গত পহেলা বৈশাখে যৌন হয়রানির যে ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলো প্রতিহত করে সগর্বে কীভাবে মাথা তুলে দাঁড়াবেন, এই নিয়ে এ লেখাটি। প্রথম লেখায় প্রাথমিক ধারণা দিয়েছিলাম, আজ বিস্তারিত লিখছি।
পুলিশ একাডেমিতে আলফা কোম্পানির ড্রিল প্রশিক্ষক আকবর ওস্তাদ একটা জিনিস শিখিয়েছিলেন- “স্যার, আপনি এসপি হন আর আইজি হন, মনে রাখবেন, আপনার বডিগার্ড সবার আগে আপনি নিজে”
এই কথাটা শুধু পুলিশ না, প্রত্যেকের জন্যে প্রযোজ্য। বাংলাদেশের মেয়েদের মূল সমস্যা তাদের সক্ষমতায় নয়, মাইন্ডসেটে। বছরের পর বছর সমাজের ভুল কন্ডিশনিং এর ফলে একটা মেয়ে নিজেকে দুর্বল ভাবতে শেখে, আর এর সুযোগ নেয় হায়েনার দল। আমাদের মেয়েরা খুব ভালোভাবেই সক্ষম নিজেকে রক্ষা করতে, শুধু প্রয়োজন মাইন্ডসেট পাল্টানো।
প্রথমে আসি সবচাইতে কমন প্রশ্নে। দল বেঁধে বিশজন একসাথে আপনাকে টার্গেট করলে কি করবেন এই প্রশ্নটা অনেকেই করেছেন। আমি worst case scenario এর কথা লিখছি, ধরুন আপনি একা আর ওরা বিশ জন।
জেনারেল আইজেনহাওয়ারের একটা কথা আছে: Its not the size of the dog, its the size of the fight in the dog that matters most.
[picture]
বিপদের মুখে আপনি কতটা এ্যাগ্রেসিভ এটাই আপনার পরিণতি ঠিক করে দেবে। আমি বার বার একটা জিনিস বলি, আপনারা criminal mindset মিস করছেন। ভীড়ের মধ্যে একটা মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে যৌনসুখ পায় কোন ধরণের পুরুষ? যে পুরুষের সাহস নেই সুস্থ্য, ভদ্রোচিত উপায়ে একটা মেয়েকে প্রপোজ করার। এই কুকর্মটি করতে যার আবার দল বেঁধে যেতে হয়, এরা রাস্তার নেড়ি কুকুরের চাইতেও ভীতু, কুকুর তো তবু দূরে গিয়ে হলেও হাঁকডাক দেয়। এদের একটাই অস্ত্র- আপনি প্রতিবাদ না করে চেপে যাবেন এই বিশ্বাসটুকু।
Dear Sister, don’t give the bastard the pleasure.
যে মুহুর্তে বুঝলেন কেউ আপনাকে বাজেভাবে স্পর্শ করছে, raise hell around you. Scream at the top of your voice.
আগে থেকেই সতর্ক থাকুন কে করতে পারে আশেপাশে, তারপর আপনার গায়ে হাত দেয়ামাত্র ধরে ফেলুন। যদি দশ পনের জন একসাথে আসে, সবচেয়ে কাছে যেটাকে পাবেন ওটাকে দিয়ে শুরু করুন। Go completely insane.
কোথায় কোথায় আঘাত করবেন বলে দেই:
চোখ: হাতের পাঁচ আঙুল দিয়ে থাবা বানিয়ে সর্বশক্তিতে গুঁতো দিন
নাক: হাতের তালু এবং কবজির সংযোগস্থল দিয়ে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দিন
অন্ডকোষ: লাত্থি মারুন, হাত দিয়ে সজোরে বাড়ি দিন।
হাঁটু: লাত্থি দিন যে কোন দিক দিয়ে
গলা: হাতটাকে ছুরির মত বানিয়ে প্রচন্ড জোরে আঘাত করুন।
ছবিতে বিস্তারিত দেখানো আছে, দেখুন।
মনে রাখবেন, নিজেকে রক্ষা করার পূর্ণ আইনগত অধিকার আপনার আছে( পেনাল কোড ধারা একশ দেখুন)। যে মুহূর্তে আক্রান্ত হচ্ছেন, মানবতা সভ্যতা ইত্যাদি ভুলে যান। এমন ধোলাই দিন যেন আর এ জীবনে কোন মেয়ের গায়ে হাত দেবার কথা দু:স্বপ্নেও না ভাবে।
আমার প্রশিক্ষক তমাল ভাই একটা মজার ঘটনা শেয়ার করেছেন। তাঁর এক ছাত্রী এরকম একসাথে দশ বারোজনের আক্রমনের শিকার হল। একটুও ভয় না পেয়ে সে রাস্তা থেকে একটা থান ইঁট তুলে নিয়ে চিৎকারকরেবলল, “আয়, কে আগে মরতে চাস আয়”। মেয়েটির আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখে সব কয়টা সুড়সুড় করে দৌড়!
