সত্যি করে বলতে গেলে, আমি খুব কম মানুষকেই কস্মেটিকের প্যাকেজিং এর লেখাগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ে কস্মেটিক কিনতে দেখি। উপাদানগুলো কি কি? নিজের স্কিনের সাথে মেলে কিনা! কোন কিছুতে অ্যালার্জি অথবা ব্রণ হবার সম্ভবনা আছে কিনা এগুলো চিন্তা করে দেখা তো দূরের কথা। কেউ একটু চোখ মেলে এক্সপায়ার ডেটটাও দেখে কিছু কেনে না।
একসময় আমিও এমনি ছিলাম। অনেক দাম দিয়ে প্রোডাক্ট কিনে ফেলতাম কারণ হয়ত তার প্যাকেজিংটা কিউট …! অথবা ঘ্রাণ খুব সুন্দর… এমন সব কারণ যার সাথে প্রোডাক্টটা আমার স্কিনে কেমন কাজ করবে তার সাথে কোন সম্পর্কই নেই!! এর চেয়ে বড় বোকামি আর কি হতে পারে বলুন তো?? আমি নিজে যদি নিজের ভালো মন্দ না বুঝি অন্য কেউ কি এসে আমার টাকা পানিতে পড়া থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে যাবে? কি এমন ঠেকা পড়েছে অন্যের??
[picture]
কপাল ভালোই বলতে হবে, বেশ অল্প বয়সেই নিজের স্কিন এবং স্কিনে কোন উপাদান ইন দা লং টার্ম ভালো কাজ করবে এবং কোন উপাদানগুলো আমার স্কিনে একেবারেই স্যুট করে না সেটা বুঝতে শিখেছি কিছু কিছু আর এখন দেখে শুনে প্রোডাক্ট কিনে নিজের স্কিন আর টাকা দুটোই বাঁচাতে পারছি। এখন এমন ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট আমি খুব কমই ইউজ করি যাতে অযথাই আর্টিফিশিয়াল পারফিউম, সিলিকন, মিনারেল অয়েল আর কালার ইউজ করা হয়। সুন্দর প্যাকেজিং দেখে প্রোডাক্ট কেনার বোকামি বাদ দিয়ে নজর দিয়েছি প্যাকেজিং ট্র্যাভেলের জন্য কতো উপযোগী আর কতটা হাইজিনিক এসব রিয়ালিসটিক ক্যারেকটারের উপরে। বলাই বাহুল্য, এই আপাত দৃষ্টিতে খুবই বিরক্তিকর আর নন এক্সাইটিং কাজগুলো করার পর থেকে স্কিন প্রব্লেম হওয়া অনেক অনেক কমেছে।
আমার স্কিন অত্যন্ত অয়েলি আর খুবই সেনসিটিভ, আর একটা সময় ছিল যখন স্কিনে ফেস ওয়াশ ছাড়া আর কিছুই আমি ইউজ করতে পারতাম না। যত ভালো আর দামি প্রোডাক্টই হক না কেন, ব্রণ আমার উঠতই।এত মন খারাপ হত তখন!! কারণ নিজে বুঝতামই না স্কিন কোন উপাদানে রিঅ্যাক্ট করে। আমি এখন শুধু সেই ব্র্যান্ডগুলোই ইউজ করি যেগুলোর উপাদান অত্যন্ত ক্লিন এবং অপ্রয়োজনীয় উপাদান বাদ দিয়ে কিছু বাছা উপকরণ দিয়ে হালকা বেসের প্রোডাক্ট যারা তৈরি করতে পারে। আর তেমনি একটি লাইন M & KAORUCO।
এই লাইনের অল ইন ওয়ান ময়েশ্চার রিচ জেল নামের লাইট ময়েশ্চারাইজার নিয়ে আমি আজ সাজগোজে আমার প্রথম রিভিউটি লিখছি। আশা করি আপনারদের যাদের স্কিন আমার মত তারা কিছুটা আইডিয়া পাবেন।
এই লাইন দাবি করে যে তাদের প্রোডাক্টে নিচের উপাদানগুলো নেই। দেখি সেগুলো কি কি-
– অ্যালকোহল ফ্রি
(প্রোডাক্টের অ্যালকোহল স্কিনকে অতিরিক্ত ড্রাই করে স্কিনের সেবাম ব্যাল্যান্স নষ্ট করে, অ্যালকোহলযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহারে আমার অয়েলি স্কিন আরও বেশি অয়েল তৈরি করে এবং স্কিনে ছোট ছোট বাম্পস দেখা দেয় আর আমার স্কিন লাল হয়ে যায়)
– আর্টিফিশিয়াল পারফিউম ফ্রি
আর্টিফিশিয়াল পারফিউমে আমার একটু আলার্জি আছে। পারফিউম দেয়া প্রোডাক্ট ইউজ করলেই ব্রণ হয়। সুন্দর ঘ্রাণের অনেক প্রোডাক্ট অনেক সখ করে টাকা নষ্ট করে তারপর জেনেছি এই ব্যাপারটা, যে সেনসিটিভ স্কিনের জন্য আর্টিফিশিয়াল পারফিউম কতো খারাপ…!!
