মেসতা নিয়ে ভুগছেন এমন অনেকেই আছেন। ট্রিটমেন্ট নেয়ার পর হয়তো কমছে কিন্তু ট্রিটমেন্ট বন্ধ করলেই আবার আগের মতন অবস্থা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেকরই মেসতা (melasma) দেখা দেয়। কপালে, গালে বা নাকের উপর নরমাল স্কিনটোনের থেকে একটু গাঢ় ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়, এটাকেই মেসতা বা মেলাসমা বলে। আমি ছোট থেকেই দেখা আসছি আমার মা চাচী অনেকেরই বয়স বাড়ার সাথে সাথেই মেসতা দেখা দিচ্ছে। মেসতা দূর করতে কিন্তু একটি প্রোপার স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করা দরকার। মেসতা কেন হয় জানেন কি? আজকের আর্টিকেলে মেসতা দূর করতে একটি প্রোপার স্কিন কেয়ার রুটিন শেয়ার করার সাথে মেলাসমা বা মেসতা নিয়ে ডিটেলসে একটু কথা বলবো।
মেলাসমা কত প্রকার?
মেলাসমা স্কিনের পিগমেন্টেশনের গভীরতা ও ধরনের উপর ডিপেন্ড করে ভাগ করা হয়েছে তিনভাগে।
(১)এপিডার্মাল(Epidermal)– এপিডার্মাল মেলাসমা একটু গাঁড় বাদামী বর্ণের, বর্ডার একটু ওয়েল ডিফাইন্ড হয় সাথে একটু কালচে ভাব থাকে। ট্রিটমেন্টে রেসপন্স পাওয়া যায় তাড়াতাড়ি।
(২) ডার্মাল (Dermal)– ডার্মাল মেলাসমা হালকা বাদামী বা নীলচে বর্ণের, সারতে সময় লাগে বা পুরোপুরি রিমুভ হয় না!
(৩)মিক্সড মেলাসমা(Mixed Melasma)– মিশ্র মেলাসমা, যা তিনটির মধ্যে সব থেকে সাধারণ, নীল এবং বাদামী বর্ণের প্যাচ ভিজিবল হয়, কালচে একটি মিশ্র প্যাটার্ন দেখায় স্কিনে এবং ট্রিটমেন্ট করলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মেসতা কেন হয়?
১) জেনেটিক্সঃ মেলাসমাতে আক্রান্তদের কাছ থেকে জানা যায় যে পরিবারের অন্য কারোরও মেসতা রয়েছে। বংশগতভাবেও মেসতা হয়ে থাকে।
২) সান রে এবং হিটঃ সূর্যের ইউভি রে আমাদের স্কিন ড্যামেজ করে থাকে। বাহিরে বের হলে আলোতে আসলে আমাদের শরীরে মেলানিন প্রডিউস হয়। এই মেলানিন অনেকটা ছাতার মত কাজ করে থাকে, যা সান ড্যামেজ থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের বডি থেকে মেলানিন সেল ঐ সময় বেশি প্রডিউস হয়ে থাকে। কিন্তু যখন মেলানিন বেশি প্রডিউস হয়ে যায় আর মুখে ছোপ ছোপ দাগ হয়ে যায়, তখন এই দাগকে মেলাসমা বা মেসতা বলে। এছাড়া অতিরিক্ত হিটের মধ্যে থাকলেও কিন্তু মেসতা হয়ে থাকে। যেমন আগুনের হিট; রান্নাঘরে নারীদের বেশি কাজ করা হয় আর আস্তে আস্তে স্কিনে মেলাসমা দেখা দেয়।
৩) হরমোনালঃ হরমোনাল কারনেও মেসতা নারী পুরুষ সবারই হতে পারে। গবেষনায় দেখা গেছে, পুরুষের তুলনায় ৯০% নারীর মেসতা হয়ে থাকে। কনট্রাসেপটিক পিল বা প্রেগনেন্সির সময় বা পরে হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে মেসতা দেখা দেয়। গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই মেলাসমার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। তাই প্রেগনেন্সির সময় মেলাসমা বা মেসতা দেখা দেয়। আবার থাইরয়েডের প্রবলেম থাকলেও মেসতা হতে পারে।
৪) অরিতিক্ত টেনশনঃ দেখা যায় স্কিন কেয়ারের সব কিছু মেনে চলার পরও অনেকের মেসতা হচ্ছে। বেশি স্ট্রেস নিলেও কিন্তু স্কিনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরে।
এর সমাধান কী?
