[topbanner]
গত দুই পর্বে পহেলা বৈশাখে যৌন হয়রানী থেকে রক্ষা পেতে বেসিক মাইন্ডসেট এবং আত্মরক্ষা কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকে শেষ পর্ব, এবং এতে আলোচনা করব কীভাবে আপনি একাধিক আক্রমনকারীকে প্রতিহত করবেন।
আমি যে সেল্ফ ডিফেন্স সিস্টেমের (Krav Maga) ছাত্র, এতে ক্রাউড ফাইটিং এর একটা মজার জিনিস শেখানো হয়। আপনার একেবারে কাছে মাত্র চারজন আপনার শরীরে আক্রমণ করতে পারে চারদিক থেকে। নিজের শরীরের চারপাশে এই চারজনের হাত থেকে যদি নিজেকে রক্ষা করতে পারেন, এই একই সিস্টেমে যতজনই আসুক পিটিয়ে সোজা করতে পারবেন।
এবার একটা অতি জরুরী কথা বলি। আপনি যখন আক্রান্ত, আপনার মূল উদ্দেশ্য নিরাপদে ওখান থেকে বেরিয়ে আসা, এবং এজন্যে যা যা প্রয়োজন সব আপনি করবেন। একটা পালানোর পথ বের করে ওখান দিয়ে আপনাকে বেরিয়ে যেতে হবে, বিশজনকে একাই পেটানো আপনার মূল উদ্দেশ্য নয়। কাজেই, কৌশলগতভাবে মাত্র দু তিনজনকে আঘাত করেই আপনি বিপদ কাটাতে পারবেন যদি মাথা একটু ঠান্ডা থাকে।
ক্রাভ মাগা ইন্সট্রাকটর তমাল ভাইয়ের সাথে কথা বলে এবং উইকিহাউ(wiliHow) আর্টিকেল এর সাথে নিজের ক্রাউড কনট্রোল এক্সপেরিয়েন্স মিশিয়ে আপনাদের জন্যে একটা বেসিক গাইডলাইন আমি তৈরি করেছি। এর একটা Achronym দিয়েছি:”পহেলা বৈশাখ”।
#প মানে প্রস্তুতি। প্রিপারেশন ইজ এভরিথিং। এর দুটো ধাপ আছে, মানসিক এবং শারীরিক। মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন যে আপনার উপর আক্রমন হবেই, এবং মনে মনে ঠিক করুন কিভাবে আপনি আপনার কৌশল সাজাবেন। একসাথে তিন চারজন মিলে যান, নিজেরা আলাপ করুন আগে থেকেই। একটা জায়গায় ঢোকার আগে বিপদ এলে কোন জায়গায় সবার আগে দৌড়ে যাবেন এটা মাথায় রাখুন। শারীরিক প্রস্তুতি হিসেবে এ লেখার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে দেখানো কৌশলগুলো বাসায় নিজে নিজে অনুশীলন করুন। মাত্র দশ মিনিট অনুশীলন লাইফ এ্যান্ড ডেথ পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। অস্ত্র হিসেবে চোখা পেনসিল, রুটি বেলার ছোট বেলন, সেফটিপিন, পয়সা ভরা ছোট ব্যাগ এগুলো সাথে রাখুন, বিপদে যাতে ব্যবহার করতে পারেন।
[picture]
#হে মানে হেলাফেলা না করা। বিপদ হলে হবে অন্য কারো,
আমার কিছু হবেনা- এই হেলাফেলা করেছেন কি মরেছেন। এই যে উপরের প্যারায় অস্ত্র সাথে রাখতে বললাম, জানি, নব্বই পারসেন্ট পাঠিকা এটা পাত্তাও দেবেন না। আগের দু পর্বে বাসায় যে অনুশীলনের কথা বলেছি এটা নিরানব্বই পারসেন্ট পাঠিকা দিনে মাত্র দশ মিনিট সময় ব্যয় করে এক দুবার অনুশীলনটুকু করবেন না। আপনারা প্রসাধনীর পেছনে যতটা সময় ব্যয় করেন , প্রতিদিন তার একটা অতি ক্ষুদ্র অংশ যদি আজ থেকে পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত হেলাফেলা না করে অনুশীলনে ব্যয় করেন , কোন বদমায়েশ আপনার হাত থেকে পালাতে পারবেনা। এই বকাটুকু আপনাকে খোঁচা দিতে নয়, একজন ভাই হিসেবে আপনার ভেতরের ফাইটিং স্পিরিট জাগিয়ে তুলতে দায়িত্ব নিয়েই দিলাম। আমার এ লেখা যদি মাত্র একজন মেয়েকে অনুপ্রাণিত করে নিজেকে রক্ষা করতে, I will consider all my effort successful.
#লা মানে লাত্থি। আক্রমণকারী দলের পালের গোদা যেটা, ওটার কাছে এগিয়ে গিয়ে সরাসরি তার অন্ডকোষ বা হাঁটুতে প্রচন্ড জোরে লাত্থি মারুন। দশ বারোজনের দলে যে বদমায়েশকে দেখবেন সবার আগে আপনাকে নিয়ে বাজে কমেন্ট করছে, নিজেই এগিয়ে গিয়ে স্ট্রেইট লাত্থি মারুন। লাত্থির সাথে আঁচড়, কামড়, রুটি বেলার বেলনের বাড়ি, সেফটিপিনের খোঁচা ইত্যাদি যা যা আছে সব প্রয়োগ করুন। নাক বরাবর ঘুষি, চোখে আঙুল চালানো, গলা বরাবর হাত দিয়ে কারাটে চপ- বিনা দ্বিধায় সর্বশক্তিতে চালিয়ে দিন। পিটিয়ে লাশ বানান আপনার উপর আক্রমণ করা কাপুরুষগুলোকে, যাতে বাপের জন্মে আর এ কাজ কোন মেয়ের সাথে না করে। Once you attack, go all out.
#বৈ মানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। নিজেকে অবলা নারী না ভেবে, অসহায় ভিকটিম মনে না করে এই সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার একজন এজেন্ট হিসেবে ভাবুন। মনে রাখবেন, এই নষ্ট সমাজ চায় আপনাকে দমিয়ে রেখে ডমিনেট করতে, এবং কেউ আপনার প্রতিবাদ দেখতে চায়না। ভাল “ম্যারেজ ম্যাটেরিয়াল”, “সুইট ওয়াইফ থিংগি” না হয়ে ওই বেপরোয়া ডানপিটে মেয়েটি হোন যে কিনা সমাজের চাপিয়ে দেয়া “ভাল মেয়ের” সংজ্ঞাকে পায়ে ছুঁড়ে দিয়েছে। সব অন্যায় মেনে নিয়ে ম্যারেজ ম্যাটেরিয়াল না হয়ে একজন আত্মমর্যাদাশীল, প্রতিবাদী মানুষ হয়ে উঠুন। এই পহেলা বৈশাখে বখাটেদের উপর আপনার এক একটা থাপ্পড় হোক সমাজের মুখে এক একটা কুঠারাঘাত। যে কৌশলগুলো শেখালাম, তার দু একটা বরাদ্দ রাখুন সেই সব বদমায়েশগুলোর জন্য যারা পাশে দাঁড়িয়ে কুমন্তব্য করবে।
#শা মানে শারীরিক সক্ষমতা। এমন কোন পোশাক পরবেন না যেটা পরে আক্রমন প্রতিহত করা অসুবিধাজনক। একটা কথা স্পষ্টভাবে বলি, এর মানে এই না যে কোন অবস্থাতেই আমি নারীর প্রতি আক্রমণকে তার পোশাক দিয়ে জায়েজ করছি। Even if a girl is stark naked, still she is NOT asking for it. আমার কথার মানে হল, কিছু পোশাক আছে যেগুলো পরে লাত্থি মারা বা দৌড়ানো অসুবিধাজনক। আপনার জন্য কোন পোশাক সুবিধাজনক এটা আপনিই ভাল বলতে পারবেন। আমার মা যেমন শাড়ি পরেই দৌড়ঝাঁপ সব করতে পারেন, ছোট বোনটা পরে জিন্স, ফতুয়া বা কামিজ। নতুন জুতো পরে বৈশাখি মেলায় গিয়ে দেখলেন হাঁটতেই পারছেন না, এমন যেন না হয়। Do not wear anything that will limit your physical movement.
#খ মানে খবরদারি। দয়া করে নিজের উপর কাউকে খবরদারি করতে দেবেন না। বিশেষ করে “কি দরকার অনুষ্ঠানে যাওয়ার” টাইপ কথাবার্তা শুনে কোন অবস্থাতেই দমে যাবেন না। “I am the master of my fate, I am the captain of my soul”- ইনভিক্টাস কবিতার এই দুলাইন মর্মমূলে গেঁথে নিন। আমি বার বার এই মাইন্ডসেটের কথা বলছি কারণ আপনার মাইন্ডসেট যদি ঠিক থাকে, কতজন আক্রমণ করল সেটা কোন ব্যাপার না।
উপরে যা যা বললাম তার সারমর্ম মানা:
প তে প্রস্তুতি
হে তে হেলাফেলা না করা
লা তে লাত্থি দেয়া
বৈ তে বৈপ্লবিক পরিবর্তন
শা তে শারীরিক সক্ষমতা
খ তে খবরদারি না মানা
জানি, নিরানব্বই ভাগ পাঠিকাই এ লেখাটা পাত্তা দেবেন না, দিলেও বড়জোর ওই পড়া পর্যন্তই, অনুশীলনটুকু আর করবেন না।তাও, এমন একজন বাঘিনীও কি নেই যিনি এই তিন পর্বের লেখা কাজে লাগিয়ে অন্তত একজন যৌন নিপীড়ককে শায়েস্তা করবেন? এই পহেলা বৈশাখে অন্তত একটা দুর্ঘটনা ঠেকাবেন?কোন এক বোনের ভাই হিসেবে, কোন এক মায়ের সন্তান হিসেবে, গরিব দেশের ততোধিক গরীব একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে প্রশ্ন রেখে গেলাম।
দেশে এলে আমার একটা স্বপ্ন আছে। আমার দায়িত্বাধীন এলাকার মেয়েরা সপ্তাহে অন্তত: এক দুবার সরকারী নম্বরে ফোন করে বলবে, “ভাইয়া, এক বদমায়েশ ইভটিজিং করতে এসেছিল, পিটিয়ে আলুভর্তা বানিয়েছি। শিগগির পুলিশ পাঠান”। আমিও হাসতে হাসতে দুজন কন্সটেবল পাঠিয়ে দেব অন দা স্পট। আমার বদলীর সময় আসতে আসতে এই ফোন কলের সংখ্যা শূন্যতে নেমে আসবে। এই স্বপ্ন মোটেও দিবাস্বপ্ন না। আমাদের মেয়েরা এভারেস্টে ওঠে, ফাইটার এয়ারক্রাফট চালায়, প্যারাট্রুপার হয়। আমার মা পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন নারী, but if you mess with her, God save you.
তিনি তাঁর পুলিশ পুত্রকে কিচ্ছু জানাবেন না, নিজেই পিটিয়ে আপনাকে লাশ বানিয়ে ফেলবেন। আমার বয়েস একত্রিশ এবং আমি একজন প্রফেশনাল ক্রাইম ফাইটার, still I am afraid of her.
