ধরুন, কোথাও বেড়াতে গেলেন, নতুন একটা জায়গা। এ সময় আপনার স্কিনকে খেয়াল করলে দেখবেন, স্কিনটাতে বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সেটা হতে পারে স্কিন রুক্ষ হয়ে যাওয়া বা নতুন করে পিম্পল বের হওয়া। এছাড়া যখন ওয়েদার চেঞ্জ হয়, তখনও আমরা কিন্ত স্কিনে একটা ডিফারেন্স দেখতেই পাই। এর কারণ কি বলতে পারেন? হিউমিডিটি বা আর্দ্রতা। বিভিন্ন স্থানে বা ওয়েদার চেঞ্জিং এর কারনে হিউমিডিটি লেভেল কমবেশি হয়। আর এই হিউমিডিটি লেভেলই আমাদের স্কিনের উপর প্রভাব ফেলে। যার কারণে স্কিনে বেশ কিছু প্রবলেমও কিন্তু আমাদের চোখে পড়ে।
তো, হিউমিডিটি কিভাবে আমাদের ত্বকে এফেক্ট ফেলে? আর এই অবস্থায় আমাদের কি করা উচিত? কিভাবে হিউমিডিটির প্রভাব থেকে স্কিনকে বাঁচাতে পারি? আজকের আর্টিকেলটা সেই বিষয় নিয়েই। আজকে আমরা জানবো, কীভাবে হিউমিডিটি লেভেল আমাদের স্কিনের উপর প্রভাব ফেলে এবং কী উপায়ে আমরা স্কিনকে ভালো রাখতে পারি।
হিউমিডিটি কীভাবে আমাদের স্কিনে প্রভাব ফেলে?
প্রথমেই আমাদের হিউমিডিটি কী, সেই বিষয়ে আমাদের জেনে নেওয়া দরকার। হিউমিডিটি বা আর্দ্রতা হচ্ছে, বাতাসে থাকা পানির মাত্রা। আর আমাদের স্কিনের কিন্তু সবসময় পারফেক্ট একটা আর্দ্রতা দরকার হয়। অতিরিক্ত হিউমিডিটি বা পরিমানে কম হিউমিডিটি আমাদের ত্বকের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। আর এটা নির্ভর করে আপনি কেমন স্থানে থাকছেন আর সেখানকার আবহাওয়া কেমন সেটার উপরে। যেমন ধরুন, আপনি যেখানে বাস করছেন সেই জায়গাটার হিউমিডিটি লেভেল যদি কম হয়, তবে আপনি আপনার স্কিন ড্রাই এবং ডিহাইড্রেট ফিল করবেন। আবার হাই হিউমিডিটি লেভেলের মধ্যে থাকলে আপনার স্কিনে পিম্পল এবং র্যাশ দেখা যেতে পারে। তাই স্কিনের জন্য ব্যালেন্সড হিউমিডিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হাই হিউমিডিটি
চলুন জেনে নেই, হাই হিউমিডিটি কিভাবে আমাদের স্কিনের উপর প্রভাব ফেলে।
১. অত্যাধিক ঘাম হওয়া :
গরমের দিনে কিন্তু প্রচুর ঘাম হয় আমাদের। তাই না? কারন, তখন বাতাসে হিউমিডিটি এর পরিমান বেশী থাকে। অতিরিক্ত গরম এবং হিউমিডিটি এর কারনে আমরা প্রচুর পরিমানে ঘামতে থাকি। অতিরিক্ত গরম এবং ঘামের ফলে অনেক সময় স্কিন ড্রাই এবং ডিহাইড্রেট ফিল হতে পারে। যেটা আমার মাঝে মাঝেই হয়ে থাকে, আর তখন স্কিনের অবস্থা বেশ বাজে হয়ে যায়।
২. হিট র্যাশ :
অনেকসময় আমরা আমাদের স্কিনের উপর ছোট ছোট লাল গোটা দেখতে পাই। যেগুলো খুবই ইচি এবং আনকমফোর্টেবল লাগে। এটাকেই মূলত হিট র্যাশ বলা হয়। অতিরিক্ত হিউমিডিটি এবং ঘামের ফলে স্কিনে এই হিট র্যাশ দেখ যায়।
৩. একনে :
অতিরিক্ত হিউমিডিটির ফলে যে সব স্কিন প্রবলেম দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে একনে ব্রেকআউট। মূলত অত্যাধিক ঘামের ফলে স্কিনের পোর ক্লগ হয়ে যায়। যার ফলে স্কিনে ব্রণ দেখা যায়। মাঝে মাঝে এই ধরনের একনেগুলো অনেক ব্যথাযুক্ত হয়, যেটা আমাদের কাছে খুবই অস্বস্তিকর।
লো হিউমিডিটি
লো হিউমিডিটি বলতে বাতাসে ময়েশ্চারের অভাবকেই বোঝায়। যেটা আমাদের স্কিনের উপর বাজেভাবে প্রভাব ফেলে। হাই হিউমিডিটি কিভাবে আমাদের স্কিনের উপরে প্রভাব ফেলে, সেটা তো জানা হলো, এবার চলুন লো হিউমিডিটি এর প্রভাব গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
১. ড্রাই স্কিন :
আমাদের স্কিন টাইপ যেটাই হোক, ময়েশ্চারের কিন্তু অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু, আপনি যেখানে থাকছেন সেখানে হিউমিডিটির পরিমান অনেক কম থাকলে সেটা স্কিনের উপর প্রভাব ফেলবেই। লো হিউমিডিটি স্কিনের ন্যাচারাল অয়েল প্রোডিউস হতে বাঁধা দেয়। যার ফলে স্কিন অনেক বেশী ড্রাই এবং খসখসে হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, স্কিন ফেটেও যায়। আর শীতকালে কিন্তু আমরা এটা বেশী ফেইস করি।
২. অ্যালার্জি :
আপনার স্কিন যদি অ্যালার্জিটিক হয়, তবে লো হিউমিডিটি আপনার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এটা প্রথমে স্কিনকে ড্রাই করে দেয়। বিশেষ করে আপনার নাসাল প্যাসেজকে এক্সট্রেইমলি ড্রাই বানিয়ে দেয়। আর এই পর্যায়ে নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হতে পারে।
হিউমিড ওয়েদারে কিভাবে স্কিন কেয়ার করবেন?
১. নিজের স্কিনকে বুঝুন :
হিউমিড ওয়েদারে নিজের স্কিনকে সুস্থ এবং ভালো রাখতে হলে সবার প্রথমে আপনার নিজের স্কিনকে বুঝতে হবে। আর এই বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের স্কিনকে ভালোভাবে জানলে, আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কোন ওয়েদারে আপনার কেমন ভাবে স্কিন কেয়ার করা উচিত হবে। মার্কেটে ডিফারেন্ট স্কিন টাইপ অনুযায়ী ডিফারেন্ট স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট রয়েছে। সেখান থেকে পছন্দমত প্রোডাক্ট বেছে নিন এবং ওয়েদারের হিউমিডিটি অনুযায়ী স্কিন কেয়ার করুন।
২. স্কিনকে ক্লিন রাখুন :
স্কিন টাইপ যেটাই হোক না কেন, সেটাকে ক্লিন রাখা কিন্তু মাস্ট। তবে আপনার স্কিন অয়েলি বা কম্বিনেশন হলে আপনাকে এই বিষয়ে আরো গুরুত্ব দিতে হবে। কারন, হিউমিড ওয়েদার আপনার স্কিনে একনে এবং র্যাশ এনে দিয়ে স্কিনকে একদমই খারাপ করে দিতে পারে। তাই সবময় স্কিনকে ক্লিন রাখার চেষ্টা করবে। পোর ক্লগড করবে না অর্থাৎ non-comedogenic ক্লিনজার ব্যবহার করবেন। আর আপনার স্কিন একনেপ্রণ হলে salicylic acid and benzoyl peroxide যুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
৩. ময়েশ্চারাইজেশন :
ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করা স্কিনকেয়ারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পার্ট। হিউমিড ওয়েদারে কিন্তু এটা আরো বেশী জরুরী আমাদের স্কিনের জন্য। হাই হিউমিডিটিতে আমাদের উচিত লাইটওয়েট একটা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা, যেটা স্কিনকে সফট রাখার পাশাপাশি হাইড্রেশনও দিবে। আর লো হিউমিডিটিতে যেহেতু স্কিন অনেক বেশী ড্রাই এবং ইচি ফিল হয় সেহেতু, তখন আমাদের উচিত রিচ এবং থিক কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা।
৪. সানস্ক্রিন :
সানস্ক্রিন হচ্ছে বেষ্ট উপায় স্কিনকে হিউমিডিটি থেকে প্রোটেক্ট করার জন্য। হিউমিডিটি বেশী হোক বা কম সানস্ক্রিন ব্যবহার কিন্তু মাস্ট। এছাড়া, এটি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে আমাদের স্কিনকে প্রোটেকশন দেয়। তাই, বাইরে রোদে যাবার আগে ভালো মানের একটা সানস্ক্রিনের ব্যবহার কিন্তু আপনাকে আসলেই বাঁচিয়ে দেবে।
৫. উইকলি ফেসিয়াল :
উইকলি ফেসিয়াল কিন্তু আমাদের স্কিনকে ডার্ট, অয়েল, ঘাম, প্রোডাক্ট বিল্ড আপ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। আর যার ফলে স্কিন পোর ক্লিন থাকে। ফেসিয়ালের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ হচ্ছে স্টিমিং। যার ফলে স্কিনের পোর ওপেন হয়ে যায়। যার ফলে পরবর্তীতে স্ক্রাবিং করলে স্কিনের এক্সট্রা ময়লা এবং ডেড স্কিন সেলস দূর হয়ে স্কিন ভেতর থেকে ক্লিন হয়। এরপর ভালো মানের একটা ফেইস মাস্ক স্কিন থেকে এক্সেস অয়েল দূর করে স্কিনকে হেলদি করতে সাহায্য করে। তাই সপ্তাহে একদিন অবশ্যই ফেসিয়ালের জন্য কিছুটা সময় দিবেন। এ ধরনের ফেসিয়াল ঘরেই করে ফেলতে পারবেন।
৬. হাইড্রেটেড থাকুন :
হেলদি স্কিনের মূল চাবিকাঠিই হচ্ছে নিজেকে হাইড্রেটেড রাখা। স্কিনকে হাইড্রেটেড রাখতে ফেসিয়াল সিরাম খুবই ভালো কাজ করে। ময়েশ্চারাইজার লাগানোর আগে একটা সিরাম এপ্লাই করতে পারেন ফেইসে। এছাড়া বডিকে ভেতর থেকে হাইড্রেটেড রাখাও কিন্তু জরুরী। তাই প্রচুর পরিমানে পানি, শাকসবজি, ফল খাবেন, ব্যালেন্সড ডায়েটও কিন্তু মাস্ট।
আমাদের স্কিনের জন্য কতটুকু হিউমিডিটি আদর্শ?
হিউমিডিটির পরিমান কতটুকু হলে স্কিনের জন্য আদর্শ হবে সেটা এক্সাক্টলি বলা মুশকিল। কারন, এটা সবার জন্য এক হবে না। বয়স, স্কিন টাইপ, এনভায়রনমেন্ট, জেনেটিক ইত্যাদি বিষয়ের উপর এটা নির্ভর করে। তবে ডার্মাটোলোজিস্টদের মতে, হিউমান স্কিনের জন্য আদর্শ হিউমিডিটি লেভেল হচ্ছে ৩০%-৫০%।
এই তো জেনে নিলেন, হিউমিডিটি কিভাবে আমাদের স্কিনের উপর প্রভাব ফেলে এবং হিউমিডিটি থেকে স্কিনকে কিভাবে ভালো রাখতে পারবেন সেই সম্পর্কে। আশা করি, একটু হলেও ধারনা পেয়েছেন। অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে আমার সবসময়ই ভরসা শপ.সাজগোজ.কম। নানারকম স্কিন ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন এখানে। অনলাইনে অর্ডার করে ঘরে বসেই প্রোডাক্ট হাতে পেয়ে যাই। তাছাড়া সাজগোজের দুইটা আউটলেট আছে, যেটা যমুনা ফিউচার পার্ক আর সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। তাহলে আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকুন।
ছবি- সাজগোজ