পায়ে ব্যথা আমাদের খুবই কমন একটি সমস্যা। পা আমাদের পুরো শরীরটাকে ক্যারি করে সব স্থানে নিয়ে যায় কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না পায়ে কোন সমস্যা দেখা দিচ্ছে, আমরা আমাদের দু’পায়ের যত্নের ক্ষেত্রে সবসময় উদাসীন। বিভিন্ন কারণে আমাদের পায়ের ব্যথা দেখা দিতে পারে এবং এই ব্যথা মোকাবেলা করার মত অপ্রীতিকর আর কিছুই নেই। আর তাই আজকের লেখায় আপনাদের জন্য রইলো পায়ে ব্যথা হওয়ার বিভিন্ন কারণ, লক্ষণ এবং পায়ের ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার ৬ টি দারুণ উপায়।
পায়ে ব্যথার বিভিন্ন কারণ
আপনার পা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে বিভিন্ন কারণে। পায়ে ব্যথা পাবার কিছু কমন কারণগুলো হলো-
১) সঠিক মাপের জুতা পরিধান না করা।
২) এমন হাই হিল পরিধান করা যাতে পায়ের গোড়ালিতে অনেক চাপ পড়ে।
৩) অতিরিক্ত এক্সারসাইজ অথবা খেলাধুলা।
৪) গর্ভধারণ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা অথবা বিভিন্ন মেডিকেল কন্ডিশন।
৫) পায়ে আঘাত পাওয়া ইত্যাদি কারণে পায়ে ব্যথা হতে পারে।
পায়ে ব্যথার কিছু লক্ষণ
১. যখন তখন পা ব্যথা করা।
২. ফুলে যাওয়া।
৩. লাল হয়ে যাওয়া।
৪. চলাফেরা করার সময় ব্যথা করা বা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ব্যথা করা।
৫. পায়ের চামড়া বিবর্ণ হয়ে যাওয়া পুড়ে যাওয়া বা চুলকানির মত অনুভব করা।
৬. পায়ের হাড় ভেঙে যাচ্ছে এমন অনুভব করা ইত্যাদি।
পায়ে ব্যথা উপশমের কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি
১. বেকিং সোডা
আপনার প্রয়োজন হবে-
- বেকিং সোডা- হাফ কাপ
- এক বোল গরম পানি
আপনাকে যা করতে হবে-
১) প্রথমে একটি বড় বোলে গরম পানি নিন এবং এতে হাফ কাপ বেকিং সোডা নিন।
২) বেকিং সোডা সম্পূর্ণ দ্রবীভূত না হওয়া পর্যন্ত ভালোভাবে মিশ্রিত করুন।
৩) ১৫-২০ মিনিটের জন্য আপনার পা সোডা মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে রাখুন।
৪) আপনার প্রতিদিন অন্তত একবার এটি করা উচিত।
বেকিং সোডা বিভিন্ন চিকিৎসার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এতে রয়েছে প্রদাহ বিরোধী বিভিন্ন উপাদান যা পা ব্যথা এবং প্রদাহ উপশম করতে সাহায্য করে।
২. নারকেল তেল
আপনার প্রয়োজন হবে-
নারকেল তেল – ২/৩ চা চামচ
আপনাকে যা করতে হবে-
১) আপনার হাতে দুই থেকে তিন চা চামচ নারকেলের তেল নিন।
২) এবারে ব্যথা আক্রান্ত স্থানে আঙুল দিয়ে আস্তে আস্তে ম্যাসেজ করুন।
৩) আপনি চাইলে কয়েক ড্রপ অ্যাসেনশিয়াল অয়েল যোগ করতে পারেন।
৪) তেল ম্যাসাজ করার পর পায়ে মোজা পরে রাখতে পারেন এতে তেল পায়ে লক হয়ে যাবে।
পায়ে ব্যথা থাকাকালীন প্রতিদিনই আপনার এই কাজটি করা উচিত বিশেষ করে শোবার আগে।
নারকেল তেল পায়ের যে কোন ব্যথা ভালো করার একটি প্রাকৃতিক উপায়। এতে রয়েছে মিডিয়াম-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড যা প্রদাহ বিরোধী, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (Antimicrobial) এবং অ্যানালজেসিক (Analgesic)। নারকেল তেল শুধুমাত্র পায়ে ব্যথার চিকিৎসাই করে না, এটি পায়ের জীবাণু দূর করে পাকে ময়শ্চারাইজড করে এবং সংক্রমণ মুক্ত রাখে।
৩. ইপসম সল্ট
আপনার প্রয়োজন হবে-
