জমকালো সন্ধ্যা। চারদিকের নিয়ন আলোর ছটায় ম্লান হতে বসা বাংলাদেশের ঐতিহ্য নতুন রূপে আবারো সামনে এলো। দেশ বিদেশের অসংখ্য ফ্যাশন ডিজাইনার। আর কয়েক’শ খাদির পোশাক। তাও আবার নতুন ধাঁচে, নতুন ডিজাইনে বিভিন্ন পরিচিত মডেলরা পরনে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহি কাপড় খাদি। ৩ ও ৪ নভেম্বর ঢাকার বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের রাজদর্শন হলে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ট্রেসেমি নিবেদিত “এফডিসিবি প্রেজেন্টস ট্রেসেমি খাদি, দ্য ফিউচার ফেব্রিক শো ২০১৭”।
[picture]
সম্পূর্ণ হাতে বোনা আমাদের দেশের ঐতিহ্যবহনকারি বিশেষ কাপড় খাদি। এক সময়ের জনপ্রিয় খাদি কাপড় ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলতে বসেছে। আর সেই জনপ্রিয়তাকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আধুনিক ফ্যাশন ট্রেন্ডসে ঢালা হয়েছে পুরোনো খাদিকে।
এ বছরের আয়োজনে ১৯ জন বাংলাদেশি ও ৭ দেশের আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ডিজাইনারসহ মোট ২৬ জন ডিজাইনার অংশগ্রহন করেছেন। ডিজাইনারদের উদ্দেশ্য ছিল, খাদির উপর দেশীয় ও পশ্চিমা ঘরনার ডিজাইন করে তরুণদের আকৃষ্ট করা ও খাদিকে নতুন করে জাগিয়ে তোলা। এইবারের খাদি উৎসবে খাদি কাপড়ে তৈরি শাড়ি থেকে শুরু করে সেলোয়ার কামিজ, পালাজ্জো , আনারকলি, কোটি, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট, শর্ট প্যান্ট, স্কার্ট, টপ সবই দেখানো হয়েছে।
এইবারের উৎসবে ডিজাইনারদের মূল থিম ছিল দেশীয় কারুশিল্প। বাংলাদেশি ডিজাইনারদের কাপড়ে ফুটে উঠেছিল শীতলপাটির ডিজাইন, শঙ্খ ও কড়ির নকশা, রিকশাচিত্র, হাতপাখা, পটচিত্র, কাঠের কারুকাজ, টেরাকোটা, লোহার গ্রিল ও রডের কারুকাজ, ক্যালিগ্রাফি ও গয়নার কারুকাজ। বিদেশি ডিজাইনাররা বেছে নিয়েছিলেন তাদের নিজেদের ঐতিহ্যবাহি নকশার ডিজাইন। খাদির এই পুরো শো’তে মডেলদের পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে তাদের সাজিয়েছিলেন আমাদের দেশের অন্যতম রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিল।
ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মাহিন খান তার ডিজাইনের থিম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শীতলপাটির মোটিফ। সারাহ করিমের ও অনুপ্রেরণা ছিল শীতলপাটির ডিজাইন। ক্যালিগ্রাফির ডিজাইন বেছে নেন দেশের অন্যতম ফ্যাশন ডিজাইনার শৈবাল সাহা।
ডিজাইনার ফাইজা আহম্মেদ এর ডিজাইন করা পোশাকে দেখা যায় টেরাকোটার নকশা। লোহার গ্রিলের নকশা ব্যবহার করেন এমদাদ হক। তরুণীদের পোশাকে দেখা যায় নওশিন খায়েরের করা শঙ্খ ও শাখার কারুকাজ। ডিজাইনার মারিয়া সুলতানাও খাদি কাপড়ের উপর ফুটিয়ে তোলেন শাখা-কড়ির ডিজাইন।
বিপ্লব সাহা খাদি দিয়ে তৈরি করেছেন ছেলেদের পাঞ্জাবি ও কুর্তা। যার উপর ফুটে উঠেছে পানাম নগরীর ঐতিহ্য। আফসানা ফেরদৌসি ও তেনজিং চাকমা দেখান খাদি কাপড়ে পটচিত্র। ফারাহ দিবা করেন আলপনার সুন্দর নকশা। ডিজাইনার রিফাত রেজার পোশাকে ছিল ক্যালিগ্রাফি।
সোনার গয়নায় আমরা যে নকশা দেখি তা যদি মেঝে ছোঁয়া আনারকলিতে দেখা যায় তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয়? ডিজাইনার কুহু প্লামোন্দন খাদি পোশাকে করেছেন প্রাচীন আমলের সোনার গয়নার নকশা। ফারাহ আনজুম বারি ও পোশাকের মোটিফ হিসেবে বেছে নেন গয়নার কারুকাজ। শুধু গয়না নয়, খাদিতে কাঠের কারুকাজ দেখা যায় ইজমাত নাজ রিমার ডিজাইন করা পোশাকে।
ডিজাইনার চন্দনা দেওয়ান করেন ও লিপি খন্দকার করেন রিকশাহুড ও রিকশাচিত্রের নকশা। তার উপর থাকে জরি, সিকুইন্স ও আয়নার কাজ। খাদির উপর হাতপাখার নকশা দেখা যায় রুপো শামসের ডিজাইনে, শীতলপাটির ডিজাইন দেখান শাহরুখ আমিন।
বিদেশি ডিজানারদের মধ্যে নেপালের রসনা শ্রেষ্ঠা, ভারতের সৌমিত্র মন্ডল ও হিমাংশু, ভুটানের চিমমি চডেন, শ্রীলংকার নিলান হারাসগামা, মালয়েশিয়ার জ্যাকলিন ফং, থাইল্যান্ডের মায়ে টিটা তাদের নিজ দেশীয় ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলেন খাদি পোশাকের উপর। এত রকম মোটিফের ডিজাইনের উপর ছিল জরি, পাথর, বিডস, সিকুইন্সের কাজ করা। পুরো শো’তে সকল ডিজাইনার আধুনিক ফ্যাশন ও ডিজাইনের সাথে খাদির অসাধারণ সামাঞ্জস্য রেখে তৈরি করেছেন প্রতিটি ড্রেস।