ত্বকের যত্নে আমরা কতকিছুই না ব্যবহার করছি! তাইনা? কখনও বুঝে আবার কখনও না বুঝেই। যেকোন প্রোডাক্ট সিলেক্ট করার আগে আমাদের যে কমন একটি চিন্তার বিষয় থাকে, তা হলো- আমাদের স্কিনের জন্যে প্রোডাক্টটি আসলেই কতটা কার্যকরী হবে? স্কিন টাইপ অনুযায়ী আমাকে স্যুট করবে তো? প্রোডাক্টটির কোন সাইড ইফেক্ট নেই তো? কতদিনের মধ্যে কাজ করবে? আমার প্রবলেমটাকে টার্গেট করবে তো? এমন আরও কত কত প্রশ্ন মাথায় ঘুরে তাইনা? সিরাম এর ব্যবহার নিয়েও আমাদের কাছে এমন অনেক অনেক প্রশ্ন আসে প্রতিনিয়ত। এছাড়াও আমরা অনেকেই জানিনা নিজের প্রবলেমটাকে টার্গেট করবে স্পেসিফিক কোন ইনগ্রেডিয়েন্টটি। তাই আজকে আমি কথা বলবো, আমার রিসেন্ট ব্যবহার করা খুবই পছন্দের একটি প্রোডাক্ট লাইলাক নিয়াসিনামাইড সিরাম নিয়ে। প্রোডাক্টটির কাজ এবং প্রোডাক্টটিতে থাকা ইনগ্রেডিয়েন্ট এর বেসিক কিছু নলেজ দিয়েই শুরু করবো আজকে। পাশাপাশি জেনে নিব এর উপকারিতা এবং আমার স্কিনে এটি আসলেও কতটা কার্যকর ছিল তা নিয়ে। চলুন তাহলে দেরী না করে জেনে নেয়া যাক।
সিরাম কী? আর আমাদের ত্বকে সিরামের কাজ কী?
সিরাম হচ্ছে মূলত হাইলি কনসেনট্রেটেড পাওয়ারফুল ইনগ্রেডিয়েন্টগুলোকে অনেক লাইট বা থিন ফর্মুলার আকারে তৈরি করা হয়। যেই ইনগ্রেডিয়েন্টসগুলো আমাদের স্কিনের কোনো স্পেসিফিক প্রবলেমকে টার্গেট করে কাজ করে। সিরাম আমাদের স্কিনের একদম ভেতরের লেয়ার পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। তাই এটি আমাদের ত্বকে খুব দ্রুত কাজ করে। রেগুলার স্কিন কেয়ারের পাশাপাশি স্কিনের কমন কিছু প্রবলেমস যেমন- স্পট বা পিগমেন্টেশনের সমস্যা, সান ট্যান, ব্রণের দাগ, আন ইভেন স্কিন টোন বা রিঙ্কেলসের সমস্যা। এই সমস্যাগুলোকে টার্গেট করে সমধান দিতে কাজ করে সিরাম।
কীভাবে কাজ করে নিয়াসিনামাইড?
ত্বকের কোলাজেন প্রোডাকশনকে বুস্ট করতে সাহায্য করে এই নিয়াসিনামাইড। আর হেলদি স্কিন সেলের মাধ্যমে ত্বকের পিম্পল, কালো স্পটগুলো ঢেকে যায়। নিয়াসিনামাইড ‘সিরামাইড’ নামের লিপিড তৈরিতে সাহায্য করে, যা আমাদের স্কিনের বাইরের প্রোটেক্টিভ লেয়ারটাকে মেনটেইন করে। ফলাফল, রিঙ্কেলস আর ফাইন লাইন্স কমে আসে আর পোরস ছোট হয়ে আসে। তাই বুঝতেই পারছেন স্কিনকে স্মুথ, ময়েশ্চারাইজড আর হেলদি রাখার জন্য নিয়াসিনামাইড কতটা কার্যকরী।
লাইলাক নিয়াসিনামাইড সিরাম ৫% রিভিউ
প্যাকেজিং
সাদা এবং হালকা বেগুনী রঙের প্যাকেটে মোড়ানো অবস্থায় পাবেন এই সিরামটি। ৩০ এম.এল এর একটি কন্টেইনারে থাকে সিরামটি। এর প্যাকেজিং খুবই সিম্পল, যা দেখতে আমার কাছে বেশ ভাল লেগেছে। প্যাকেটের গায়ে এক দিকে ইনগ্রেডিয়েন্ট লিস্ট দেয়া আছে। অন্যদিকে এই সিরামটির কাজ এবং কোন কোন সমস্যাকে টার্গেট করছে তা খুব সুন্দর করে লিখে দেয়া আছে।
প্রাইজ
লাইলাক নিয়াসিনামাইড সিরাম ৫% বর্তমান মুল্য ৭৫০ টাকা। তবে আমি সাজগোজের অ্যাপ থেকে অর্ডার করায় ৫% ডিসকাউন্ট এবং ফেসবুকে সাজগোজ ইনসাইডার গ্রুপে অ্যাড থাকায় আরও ১০% অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১৫% ডিসকাউন্ট পেয়েছি। এতে শেষ পর্যন্ত টোটাল বিল পড়েছে ৬৪১ টাকা। রেগুলার ইউজের জন্যে এটি খুব বেশিই কনভেনিয়েন্ট মনে হয়েছে সব দিক থেকেই।
কী কী আছে ইনগ্রেডিয়েন্ট লিস্টে?
যেকোন প্রোডাক্ট কেনার আগে অবশ্যই তার মাঝে কী কী ইনগ্রেডিয়েন্ট আছে তা দেখে নিতে হয়। চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক, কী কী থাকছে লাইলাক নিয়াসিনামাইড সিরাম ৫% এর ইনগ্রেডিয়েন্ট লিস্টে।
১) অ্যাকোয়া (Aqua)
২) নিয়াসিনামাইড (Niacinamide)
৩) সোডিয়াম পিসিএ (Sodium PCA)
৪) সোডিয়াম হায়ালুরোনেট (Sodium Hyaluronate)
৫) প্রোপেনিডিয়ল (Propanediol)
৬) অ্যালো বার্বাডেন্সিস পাতার রস (Aloe Barbadensis leaf juice)
৭) এইচপিএমসি (HPMC)
৮) ফেনোক্সেথানল (Phenoxyethanol)
৯) সোডিয়াম বেনজোয়াট (Sodium Benzoate)
১০) সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Sodium Hydroxide)
১১) E.D.T.A
১২) সাইট্রিক অ্যাসিড (Citric Acid)
লাইলাক নিয়াসিনামাইড সিরাম ৫% এর স্পেসিয়ালিটি কী?
আমি এর আগে আরও কিছু ব্র্যান্ডের সিরাম ব্যবহার করেছি। তবে এই সিরামটির যে বিষয়টি আমার বেশি ভাল লেগেছে তা হলো,
(১) এটিতে নিয়াসিনামাইডের পরিমাণ ৫%। সাধারণত মার্কেটে অন্য যেসকল নিয়াসিনামাইড যুক্ত সিরাম পাওয়া যায় তাতে নিয়াসিনামাইডের পরিমাণ ১০% বা তার বেশি থাকে। এর ফলে অনেক সময় আমার মনে হয়েছে এটি আমার স্কিনের জন্যে ওভারডোজ হয়ে যাবে কিনা। বা কোনো সাইড ইফেক্ট দেখা দিতে পারে কিনা। লাইলাক নিয়াসিনামাইড সিরাম ৫% এ নিয়াসিনামাইডের পরিমাণ ৫% থাকায় আমি এটি একদম নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারছি।
(২) এই সিরামটির স্পেশাল দিক হলো, এতে একই সাথে নিয়াসিনামাইড এর পাশাপাশি সোডিয়াম হায়ালুরোনেট (Sodium Hyaluronate) ইনগ্রেডিয়েন্টটি রয়েছে। সাধারণত সিরামগুলোতে একই সাথে নিয়াসিনামাইড এবং সোডিয়াম হায়ালুরোনেট থাকেনা। তাই এই একটি প্রোডাক্টকেই আমরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের বেনিফিটস পেয়ে যাচ্ছি।
(৩) যাদের স্কিনে ওপেন পোরস এর সমস্যা রয়েছে তাদের জন্যে এটি খুবই ভাল সল্যুশন দিবে। খুব তাড়াতাড়ি এই এটি ওপেন পোরস মিনিমাইজ করতে সাহায্য করে।
(৪) আমাদের স্কিনের অতিরিক্ত যে সেবাম প্রোডাকশন হয় তা কনট্রোল করতে দারুণ ভাবে কাজ করে।
(৫) অয়েলি, কম্বিনেশন এবং সেনসিটিভ স্কিনের জন্যে এটি খুবই ভাল কাজ করে। যাদের সেন্সেটিভ স্কিন তারা নিশ্চিন্তে এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
(৬) যেহেতু লাইলাক নিয়াসিনামাইড সিরাম ৫% এ নিয়াসিনামাইডের পরিমাণ ৫% তাই এটি আমাদের স্কিনকে সহজেই ওভার ড্রাই করেনা।
(৭) স্কিনে কোনরকম ব্রেক আউট করে না।
কীভাবে আমি এটা ইউজ করি?
সিরাম লাগানোর নিয়ম খুবই সহজ এবং সাধারণ। শুধু আগে পরে নির্দিষ্ট কিছু স্টেপ ফলো করতে হবে মাস্ট। আমি যে স্টেপগুলো ফলো করি সিরাম ইউজের সময় তা আপনাদের সাথে শেয়ার করা হলো-
স্টেপ ১ঃ সিরামটি ব্যবহারের আগে আমি চেষ্টা করি প্রপারলি ডাবল ক্লিনজিং করে নিতে। তবে খুব বেশি ঝামেলা মনে হলে ডাবল ক্লিনজিং না করলেও ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখটা অবশ্যই ধুয়ে নেই।
স্টেপ ২ঃ এরপর একটি টোনার ব্যবহার করি
স্টেপ ৩ঃ এবার ২ থেকে ৩ ড্রপ সিরাম এক হাতে নিয়ে আরেক হাতের আঙুলের সাহায্যে মুখে ড্যাব করে লাগিয়ে নেই।
স্টেপ ৪ঃ স্কিনে সিরাম শুষে নেয়ার জন্যে কিছুক্ষণ সময় দিতে হয়। স্কিন সিরাম শুষে নিলে একটি ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করে নেই। এই পার্টটি আমি কোনভাবেই স্কিপ করিনা।
কিন্তু সিরাম কখন ব্যবহার করতে হয়?
রাতে অথবা দিনে যেকোন সময়ই এই সিরামটি ব্যবহার করা যায়। আমি সাধারণত রাতেই ব্যবহার করে থাকি। তবে আপনারা চাইলে দিনেও ব্যবহার করতে পারেন। তবে রাতে দিনে দুইবার ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই।
সিরাম নিয়ে কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর
(১) এক বেলায় একই সাথে কি নিয়াসিনামাইড এবং ভিটামিন সি যুক্ত প্রডাক্ট ইউজ করা যাবে?
উত্তরঃ দুইটি প্রোডাক্ট একসাথে ইউজ করা যাবেনা ব্যাপারটি আসলে তেমন নয়! একই বেলায় নিয়াসিনামাইড যুক্ত যে প্রোডাক্টি ব্যবহার করছেন তাতে নিয়াসিনামাইডের পারসেন্টেজ যদি বেশি হয়ে থাকে তবে ভিটামিন সি যুক্ত প্রোডাক্টটি অবশ্যই মাইল্ড বা লো পারসেন্টেজের হতে হবে। আবার ভিটামিন সি যুক্ত প্রডাক্টটিতে ভিটামিন সি এর পারসেন্টেজ যদি হাই হয় তবে, নিয়াসিনামাইডের পারসেন্টেজ মাইল্ড বা লো হতে হবে। একি সাথে দুটি হাই পারসেন্টেজের প্রোডাক্ট ইউজ করলে স্কিনের জন্যে ক্ষতিকর হতে পারে।
(২) নিয়াসিনামাইড সিরাম ব্যবহারের সবচেয়ে ভাল সময় কোনটি?
উত্তরঃ দিনে অথবা রাতে যেকোনো সময় আপানার সুবিধা অনুযায়ী সিরাম ব্যবহার করতে পারবেন। তবে খুব দ্রুত রেজাল্ট পাওয়ার জন্যে কখনই দিনে কয়েকবার এবং অনেক বেশি পরিমাণে সিরাম ইউজ করবেন না। এতে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে। তবে রাতের বেলাই সিরাম ব্যবহার করার উপযুক্ত সময়।
(৩) সিরাম ব্যবহার করে কি ফেইসওয়াশ করতে হবে?
উত্তরঃ অবশ্যই না! আমরা অনেকেই এই ভুলটি করে থাকি। কিন্তু সিরাম ব্যবহার করে ফেইসওয়াশ করলে এর কোনো কার্যকারিতাই থাকবেনা।
(৪) এটি ব্যবহারের পরে ময়েশ্চারাইজার কি ইউজ করতেই হবে?
উত্তরঃ অবশ্যই করতে হবে! কারণ, সিরাম আমাদের স্কিনের সেবাম প্রোডাকশন কনট্রোল করে তাতে স্কিন অনেকটা ড্রাই হয়ে যায়। তাই ময়েশ্চারাইজার ইউজ না করলে আমাদের স্কিনের ডিহাইড্রেশনের প্রবলেম দেখা দিতে পারে।
প্রোডাক্টটি ব্যবহারে কিছু বেনিফিটস পেয়েছি, যা না বললেই নয়
লাইলাক নিয়াসিনামাইড সিরাম ৫% ব্যবহার করে আমি আসলেও সন্তুষ্ট। শুধু প্রোডাক্ট এর কোয়ালিটি নয় বরং প্রাইজ, ব্র্যান্ড সব মিলিয়েই এটি আমার বেশ ভাল লেগেছে। যদিও আমি এটি কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যবহার করছি তবে নেক্সট অর্ডারে আমি অবশ্যই এটি আবারও অ্যাড করবো।
- প্রথেমেই যে বিষয়টি আমাকে খুবই অবাক করেছে, আমার স্কিনে ওপেন পোরস এর কিছু সমস্যা ছিল। কিছুদিনের মাঝেই পোরসগুলো বেশ অনেকটা মিনিমাইজ হয়ে এসেছে।
- আমার স্কিন টাইপ অয়েলি টু সেনসিটিভ। আমার স্কিনের অতিরিক্ত যে সেবাম প্রোডাকশন হয় তা কনট্রোল করতে এটি খুব ভাল কাজ করছে।
- আমার স্কিনে আগে কিছু ব্রণের স্পট এবং পিগমেন্টেশনের সমস্যা ছিল। এখন দাগগুলো অনেকটাই কমে এসেছে।
- মাঝে আমার চেহারায় একটা মলিনতা ভাব ছিল এবং সান ট্যানের প্রবলেমও ছিল। ইদানিং আমার স্কিনটোনে ভিসিবল একটা চেইঞ্জ এসেছে এবং স্কিনটা অনেক ব্রাইট লাগে দেখতে।
ওহ! সাথে ছোট্ট একটি টিপস!
আমরা মূলত সিরাম ব্যবহার করি স্কিনের স্পেসিফিক কিছু প্রবলেম এর সল্যুশনের জন্যে। তাইনা? সমস্যাগুলোর বেশির ভাগই কিন্তু হয় বাইরের ক্ষতিকর সূর্যরশ্মির জন্যে। তাই দিনের বেলা সানস্ক্রিন ব্যবহারের কিন্তু কোনো বিকল্প নেই। আপনি দিনে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করে রাতে শুধু সিরাম ব্যবহার করতে থাকেন, তবে কিন্তু তেমন কোন একটা লাভ হবেনা। তাই আপনার ডে-কেয়ারে অবশ্যই সানস্ক্রিন রাখতে ভুলবেন না।
এইতো! যাদের মনে সিরাম এবং লাইলাক নিয়াসিনামাইড সিরাম ৫% নিয়ে জানার ব্যপারে আগ্রহ ছিল আশা করছি আজকের এই রিভিউটি আপনাদের উপকারে আসবে। যারা বাজেট ফ্রেন্ডলি এবং ভাল কোয়ালিটিযুক্ত একটি সিরাম রেগুলার ইউজের জন্যে খুঁজছিলেন তাদের জন্যে এটি নিঃসন্দেহে একটি বেস্ট অপশন। আমি কিন্তু লাইলাক নিয়াসিনামাইড সিরাম ৫% টি সাজগোজ অ্যাপ থেকে অর্ডার করেছি। আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন, যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সুন্দর থাকবেন।