- ইপসম সল্ট- হাফ কাপ
- ১ বোল গরম পানি
আপনাকে যা করতে হবে-
১) একটি বড় বোলে গরম পানি নিন এবং হাফ কাপ ইপসম সল্ট মেশান।
২) লবণ দ্রবীভূত হওয়া পর্যন্ত ভাল করে মিশ্রিত করুন।
৩) লবণ মিশ্রিত পানিতে আপনার ব্যথাযুক্ত পা ১০-১৫ মিনিটের জন্য ডুবিয়ে রাখুন।
ব্যথা থাকাকালীন আপনার প্রায় প্রতিদিনই এটি অ্যাপ্লাই করা উচিত।
ইপসম লবণ ম্যাগনেসিয়াম সালফেট হিসাবেও পরিচিত। ইপসম লবণে থাকা ম্যাগনেসিয়াম প্রদাহ বিরোধী এবং এটি পেশীর ব্যথার জন্যেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি পায়ের ব্যথা সারাতে খুবই কার্যকরী।
৪.আদা
আপনার প্রয়োজন হবে-
- আদা- ১ ইঞ্চি পরিমাণ
- গরম পানি- ১ কাপ
- মধু
আপনাকে যা করতে হবে-
১) ১ ইঞ্চি পরিমাণ আদা কুচি ১ কাপ ফুটন্ত পানিতে মেশান।
২) এবার এটি ৫-১০ মিনিটের মত ভালো ভাবে ফুটিয়ে নিন।
৩) এবার এই আদা মেশানো পানিতে ১/২ চামচ মধু মিশিয়ে নিন এবং গরম গরম পান করুন।
আপনার প্রতিদিন তিনবার করে এই আদা চা পান করতে হবে।
পা ব্যথা চিকিৎসার জন্য আরেকটি কার্যকর প্রতিকার হলো আদা। এতে জিঙ্গিবেইন (Zingibain) নামে একটি এনজাইম রয়েছে যা চমৎকার অ্যানালজেসিক এবং প্রদাহ বিরোধী। আদা আপনার পায়ের ব্যথা দ্রুত সাড়িয়ে তুলতে একটি উপকারী উপাদান।
৫. গরম বা ঠান্ডা স্যাঁক
আপনার প্রয়োজন হবে-
- গরম পানির বোতল
- আইস ব্যাগ
আপনাকে যা করতে হবে-
ব্যথাআক্রান্ত স্থানে একটি হট ওয়াটার বোতল রাখুন ৫-১০ মিনিটের জন্য। এবার গরম পানির বোতল সরিয়ে সে স্থানে ঠাণ্ডা আইস ব্যাগ রাখুন। প্রায় ১০ মিনিটের মত ব্যথাযুক্ত স্থানে ধরে রাখুন। এভাবে পুরো প্রক্রিয়াটি ২/৩ বার রিপিট করুন।
আপনার যখন ব্যথা থাকবে তখন নিয়মিত এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করা উচিত।
গরম এবং ঠান্ডা কম্প্রেস ব্যথা সারাতে খুব ভালো কাজ করে। গরম কম্প্রেস রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং ঠাণ্ডা আইস ব্যাগ ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
৬. ভিটামিন
কিছু ভিটামিনের ঘাটতির জন্যেও পায়ে ব্যথা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন বি-এর অভাব পায়ে ব্যথার একটি অন্যতম কারণ। এছাড়াও, ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং দুর্বলতা দেখা দেয়। অতএব সুস্থ থাকার জন্য ভিটামিন বি যুক্ত খাবার এবং ভিটামিন ডি যুক্ত মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, পনির, কমলা, সয়াবিন দুধ এবং সিরিয়াল খেতে হবে।
পায়ে ব্যথা প্রতিরোধ করার কিছু বিশেষ টিপস
১) সবসময় আরামদায়ক জুতা পরুন।
২) হাই হিল এবং টাইট জুতা এড়িয়ে চলুন।
৩) স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া করুন এবং একটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৪) পায়ের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
৫) বাইরে যাওয়ার সময় সর্বদা সঠিক সাইজের জুতা পরিধান করুন।
৬) মাঝেমধ্যে পায়ে ম্যাসাজ করুন এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
আপনার পায়ের স্বাস্থ্য অনেকটাই আপনার উপর নির্ভর করে। তাই সবসময় সঠিক মাপের জুতা পরিধান করুন এবং তার সাথে পায়ের যত্ন নেবার পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক