ত্বকের ও চুলের যত্নে আমরা অনেক ধরনের প্রোডাক্ট ব্যবহার করি। কিন্তু হাতের কাছে থাকা অ্যালোভেরা জেল দিয়ে যে একইসাথে ত্বক ও চুলের সমস্যা সহজে সমাধান করা যায় সেটা অনেকেই জানেন না। আমার স্কিনে গাছের অ্যালোভেরা থেকে পাওয়া জেল মোটেই স্যুট করে না! আমি জানি আমার মতো আরও অনেকেই আছে যাদের ত্বকে অথবা চুলে কাঁচা অ্যালোভেরার জেল অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেয়। তাই বলে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করবো না? তা কিন্তু নয়! তাই আজকে আমি রিভিউ শেয়ার করবো আমার ব্যবহার করা অ্যালোভেরা জেল নিয়ে, যা ব্যবহার করে আমি বেশ কিছু উপকার পেয়েছি খুবই কম সময়ের মধ্যেই। জানতে চান ত্বক ও চুলের সমস্যা সমাধানে হলিগ্রেইল অ্যালোভেরা জেল কোনটি? জানতে হলে পড়তে হবে আজকের এই ফিচারটি!
অ্যালোভেরা জেলের গুণাগণ
অ্যালোভেরা জেলের কিন্তু অনেক গুনাগুন রয়েছে। কেন এটি ত্বক ও চুলের জন্য একইসাথে বেনিফিসিয়াল? এর বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন-
ত্বকের ক্ষেত্রে-
- ত্বকে হাইড্রেশন দেয়
- ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে
- একনে, পিম্পল ও পিম্পলের দাগ কমিয়ে ত্বককে ফ্রেশ করে তোলে
চুলের ক্ষেত্রে-
- চুলের রুক্ষভাব কমিয়ে চুলকে ঝলমলে করে তোলে
- স্ক্যাল্পের খুশকি কমায়
- ইচিনেস কমায়
- আগা ফাটা প্রতিরোধ করে
আমার নিত্যসঙ্গী যে হলিগ্রেইল অ্যালোভেরা জেল
আমার স্কিন ও হেয়ারকেয়ারে নিত্য সঙ্গী যে অ্যালোভেরা জেল সেটি হল; মামাআর্থ অ্যালোভেরা জেল উইথ পিউর অ্যালোভেরা জেল অ্যান্ড ভিটামিন ই। এতে আছে-
অ্যালোভেরা
ত্বক ও চুলকে বেশ ভালোভাবে হাইড্রেট করে। এটি খুবই পাওয়ারফুল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ত্বকের যেকোনো ধরনের ইরিটেশন দূর করতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেল চুলের ফ্রিজিনেস অনেকটা কমিয়ে আনে।
ভিটামিন ই
অ্যালোভেরা এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যেটিতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই উপাদানটি ত্বক ও চুলকে ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে, একইসাথে নারিশমেন্ট প্রদান করে।
গ্লিসারিন
এটি একধরনের আদ্রর্তা রক্ষাকারী উপাদান, যা চুল ও ত্বকের ময়েশ্চার লেভেল ঠিক রাখে। এছাড়াও এটি স্কিনের ইরিটেশনের বিরুদ্ধে ঢাল হিসাবে কাজ করে এবং ময়েশ্চার ব্যারিয়ার মজবুত করে। এছাড়াও এতে আরও অনেক উপাদান আছে, যেমনঃ অ্যাকুয়া, সোডিয়াম পিসিএ, সোডিয়াম বেনজয়েট, পটাশিয়াম সরবেট, অ্যালানটইন ইত্যাদি।
মামাআর্থ অ্যালোভেরা জেল কেন অন্যান্য অ্যালোভেরা জেলের থেকে আলাদা?
