আমারা সাধারণত মেক-আপ করলে ফেস পাওডার স্পঞ্জ অথবা পাফ দিয়ে দেই। মুখের মেক-আপের ভালো ফিনিশিং আনার জন্য, মেক-আপে ন্যাচারাল এবং ভালো কভারেজ এর জন্য মেক-আপ ব্রাশ এর কোন জুড়ি নেই। তাই প্রফেশনাল মেক-আপের জন্য কিছু জরুরী মেক-আপ ব্রাশের দরকার হবে। চলুন জেনে নেই কিছু মেক-আপ ব্রাশের কথা।
০১ ফাউন্ডেশন এর জন্যঃ
– ফাউন্ডেশন ব্রাশ
এই ব্রাশ টি তৈরিই করা হয়েছে সুন্দরভাবে ফাউন্ডেশন দেয়ার জন্য। ফাউন্ডেশন ব্রাশ দিয়ে মেক-আপ করলে ফুল কভারেজ পাওয়া যায়। মেক-আপ করার আগে ব্রাশ টি হালকা গরম পানি তে ভিজিয়ে তারপর মুছে ব্যবহার করলে , ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
– স্টিপেল ব্রাশ
স্টিপেল ব্রাশ ফাউন্ডেশন দেয়ার ক্ষেত্রে জাদু হিসেবে কাজ করে। কারণ ব্রাশের পাপড়ি গুলো অনেক নরম হয় এবং এই ব্রাশ দিয়ে মেক-আপ ব্লেন্ডিং অনেক ভালো হয়।
– ফ্ল্যাট ব্রাশ
ফ্ল্যাট ব্রাশ গুলোতে অন্যান্য ফাউন্ডেশন ব্রাশের থেকে বেশি পাপড়ি থাকে এবং দেখতে গোলাকার এবং পাপড়ি গুলো সমতল হয়। বিদেশে মেক-আপ আর্টিস্টরা ফ্ল্যাট ব্রাশ বেশি ব্যবহার করে মুখের বেস করার জন্য।
– স্পঞ্জ
এটা কোন ব্রাশ না, তবে এটা ব্রাশ এর পরিপূরক বলা চলে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে স্পঞ্জ বেশি পছন্দ করি। কারণ স্পঞ্জ ব্রাশের তুলনায় কম ব্লেন্ড করা লাগে এবং খুব তাড়াতাড়ি সুন্দর কভারেজ দেয়। এসব স্পঞ্জের দাম-ও খুব একটা বেশি না। ৫০০-৮০০ এর মধ্যে পাওয়া যাবে।
– কন্সিলার ব্রাশ
চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার জন্য অথবা মুখের যেকোনো দাগ মেক-আপ দিয়ে দূর করার জন্য কন্সিলার প্রয়োজন। সাধারণত ফাউন্ডেশন ব্রাশ দিয়েই কন্সিলার দেয়া যায়। তাছাড়া ফাউন্ডেশন ব্রাশ ছাড়া ওই ব্রাশের মত দেখতে কিন্তু আকারে ছোট ব্রাশ পাওয়া যায়। অনেকে ঠোঁটের ব্রাশ দিয়েও কন্সিলার দেয়।
– পাওডার ব্রাশ
পাওডার ব্রাশ দিয়ে মেক-আপের লাস্ট ফিনিশিং দেয়া হয়। তাছাড়া ফাউন্ডেশন অথবা ফেস পাওডার দেয়ার জন্য এই ব্রাশ এর জুড়ি নেই।
– ব্লাশ ব্রাশ
মুখের আকৃতি অনুযায়ী ব্লাশ ব্রাশ ঠিক করতে হবে। সাধারণত মুখের চিক বোনে ব্লাশ দেয়া হয়। হাসলে গালের যে অংশ টা আপেল এর মত হয়ে যায়, সেই অংশে ব্লাশ দিতে হয়। ব্লাশ ব্রাশের গোলাকার মাথা থাকে, যাতে করে ব্লাশ ভালো করে দেয়া যায়।
– এঙ্গেল ব্রাশ
এঙ্গেল ব্রাশ দিয়ে মুখে ব্লাশ , কন্টরিং দুটোই করা যায়। কন্টরিং করলে মুখের চিক বোনের নিচ থেকে করতে হবে এবং ব্রাশ নিচ থেকে ( ঠোঁটের সাইড) থেকে উপরের দিকে ভালো করে ব্লেন্ড করতে হবে। ব্লাশ দিলে চিক বোনে এঙ্গেল করে দিতে হবে। ব্লাশ এবং কন্টরিং এর জন্য এঙ্গেল ব্রাশ সব থেকে ভালো।
– হাইলাইটস ব্রাশ
গালে হাইলাইটস আপনি কন্সিলার ব্রাশ দিয়ে, ব্লাস ব্রাশ দিয়েও করতে পারেন। তাছাড়া স্পঞ্জ, চোখের আই ডিফাইন ব্রাশ দিয়েও করতে পারেন। হাইলাইটস চোখের নিচে এবং চিক বোনের উপরে করতে হয়।
– ব্রঞ্জার ব্রাশ
