ত্বকের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস | বৃক্ষ মানব হবার কল্পগল্প!

ত্বকের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। বৃক্ষ মানব হবার কল্পগল্প!

হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস - shajgoj

একটু কল্পনার চাদরে গা ভাসাই চলুন। চোখটা বন্ধ করে ভাবুনতো, একদিন সকালে উঠে দেখলেন আপনার হাত-পা একদম মানুষের মত নয়। হাত-পাগুলো গাছের মতন ছাল-বাকলযুক্ত আর আঙুলগুলো যেন ঠিক শাখা-প্রশাখার মতন! শরীরের বিভিন্ন অংশে এমন গাছের ডাল-পালা আর ছাল-বাকলে পরিপূর্ণ। আবার অনেক সময় তার থেকে শ্বাসমূলের ন্যায় অংশ বেড়িয়ে আসছে!! ভয় পাচ্ছেন? ভয়েরই ব্যাপার! খেতে পারছেন, চলতে পারছেন, মানুষের মতই কথা বলতে পারছেন আবার পুরো শরীর জুড়ে গাছের বাকল! একদম যেন এক বৃক্ষ মানব! দুঃস্বপ্নে আঁতকে উঠলেন বুঝি? বেড়িয়ে আসুন আপনার কল্পনার জগত থেকে। দেখুন এবার বাস্তব জীবনে ত্বকের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (Human papillomavirus- HPV)-এর কারণে খুলনার আবুল বাজানদার মানব থেকে কিভাবে বৃক্ষ মানব-এ পাল্টে গেলেন!

ত্বকের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস এ আক্রান্ত আবুল বাজানদার - shajgoj.com

Sale • Acne Treatment, Dull Skin Treatment, Pore Care

    জেনে নিন ত্বকের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস-এর ফলে কী রোগ হয়। ত্বকের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগের লক্ষণ কী? আর কী-ই বা এই ত্বকের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস-এর প্রতিকার? ত্বকের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সম্পর্কে বিশদভাবে আমরা জানবো বাংলাদেশের বৃক্ষ মানব আবুল বাজানদারবৃক্ষ মানবী শাহানার বাস্তব জীবনালোকে।

    বৃক্ষ মানব আসলে কী রোগ?

    ত্বকের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস এর এক্সরে রিপোর্ট - shajgoj.com

    বৃক্ষ মানব রোগ বা ইংরেজিতে বললে, ট্রি ম্যান ডিজিজ (Tree man disease) যেটাই বলুন না কেন, বাস্তবিক অর্থে এগুলো কোনো রোগের নাম নয়। ত্বকের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস আক্রান্ত হবার ফলে ত্বক গাছের ন্যায় পরিণত হয় বলেই একে ট্রি ম্যান ডিজিজ বা বৃক্ষ মানব রোগ বলা হয়ে থাকে। মূলত এই রোগটির নাম হলো এপিডারমোডিসপ্লেসিয়া ভেরুসিফরমিস (Epidermodysplasia verruciformis) বা সংক্ষেপে ইভি (EV)

    কিভাবে বুঝবেন আপনি ত্বকের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কিনা?

    কোনো রোগই প্রথমেই মারাত্মক আকার ধারণ করে না। শুরুটা হয়ে থাকে খুব ছোট্ট করেই। ইভি বা এপিডারমোডিসপ্লেসিয়া ভেরুসিফরমিস রোগটির ক্ষেত্রেও অন্যথা হয় না। আমরা অনেকেই ত্বকে ছোটখাটো ফোড়া হলে সেটাকে গুরুত্ব দেই না। অথচ ত্বক এইচপিভি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে সাধারনত তার প্রথম প্রকাশ ঘটে ত্বক ফুলে যাবার মাধ্যমে ও ছোট ছোট ফুসকুড়ি উঠার মাধ্যমেই। আসুন তাহলে ত্বকের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবার লক্ষণ বা এপিডারমোডিসপ্লেসিয়া ভেরুসিফরমিস রোগের লক্ষণ সম্পর্কে!