– প্যারাবেন ফ্রি
অনেক বিজ্ঞানীরাই সন্দেহ করেন স্কিন কেয়ার আর কসমেটিকে প্রিজারভেটিভ হিসেবে যে প্যারাবেন ইউজ কড়া হয় তা অনেক ধরণের ক্যান্সার তৈরি হওয়ার পেছনে কাজ করে।
– সিন্থেসাইজড সারফেকট্যানট ফ্রি
– প্যারাফিন ফ্রি
সোজা কথা প্যারাফিন, পেট্রোলিয়াম জেলি এগুলো খুব অয়েলি স্কিন, যেমন আমার টাইপের স্কিনের পোর বন্ধ করে ব্রণ বানিয়ে ফেলে। তাই এগুলো ইউজ কড়া বাদ দিয়েছি।
তো M & KAORUCO লাইনের উপাদানগুলোতে এই স্কিনকেয়ার ভিলেন একটাও নেই দেখে এক কথায় নাচতে নাচতে আমি এটা ট্রাই করি।
প্যাকেজিং নিয়ে কিছু না বললেই নয়। স্কিন কেয়ার নিয়ে আমি খুব বেশি খুঁতখুঁতে। জার প্যাকেজিং এর ভেতরে হাত দিয়ে প্রোডাক্ট তুলে বার বার ইউজ করতে আমার খুবই খারাপ লাগে। তো এই জেল ময়েশ্চারাইজারের শক্তপোক্ত পাম্প বোতলও আমার পছন্দসই হয়েছে। জাপানিজ স্কিন কেয়ার এইজন্যই ভালো লাগে। ছোট ছোট জিনিসগুলো লক্ষ রেখে প্রোডাক্ট তৈরি করে বলেই স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলো এত ভালো মানের হয় ওদের!!
টেক্সচার:
প্রোডাক্টের নাম যেহেতু অল ইন ওয়ান জেল বুঝতেই পারছেন এটা লাইট জেল ফরমুলেশনের। আমি গত ২ মাস ধরে তিব্র গরম আর হিউমিডিটির ভেতরে রোজ শুধু এই প্রোডাক্টটিই ইউজ করেছি। এটা এত লাইট, আর স্কিনে দেয়ার সাথে সাথে পুরো মিলিয়ে যায়। দেখুন ছবি দেখে বোঝা যায় কতো লাইট প্রোডাক্ট…
(অয়েলি স্কিনের অধিকারীরা এটা ট্রাই করতে পারলে খুবই খুশি হবেন !)
দেখছেন? এইটুকু প্রোডাক্ট আমি প্রতিদিন সকালে বাইরে যাওয়ার সময় ইউজ করি। আর রাতের বেলা একটু বেশি পরিমানে ইউজ করি। সকালে ইউজ করার পর এটা স্কিনে একদম ম্যাট হয়ে মিশে যায়। নিচের ছবির মতন-
ফলাফল:
আগেই বলেছি, এটা প্রায় ২ মাস ধরে আমি সকালে আর রাতে ইউজ করছি। এখন আসি রেজাল্টের কথায়। এই প্রোডাক্টের নাম অল ইন ওয়ান জেল, কারণ ব্র্যান্ডের মতে, এটা একই সাথে সিরাম, টোনার, ময়েশ্চারাইজার আর প্রাইমার হিসেবে কাজ করে।
আমি বিশ্বাস করি না যে এই দাবির সব কিছু সত্যি। ময়েশ্চারাইজার হিসেবে আমাদের দেশের এই গরম আবহাওয়ায় এটা ১০০ তে ১০০ কাজ করে। কিন্তু সিরাম হিসেবে আমি এটাকে মেনে নিতে পারছি না। টোনারের কাজ আবার এই লাইট জেল খুব ভালো করে। আমার আলাদা করে অয়েল কন্ট্রলিং টোনার ইউজ করার দরকার পড়ে না।
আমি বিবি ক্রিমের নিচে এই অল ইন ওয়ান জেল ইউজ করে দেখেছি। বিবি ক্রিমের নিচে প্রাইমার হিসেবে ভালোই কাজ করে। ৪-৫ ঘণ্টার মত মুখের হালকা বিবি বেজ গলে যায় না। কিন্তু এটা আবার ফাউন্ডেশনের নিচে প্রাইমার হিসেবে এত ভালো রেজাল্ট দেয় না।
এই প্রোডাক্টের উল্লেখযোগ্য উপাদান হচ্ছে জাপানিজ ওয়াসাবি এক্সট্রাক্ট। যা স্কিনের আন ইভেন স্কিন টোন দূর করে স্কিন ব্রাইট করতে হেল্প করে।
সো সব মিলিয়ে বলা যায়, আমার মত যাদের বয়স- ২০-২৮ এমন, যাদের স্কিন খুবই সেনসিটিভ, কিছুই ইউজ করতে পারেন না এমন, আবার একই সাথে অয়েলি এবং একনে প্রন, এমন যারা রোজ বাইরে যান এবং মাঝে মাঝে প্রয়োজনে হালকা মেকাপ করেন তাদের ডেইলি ইউজের জন্য এটা একটা ভালো প্রোডাক্ট।
মোট কথা, স্টুডেন্টদের আর জবহোল্ডারদের জন্য; যারা অনেক সময় আর অনেক টাকা স্কিন কেয়ারের পেছনে খরচ করতে চান না, (আমার মত, আমি অনেক অনেক প্রোডাক্ট ধৈর্য নিয়ে কিনতেও পারি না ,ইউজও করতে পারি না) তারা এটা ট্রাই করে দেখতে পারেন।
এই প্রোডাক্টের যে দিকগুলো ভালো ছিল-
- ডেইলি ইউজের জন্য খুবই লাইট আর ঝামেলা বিহীন প্রোডাক্ট
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন উপাদান। কোন অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া
- সেনসিটিভ, ব্রণযুক্ত ত্বকের জন্য পারফেক্ট
- বিজি লাইফের জন্য পারফেক্ট
- বিবি ক্রিমের বেজ মেকাপের জন্য আলাদা প্রাইমার ইউজ করার দরকার পড়বে না
- হাইজিনিক পাম্প প্যাকেজিং
- রেগুলার ইউজ করলে স্কিনের ন্যাচারাল গ্লো বজায় রাখে।
অপছন্দের দিক-
জানি না এটা অপছন্দের দিক বলা যায় কিনা। কিন্তু আমার মনে হয় না এটা একটা ফাংশনিং প্রাইমারের জায়গা নিতে পারে। অনেক অয়েলি স্কিনে ফুল ফেস মেকাপের জন্য এটার উপরে ভরসা করা ঠিক হবে না। প্রোপার প্রাইমার ইউজ করাই ভালো সেক্ষেত্রে।
তো পাঠক, আমার তো অয়েলি সেনসিটিভ স্কিন। রিভিউ পড়ে যদি ড্রাই স্কিন অথবা কম্বিনেশন স্কিনের কেউ এই প্রোডাক্টটা ট্রাই করেন তবে সাজগোঁজে আমাকে জানাতে ভুলবেন না যেন, যে কেমন লাগলো আপনার। আপনার এক্সপেরিয়েন্স থেকে হয়ত অন্য কারো হেল্প হবে। আশা করছি, আমার রিভিউ পড়ে ভালো লাগবে। ভবিষ্যতে নতুন কিছু ট্রাই করে ভালো লাগলে আবার লিখব আর আপনাদের জানাব…
কোথায় পাবেন?
এর দাম পড়বে ১৪০০ টাকা। স্যাফায়ার’ এর রাইফেলস স্কয়ার এবং যমুনা ফিউচার পার্ক ব্রাঞ্চ থেকে আপনি নিজে দেখে কিনতে পারবেন অথবা ওয়েবসাইট থেকে ঘরে বসে অর্ডার করতে পারবেন।
ভালো থাকবেন…