আড়ালে আবডালে হাত দিয়ে স্পর্শসুখ নিতে চাওয়া কাপুরুষ থান ইঁটের বাড়ি খেতে চাইবেনা- এই সহজ সরল সত্যটা মনে রাখতে পারলেই আপনি নিজেই বুঝবেন কি করতে হবে।
চুলের কাঁটা, সেফটিপিন, আলপিন, চোখা পেনসিল- এগুলো দারুণ অস্ত্র বদমায়েশদের সাইজ দেবার। এগুলো কিছুই যদি না থাকে, দাঁত আর নখ তো আছে, তাইনা? কামড় দিয়ে গায়ের মাংসসুদ্ধো তুলে নিন, নখ দিয়ে আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন করে দিন মুখমন্ডলের চামড়া।
When you’re attacked, DO NOT be civil. Be wild. Make the bastard realize that he messed with the wrong girl.
এবার নীচের বিষয়গুলো মাথায় রাখুন:
(১) মানসিক প্রস্তুতি নিন যে আপনার উপর আক্রমণ হতে পারে। ভীড়ে অসতর্ক থাকবেন না, চারপাশে ঘন ঘন নজর রাখুন। আপনার ঘন ঘন নজর রাখা অনেক পটেনশিয়াল বদমাশকে দূরে রাখবে
(২) একসাথে চার পাঁচজন দল বেঁধে চলুন। যখন আক্রান্ত হবেন, অন্তত: একজন যেন দৌড়ে গিয়ে আশেপাশের লোক জড়ো করতে পারেন এটা মাথায় রাখবেন। নিজেরা নিজেরা আলোচনা করুন কে কি করবেন। ইটস অল এবাউট টিমওয়ার্ক।
(৩) হ্যারাসমেন্টের ভয়ে ঘরে বসে থাকাটা কোন সমাধান না। দুদিন পর এরা আপনার ঘরে ঢুকে আক্রমণ করবে যদি আজ আপনি এদের প্রশ্রয় দেন।
(৪) আপনার “ইজ্জত” এত সস্তা না যে কেউ গায়ে হাত দিলে তা চলে যাবে। বরং এই অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলে মানুষ হিসেবে আপনি নিজেই নিজের সম্মান বিকিয়ে দিলেন।
(৫) “সমাজের” কথায় পাত্তা দেবেন না। যেই সমাজ সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের শিকার মেয়েটাকেই উল্টো বলে যে তার চলন বলন ঠিক নেই, সেই সমাজ একটা অপরাধী, হারামীমার্কা সমাজ। এর না আছে আপনাকে রক্ষা করার ক্ষমতা, না আছে আপনার দিকে আঙুল তোলার অধিকার।
আমি চাই এই পহেলা বৈশাখে বাংলার বাঘিনীরা জেগে উঠুক, আমার ইনবক্স ভরে যাক এই জেগে ওঠা বাঘিনীদের প্রতিবাদ গর্জনের গল্পে।
শেষ করছি রুডিয়ার্ড কীপলিং এর কবিতার প্রথম চার লাইন দিয়ে:
WHEN the Himalayan peasant meets the he-bear in his pride,
He shouts to scare the monster, who will often turn aside.
But the she-bear thus accosted rends the peasant tooth and nail.
For the female of the species is more deadly than the male.
প্রিয় পাঠিকা, জেনে রাখুন, যে কোন প্রজাতিতেই নারীটি পুরুষের চাইতে অনেক বেশি ভয়ংকর। শেষ হোক আপনাকে দমিয়ে রাখার দিন, আজই, এ মুহুর্ত থেকে।
লিখেছেন – মাসরুফ হোসেন
চলবে………