রেটিনল আবার কী জিনিস ভাই! স্কিন কেয়ারে রেটিনল আবার কীভাবে কাজ করে! নামটা শুনলেই শুরুতে আমরা অনেকেই একটু হকচকিয়ে উঠি। তাই না? আবার আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন, যাদের জন্যে স্কিন কেয়ার রুটিনে রেটিনল চাই-ই চাই। কারণ নামটা শুনতে যেমনই মনে হোক, বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই রেটিনল-ই কিন্তু হতে পারে অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্টে আপনার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। বয়স মোটামুটি ২৪ কিংবা ২৫ এর কোঠা পেরলেই আমাদের অনেকের স্কিনে এজিং সাইন দেখা যায়। যেমন, স্কিনে ফাইন লাইনস পড়া, চামড়া কুঁচকে যাওয়া, স্কিন একদম ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া আরও নানা রকম সমস্যা। আর এসব সাধারণ কিছু সমস্যার অসাধারণ সল্যুশন দিতে কাজ করে এই রেটিনল। তাই আজকে আমরা জেনে নিবো, স্কিনকেয়ারে রেটিনল নিয়ে খুঁটিনাটি এবং আরও জানবো, আমার ব্যবহার করা রেটিনলযুক্ত বেস্ট একটি ফেইস সিরাম নিয়ে।
রেটিনল কী?
মূলত রেটিনয়েড এর একটি স্পেসিফিক টাইপ হচ্ছে রেটিনল। এটি এক ধরনের ভিটামিন এ। অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্টে এর খুবই জনপ্রিয় একটি ইনগ্র্যাডিয়েন্ট।
ত্বকের যত্নে “রেটিনল” কীভাবে কাজ করে?
• ময়েশ্চারাইজিং এফেক্ট
রেটিনল আমাদের স্কিনের সেলগুলোতে ময়েশ্চার প্রোভাইড করে থাকে, ঠিক যেমনটি ময়েশ্চারাইজার করে থাকে। এর ফলে, রেটিনল যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহারে স্কিনে যে ড্রাইনেস দেখা দেয়, তা আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকে। পাশাপাশি আমাদের স্কিন নরমাল সেলে পুনরায় ট্রান্সফার হয়ে যায়।
• অ্যান্টি এজিং প্রোপারটি
কোলাজেন আমাদের স্কিনের একটি বিউটি ফ্যাক্টর। রেটিনল দ্রুত কোলাজেন প্রডাকশনে হেল্প করে। এবং এই কোলাজেন প্রডাকশন বেড়ে যাওয়ার কারণে, আমাদের স্কিন থাকে রিংকেলস ফ্রি। ফলে বয়সের ছাপ পরা থেকে স্কিনকে বিরত রাখতে হেল্প করে।
• ডেড সেলস দূর করে
রেটিনল আমাদের ত্বক থেকে ডেড সেলগুলোকে রিমুভ করে। এর ফলে, আমাদের পোর এ যে ডেড সেলগুলো জমে পোর কে ক্লগ করে রাখে ওগুলো সহজেই পরিষ্কার হয়ে যায়।
• অ্যাকনে ট্রিটমেন্ট
রেটিনল আমাদের পোরস গুলোকে ক্লিন রাখার কারণে, সহজে তাতে ময়লা জমে যেতে পারে না। ফলে, মুখে ব্রণ এর উপদ্রব কমাতে এবং অ্যাকনে ট্রিটমেন্ট হিসেবে রেটিনল দারুণ কার্যকরী।
• ড্যামেজ সেলকে হেলদি সেলে পরিবর্তন করে
রেটিনল আমাদের স্কিনের ড্যামেজ সেলগুলোকে হেলদি সেলে পরিবর্তিত করতে সাহায্য করে। তাই স্কিন নানা রকম সমস্যা থেকে সহজেই সুরক্ষিত থাকে।
• স্পট এবং দাগ দূর করে
আমাদের অনেকের স্কিনেই নানা রকম দাগ বা পিগমেন্টেশনের সমস্যা দেখা যায়। রেটিনল স্কিনের মেলানিন প্রোডাকশন কমিয়ে এসব দাগ কমিয়ে আনতে কাজ করে। যাদের মেছতার সমস্যা রয়েছে মুখে তাদের জন্যে রেটিনল স্কিন কেয়ারে হতে পারে দারুণ উপকারী একটি ইনগ্র্যাডিয়েন্ট।
• ব্রাইট স্কিন পেতে হেল্প করে
যেহেতু ত্বকের ডেড সেলস এবং স্পট বা দাগ দূর করতে রেটিনল চমৎকার কাজ করে থাকে তাই, স্বাভাবিক ভাবেই স্কিন আস্তে আস্তে ব্রাইট হতে থাকে এবং খুব হেলদি একটা ফিল অনুভব হয়।
রেটিনলযুক্ত আমার ফেভারিট প্রোডাক্ট কোনটি?