    এপিডারমোডিসপ্লেসিয়া ভেরুসিফরমিস-এর লক্ষণসমূহ নিচে আলোচনা করা হল-

    ১) প্যাপিউল (Papule)

    প্রথমদিকে ত্বকে ফোলাভাব দেখা দেয়। এর ফলে ত্বক অসমান ও অমসৃণ হয়ে পড়ে। একে প্যাপিউল বলা হয়।

    এপিডারমোডিসপ্লেসিয়া ভেরুসিফরমিস-এর লক্ষণসমূহ Papule ও Plaque - shajgoj.com

    ২) স্কিন প্লেক (Skin plaque)

    ত্বকে ফোলাভাব যখন অনেকটা ছড়িয়ে যায় অর্থাৎ ত্বকের বিস্তৃত অংশ জুড়ে এইচপিভি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন এই অবস্থাকে প্লেক বলা হয়।

    ৩) আঁচিল (Wart)

    ত্বকে গুচ্ছ গুচ্ছ আকারে জমাট বেঁধে শতাধিক আঁচিল হতে পারে। কখনো ফোসকার মতও আকার ধারণ করতে পারে বা মাছের আঁশের মতন আকার ধারণ করতে পারে।

    ত্বকের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস এর সিম্পটম হাতে আঁচিল - shajgoj.com

    ৪) ট্রি ম্যান সিনড্রোম (Tree man syndrome)

    ত্বকের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবার বৃক্ষ মানব রূপটিই সবার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। যখন শরীরে শ্বাসমূলের ন্যায় অংশ বেড়িয়ে আসে তখন একে ট্রি ম্যান সিনড্রোম বা ট্রি ম্যান ডিজিজ বলে।

    বৃক্ষ মানবী শাহানার ত্বকে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস - shajgoj.com

    সাধারণত এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় বয়ঃসন্ধিকালে। তবে যেকোন সময়েও এটি হতে পারে। যেমন বৃক্ষ মানব আবুল বাজানদারের ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় ১০ বছর বয়সে আর বৃক্ষ মানবী শাহানার ক্ষেত্রে এই রোগের সূত্রপাত ঘটে যখন তার বয়স মাত্র ১ বছর। শাহানার ক্ষেত্রে প্রথমেই আঁচিল না হয়ে ঘামাচির আকারে প্রকাশ ঘটে। পরে ধীরে ধীরে এটি আঁচিল থেকে শ্বাসমূলের আকারে প্রকাশ পায়।

    এপিডারমোডিসপ্লেসিয়া ভেরুসিফরমিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ আছে কি?

    এপিডারমোডিসপ্লেসিয়া ভেরুসিফরমিস রোগের প্রতিকার হলো অপারেশন। তবে সবার ক্ষেত্রে অপারেশন যে পুরোপুরি প্রতিকার হবে তা কিন্ত বলা যায় না। অনেকের ক্ষেত্রে এই রোগ পুনরায় হতে পারে। এটা আসলে খুবই দুঃখজনক।কারণ, এই অপারেশন খুবই কষ্টকর এবং ব্যয়বহুলও! তবে প্রতিকার সবার ক্ষেত্রে না করা গেলেও এর বিস্তৃতি প্রতিরোধ করা যায় কয়েকটি উপায়ে। প্রতিরোধ সম্পর্কে সে উপায়গুলো নিচে দেয়া হলো-

    ১) লিকুইড নাইট্রোজেন ও স্যালিসাইলিক এসিড আক্রান্ত স্থানের বিস্তৃতি প্রতিরোধ করতে পারে।

    ২) এপিডারমোডিসপ্লেসিয়া ভেরুসিফরমিস রোগে আক্রান্ত ত্বক সূর্যালোকে এলে তা থেকে ক্যান্সার হতে পারে। তাই অবশ্যই সানস্ক্রিন ক্রীম বা লোশন ব্যবহার করতে হবে।

    বৃক্ষ মানব রোগ পুরো পৃথিবীতে খুব কম মানুষেরই আছে। আনুমানিক ৬০০ জনের এই রোগে আক্রান্ত হবার উল্লেখ বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায়। তবে বাংলাদেশে মাত্র ২ জন এই বিরল রোগ বৃক্ষ মানব বা এপিডারমোডিসপ্লেসিয়া ভেরুসিফরমিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে। খুলনার আবুল বাজানদারের অপারেশন করা হলেও তার শরীরে আবারও ফিরে আসে শ্বাসমূল। আর ১০ বছর বয়সী বৃক্ষ মানবী শাহানার চিকিৎসা চলছে। এমন বিরল রোগের কাছে কেউ যেন জীবন যুদ্ধে হেরে না যায় এটাই প্রত্যাশা।

     

    ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ

    2 I like it
    2 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort