সেই শৈশব থেকে আমাদের মনের ভেতর একটা স্বপ্ন লালন করি আমরা: লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করব। যারা ব্যবসা করবেন বলে মনস্থির করেছেন, তারাও কেউ কেউ জীবনের কোন একটা পর্যায়ে চাকরি করেন। তবে আজকের আলোচনা মূলত: যারা শিক্ষাজীবন শেষে চাকরি করবেন বা সম্প্রতি চাকরি জীবনে প্রবেশ করেছেন, তাদের জন্যে।
কীভাবে খুঁজবেন আপনার কাংখিত চাকরি? কীভাবে পৌঁছবেন স্বপ্নের সিঁড়িতে? কীভাবে তৈরি করবেন আপনার রেজিউম/সিভি (জীবন-বৃত্তান্ত)? এ বিষয়ে ২ পর্বে প্রকাশিত হবে এই প্রবন্ধটি। প্রথম পর্বে থাকছে চাকরি খোঁজা নিয়ে কিছু টিপস। দ্বিতীয় পর্বে থাকবে আপনার জীবন-বৃত্তান্ত তৈরি নিয়ে কিছু দরকারী ও কার্যকরী পরামর্শ।
[picture]
স্বপ্নের অনুসন্ধান
পাশ করার পর চাকরি খুঁজব, এটা এখন একেবারেই বাতিল ধারণা। এখন পাশ করার অনেক আগে থেকেই শুরু হয় চাকরি খোঁজা। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মনে রাখবেন শুরু থেকেই:
১. আপনার নেটওয়ার্কটি সবল রাখুন। সামাজিক যোগাযোগে আপনার পারদর্শিতা আপনাকে অনেক ভাবে সাহায্য করতে পারে। আপনার বন্ধুমহল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং প্রভাবশালী আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন। আপনার যে সহপাঠির এখন আপনাকে ভাল চাকরি দেবার ক্ষমতা নেই, হয়তো তার প্রভাবশালী আত্মীয় হতে পারে আপনার সঠিক চাকরিদাতা। এমনকি ভবিষ্যতে আপনার একজন সফল বন্ধু হয়ে উঠতে পারে একটি ভাল চাকরির উপলক্ষ।কাজেই ভাল সম্পর্ক টিকিয়ে রাখুন নিজের স্বার্থে..।
২. একজন মানুষ সবকিছুতেই পারদর্শি হয় না। কাজেই আপনি নিজেকে আগে বিশ্লেষণ করুন, আপনাকে যারা ভাল করে জানে, তাদের কাছ থেকেও একটা মূল্যায়ন নিন। আপনার কোন দিকে বেশি যোগ্যতা, সেটা বুঝে আপনার সঠিক চাকরির ক্ষেত্রটি নির্বাচন করুন। ধরা যাক, আপনি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন; তাহলে সেলস/মার্কেটিং/এয়ারহোস্টেস বা কাস্টোমার কেয়ার অফিসার হিসেবে আপনি নিশ্চয়ই ভাল করবে। আপনি যদি ছাত্রজীবনে অংকে ভাল না হন, তাহলে প্রকৌশলী হিসেবে আপনি খুব ভাল নাও হতে পারেন। আবার যারা শৈশব থেকে একটু ঘরকুনো, তাদের উচিত হবে না এমন কোন চাকরি নেওয়া যেখানে প্রচুর ট্যুর করতে হয়।
৩. অনেকে মনে করে, শুরুতেই খুব ভাল একটা চাকরি যোগাড় না করতে পারলে সমাজে সম্মান থাকবে না। তাই একটু কম বেতনের চাকরি এড়িয়ে চলেন তারা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ছোট চাকরিতে কিছুদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করে যারা ২য় বা ৩য় চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তাদের উন্নতির হার তুলনামূলকভাবে বেশি। অভিজ্ঞতা আপনাকে কী দেবে, তা আপনি হয়তো চাকরির শুরুতে কল্পনাও করতে পারবেন না। কাজেই, কাজটা যদি কম বেতনের হয়, কিন্তু এটি আপনার পছন্দের ক্যাটাগরিতে পড়ে থাকে, তাহলে ১ বছর কষ্ট করে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিটা একটু ভারি করে নিন। তারপরে খুঁজতে থাকুন আরো বড় কোন সুযোগ। যোগ্যতা থাকলে অবশ্যই সাফল্য আপনার। তবে মনে রাখতে হবে, ভাল রেফারেন্স থাকাটা বড় চাকরি পাবার ক্ষেত্রে খুব জরুরি। কাজেই, আগের চাকরির সূত্রে যেসব বড় বড় মানুষের সাথে আপনার পরিচয় হয়েছে, তাঁদের সাথে একটা ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবেন সবসময়।
