যাদের স্কিন টাইপ ড্রাই এবং স্কিনটা বেশ ডিহাইড্রেটেড, তারাই জানে মেকআপ পারফেক্টলি সেট রাখাটা তাদের জন্য কতটা কঠিন। আর সঠিক মেকআপ প্রোডাক্ট না ব্যবহার করলে তো কথাই নেই! ড্রাই প্যাচ; মেকআপ ভেসে থাকা এবং পুরো মেকআপটা দেখতে কেকি লাগার মত ব্যাপার চলে আসে। দেখতে যদি ভালোই না লাগলো; তো মেকআপ করে কী লাভ? তাহলে কি মেকআপ করবেন না? অবশ্যই করবেন! শুধুমাত্র আপনাকে স্কিন কেয়ারের দিকে নজর দিতে হবে; সঠিক প্রোডাক্ট চুজ করতে হবে এবং সঠিক টেকনিক অ্যাপ্লাই করে মেকআপ করতে হবে। কিন্তু কীভাবে? সেটা নিয়েই আমাদের আজকের এই আর্টিকেল। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই; ড্রাই ও ডিহাইড্রেটেড স্কিনের জন্য মেকআপ গাইডলাইন সম্পর্কে।
ড্রাই ও ডিহাইড্রেটেড স্কিনে মেকআপের আগে করণীয় কী?
এই ধরনের স্কিনে সুন্দরভাবে মেকআপ ফুটিয়ে তোলার জন্য স্কিন কেয়ারই হচ্ছে মেইন চাবিকাঠি। ত্বক সুন্দর হলে মেকআপ ফ্ললেস দেখাবে। ন্যাচারালি ড্রাই স্কিনের অধিকারী হওয়া ছাড়াও কিন্তু ওয়েদার, অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন, র্যাশ ইত্যাদি কারণে স্কিন ড্রাই ও ডিহাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারে। ড্রাই স্কিনে মেকআপ স্মুথলি অ্যাপ্লাই করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মেকআপের আগে স্কিনকে তো রেডি করে নিতে হবে, তাই না? চলুন এক নজরে দেখে নেই, মেকআপ করার আগে ত্বকের যত্ন নিতে কোন কোন স্টেপস ফলো করতে হবে।
১) স্কিন টাইপ যেটাই হোক না কেন, মেকআপ শুরুর আগে অবশ্যই স্কিন ক্লিন করে নেওয়া জরুরী। যেহেতু ড্রাই স্কিনের কথা বলছি, তাই তারা এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাদের স্কিনের জন্য স্যুইটেবল ক্লেনজার ব্যবহার করবেন। sodium lauryl sulfate, salicylic acid, glycolic acid, antibacterials (like triclosan), fragrances, parabens, alcohols ইত্যাদি ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো স্কিনকে আরও ড্রাই করে দেয়। তাই খেয়াল রাখবেন এই ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো যেন ফেইস ওয়াশ বা ক্লেনজারে না থাকে।
২) এরপর মাইল্ড স্ক্রাব দিয়ে স্কিনকে এক্সফোলিয়েট করে নিন, এতে ডেড সেলস রিমুভ হবে। খুব ঘন ঘন স্ক্রাবিং করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে স্কিন ড্রাই হয়ে যাওয়ার চান্স থাকে।
৩) এরপর স্কিনকে হাইড্রেশন দিতে একটা শিট মাস্ক অ্যাপ্লাই করতে পারেন। শিট মাস্ক ১৫ মিনিট রেখে তুলে ফেলে এক্সট্রা সিরামটুকু দিয়ে ফেইস ম্যাসাজ করে নিতে পারেন। এরপর চাইলে স্কিনে এক্সট্রা করে ফেসিয়াল সিরাম লাগাতে পারেন। তবে শিট মাস্ক অ্যাপ্লাই করলে আলাদা করে ফেসিয়াল সিরাম না লাগালেও চলবে।
৪) লাস্টে ময়েশ্চাইজার লাগানো কিন্তু মাস্ট। ময়েশ্চারাইজার স্কিনের হাইড্রেশনকে লক করে রাখবে আর ড্রাইনেস কন্ট্রোল করবে। ময়েশ্চারাইজারও কিন্তু ড্রাই স্কিনের জন্য উপযোগী হতে হবে। খেয়াল রাখবেন, যে ময়েশ্চারাইজার আপনি ব্যবহার করছেন সেটা যেন ইজিলি আপনার স্কিন শুষে নেয়, ভেসে ভেসে না থাকে!
৫) আন্ডার আই এরিয়ার ড্রাইনেস দূর করে হাইড্রেশন দিতে; আইক্রিম বা আই জেল অ্যাপ্লাই করতে পারেন চোখের নিচে। অবশ্যই রিং ফিংগার দিয়ে আইক্রিম বা আইজেল অ্যাপ্লাই করুন।
কীভাবে মেকআপ অ্যাপ্লাই করবেন?
