আমরা প্রায় সবাই মনে করি, যারা লাজুক, তারাই ইন্ট্রোভার্ট। সত্যিকার অর্থে, লাজুকতার সাথে ইন্ট্রোভার্ট হবার সম্পর্ক খুব কম। বরং মনের ভেতর অন্য জগতের সাথে এর যোগাযোগ অনেক বেশি। ইন্ট্রোভার্ট শব্দের অর্থ অন্তর্মুখী। ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তি লাজুক হতে পারেন, কিন্তু এই বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যটি লাজুকতা নয়। আমাদের মাঝে মাত্র ২৫-৪০ ভাগ মানুষ ইন্ট্রোভার্ট, তবে প্রকৃতি প্রদত্ত বিশেষ গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ, যাদের আমরা বলে থাকি ‘গিফটেড পারসন’, তাদের ৬০ ভাগই ইন্ট্রোভার্ট হয়ে থাকেন। ইন্ট্রোভার্ট ও লাজুক, আপনি কি তা চলুন জেনে নেই!
ইন্ট্রোভার্ট ও লাজুক কি আসলে একই?
যারা ইন্ট্রোভার্ট তারা চিন্তা করা, নিজেদের চিন্তা-ভাবনা ও অনুভূতিতে বিচরণ করতে ভালোবাসেন। এর মানে তারা লাজুক না। ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তি সম্পর্কে আমরা অনেকেই ভুল জানি। আমরা ভাবি, তারা মানুষের সাথে মিশতে পারে না বা মিশতে পছন্দ করে না, সবার সাথে সময় কাটাতে চায় না ইত্যাদি। কিন্তু অন্যদের মতোই ইন্ট্রোভার্ট মানুষও তাদের পছন্দের মানুষ বা সার্কেলের সাথে থাকতে, কথা বলতে ভালোবাসে। ইন্ট্রোভার্টরা ছোট ছোট বিষয় নিয়ে গসিপ করার চেয়ে কোন আইডিয়া বা চিন্তাধারা নিয়ে কথা বলে থাকে। ইন্ট্রোভার্টদের অনেকেই আছেন, যারা পার্টিতে যাবার চেয়ে ঘরে বসে বই পড়তেই বেশি পছন্দ করেন।
আবার অনেক ইন্ট্রোভার্ট আছেন, যাদের সামাজিক অনুষ্ঠানই বেশি পছন্দ। আপনি নিজেও হয়তো জানবেন না, আপনার সামনের হাসিখুশি সদালাপী মানুষটি আসলে ইন্ট্রোভার্ট। সত্যি কথা বলতে, ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তিদের সামাজিক দক্ষতা অনেক ভালো হতেই পারে, কিন্তু সেটা আমাদের চোখে পড়ে কম। তার প্রধান কারণ হলো, সামাজিক অনুষ্ঠান বা লোকসমাগমে সময় ব্যয় করার চেয়ে তারা নিজেদের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সময় ব্যয় করতে বেশি পছন্দ করে। এমনও হয়, কোন ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তি হয়তো কোন পার্টিতে বেশ ভালো সময় কাটিয়েছেন, সবার সাথে কথা বলেছেন, কিন্তু একটা সময় তার নিজেকে নিজের সময় দেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই সময়টা তাদের জন্য ‘রিচার্জ’ হবার সময়। প্রয়োজন মতো এই সময় না পেলেই তারা একটু একা থাকতে চায়। এক্সট্রোভার্টদের সাথে ইন্ট্রোভার্টদের মূল পার্থক্য এখানেই।
আপনিও কি ইন্ট্রোভার্ট?
আপনি কি কখনো অনেক মানুষের সাথে সময় কাটাবার পর ক্লান্ত বোধ করেন? আপনি অফিসে গেলেন, সবার সাথে কথা বললেন, কিংবা অনেকে মিলে বেড়াতে গেলেন, সবাই মিলে আড্ডা দিলেন, কিন্তু কিছুক্ষণ পর আপনি যদি এতে হাঁপিয়ে ওঠেন, তবে আপনি সম্ভবত ইন্ট্রোভার্ট। ইন্ট্রোভার্ট হবার একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো, সামাজিক ব্যাপারগুলোতে আপনার মনে হবে আপনি সময় বা শক্তি খরচ করছেন, যেখানে অন্যরা বরং এসব উপভোগ করে।
বিকালবেলা বা অবসরে আড্ডা দেবার চেয়ে বা বন্ধুরা মিলে কোথাও ঘুরতে যাবার চেয়ে আপনি যদি একা একটু বই পড়া, নিজের শখের কাজগুলো করা, গান শোনা বা টিভি দেখাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তবে আপনি সম্ভবত ইন্ট্রোভার্ট। মনে রাখবেন, অনেক ইন্ট্রোভার্ট এর বিপরীতও করে থাকেন।
অন্যরা কি আপনাকে রিজার্ভড, চুপচাপ স্বভাবের বলে জানে? ইন্ট্রোভার্টদের অন্যরা রিজার্ভড, চুপচাপ এমনকি ভুল করে অনেক সময়ই লাজুক বলে থাকে। আসল ব্যাপার হলো, ইন্ট্রোভার্টরা কথা বলার আগে সেটা ভালোমতো ভেবে দেখে, তাই রেসপন্স করতে একটু সময় নেয়। তাছাড়া অধিকাংশ ইন্ট্রোভার্ট অযথা কথা বলতে পছন্দ করে না।
কিছু কথাঃ
ইন্ট্রোভার্ট বা এক্সট্রোভার্ট, এই দুটোর মধ্যে কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ, তা নিয়ে তর্কের সুযোগ নেই। কেননা, প্রত্যেক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভালো-মন্দ দুটোই আছে। যদিও ইন্ট্রোভার্ট-এক্সট্রোভার্ট সম্পূর্ণ দুটি বিপরীত চরিত্র, কিন্তু অনেকের মধ্যেই দুই ধরনেরই বৈশিষ্টের মিশ্রণ দেখা যায়। এ দুটোর মধ্যে যাদের মধ্যে যে ধরনের বৈশিষ্ট্য বেশি প্রকাশ পায়, তাদেরকে সেটাই অভিহিত করা হয়।
ছবিঃ সংগৃহীত – ডিয়াকিন.এডু