আমার জন্মের পর আমার ভাই আমাকে দেখে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে “এই পচা বাবুটা আমার সব আদর নিয়ে যাবে” যদিও সবাই সেদিন হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। হয়তো এটাই স্বাভাবিক ।বাচ্চারা যখন ঈর্ষা করে আমরা তখন খুশি হই। কিন্তু প্রশ্ন হছে আদৌ কি এটা স্বাভাবিক অথবা খুশি হওয়ার বিষয় কিনা। আমাদের এই বোকা আনন্দ যে একটা বাচ্চার জন্য কতটা ভয়ংকর হতে পারে সেটাআমরা কখনো ভবেও দেখি না।এই ছোট ছোট ঈর্ষা বাচ্চাদের অবচেতন মন খুব সহজে গ্রহন করে।দ্বিতীয় বাচ্চা হওয়ার পর প্রথম বাচ্চা জেদি হয়ে যাচ্ছে ,ছোট ছোট বিষয় নিয়ে অভিমান করছে, বড়দের সাথে খারাপ আচরণ করছে। বিশেষ করে নতুন ভাই বোনকে সহ্য করতে পারছে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমনটা হয়??
প্রথম বাচ্চা খুব স্বাভাবিক ভাবে বাবা মায়ের চোখের মনি হয়ে জন্ম নেয়।মা যখন কন্সিভ করে তখন থেকে মূলত দূরত্বটা তৈরি হয় কারন মা তখন শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকে না আর চাকুরীজীবী মা হলে তো কথাই নেই। সারাদিন অফিস করে এসে রান্নাঘর সামলানো ।তারপর বাচ্চাকে আলাদা করে সময় দেওয়ার জন্য শরীর তো আর সায়ে দেয়া না ।ফলে বাচ্চা একটু একটু করে মায়ের থেকে দূরে সরতে থাকে ।সেটা আরও মারাত্তক আকার ধারন করে যখন সে তার মত আরেকজনকে দেখে।সবার বাস্ততা তখন নতুন আগুন্তুকে নেয়া ।গতকাল যে বাচ্চাটা ছোট ছিল আজ দুম করে সে বড় হয়ে গেল।সবাই বলছে তুমি বড় আপু/ভাই।আত্মীয়রা রা আসছে নতুন বাচ্চাটাকে গিফট নিয়ে দেখতে আসে ।তার দিকে কারও খেয়াল নেই। এবার একটু ভাবুনতো একটা ছোট বাচ্চা যার পৃথিবী বলতে শুধুই বাবা-মা,যে কিনা দুইদিন আগেও সবার মধ্যমণি ছিল আজকে কারো তাকে দেখার সময় নেই।বাচ্চাটার মনের অবস্থাটা তখন কি হয়।
এখন হয়তো আপনি বলবেন প্রথম বাচ্চার মন খারাপ হবে বলে কি দ্বিতীয় বাচ্চা নিব না নাকি। না আমি মোটেও সেটা বলছি না। এখন সমাধান কি।
কখনই বাচ্চাটাকে এক দিনের ব্যবধান বড় করে দিবেন না। বাচ্চাদের বলবেন না এই নতুন বাবুটাকে রাস্তা/হাসপাতাল থেকে এনেছি অথবা কাক দিয়ে গেছে।উড়ে এসে জুড়ে বসা যেমন আপনার পছন্দ নয় তেমনি একটা ছোট বাচ্চার যে পছন্দ হয়ে যাবে সেটা ভাবাও উচিত নয়।এখনকার বাচ্চারা যথেষ্ট স্মার্ট বুঝিয়ে বলেন তার একটা নতুন বন্ধু আসছে/ এসেছে। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে মায়ের প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড থেকেই বাচ্চাটার সাথে তার নতুন সঙ্গীকে নিয়ে গল্প করুন যাতে বাচ্চাটার কল্পনার জগত জুড়ে একটা নতুন বন্ধু ঘোরাফেরা করে। সম্ভব হলে গর্ভাবস্থা থেকে শিশুর নড়াচড়া আপনার বাচ্চাটিকে স্পর্শ করতে দিন।মূলকথা নতুন যে আসবে তার সাথে আপনার বাচ্চার সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করুন।যাতে সে নতুন ভাই/বোনকে নিয়ে উৎসাহ পাএ। ঈর্ষা না করে ভালবাসে।তার সচেতন এবং অবচেতন মন জুড়ে যেন নতুন বন্ধুর প্রতি ভালবাসাই থাকে।
এতক্ষনতো পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে বললাম। কিন্তু যদি আপনি এই সময় পার করে ফেলেন তাহলে কি করবেন। এক্ষেত্রে বাবার দায়িত্ব একটু বেশি সন্তানকে মা যেহেতু সময় দিতে পারছে না তাই বাবাকে সময় দিতে হবে। বাচ্চাকে খেলনা না দিয়ে ঘুরতে নিয়ে যান। দূরে নেওয়া সম্ভব না হলে আশেপাশে পার্ক /রাস্তাএ হাঁটতে নিয়ে যান। রাতে ঘুমানোর সময় বিভিন্ন গল্প শোনান বিশেষ করে আপনার ছোট বেলার ভাই বোনের সাথে মজার কোন স্মৃতি । যদি কখনও খারাপ আচরণ করেও ফেলে তখন না বকে পরে গল্পয়াকারে বুঝিয়ে বলুন। কারন বাচ্চারা বকা/ মারের পর তাৎক্ষণিক ভাবে করব না বললেও একটু পর তা ভুলে যায়ে। তাই এই ভুলটা করবেন না। বড় তাই ছোট ভাইবোনের খেলনা নিতে পারবে না আবার ছোট তাই ছোট ভাইবোনকে কোলে / আদর করতে পারবে না। এমন দুই ধরনের মতবাদ থেকে সরে আসুন। দুই সন্তানকে কাছাকাছি আসতে দিন।
আমাদের একটু সচেতনতা একটি শিশুর ভবিষ্যৎ সুন্দর করে দিতে পারে।
লিখেছেনঃ সুমাইয়া সায়মা
ছবিঃ Cure