাগ থাকে তবে রেগুলার ১ টা ক্যাপসুলের তেল নিয়ে বা মুখে ব্যবহার করার পর অতিরিক্ত যে তেলটুকু বাকি থাকে তা কনুই আর হাঁটুতে লাগান। ২-৩ সপ্তাহের ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পাবেন!
(৫) মসৃণ, গোলাপি ঠোঁট পেতে-
মুখে, হাতে পায়ে লাগিয়ে যেটুকু তেল থাকবে সেই তেলের ফোঁটাটা ঠোঁটে ভালো ভাবে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। কালো , ফাটা ঠোঁটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন। আপনার পছন্দের লিপবাম বা ভ্যাস্লিনের সাথে ক্যাপসুল ভেঙ্গে মিশিয়ে সেটাও রেগুলার ব্যবহার করতে পারেন।
(৬) চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে-
অনেকেই আছেন যারা চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে খাটি বাদাম তেল ব্যবহার করেন। তার সাথে যদি ভিটামিন ই তেল মিশিয়ে নেন তবে খুবই কম সময়ে ভালো ফল পাবেন। সাজগোজে এর আগে ভিটামিন ই তেল দিয়ে অ্যান্টি ডার্ক সার্কেল সিরাম রেসিপি দিয়েছিলাম। সেটাও ফলো করতে পারেন।
(৭) অনেক পুরনো কাটা দাগ অথবা ব্রনের দাগ দূর করতে-
আপনার ত্বকে যদি অনেক পুরনো কাটা দাগ, ব্রনের দাগ বা পক্সের দাগ থাকে তবে রেগুলার সেই দাগে এক-দুই ফোঁটা করে ভিটামিন ই তেল লাগিয়ে রাখুন। ধীরে ধীরে একটু হলেও দাগটা হালকা হবে। এধরনের দাগ হালকা করতে ভিটামিন ই তেল খুবই কার্যকরী।
এগুলো স্কিন আর হেয়ার কেয়ারে তথা রূপচর্চায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের কিছু ফুলপ্রুফ ওয়ে । এতে করে কিছু না বুঝে শুনে ক্যাপসুল না খেয়ে ভিটামিন ই এর উপকার আপনি পাবেন। আর যদি খেতেই চান তবে ক্যাপসুল না খেয়ে ভালো সুষম খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন ই শরীরে দেয়ার চেষ্টা করুণ। শাক সবজি, বাদাম, ডিম ইত্যাদি বেশি করে খান। ত্বক আর চুল তো ভালো থাকবেই আর কোন এক্সট্রা ঝুঁকিও নিতে হবে না।
এই তো জানা হয়ে গেলো রূপচর্চায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের কিছু উপায়। এখন চলুন দেখে নেই রূপচর্চাতে শপ সাজগোজ-এ কি প্রডাক্টগুলো পাবেন…
ছবিঃ সংগৃহীত – সেরাপণ্য.কম, হেরাল্ডস্পট.কম