স্কিন কেয়ারে রেটিনলযুক্ত লাইলাক রেটিনল সিরামটি (Lilac Age Delaying Serum with Retinol 1% and Vitamin E 30.0 ml) আমি রিসেন্টলি ব্যবহার করছি। কারণ-
- স্কিন কেয়ার রুটিনে যেহেতু এটাই আমার ব্যবহার করা প্রথম রেটিনল যুক্ত কোন সিরাম, তাই চেষ্টা করেছি পারসেন্টেজ কম দিয়েই শুরু করতে। লাইলাক রেটিনল সিরামটিতে ১% রেটিনল থাকায় বিগেনার হিসেবে সিরামটি আমার কাছে বেস্ট অপশন মনে হয়েছে।
- রেটিনলের পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন ই। এটি আমাদের স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখে।
- এছাড়াও এতে রয়েছে হায়ালুরনিক অ্যাসিড যা স্কিনকে হাইড্রেটেড রাখে।
আগে একটু জেনে নেই, “সিরাম” কী এবং এর কাজ কী?
সিরামে মূলত হাইলি কনসেনট্রেটেড পাওয়ারফুল ইনগ্রেডিয়েন্টগুলোকে অনেক লাইট বা থিন ফর্মুলার আকারে তৈরি করা হয়। ইনগ্রেডিয়েন্টসগুলো আমাদের স্কিনের কোনো স্পেসিফিক প্রবলেমকে টার্গেট করে কাজ করে। সিরাম আমাদের স্কিনের একদম ভেতরের লেয়ার পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। তাই এটি আমাদের ত্বকে খুব দ্রুত কাজ করে। রেগুলার স্কিন কেয়ারের পাশাপাশি স্কিনের কমন কিছু প্রবলেমস এর সমাধান দিয়ে থাকে সিরাম। যেমন-
•স্পট বা পিগমেন্টেশনের সমস্যা
•সান ট্যান
•ব্রণের দাগ
•আন ইভেন স্কিন টোন
•রিঙ্কেলসের সমস্যা ইত্যাদি
লাইলাক রেটিনল সিরাম ব্যবহার করে আমি কী কী উপকার পেয়েছি?
আমি প্রায় ১মাস ধরে সিরামটি ব্যবহার করছি। যদিও যেকোন প্রোডাক্ট থেকেই বেনিফিট পাওয়ার জন্যে কিছুদিন টানা সেটি ব্যবহার করতে হয় । তবে, লাইলাক রেটিনল সিরাম ব্যবহার করে এর মাঝেই আমি বেশ কিছু উপকার পেয়েছি। যেমন –
১) আমার স্কিনে সানট্যান এর হালকা হালকা দাগ ছিল যা অনেকটাই কমে গেছে।
২) ফেইসকে হাইড্রেটেড এবং ময়েশ্চারাইজড রাখতে হেল্প করে ।
৩) আমার চোখের চারপাশে এবং স্মাইল লাইনে কিছু ফাইন লাইনস এর সমস্যা ছিল , তাও অনেকটা কমে এসেছে।
৪) আগের কিছু ব্রণের স্পট ছিল, সেগুলোও কমে এসেছে।
৫) স্কিনের ইলাস্টিসিটি ইম্প্রুভ করতে হেল্প করেছে। তাই, স্কিন আগের চেয়ে অনেক ইভেন দেখায়।
৬) ফেইসে সুন্দর একটা গ্লোয়িং, ব্রাইট এবং রিফ্রেশ লুক এনে দিয়েছে।
কত বছর বয়স থেকে স্কিনকেয়ারে রেটিনল ইউজ করা যাবে?
