ইনজেকশনের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। সেই ছোট্টবেলা থেকে টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে পরিচয় হয়ে যায় এই ভীতিকর ইনজেকশন নামক বস্তুটির সাথে। যারা একটু সাহসী তারা খুব হাসছেন, তাই না? তবে হাসতে হাসতে বলুন দেখি, ইনজেকশন কাকে বলে? প্রশ্ন শুনেই হাসছেন যে! ভাবছেন তো এটা বোকার মত প্রশ্ন করলাম। বোকামি আমরা করি ওই সিরিঞ্জটিকে ইনজেকশন বলে। ভ্রু কুঁচকে গেল বুঝি? আপনার এত দিনের জানাতে ভুল কোথায় বলছি? চলুন জেনে নেই তবে ইনজেকশন কী, ইনজেকশন অ্যালার্জি কী আর এর প্রতিক্রিয়াই বা কেমন হয়?
ইনজেকশন অ্যালার্জি নিয়ে যত কথা
ইনজেকশন কী?
ইনজেকশন আসলে কোনো বস্তু নয়। এটি একটি প্রক্রিয়া মাত্র। এই ছোট্ট ভুলটিই আমরা করে থাকি। ইনজেকশন আসলে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে তরল জাতীয় পদার্থ দেহে প্রবেশ করে। অনুপ্রবেশের ইংরেজি ইনজেক্ট (inject) থেকেই প্রক্রিয়ার নামকরণ হয়েছে ইনজেকশন (injection)। তার মানে, শুধু সূচি প্রয়োগের মাধ্যমে দেহে তরল পদার্থ প্রবেশ করলেই তাকে ইনজেকশন বলা হয় না। মৌমাছি হুল ফুটিয়ে যে বিষাক্ত তরল পদার্থ দেহে প্রবেশ করায়, তাকেও ইনজেকশন-ই বলে। ইনজেকশন-কে শট (shot) এবং জ্যাব (jab)-ও বলে।
ইনজেকশন অ্যালার্জি-এর প্রতিক্রিয়া কেমন হয়?
যাদের ইনজেকশন অ্যালার্জি রয়েছে ইনজেকশন নেওয়ার ফলে সবারই কি একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়? অবশ্যই না! একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। চলুন তবে দেখি কত ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে?
১) মাত্রাতিরিক্ত জ্বর (High Fever)
ইনজেকশন-এর পর সবচেয়ে কমন ঘটনা হলো জ্বর। বেশির ভাগ মানুষই বলে- “ইনজেকশন দিয়েছি, আমার জ্বর হবে।” অথচ অনেকের জ্বর নাও হতে পারে। মূলত ইনজেকশন-এর ফলে জ্বর হওয়ার কারণ হলো ইনজেকশন অ্যালার্জি নয়তোবা ইনফেকশন। ১০১ ডিগ্রী বা তার বেশি জ্বর হলে নাপা খেলেও ডাক্তারের পরামর্শেই খান। কারণ, ইনজেকশন-এর মাধ্যমে আপনার দেহে কিন্তু রাসায়নিক পদার্থের প্রবেশ ঘটেছে!
২) প্রচন্ড ব্যথা (Extreme Pain)
ইনজেকশন অ্যালার্জি হলে জ্বরের মতোই আর একটি কমন সিনারিও হলো, শরীরের যে স্থানে ইনজেক্ট করা হয়, সেখানে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। আবার সম্পূর্ণ শরীরেরও ব্যথা হতে পারে। যদি ১-২ দিনের মধ্যে ব্যথা না কমে উল্টো বাড়তে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ!
৩) ত্বকে ফোলা বা কঠিন ভাব ( swelling or hardness under the skin)
অনেক সময় আপনার স্কিন-এ ইনজেকশন ইনজেক্ট করার পরে সাথে সাথেই বা কিছুক্ষণ পরে ফোলা ভাব বা স্ফীতি দেখা যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ফুলে কঠিন হয়ে আছে। এমন হলে কী করবেন? হ্যাঁ, আপনার ফোলা বা কঠিন হয়ে যাওয়া জায়গায় একটি কলম দিয়ে রাউন্ড করে দাগিয়ে রাখুন। যদি কয়েক ঘন্টা থেকে একদিনের মধ্যে ত্বকের ফোলা ভাব বা কঠিনাবস্থার কোনো পরিবর্তন না ঘটে তবে আপনার ডাক্তারকে জানান। আর যদি ইনজেক্টেড এরিয়া পেকে যায় বা পেকে পুঁজ হয়, তাহলে ভুলেও হাত দিতে যাবেন না। নিজে নিজে পুঁজ বের করার চেষ্টাও করবেন না।
কারণ, পুঁজ বের করতে গিয়ে যদি ত্বকের নিচে তা রক্তপ্রবাহের সাথে ছড়িয়ে যায় বা সম্পূর্ণ পুঁজ পরিষ্কার না হয়, তাহলে এটি সেপসিস (sepsis)-এ রূপান্তরিত হতে পারে, যা খুবই মারাত্নক। সেপসিস থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে! বুঝতেই পারছেন, খোটাখুটির বাজে স্বভাব থাকলে তা কতটা মারাত্নক! তাই এটিকে সামান্য কিছু না ভেবে আপনার ডাক্তারকে জানান শীঘ্রই!
৪) সম্পূর্ণ শরীরে আকস্মিক প্রতিক্রিয়া ( sudden full body reaction)
যদিও ইনজেকশন-এর পর সব সময় সম্পূর্ণ শরীরে কোনো মারাত্নক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না, তবে যদি হয়ে থাকে তা খুবই সিরিয়াসলি নিতে হবে। কারণ, ইনজেকশন রিয়েকশন হিসেবে বমি বমি ভাব, নাক বন্ধ, বমি হওয়া, শরীর ফুলে যাওয়া, চুলকানি, র্যাশ ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে যা অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু ডেকে আনে এবং কোমা-তেও যেতে হতে পারে!
ইনজেকশন যেমনই হোক অর্থাৎ, আপনি মৌমাছি দ্বারা ইনজেক্টেড হন বা ডাক্তারের সূচযুক্ত সিরিঞ্জ-এই হন প্রতিক্রিয়া দু’ক্ষেত্রেই হতে পারে। তবে মৌমাছি হুল ফুটালে সাথে সাথেই কোনো চিমটা দিয়ে সাবধানে স্টিং(bee stings) বা হুল বের করে ফেলুন। এরপর হুল ফোটানো জায়গায় বরফ ঘষে নিবেন অবশ্যই। এতে ইনজেক্টেড এরিয়া ফুলে যাবে না বা ফুলে গেলেও ফোলা ভাব কমে যাবে এবং ব্যথাও দূর হবে। এবার, ইনজেকশন ভয়কে জয় করুন! ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক