চুল পড়ার সমস্যা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বিশেষজ্ঞরা বলেন দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ টা চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে তখনই, যখন অস্বাভাবিকভাবে চুল পড়া শুরু হয়। জানিনা হঠাৎ কি কারণে গতবছর আমার ভীষণ চুল পড়া শুরু হয়। একটা কারণ আমার নিজেরই মনে হল, নিয়মিত চুলে হিট দেয়া। আমি প্রায়শই চুলে আয়রন বা ব্লোড্রাই করি যা এখনকার দিনে প্রায় সব মেয়েই করে থাকে। আর চুলে হিট দিলে চুল ড্যামেজ বা রুক্ষ হয়ে চুল পড়তে শুরু করে। তবে আমার মনে হয় একটু বেশীই চুল পড়ছিল।
চুলের এই হাল দেখে আমার তো পাগলপ্রায় অবস্থা। আমার এত সাধের চুল থোকা থোকা উঠে যাচ্ছে। চুল পড়ার চিন্তায় মনে হয় আরও বেশী করে চুল পড়া শুরু হল! ডাক্তারের কাছে গেলে বেশ কিছু ঔষধ ধরিয়ে দেবে এই ভয়ে ওদিকে যেতে সাহস করলাম না। ভাবলাম বেসিকে ফিরে যাই। ন্যাচারাল জিনিস দিয়ে চুলের যত্ন নেয়া শুরু করি। কিন্তু এই প্যাক সেই প্যাক তৈরি করা, নিয়মিত এপ্লাই করা এত সময় কোথায়?
চুলের ড্যামেজ কমানো, পুষ্টি দেয়া, সর্বোপরি স্বাস্থ্যোজ্জল ঘন কালো চুলের জন্য যুগ যুগ ধরে তেল ব্যবহার করেছেন সবাই। কিন্তু এই ভেজালের যুগে হারবাল বা প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এমন তেল কোথায় পাই? এমনিতে আমার কেমিকেলের সমৃদ্ধ পণ্যের ব্যাপারে এলার্জি আছে। শুনেছি নামীদামী অনেক কোম্পানির তেলেও নাকি কেমিকেল মিশানো থাকে। একদিন আগোরাতে ঘুরতে ঘুরতে কুমারিকার একটা তেল দেখলাম। লেখা “কুমারিকা নারিশিং হেয়ার ফল কন্ট্রোল হারবাল অয়েল “। একে হারবাল তারপরে আবার হেয়ার ফল কন্ট্রোল! এ যে দেখছি সোনায় সোহাগা। কিনব কি কিনবনা করতে করতে কিনেই ফেললাম। সেই তেল ব্যবহারের গল্প আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
প্রথমেই যেসব উপাদান আছে সেগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করে যা পেলামঃ
ব্রাহ্মীলতা( Bacopamonnieri)
চুলে বাড়তি পুষ্টি যোগান দিতে ব্রাহ্মীর ভূমিকা প্রাচীন আয়ুর্বেদশাস্ত্রের সময় থেকেই সমাদৃত। এই উপাদানটি নতুন চুল বেড়ে উঠতে সাহায্য করে যার ফলে দ্রুত চুল ঘন হয়ে ওঠে। একই সাথে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ করে যার জন্য চুলের ভলিউম বেড়ে যায়।
আমলা (Phyllanthusemblica)
চুল পড়ার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হল দুর্বল চুলের গোড়া ।গোড়া দুর্বল থাকলে সামান্য আঘাত যেমন চিরুনি দিয়ে আঁচড়ালেই চুল উঠে যায়। আমলা বা আমলকীর গুনাগুণ কম বেশি আমরা সবাই জানি। আগেকার যুগ থেকেই তেলে আমলকী ভিজিয়ে রেখে সেই তেল মাথায় লাগানো হত মজবুত চুলের জন্য। আমলকীর এই জাদুকরী গুনাগুণই ব্যবহার করা হয়েছে কুমারিকা হেয়ার ফল কন্ট্রোল অয়েলে। এছাড়া বেশ অল্প সময়ে চুলকে ঘন কাল করতে সক্ষম এই উপাদানটি।
ঘৃতকুমারী (Aloe vera)
চুলে অ্যালো ভেরা লাগালে যে চুল মসৃণ আর সিল্কি হয়, তা কে না জানে। আমরা অনেক সময় তাই বাজার থেকে ফ্রেশ অ্যালো ভেরা কিনে এনেও চুলে লাগাই। এই অসাধারণ গুণসম্পন্ন হারবাল প্রোডাক্টটি তাদের উপাদানে এনেছে কুমারিকা। এটি চুলের পুষ্টি ও স্বাভাবিক আর্দ্রতা যোগায় আর তা ধরে রাখার ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
নারকেল তেল (Cocosnucifera)
নারকেল তেলের ব্যাপারে আলাদা করে কিছুই বলার প্রয়োজন নেই। ছোটকাল থেকেই দাদী নানিরা মাথায় তেল দিয়ে দিতেন আর আমরা তাঁদের কাছ থেকেই যুগে যুগে জেনে আসছি নারকেল তেলের গুণ। নারকেল তেল চুলকে পুষ্টি যোগায়, চুলের লালচে ভাব দূর করে। যার ফলে আপনি অল্প সময়েই পেয়ে যাবেন শাইনি ও কালো চুল।
মুকুনুওয়েন্না (Alternantherasessilis)
হয়ত আমরা অনেকেই এই উপাদানটি সম্পর্কে ততটা জানিনা। অতি অল্প সময়ের মধ্যে নতুন চুল গজানো আর চুলের দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মুকুনুওয়েন্না অত্যন্ত দক্ষ ভূমিকা রাখে।
ভেটিভার (Vetiveriyasezonoides)
ভেটিভারের প্রধান একটি বৈশিষ্ট্যই হল এর শীতলীকরণের গুনাগুণ।এর নিয়মিত ব্যবহার মাথার স্নায়ুকে শীতল রাখতে সাহায্য করে। চুল ও স্ক্যাল্পকে সুস্থ রাখে, মাথা ঠাণ্ডা রাখে।
এবারে আসি ব্যবহার করে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটা নিয়ে। যখন থেকে তেলটা ব্যবহার করা শুরু করলাম খুব খেয়াল রাখলাম চুল পড়া কমে কিনা। সত্যি বলতে দুই সপ্তাহ নিয়মিত ব্যবহার করে আমার চুল পড়া অনেকাংশে কমে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা যেহেতু এটা একটা হারবাল প্রডাক্ট তাই চুলের যে কোন ক্ষতি করবে না সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত ছিলাম । আর আমি নিয়মিত এখন এটাই ব্যবহার করে যাচ্ছি।
যা কিছু ভালঃ
- এটি একশত ভাগ ন্যাচারাল এবং হার্মফুল কেমিক্যাল মুক্ত।
- কোন কৃত্রিম রঙ গন্ধ বা অন্য কোন উপাদান এতে একদমই নেই।
- চুলে কালার করা, আয়রন করা, কার্ল করা চুলের যে কোন ড্যামেজ থেকে রিকভার করার ক্ষেত্রে এই তেলটি বেস্ট বলে আমি মনে করছি
- মন মাতানো সৌরভে মাতিয়ে রাখবে সারাটি দিন যা তেলটির মিনারেল অয়েলেই আছে। গন্ধটা কড়া নয় মোটেই।
- এই গরমেও আপনার স্ক্যাল্প থাকবে শুকনা আর ঘাম মুক্ত তাই চুলে অযথা ময়লা আটকে থাকবে না।
যা ভাল নয়ঃ
- শুনেছি কারো কারো মাথায় স্যুট করে না।
- সব জায়গায় এখনও খুব সহজে পাওয়া যায় না।
পরিমাণঃ
২০০ এম এল প্যাক।
কোথায় পাবেনঃ
আগোরা, মিনাবাজার বা স্বপ্নের মত বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের পাশাপাশি ভাল যেকোনো কসমেটিকের দোকানে পাওয়া যাবে।
মূল্যঃ ১৫০ টাকা।
আপনাদের কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
লিখেছেনঃ রেহনুমা তাবাসসুম অন্তরা।