এই জেল অন্যান্য অ্যালোভেরা জেলের থেকে আলাদা। কারণ-
- ত্বককে নারিশমেন্ট প্রদান করে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে। সানবার্ন কমিয়ে আনে।
- চুল ও ত্বক উভয়ের জন্য বেশ ভালো। চুলকে কোমল করে।
- সব ধরণের ত্বকে ব্যবহারের জন্য উপযোগী।
- যেকোনো ধরণের চুলে স্যুট করে।
- এই অ্যালোভেরা জেলের বেস্ট দিকটি হচ্ছে; এতে কোনও প্যারাবেন বা টক্সিন নাই।
- সিলিকনমুক্ত। কোনও আর্টিফিশিয়াল রং নেই।
- ডার্মালোজিক্যালি টেস্টেড।
আমি যেভাবে ব্যবহার করি
আমি আমার ত্বক ও চুলের যত্নে মামাআর্থ অ্যালোভেরা জেলটি নানাভাবে ব্যবহার করি। এই জেলটি ত্বকের পাশাপাশি চুলেও ব্যবহার করা যায়।
ত্বকের যত্নে আমি যেভাবে ব্যবহার করি-
সরাসরি জেল অ্যাপ্লাই
রাতে ঘুমানোর আগে পরিমাণমতো হাতে নিয়ে ফেইসে ও ঘাড়ে অ্যাপ্লাই করি। এতে করে এটি ময়েশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে। ত্বককে হাইড্রেশন প্রদান করে।
ফেইসপ্যাক হিসাবে
এই অ্যালোভেরা জেল আমি ফেইসপ্যাক হিসাবেও ব্যবহার করি। ফেইসপ্যাক হিসাবে ব্যবহার করতে যা যা লাগবে-
- মামাআর্থ অ্যালোভেরা জেল- ১ টেবিল চামচ
- মুলতানি মাটি- ১ টেবিল চামচ
- রোজ ওয়াটার- পরিমাণমত
ব্যবহারবিধি-
১) মুলতানি মাটি, অ্যালোভেরা জেল প্রথমে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
২) পরিমাণমত রোজ ওয়াটার মিশিয়ে নিন।
৩) ফেইসপ্যাকটি মুখে ১০-১৫ রেখে পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চুলের যত্নে যেভাবে ব্যবহার করি-
স্ক্যাল্পে ও চুলে সরাসরি অ্যাপ্লাই
আমার স্ক্যাল্পে ইচিনেস আছে, এছাড়াও ঘন ঘন খুশকির উপদ্রব হয়। তাই আমি এই অ্যালোভেরা জেল সরাসরি চুলে ও স্ক্যাল্পে অ্যাপ্লাই করি। এতে করে আমার স্ক্যাল্পের ইচিনেস ও খুশকি অনেকটাই কমেছে।
এছাড়াও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শুধুমাত্র অ্যালোভেরা জেলটি চুলের আগা পর্যন্ত অ্যাপ্লাই করে নিই। এতে করে চুল থাকে কোমল ও মসৃণ।
হেয়ারপ্যাক হিসাবে
হেয়ারপ্যাক হিসাবে আমি দুই উপায়ে এই অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করি।
চুলে শাইনি ভাব আনতে
এর জন্য প্রয়োজন –
- অ্যালোভেরা জেল- ৩ চা চামচ
- টকদই- ২ চা চামচ
- মধু- ১ চা চামচ
- অলিভ অয়েল- ১ চা চামচ
ব্যবহারবিধি-
১) সবগুলো উপাদান একটি বাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
২) ১০ মিনিট ধরে স্ক্যাল্পে ও চুলের আগা পর্যন্ত ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করুন।
৩) ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে চুল ধুয়ে ফেলুন।
ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক হিসাবে
এর জন্য প্রয়োজন –
- অ্যালোভেরা জেল- ২ চা চামচ
- মধু- ১ চা চামচ
- নারিকেল তেল- ১ চা চামচ
ব্যবহারবিধি
১) সবগুলো উপাদান একটি বাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
২) চুলের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালো ভাবে ম্যাসাজ করে নিন।
৩/) ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে আপনার পছন্দমত একটি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। দেখবেন চুলে বাউন্সিভাব এসে পড়বে।
প্যাকেজিং এবং অন্যান্য বিষয়াবলী
মামাআর্থ অ্যালোভেরা জেল এর প্যাকেজিং এর ব্যপারে যদি বলি, তাহলে আমি বলবো আমার কাছে বেশ ইউজার ফ্রেন্ডলি প্যাকেজিং মনে হয়েছে। প্যাকেজিং সম্পর্কে বিস্তারিত-
১/ প্লাস্টিকের স্বচ্ছ বোতল। ভেতরে প্রোডাক্ট কীভাবে ও কেমন অবস্থায় আছে দেখতে পারবেন।
২/ এতে আছে পাম্প সিস্টেম; ফলে আমার যতটুকু প্রোডাক্ট লাগবে আমি ততটুকুই হাতে নিতে পারি। অপচয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
৩/ ৩০০ মিলি. অ্যালোভেরা জেল থাকে, যা আপনি অনেকদিন ব্যবহার করতে পারবেন।
৪/ মিডিয়াম, স্বচ্ছ ও সিল্কি টেক্সচার। ফলে ত্বকে দ্রুত মিশে যায়।
৫/ কিছুটা কড়া স্মেল আছে। তবে আমার কাছে সহনীয় লেগেছে।
৬/ আমার যেহেতু অয়েলি স্কিন; তাই এটি বেশ অনেকক্ষণ আমাকে হাইড্রেশন দেয়। কিন্তু আপনার যদি ড্রাই স্কিন হয়ে থাকে, তবে এটি ব্যবহারের পাশাপাশি অবশ্যই একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।
কারা ব্যবহার করতে পারবে?
১) ১৫ বছর এবং তদূর্ধ পুরুষ কিংবা নারী যে কেউ এটি ব্যবহার করতে পারবে।
২) সব ধরনের চুল ও ত্বকের জন্য ব্যবহার উপযোগী।
সতর্কতা
১) ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট বলে জেলের কালার বা ফ্রেগ্রেন্স চেঞ্জ হতে পারে। তবে এতে এর ইফেক্টিভনেস একদম কমবে না।
২) ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে।
৩) ঠান্ডা ও শুষ্ক জায়গায় সংরক্ষণ করুন।
ত্বক ও চুলের সমস্যা সমাধানে হলিগ্রেইল অ্যালোভেরা জেল নিয়ে জেনে নিলাম। আশা করছি, আপনারাও মামাআর্থ অ্যালোভেরা জেলটি অবশ্যই ব্যবহার করে দেখবেন। অথেনটিক স্কিন কেয়ার ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস কিনতে আপনারা চাইলে সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকে কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
ছবি- সাজগোজ