কলকাতায় রাজারহাটের নতুন একটি শহর নিউ টাউন। নিউ টাউনে অবস্থিত ৪৮০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত অসাধারণ একটি স্থান যার নাম কলকাতা ইকোপার্ক (New Town Eco Park)। সরকারি নাম প্রকৃতি তীর্থ। এত সুবিশাল জায়গার প্রতিটা কোণ সাজানো হয়েছে নানান রকম আকর্ষণ দিয়ে। এই পার্কটি ঘুরে দেখতে দেখতে আপনি টেরই পাবেন না যে কিভাবে আপনার সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। আর তাইতো সারাদিন ঘুরে বেড়ানোর মত অসাধারণ এই জায়গাটি সম্পর্কে আজ আপনাদের জানাবো। একদিনে এই জায়গার পুরোটা বলা যাবে না বলে আমি কয়েকটি পর্বে লিখবো। তাহলে চলুন কলকাতা ইকোপার্ক পর্ব ১ শুরু করি।
[picture]
কলকাতা ইকোপার্ক পর্ব ১: অবস্থান ও যাবার উপায়
কলকাতা বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরে নিউ টাউনে মেজর আর্টারিয়াল রোডের পাশে অবস্থিত এটি। কোনও ক্যাব (ওলা বা উবার) অথবা ট্যাক্সি কিংবা সিএনজি করে সরাসরি ইকো পার্কে পৌঁছে যেতে পারেন। কলকাতায় ট্যাক্সি বা সিএনজি ভাড়া তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এছাড়া পাবলিক বাসে করেও যাওয়া যেতে পারে।
এই পার্কে মোট ৬টি গেট আছে। এর মধ্যে ১-৪ নম্বর যে কোনও গেট দিয়ে ঢুকতে পারেন। ৪ নং গেটের কাছেই রয়েছে বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের প্রতিরূপ এবং ২ নং গেটের কাছে রয়েছে ব্যাটারি চালিত গাড়ি বা টয়ট্রেন। গাড়ি বা টয়ট্রেনে করে পুরো পার্কটি ঘুরে দেখতে পারেন। তবে পার্কে ঘোরার আসল মজা পাবেন পায়ে হেঁটে দেখলেই।
কলকাতা ইকোপার্ক পর্ব ১: পরিদর্শনের সময়
গ্রীষ্মকালীন সময়: (১ মার্চ-৩১ অক্টোবর)
- মঙ্গলবার থেকে শনিবার = দুপুর ২:৩০ টা – রাত ৮:৩০ টা
- রবিবার এবং ছুটির দিন = দুপুর ১২ টা – রাত ৮:৩০ টা
শীতকালীন সময়: (১ নভেম্বর-২৮ ফেব্রুয়ারী)
- মঙ্গলবার থেকে শনিবার = দুপুর ১২ টা – সন্ধ্যা ৭:৩০ টা
- রবিবার এবং ছুটির দিন = দুপুর ১১ টা – সন্ধ্যা ৭:৩০ টা
প্রবেশ মূল্য ৩০/- টাকা। ৩ বছর এবং তার চেয়ে বেশি বয়সের শিশুদের টিকেট কাটতে হয়। পার্ক সোমবার বন্ধ থাকে। পার্কে প্রবেশদ্বার এবং টিকেট কাউন্টার সন্ধ্যা ০৭:৩০ টায় বন্ধ করা হয়।
কলকাতা ইকোপার্ক পর্ব ১: পার্কের ভেতরে ঘুরে দেখার মত জায়গা
পুরো ইকো পার্কটি একদিনে ঘুরে দেখা প্রায় অসম্ভব। তাই আকর্ষণীয় কিছু জায়গার নাম উল্লেখ করলাম। তবে এর বাইরেও শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের জন্য আরও অনেক কিছু আছে ইকো পার্কে। সবকিছুর বাইরেতো রয়েছেই চোখ জুড়ানো সবুজ আর নয়নাভিরাম দৃশ্য। এখানে বলতেই হয় আমি আমার জীবনের প্রথম রংধনু দেখেছিলাম এই ইকো পার্কেই।
১. অসাধারণ একটি লেক ও দ্বীপ
পার্কে রয়েছে ১০৪ বর্গ একরের লেক। লেকের মাঝখানে রয়েছে একটি দ্বীপ যেটির নাম- সবুজ সাথী। এখানে খাবার রেস্টুরেন্ট ও ৩ তারকা মানের থাকার হোটেল আছে। চাইলে এই অসাধারণ পরিবেশে আপনি পরিবার, আপনার প্রিয়জনকে বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কিছুদিন অবসর সময়ও কাটিয়ে আসতে পারেন।
২. বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের প্রতিরূপ (Replica)
২০০৭ সালে ঘোষিত বিশ্বের বর্তমান সপ্তাশ্চর্যের প্রতিরূপ তৈরি করা আছে এই পার্কে। বর্তমানের এই সপ্তাশ্চর্য হলো-
- চীনের মহাপ্রাচীর
- জর্ডানের পেত্রা নগরী
- রোমের কোলোসিয়াম
- মেক্সিকোর চিচেন ইৎজা
- পেরুর মাচুপিচু
- ভারতের তাজমহল
- ব্রাজিলের ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার।
তবে প্রাচীন আশ্চর্য হিসেবে মিসরের পিরামিডকে রাখা হয়েছে বিশেষ সম্মান দিয়ে।
৩. চিলড্রেনস পার্ক
১০ বা ১২ বছর পর্যন্ত বাচ্চারা চড়তে পারে এমন বিভিন্ন ধরনের রাইড বা অ্যাক্টিভিটি দিয়ে সাজানো হয়েছে এই পার্ক।
৪. সবুজ সাথী কাঁচ ঘর
সবুজ সাথী দ্বীপে পুরো কাঁচ দিয়ে তৈরি ঘর যেখান থেকে ৩৬০° অ্যাঙ্গেল-এ ইকো পার্কের পুরো ভিউ পাওয়া যায়।
৫. অ্যাম্ফিথিয়েটার (Amphitheatre)
খুব সুন্দর একটি পানিতে ভাসমান অর্ধ বৃত্তাকার খোলা গ্যালারী যেটা ২০০০ লোক ধারণ করতে পারে। এটি বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা সেমিনারের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়।
এছাড়াও আছে-
১) হ্রদের তীরবর্তী বিহার
২) রবি অরণ্য
৩) ট্রপিক্যাল ট্রি গার্ডেন
৪) বাটারফ্লাই গার্ডেন
৫) আর্টিস্টস কটেজ
৬) রোজ গার্ডেন
৭) স্কাল্পচার গার্ডেন
৮) মাস্ক গার্ডেন
৯) রেইন ফরেস্ট
১০) বাঁশ বাগান
১১) চা বাগান
১২) ফলের বাগান
১৩) হেলিকোনিয়া গার্ডেন
১৪) বাংলার হাট
১৫) ডিয়ার পার্ক
১৬) জোড় বাংলো মন্দির
১৭) পাখিবিতান
১৮) গ্রাফিটি দেয়াল
১৯) ফ্লোটিং মিউজিক ফাউনটেন
২০) আড্ডা জোন
২১) ফোয়ারা
২২) গলফ কোর্স
২৩) মিষ্টি হাব
২৪) আইফেল টাওয়ার
২৫) জাপানীজ ফরেস্ট
ইকো পার্কের গাইড মানচিত্র
আমি আজকে খুব সংক্ষেপে ইকো পার্কের প্রধান আকর্ষণগুলোর নাম জানিয়ে দিলাম। সুবিশাল এই পার্কে রয়েছে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এবং বিনোদন দিতে নানান ধরনের অ্যাক্টিভিটিজ। তাইতো সারাটা দিন যেখানে অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারেন সেই জায়গাটির সম্পর্কে একদিনে সবকিছু জানানো সম্ভব না। আমার পরবর্তী লিখায় আপনাদেরকে ইকো পার্কের বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটিজ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে জানাবো।
ইকো পার্ক সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে এই ওয়েবসাইটটি দেখতে পারেন- ইকোপার্কনিউটাউন.কম অথবা ফোন করতে পারেন এই নম্বরে- (০৩৩) ২৭০৬৪০১০।
বিঃদ্রঃ আপনার ভ্রমণ হোক আনন্দময় এবং পরিবেশবান্ধব। ঘুরতে যেয়ে আমাদের মাধ্যমে যাতে পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয় এই খেয়ালটুকু আমাদের সকলেরই রাখা উচিত। বিশেষ করে দেশের বাইরে গেলে এমন কোন কাজ যাতে না করি যে আমার দেশকে কিংবা দেশের মানুষকে কেউ খারাপ কথা বলার সুযোগ পায়।
ভালো থাকুন সবাই। ঘুরে বেড়ান সময় পেলেই। ট্যুরে যাওয়া বা ভ্রমণে যাওয়াটা মনটাকে একদম রিফ্রেশ করে দেয়।
ছবি- রীভা খান; সংগৃহীত: সাজগোজ