মুখের চিক বোনের নিচে, কপালে, মুখের থুতনি তে সাধারণত ব্রঞ্জার দেওয়া হয়। ব্রঞ্জার মুখের শেপ সুন্দর করে। ব্রঞ্জার এঙ্গেল ব্রাশ, ফ্লাট ব্রাশ, ব্লাশ ব্রাশ দিয়ে দেয়া যায়। তাছাড়া ব্লাস ব্রাশের মত দেখতে কিন্তু একটু বড় ব্রঞ্জার ব্রাশ পাওয়া যায়।
০২ চোখের ব্রাশঃ
– আই ডিফাইন ব্রাশ
এই ব্রাশ দিয়ে চোখের বেস করা হয়। আই লিডে যেকোনো পাওডার অথবা ক্রিম আই শেড দেয়ার জন্য আই ডিফাইন ব্রাশ ব্যবহার করতে হয় । এই ব্রাশ দিয়ে চোখে ব্রু বোনে হাইলাইটস-ও করা যায়।
– ব্লেন্ডিং ব্রাশ
ব্লেন্ডিং ব্রাশ দিয়ে চোখে ২/৩ কালার কে একসাথে ব্লেন্ড করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
– আই লাইনার ব্রাশ
নিজের মত করে আই লাইনার দেয়ার জন্য এই ব্রাশ। খুব চিকন এই ব্রাশ দিয়ে যেমন খুশি তেমন চোখে আই লাইনিং করতে পারবেন।
– আই এঙ্গেল ব্রাশ
আই এঙ্গেল ব্রাশ দিয়ে চোখের নিচের ওয়াটার লাইনে কাজল দেয়ার জন্য অথবা ভ্রু আকার জন্য ব্যবহার করা হয়।
– স্মুজ ব্রাশ
চোখে স্মুজ ব্রাশ স্মোকি আই অথবা আই শেড কালার ব্লেন্ডিং করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
মেক-আপ ব্রাশ কেনার আগে করনীয়ঃ
০১. নিজের চাহিদা মত এক এক কোম্পানি থেকে ব্রাশ কিনতে পারেন অথবা ব্রাশ কিট কিনতে পারেন।
০২. পাওডার ব্রাশ কখনই বড় কিনবেন না।
০৩. ন্যাচারাল চুলের ব্রাশ কেনার চেষ্টা করবেন। এতে করে ভালো কভারেজ পাওয়া যাবে।
০৪. মুখের শেপ অনুযায়ী ব্রাশ নির্বাচন করুন। মুখের আকৃতির তুলনায় ব্রাশ বড় হলে, ভালো কভারেজ পাওয়া যায় না।
০৫. ফাউন্ডেশন ব্রাশের পাপড়ি গুলো যত বড় হবে, তত ভালো কভারেজ ভালো পাওয়া যাবে।
মেক-আপ ব্রাশ ধোওয়ার উপায়ঃ
একটি বাটি তে যেকোনো শ্যাম্পু হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে রাখবেন। তাতে সব ব্রাশ ১৫ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখবেন। এতে করে ব্রাশ থেকে সব ময়লা উঠে যাবে। প্রত্যেকবার ব্রাশ করার পর মেক-আপ ব্রাশ ধুয়ে রাখবেন। এটা স্বাস্থ্যকর।
মেক-আপ ব্রাশের দর-দামঃ
মেক-আপ ব্রাশ চাইলে যেকোনো অন লাইন পেজ থেকে কিনতে পারেন। সিঙ্গেল ব্রাশ এর দাম ১২০-৮০০ টাকা। আর সেট এর দাম পড়বে ১০০০-৪০০০ এর মধ্যে। কমের মধ্যে ভালো ব্র্যান্ড হল-
০১. Coastal Scents ( পার্লারে এই ব্র্যান্ডের ব্রাশ বেশি ব্যবহার করে, দাম সিঙ্গেল ব্রাশ ৪০০-৮০০ টাকা, সেট ১০০০-৪০০০ টাকা)
০২. BH (পার্লারে এই ব্র্যান্ডের ব্রাশ-ও ব্যবহার করে, দাম সেট ১২০০-৪০০০ টাকা)
০৩. Real techniqes ( খুব ভালো মানের ব্রাশ, দাম সিঙ্গেল ১১০০-১৩০০ টাকা, সেট ২২০০-২৮০০ টাকা)
০৪. Eco Tools ( ন্যাচারাল চুলের ব্রাশের দাম ৮০০-২০০০)
০৫. Elf ( সিঙ্গেল ব্রাশ ১২০-২০০ টাকা, সেট ১০০০-৪০০০ টাকা)
০৬. Crown ( সিঙ্গেল ব্রাশের দাম ৪০০-৮০০ টাকা)
আশা করি পোস্টটি ভালো লাগবে। ধন্যবাদ সবাই কে।
লিখেছেনঃ তাপসী
ছবিঃ সেডোনালেক.কম, সিগমাবিউটি.কম, স্কিনটুরেজ.কম, মেকআপ.অলওমেন্সটক.কম, বিউটি.ওলজি.কম,মেকআপফর লাইফ.নেট, পলিভোর.কম