স্কিনকে প্রিপেয়ার করা তো হলো; এবার আসি মেইন বিষয়ে। সেটা হচ্ছে ড্রাই স্কিনে মেকআপ অ্যাপ্লিকেশন। তবে এর আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে; যেমনঃ ইনগ্রেডিয়েন্টস, সঠিক মেকআপ প্রোডাক্টস, অ্যাপ্লিকেশন টুলস, সঠিকভাবে লেয়ারিং করা ইত্যাদি। এগুলো নিয়েই ডিটেইলসে কথা বলবো এবার।
প্রাইমার
প্রাইমার তো সবাই চিনি আমরা, তাই না? এটি স্কিনে মেকআপের জন্য সুন্দর একটা বেইজ তৈরি করে দেয়। আর ড্রাই স্কিনের জন্য তো প্রাইমার ইউজ করা মাস্ট। হাইড্রেটিং অ্যান্ড ল্যুমিনাস প্রাইমার আপনার জন্য বেস্ট অপশন। এগুলো ফেইসে এক্সট্রা গ্লো দিতে সাহায্য করে। তবে অনেক বেশি প্রাইমার কখনোই অ্যাপ্লাই করবেন না। অল্প একটু প্রাইমার নিয়ে ফেইসে লাগিয়ে নিন।
ফাউন্ডেশন ও কনসিলার
হাইএন্ড হোক বা ড্রাগস্টোর; যে ফাউন্ডেশন বা কন্সিলারই আপনি ব্যবহার করেন না কেন; মেক শিওর সেটা ড্রাই স্কিনের জন্য তৈরি। সবসময় ল্যুমিনাস এবং ডিউয়ি ফিনিশের ফাউন্ডেশনগুলো কেনার চেষ্টা করবেন। কারন, এগুলো ড্রাই এবং ডিহাইড্রেটেড স্কিনের কথা চিন্তা করেই বানানো হয়; এবং ড্রাই স্কিনে সুন্দরভাবে বসে। ফাউন্ডেশন ব্লেন্ডিং এর জন্য ভালো মানের ব্রাশ ব্যবহার করুন। হাতের আংগুলের সাহায্যে ফাউন্ডেশন নিয়ে ফেইসে ডট ডট করে অ্যাপ্লাই করুন। এরপর ব্রাশের সাহায্যে ব্লেন্ড করে ফেলুন।
আর কনসিলারের ক্ষেত্রে ক্রিম কনসিলার বা স্টিক কনসিলারে ইনভেস্ট করুন। এগুলো ড্রাই স্কিনের জন্য বেশ ভালো। কনসিলার ব্লেন্ডিং এর জন্য বিউটি ব্লেন্ডার বা ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন।
সতর্কতা
ভুলেও পাউডার বেইজড ফাউন্ডেশন বা অয়েলি স্কিনের জন্য তৈরি ম্যাট ফাউন্ডেশন বা কনসিলার ব্যবহার করতে যাবেন না! এগুলা ড্রাই ও ডিহাইড্রেটেড স্কিনের এক্সট্রা ময়েশ্চার শুষে নিয়ে স্কিনকে আরো ড্রাই করে দিতে পারে। আর যাদের ড্রাই স্কিন, তাদের ম্যাটিফাইং ফেইস পাউডার ব্যবহারের দরকার নেই। তবে চাইলে ড্রাই স্কিনের জন্য উপযোগী যেকোনো প্রেসড পাউডার অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
কনট্যুরিং এবং ব্লাশ
কনট্যুরিং বা ব্লাশের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত পাউডারি টাইপ বা ম্যাট প্রোডাক্টস এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ, ড্রাই অ্যান্ড ডিহাইড্রেটেড স্কিনে পাউডার কনট্যুরিং ও ব্লাশ দেখতে প্যাচি লাগতে পারে। তাই ক্রিম কনট্যুর এবং ক্রিম ব্লাশ ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো স্কিনে স্মুথলি ব্লেন্ড হয়ে যাবে এবং দেখতেও সুন্দর লাগবে। এছাড়াও লিকুইড ব্লাশ এবং স্টিক কনট্যুর ব্যবহার করতে পারেন। নিরভানা ফেইস প্যালেটটা আমার খুবই পছন্দের, এতে কনট্যুর, ব্লাশ ও হাইলাইটার একইসাথে থাকে। একদমই পাউডারি লাগে না, স্মুথলি ফেইসে বসে যায়। পিগমেন্টও খুব ভালো।
হাইলাইটার
