আচ্ছা মেকাপ এক্সপার্টদের ভিডিও দেখে দেখেই তো মেকাপের হাতে খড়ি আমাদের! তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করেই তো মেকাপে পটু হয়ে ওঠা। কিন্তু এই মেকাপ এক্সপার্ট বা আর্টিস্টদের সম্পর্কে কতটুকুই বা জানি আমরা। কৌতূহল তো থেকেই যায়। এই কৌতূহল কমাতে সাজগোজ তার মেকাপপ্রেমী বন্ধুদের জন্য ফ্রাইডে স্প্যাশাল ইন্টারভিউ হলে কেমন হয় বলো তো? কি নিশ্চয়ই ভালো! আজকে সাজগোজের বন্ধুদের জন্য হাজির করা হল হলিউডের সিনেমা মেকাপ স্কুল থেকে স্পেশাল এফেক্টস মেকাপসহ মেকাপের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোর ওপর গ্র্যাজুয়েশন করা এবং হলিউডের অন্যতম মেকাপ লিজেন্ড Leonard Englemen এর কাছ থেকে ফেলোশিপ গ্রহণ করা তানশিয়া। নতুন নতুন পদ্ধতি শেখা, নিজে সবসময় ইন্সপায়ার্ড থাকা এবং অন্যদেরকে ইন্সপায়ার্ড করাটাই তার জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। সাজগোজের মেকাপপ্রেমী বন্ধুদের তিনি জানিয়েছেন নিজের ভালো লাগা এবং স্বপ্ন সম্পর্কে। সেই সঙ্গে দিয়েছেন দারুণ কিছু মেকাপ টিপসও।
[picture]
চলুন তাহলে আর সময়ক্ষেপণ না করে প্রথমে জেনে নিই তানশিয়া সম্পর্কে। তানশিয়া লস-অ্যাঞ্জেলস বেজড একজন সার্টিফাইড বিউটি এবং স্পেশাল এফেক্টস মেকাপ আর্টিস্ট। তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা বাংলাদেশেই। মেকাপ তানশিয়ার প্যাশন। ইউটিউব এবং সোশ্যাল মিডিয়া যুগের আগে থেকেই তিনি ফ্যাশন ম্যাগাজিন এবং বই পড়ে মেকাপ সম্পর্কে জানতেন। মেকাপের হাতেখড়ির সময় সিমেট্রিক্যাল আইলাইনার, স্মুথবেজ এবং পারফেক্ট স্মোকি আই মেকাপের জন্য তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা নিজের রুমে প্র্যাকটিস করতেন। মেকাপপ্রেমী তানশিয়া মেকাপের সাথে তার সম্পর্কটাকে আরো পোক্ত করতে চেয়েছিলেন। আর তাই তিনি মেকাপের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে হলিউডের সিনেমা মেকাপ স্কুলে যাওয়া আর বাকিটুকু তো আগেই জানা হয়ে গেছে। এখন তাহলে প্রশ্ন উত্তর পর্বে যাওয়া যাক।
নিজেকে মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে গড়ার শুরুটা কবে এবং কীভাবে হয়েছিলো?
অফিসিয়ালি মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম ২০১৩ এর শুরুর দিকে। তার আগে আমি শুধুমাত্র একজন বিউটি ব্লগার ছিলাম। আমার ব্লগিং জার্নি শুরু করেছিলাম ২০০৯ সালে। মেকাপের ব্যাপারে আমার ফলোয়ারদের বেশ কিছু ভালো ফিডব্যাক পেয়ে মেকাপের প্রতি আমার ভালোবাসা আরো বেড়ে গিয়েছিলো। আমেরিকায় চলে যাওয়ার পর আমার মেকাপের ভিতটাকে আরো শক্ত করার জন্য আমি মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে ‘ম্যাক’ এ কাজ করা শুরু করি। টপ মেকাপ এডুকেটর এবং সেলিব্রেটি মেকাপ আর্টিস্টদের সাথে কাজ করার এবং কাজ শেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার। মেকাপের খুঁটিনাটি নানান বিষয়ে অনেককিছু জানা হয়েছিলো সেখানে। সেই সাথে ক্লাস এবং ওয়ার্কশপের মাধ্যমে ট্রেনিং এবং সার্টিফিকেশন এর ব্যবস্থা ছিলো সেখানে। এরপর আমি ‘NARS’ কসমেটিক্সে লিড মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছি। এই অভিজ্ঞতা মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে আমার দক্ষতা বাড়িয়েছে। আমি পরবর্তিতেও মেকাপ স্কুলে প্রসথেটিক্স,স্পেশাল এফেক্টসের উপর ক্লাস করেছি।
মেকাপে ইন্সপারেশন কোথায় পান?
আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার বাবা এবং আমার স্বামী। অন্য মেয়েদের মতই মেকাপ আমার কাছে শুধুই শখের বিষয় ছিলো। কখনোই মেকাপে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখিনি আমি। বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পরে আমার স্বামীই প্রথম আমাকে ইন্সপায়ার করেছিলো বিউটি ব্লগ শুরু করার ব্যাপারে। স্পেশাল ইফেক্টস মেকাপ শেখার প্রয়োজনটাও আমার স্বামীই আমাকে প্রথম বুঝিয়েছিল। আমার পরিবারের পাশাপাশি বেশ কিছু মেকাপ আর্টিস্টের মেকাপ থেকেও আমি ইন্সপায়ার্ড। এছাড়াও আমার ফলোয়াররা প্রতিনিয়ত আমাকে মেকাপ নিয়ে কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছেন।
মেকাপ আর্টিস্ট না হলে কী হতেন?