৪. অভিজ্ঞতাকে যদি আপনি সিঁড়ির সাথে তুলনা করেন, প্রশিক্ষণকে তুলনা করা যায় লিফটের সাথে। কারণ, ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণের সময় আপনি প্রশিক্ষক এবং অন্যান্য প্রশিক্ষণার্থীর সংস্পর্শে আসেন, যা আপনার দৈনন্দিন চাকরির সময় সম্ভব হয় না। একজন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক তাঁর প্রেজেন্টেশান ও হ্যান্ড-আউট তৈরী করেন অনেক কেস স্টাডি করে। সেসব থেকে আপনি এমন অনেক কিছু জানতে পারবেন, যা চাকরি জীবনে অনেক সমস্যা মোকাবেলায় আপনাকে দক্ষ করে তুলবে। অন্যান্য প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকেও জানতে পারেন তাঁদের বাস্তব অভিজ্ঞতা। তাঁদের সাথে নিজেকে তুলনা করে আপনি নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারেন, পেতে পারেন নিজেকে আরো যোগ্য করে তোলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা। অনেক সময়, একটি ট্রেনিং করতে এসে আরেকটি ভাল চাকরির সুযোগ পেয়ে যান অনেকে। আর ট্রেনিং শেষে যে সার্টিফিকেটটি পাবেন, সেটি আপনার সিভি-কে আরো সমৃদ্ধ করবে, যা চাকরির বাজারে আপনার মূল্য বাড়িয়ে দেবে কয়েকগুণ।
৫. যদি চাকরি বদলাবার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করুন। উত্তরগুলো যদি হ্যাঁ হয় তাহলে বুঝবেন আপনার চাকরি বদলের সিদ্ধান্ত সঠিক:
ক. আপনি কি এমন কোন চাকরি পেয়েছেন, যা বর্তমানের থেকে বেশি বেতনের?
খ. আপনি কি মনে করেন, বর্তমান চাকরিতে আপনার উন্নতির সুযোগ খুব কম?
গ. যদি মালিক বা বসের ওপর রাগ করে চাকরি ছাড়তে চান, আপনার কি মনে হয়, আপনি চাকরি ছাড়লে তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন, তারপর ‘ভাল হয়ে যাবেন’?
ঘ. যে চাকরিতে যোগ দিতে চাচ্ছেন, সেটা কি আপনার যোগ্যতা ও পছন্দের ক্যাটাগরিতে পড়ে?
ঙ. নতুর চাকরিতে যোগ দিলে তা আপনার পরিবারের জন্যে কল্যাণকর হবে কি?
অনেক সময় আমরা আবেগের বশবর্তী হয়ে চাকরি বদলাই, এবং পরবর্তীতে আগের চাকরির জন্যে হা-পিত্যেস করি। কাজেই চাকরি বদলাবার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিন, পরে অনুশোচনা করবেন না। এবং যত খারাপই হোক, আগের সহকর্মীদের বা বসের সাথে অশোভন আচরণ করে বিদায় নেবেন না। কে জানে, হয়তো ভবিষ্যতে আপনাকে সেখানে আবার ফিরে আসতে হতে পারে….।
যারা প্রথম চাকরিতে যোগ দিয়েছেন বা যোগ দিতে যাচ্ছেন, তাদের জন্যে বলছি, কর্মক্ষেত্রে অনেক সুহৃদ সহকর্মী পাবেন, কিন্তু সবসময় মনে রাখবেন, সহকর্মী আর বন্ধু এক নয়। কর্মক্ষেত্রে অনেকেই পুরনো বন্ধুকে ফিরে পান, কিন্তু এমনভাবে আড্ডা দেবেন না, যা অফিসের পরিবেশের সাথে বেমানান।
সবার জন্য শুভকামনা রইলো; দেখা হবে পরের পর্বে, রেজিউম লেখার টুকিটাকি নিয়ে।
লিখেছেনঃ Qazi Manzur Karim
Assistant Manager (Cost Control), BANGLALINK
Source:
1. BASIC BUSINESS COMMUNICATION (by Lesiker & Faltley)
2. Harvard Business Review (online version)