হাইলাইটার আমাদের স্কিনে এক্সট্রা গ্লো দিতে সাহায্য করে। আর ড্রাই অ্যান্ড ডিহাইড্রেটেড স্কিনের জন্যে সেটা আরো বেশি ইম্পরট্যান্ট, তাই না? প্রাইমার অ্যাপ্লাই এর পরে হাইলাইটার/ইল্যুমিনেটর নিয়ে আপনার চিকবোন, থুঁতনি, নাকের উপরে, কপালে ইত্যাদি স্থানে লাগিয়ে নিন এবং একটি বিউটি স্পঞ্জ বা ব্রাশের সাহায্যে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করুন। এতে করে স্কিন দেখতে অনেক বেশি গ্লোয়ি লাগবে। এছাড়াও; কনট্যুরিং এবং ব্লাশ লাগানোর পরে সেইম স্থানগুলোতে লিকুইড বা স্টিক হাইলাইটার লাগিয়ে ব্লেড করে দিন।
সেটিং স্প্রে
বেইজ মেকআপের পর আই মেকআপ করুন এবং লিপস্টিক লাগিয়ে নিন মনমতো। এরপর তো পুরো মেকআপ সেট করে নেওয়ার পালা। এজন্য একটি সেটিং স্প্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেটিও যেন ডিউয়ি ফিনিশের সেটিং স্প্রে হয়। ড্রাই অ্যান্ড ডিহাইড্রেটেড স্কিনের জন্য ডিউয়ি ফিনিশের সেটিং স্প্রে বেস্ট কাজ করে। মেকআপ শেষ ফেইস বরাবর একটু দূর থেকে সেটিং স্প্রে নিয়ে পুরো ফেইসে স্প্রে করে দিন। এটা ফেইস মেকআপকে লং লাস্টিং করে এবং ফেইসে এক্সট্রা গ্লো যোগ করবে। হাইড্রেটেড স্কিন পেতে রোজ ওয়াটার স্প্রে করতে পারেন; এটাও বেশ ভালো অপশন আপনার জন্য।
সারাদিন মেকআপ ভালো রাখবেন কী করে?
মেকআপ তো করে নিলেন; এবার সেটা সারাদিন কীভাবে ভালো রাখতে পারবেন, সেটারও একটা ব্যাপার আছে। অনেক সময় দেখা যায়; ড্রাই অ্যান্ড ডিহাইড্রেটেড স্কিনে মেকআপ কয়েক ঘন্টা পর ফ্লেকি হয়ে যায় বা ড্রাই প্যাচ দেখা যায়। তখন কী করবেন? যদি এরকম কিছু আপনার স্কিনে দেখেন; তবে একটা টুইজারের সাহায্যে ড্রাই ফ্লেকসগুলো সাবধানে তুলে ফেলুন। এরপর সামান্য পরিমাণে ডিপ ময়েশ্চারাইজার নিয়ে; ড্রাই প্যাচগুলোতে হালকা প্যাটিং মোশনে লাগিয়ে নিন।
আর স্কিন যদি ডিহাইড্রেটেড লাগে সাথে সাথে ফেইস মিস্ট বা রোজ ওয়াটার স্প্রে করে নিন। ফেইস মিস্ট ব্যাগে ক্যারি করতে পারেন। ইনস্ট্যান্টলি হাইড্রেশন দিতে ফেইস মিস্ট দারুণ কাজ করে।
যে সকল ইনগ্রেডিয়েন্টস অ্যাভয়েড করবেন
আমরা অনেকেই আছি যারা মেকআপ প্রোডাক্টস কেনার আগে ইনগ্রেডিয়েন্টস লিস্ট চেক করি না। এটা কিন্তু একদমই উচিত নয়। মেকআপ ব্যবহারের আগে অবশ্যই উপাদান সম্পর্কে জানতে হবে। কোনটা আপনার স্কিনের জন্য উপযোগী; বা কোন ইনগ্রেডিয়েন্ট আপনার স্কিনে খারাপ প্রভাব ফেলবে সে বিষয়ে আইডিয়া রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
বিভিন্ন মেকআপ প্রোডাক্টস এ কিছু কিছু ইনগ্রেডিয়েন্টস ব্যবহার করা হয়, যেগুলো ড্রাই ও ডিহাইড্রেটেড স্কিনের জন্য ভালো নয়। যেমন- Alcohol, Fragrances, Parabens, Glycolic Acid & Salicylic Acid, এগুলো স্কিনকে আরো বেশি ড্রাই করে দিতে পারে। তাই মেকআপ প্রোডাক্টস কেনার আগে দেখে নিবেন এই ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো মেকআপ প্রোডাক্টসে আছে কি না।
এই তো জেনে নিলেন, ড্রাই ও ডিহাইড্রেটেড স্কিনের মেকআপ গাইডলাইন সম্পর্কে। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য হেল্পফুল ছিল। ড্রাই স্কিনে কীভাবে মেকআপ সেট থাকবে, সেটাই জানানোর ট্রাই করেছি। সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
ছবি- সাজগোজ