যেকোন সিরামই ২০ বছরের আগে ব্যবহার করা উচিত নয়। রেটিনল সিরামের ক্ষেত্রেও সেইম । তবে ভালো হয় যদি ২০ থেকে ৩০ বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে এটি স্কিন কেয়ারে যুক্ত করা গেলে। কারণ, এ সময়েই স্কিনের কোলাজেন প্রোডাকশন ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ফলে, আমাদের স্কিনে হালকা হালকা বয়সের ছাপ পরতে দেখা যায়।
লাইলাক রেটিনল সিরামটি ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম কী?
১) প্রথমেই ফেইসওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে ফেইসটাকে ক্লিন করে নিতে হবে।
২) একটি পরিষ্কার টাওয়াল দিয়ে ফেইসটাকে ভাল ভাবে মুছে নিয়ে একটি ভালো টোনার ব্যবহার করুন।
৩) এবার ৫ থেকে ৬ ড্রপ সিরাম হাতে নিয়ে আলতো করে মুখে লাগিয়ে নিন। চেপে চেপে লাগানোর চেষ্টা করুন।
৪) ফেইসে সিরাম মিলিয়ে গেলে একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
লাইলাক রেটিনল সিরামটি কতবার অ্যাপ্লাই করা যাবে?
স্কিন কেয়ারে রেটিনল ব্যবহার মাত্র শুরু করলে সপ্তাহে ১ থেকে ২ বার ব্যবহার করুন । এরপর আস্তে আস্তে ব্যবহারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারবেন। তবে একদিনে একবারের বেশি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।
স্কিন টাইপ বুঝে রেটিনলের ব্যবহার
সব স্কিনে সব ইনগ্র্যাডিয়েন্টস স্যুট না-ই করতে পারে। অনেকের রেটিনল ব্যবহারের ফলে স্কিনে ইচিং, রেডনেস , জ্বালাপোড়ার মত সমস্যা দেখা দেয়। আবার ড্রাইনেস এর সমস্যাও দেখা দেয়। তাই রেটিনল ব্যবহারের আগে নিজের স্কিনের ব্যপারে জেনে নিতে হবে। যাদের স্কিন খুবই সেনসিটিভ তারা রেটিনল ডেরাইভেটিভস প্রোডাক্টস ব্যবহার করবে। এছাড়া রেটিনলের সাথে স্কিন কেয়ারে ভিটামিন এ, ই এবং সি যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে রেটিনলের ইফেক্টিভনেস বহুগুণে বেড়ে যায়। এবং সাইড ইফেক্টস গুলোও ধীরে ধীরে কমে আসে।
প্রেগন্যান্ট মহিলারা কি রেটিনল ব্যবহার করতে পারবেন?
না! প্রেগন্যান্ট মহিলারা যারা আছেন, তাদের জন্যে সিরামটি ব্যবহার না করাই ভালো।
স্কিনকেয়ারে রেটিনল থাকলে দিনের বেলা সানস্ক্রিন ব্যবহার করা মাস্ট
স্কিনের সমস্যা অনুযায়ী স্কিন কেয়ারে যেই সিরামই রাখুন না কেন, দিনের বেলা সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই কিন্তু মাস্ট! কোনোভাবেই এটি আপনার ডে-কেয়ার স্কিন রুটিন থেকে স্কিপ করা যাবে না। আপনি দিনে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করে রাতে শুধু সিরাম ব্যবহার করতে থাকেন, তবে কিন্তু তেমন কোন একটা লাভ হবে না।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, ত্বকের যত্নে “রেটিনল” অনেক বেশি কার্যকরী। এটি ব্রাইট স্কিন পেতে আর সাথে বয়সের ছাপ দূর করতে খুব দ্রুত কাজ করে থাকে। আশা করছি আজকের লিখাটি পড়ে যারা রেটিনলযুক্ত কোন প্রোডাক্টটি কিনবেন ভাবছিলেন, তাদের কিছুটা হলেও হেল্প হবে। রেটিনল ব্যবহারের একদম শুরুর জন্যে লাইলাক রেটিনল সিরামটি নিঃসন্দেহে হতে পারে রাইট চয়েজ। আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
ছবি- সাজগোজ