নওরীন ভাবী একটা মজার কথা বলেছেন, “বাঙালি পুরুষ শব্দটা হচ্ছে Oxymoron, করলার রসগোল্লার মত”। নিজে বাঙালি পুরুষ হয়েও বলতে পারি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইটা শতভাগ সত্য। Consent বলে কোন শব্দ আমাদের অভিধানে নেই। একটা মেয়েকে একা পেলে তার গায়ে হাত দেয়াটাকে আমরা অধিকার বলে মনে করি। অফিসের যে কলিগ রাস্তার নেড়ি কুকুরের ডাকেও পালিয়ে পথ পায়না, বিদেশের কনফারেন্সে গিয়ে সেই লোকটাই পাশের নারী কলিগের হোটেল রূমে মাতাল হয়ে হানা দেয়। বাসার ড্রাইভার, গৃহশিক্ষক, রিক্সাচালক, অফিসের বস থেকে শুরু করে এমনকী ইউনিফর্ম সার্ভিস- সব জায়গায় এ ধরণের লোক আছে এবং খুব ভাল পরিমাণেই আছে।
এই সমস্যা সমাধানের দুইটা উপায় আছে। প্রথমটা দীর্ঘমেয়াদী: সমাজ পাল্টাতে হবে। এর জন্যে ক্লাস ওয়ান থেকে টেক্সটবইতে শেখাতে হবে কোন আচরণ গ্রহণযোগ্য আর কোনটা না। আইনের শাসন, অপরাধীর শাস্তি ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে।
দ্বিতীয় উপায়টা ইন্সট্যান্ট ধামাকা।
আপনি যদি পুরুষ হন, মেয়েদের সেক্সুয়ালি হ্যারাস করা থেকে দূরে থাকুন। কাউকে যদি ভাল লাগে, সাহস করে শালীন উপায়ে নিজের ভাললাগা তাকে জানান। তিনি সম্মতি দিলে (এবং এতে যদি কারো ক্ষতি না হয়) বিনা দ্বিধায় তার সাথে ঘণিষ্ট হোন, আর সম্মতি না দিলে সম্মানের সাথে সরে আসুন। দিস ইজ হোয়াট আ রিয়েল ম্যান ডাজ।
আপনি নারী হলে কেউ যদি আপনাকে সেক্সুয়ালি হ্যারাস করে, যাস্ট ফাইট ব্যাক। পহেলা বৈশাখ নিয়ে আমার তিন পর্বের আর্টিকেলগুলো পড়ুন, এবং এই আর্টিকেলে দেয়া ছবি অনুযায়ী আঘাত করুন। মনে রাখবেন, ফাইট ব্যাক করতে ব্লাক বেল্ট হওয়া লাগেনা, আপনার সাহসই যথেষ্ট।
কেউ বাজেভাবে স্পর্শ করেছে? ব্যাগ থেকে চাবি বের করুন, ছবিতে দেখানো স্টাইলে মুঠ করে ধরুন, তারপর ওটা দিয়ে চোয়াল/গলা বরাবর মারুন ঘুষি।
হাতে কিছু নেই? ছবিতে দেখানো গলার নরম অংশে আঙুল দিয়ে সজোরে আঘাত করুন।
রেইপ করতে এসেছে? দুই আঙুল আক্রমণকারীর চোখে ঢুকিয়ে দিন।
মায়া করবেন না। পেনাল কোডের একশ ধারা অনুযায়ী আইন আপনার পক্ষে, এবং নিজেকে রক্ষা করতে এমনকী মৃত্যু ঘটানোর অধিকারও আইন আপনাকে দিয়েছে যদি প্রয়োজন হয়।
আমার একটা বোন আছে। আমি কখনোই চাইবোনা সে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়ে আমার কাছে কান্নাকাটি করুক, বরং আমার ইচ্ছা সে ওই বদমায়েশের এমন অবস্থা করবে যাতে তাকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতাল নেয়া লাগে।
Violence is never my cup of tea. I never preach violence. However, if it is needed for self defence, I recommend going all out.
সারাজীবন পড়ে পড়ে মার খাওয়া আমাদের মেয়েরা পাল্টা মার দিতে শিখুক, ছিন্ন করুক সমাজের পরিয়ে দেয়া দাসত্বের শেকল।
One pervert at a time.
লিখেছেন – মাসরুফ হোসেন
চলবে………