আমি হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা করেছি। কিন্তু এই ফিল্ডটা আমার জন্য না। কারণ আমি ক্রিয়েটিভিটি পছন্দ করি। রঙ নিয়ে খেলতে, নতুন কিছু তৈরি করতে পছন্দ করি। নতুন নতুন স্বাদ পেতে এবং ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসি তাই মেকাপ নিয়ে কাজ না করলে আমি হয়তো এমন কোনো কাজ উপভোগ করতাম যেখানে অনেক ঘুরে বেড়ানো যায়।
তিনটি জিনিসের নাম বলুন যেগুলো নিজের মেকাপ ব্যাগে থাকা চাই-ই-চাই
চারটি মেকাপ প্রোডাক্ট আমার ব্যাগে থাকা চাই-ই চাই। আর সেগুলো হলো – কনসিলার, পাউডার, মাস্কারা এবং চিক স্টেইন। এই চারটি জিনিষ সাথে না নিয়ে আমি কখনই বের হই না।
মেকাপের কমন মিস্টেকগুলো কী?
ইদানিং বাংলাদেশে মেকাপের কিছু কমন মিস্টেক লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো ভুল রঙের ফাউন্ডেশন নির্বাচন, প্রয়োজনের চাইতে বেশি মেকাপ ব্যবহার, মেকাপ ঠিকমতো না ব্লেন্ড করা এবং খুব গাঢ় করে আই-ব্রো আঁকা।
আপনার পছন্দের এবং অপছন্দের দুটি লেটেস্ট মেকাপ ট্রেন্ড সম্পর্কে বলুন।
এই মূহূর্তে ফ্যাশন উইকের দুটি মেকাপ ট্রেন্ডের প্রেমে পড়েছি আমি। সেগুলো হ্লো স্মাজি ব্ল্যাক আইট আইজ এবং গ্লোয়ি স্কিন। অনেকেই অবশ্য গ্লোয়ি স্কিন মেকাপের সাথে হাইলাইটিং এর তালগোল পাকিয়ে ফেলেন! গ্লোয়ি স্কিন আর হাইলাইটিং দুটো সম্পূর্ন আলাদা। গ্লোয়ি স্কিন হলো খুব কম মেকাপ প্রোডাক্ট ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের ন্যাচারাল গ্লোটাকে ফুটিয়ে তোলার পদ্ধতি।
আর মেকাপের ক্ষেত্রে আমার খুব অপছন্দ হলো খুব গাঢ় করে আঁকা ডিপ ব্ল্যাক আই ব্রো এবং ভুল পদ্ধতিতে ফেস স্কাল্পটিং করা।
আপনার পছন্দের কিছু মেকাপ প্রোডাক্টস সম্পর্কে বলুন।
এই মেকাপ প্রোডাক্টগুলো বর্তমানে আমার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে:
(১) NARS Optimal Brightening Concentrate.
(২) Kiehl’sUltra Facial Moisturizer
(৩) Trish McEvoy Instant Eye Lift
(৪) Chanel le de volume mascara
(৫) MAC Fix+
ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটা ছিলো?
আমি টিভি এবং ফিল্মের শুটিং এর জন্য মেকাপ করি। আর তাই আমাকে ডিরেক্টরের পছন্দমতো কিংবা থিম অনুযায়ী মেকাপ করতে হয়। আর ছোট্ট একটুখানি ভুলও HD ক্যামেরায় বেশ ভালোভাবেই ধরা পড়ে। তাই এই ব্যাপারগুলোকে ঠিক করা এবং চিত্রপট অনুযায়ী অভিনেতাদের নিখুত মেকাপ দিয়ে চরিত্র ফুটিয়ে তোলাই আমার ক্যারিয়ারের সবচাইতে চ্যালেঞ্জিং পার্ট।
যারা মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইছে তাদের ব্যাপারে কি পরামর্শ দিবেন?
নিজেই নিজের মেকাপ করা আর অন্যের মেকাপ করিয়ে দেয়া দুটো এক নয়। অন্যকে মেকাপ করিয়ে দেয়া বেশ কঠিন। আর তার কারণ হলো মানুষের চেহারার বৈশিষ্ট্যের তারতম্য। অন্যকে মেকাপ করিয়ে দেয়ার আগে হাইজিন, ফেসিয়াল ফিচারস এবং স্কিন ইস্যু, কোন ত্বকের জন্য কোন ধরণের মেকাপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে এবং কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে সেটা জেনে রাখা প্রয়োজন। আর অবশ্যই মেকাপটাকে পেশা হিসেবে নিতে হবে ভালোবেসে, অন্য কিছুর জন্য নয়।
আপনার কাছে মেকাপ করতে চাইলে কীভাবে যোগাযোগ করতে হবে?
ওয়েবসাইট এবং ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে আমি মেকাপের বুকিং নিই। মূলত আমি লস-অ্যাঞ্জেলস বেজড মেকাপ আর্টিস্ট। তবে মাঝে মাঝে দেশে আসি এবং ওয়ার্কশপ করি এবং পার্সোনাল লেসন দেই। আর ব্লগার হিসেবে প্রায়ই আমার ইউটিউব চ্যানেলে মেকাপ টিউটোরিয়াল পোস্ট করি।
ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে আর কিছু?
আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো হলিউডে বিউটি/স্পেশাল এফেক্ট মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করা। তবে এরজন্য কিছু পরীক্ষা আছে যা পাশ করতে আরো অনেক সময় প্রয়োজন। আর তাই আমার এই মূহূর্তের পরিকল্পনা হলো ছোটখাটো টিভি প্রজেক্টে কাজ করা SFX ল্যাবে ঢোকা।
সাজগোজের পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ।
সাজগোজকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।