মেসতার দাগ থেকে রক্ষা পেতে একটু সময় নিজেকে দিতেই হবে। যাদের মেসতা আছে এবং “মেসতা না হওয়া থেকে” নিজেকে রক্ষা করতে চান, তাদের জন্য কিছু টিপস শেয়ার করছি। তাহলে দেখে নিন মেসতার সমস্যা সমাধান করণীয় কী! যাদের ইতিমধ্যে মেসতা আছে তাদের ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ অনুযায়ী চলার পরও কিছু বিষয় সবসময় মেনে চলতে হবে। আপনার মেসতা দেখা না দিলেও এই বেসিক স্টেপগুলো মেনে চললে মেসতা প্রিভেন্ট করতে পারবেন। যেমনঃ বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করা, সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা, সপ্তাহে একদিন বিশেষ যত্ন ইত্যাদি।
১। বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন
মেসতা কেন হয় সেটা তো জানলাম, এবার থেকে সকালে এবং রাতে দুই বেলা বেসিক স্কিন কেয়ার মেনে চলতে হবে। ভালোমত ক্লেনঞ্জার দিয়ে ফেইস ক্লিন করে নেয়া, টোনার, সিরাম, ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই এই প্রতিটি স্টেপই মেনে চলতে হবে। হ্যাঁ, এই বেসিক স্কিন কেয়ারই কিন্তু অনেক সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
ক) টোনার আপনার স্কিনের পি.এইচ ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে। সাথে পরবর্তী স্টেপগুলো যাতে ভালো কাজ করে এর জন্য টোনার ত্বককে প্রিপেয়ার করে।
খ) সিরামের ক্ষেত্রে ভিটামিন সি বা ভিটামিন এ সিলেক্ট করতে পারেন। ভিটামিন সি ডার্ক স্পট কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। আর ভিটামিন এ বা রেটিনল স্কিন সেলের টার্ন ওভার বাড়িয়ে দেয়, এতে উপরের পুরানো কোষ উঠে গিয়ে নতুন কোষ তৈরি হয়।
গ) ময়েশ্চারাইজারের ক্ষেত্রে বলবো স্কিনের পিগমেন্টেশন কমিয়ে স্কিনকে ব্রাইট করবে এমন প্রোড্যাক্ট বাছাই করুন। আর দিনের বেলা অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া মেলাসমার জন্য ক্রিমও রয়েছে। বাজারে মেলাসমাকে টার্গেট করে বিভিন্ন ময়েশ্চারাইজার বা ক্রিম রয়েছে যা এই ধরনের দাগ ছোপ কমাতে সাহায্য করে।
২। সান প্রটেকশন
সানস্ক্রিন নিয়ে আলাদা করে কথা বলতে চাই, কারণ এই সানস্ক্রিন ব্যবহার না করার কারণেই কিন্তু মেসতা দেখা দেয় খুব কম বয়সেই। সানস্ক্রিন ব্যবহার না করে বাহিরে গেলে সূর্যের ইউভি রে সরাসরি আমাদের স্কিনকে ড্যামেজ করে থাকে। আবার প্রচণ্ড হিটের সামনে গেলেও কিন্তু সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। তাই বলা হয়, দিনের বেলা সবসময় সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করুন। ঘরে থাকলেও সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হবে। আর সানস্ক্রিনের পাশাপাশি ছাতাও ব্যবহার করুন, আর পারলে ফুল স্লিভের কাপড় পরিধান করুন। এতে আপনি পুরোপুরি প্রটেক্টেড থাকতে পারবেন।
৩। ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি ঘরোয়া যত্ন
মেসতা বা মেলাসমার ট্রিটমেন্ট নেয়ার পাশাপাশি যদি ঘরোয়া যত্ন নেয়া হয়, তাহলে তাড়াতাড়ি বেনিফিটস পাওয়া যাবে। তাই সপ্তাহে একদিন ঘরোয়া মাস্ক ব্যবহার করুন।
- উপটান ত্বকে সান ড্যামেজ রিপেয়ার করতে হেল্প করে, সেই সাথে মেসতা প্রিভেন্ট করবে এবং স্কিন টাইট করতেও অনেক হেল্প করবে।
- মূলতানি মাটিও মেসতার দাগ কমাতে বেশ ভালো কাজ করে। সেই সাথে রোদের পোড়া দাগ রিপেয়ার করে থাকে।
কোন ন্যাচারাল উপাদানগুলো মেসতা কমাতে সাহায্য করবে?
কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করার আগে দেখে নেয়া দরকার, কোন উপাদানটি আপনার প্রবলেমকে টার্গেট করে কাজ করে। মেসতা কেন হয় সেটা জানা যেমন জরুরী, তেমনি ন্যাচারাল রেমেডিও জেনে নেওয়া দরকার। কোন ন্যাচারাল উপাদানগুলো মেসতা কমাতে সাহায্য করবে এটা অনেকেই জানতে চান। এখনই দেখে নিন তাহলে।
- অ্যালোভেরা জেল ডিপ পিগমেন্টেশন আর মেছতার দাগ কমায় লক্ষণীয়ভাবে।
- আরগান অয়েলে থাকা ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই ও ক্যারোটিনয়েডস একসাথে কাজ করে ধীরে ধীরে মেছতার দাগ দুর করে, সাথে সান ড্যামেজ রিপেয়ার করে।
- টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েলের হিলিং প্রোপার্টিজের কারণে এটি মেছতার দাগ কমায় সাথে ব্রণের সমস্যা দূর করে। যাদের ত্বক সেন্সিটিভ, তারা টি ট্রি অয়েলের সাথে ২-৩ ফোঁটা অন্য কোন তেল যেমন অলিভ অয়েল বা জোজোবা অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন।
- লেবুতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা স্কিন ড্যামেজ কমায় এবং স্কিন লাইটেনিংয়ে ভালো কাজ করে। তবে সরাসরি ফেইসে লেবু ইউজ করা যাবে না।
- টক দইতে ল্যাকটিক অ্যাসিড আছে। ল্যাকটিক অ্যাসিড আমাদের স্কিনের ডেড সেলস ক্লিন করে স্কিনকে ব্রাইট করে, মেসতার দাগ কমতে সাহায্য করবে।
- চালের গুঁড়াতে আছে প্যারা-অ্যামিনোবেঞ্জনিক অ্যাসিড (Para aminobenzonic acid), যা ত্বকের সমস্যায় খুব ভালো কাজ করে। আরও আছে এলানটোন (allantoin) নামের উপাদান রোদে পোড়া ত্বক রিপেয়ার করে ও মেসতার দাগ কমায়।
মেলাসমা পুরোপুরি রিমুভ করা সম্ভব?
মেসতা নিয়ে আমাদের কমন একটা প্রশ্ন রয়েছে, “মেসতা পার্মানেন্টলি গায়েব করা সম্ভব নাকি?” মেসতা বা মেলাসমা ঠিক করা সম্ভব কিন্তু অনেক কিছুর উপরি এটা নির্ভর করে। আপনার স্কিনে মেসতা কত ডিপলি বসে গিয়েছে তা আগে আপনাকে বুঝতে হবে। মেসতার রং দেখেই বুঝে নিয়ে পারেন সেটা, আর মেসতা রিমুভালে সময় দিতে হবে কেননা এটি দীর্ঘস্থায়ী ট্রিটমেন্ট। কারও তিন মাস বা তার বেশি ও লাগতে পারে। কিছু মানুষের জন্য তো বছরের পর বছর বা তাদের পুরো জীবন মেলাসমা থাকে এবং তা ট্রিটমেন্ট করেও দাগ যায় না। আবার অনেকেই এক্সট্রা যত্ন নেয়াতে খুব তাড়াতাড়ি ফল পেয়ে যায়। আবার অন্যান্য ব্যক্তিদের খুব অল্প সময়ের জন্য মেলাসমা হতে পারে, যেমন প্রেগনেন্সির সময়। আবার লাইফস্টাইল ও ফুড ইনটেকের উপরও স্কিন কন্ডিশন ডিপেন্ড করে।
মেলাসমা বা মেসতা থাকলে অনেকেই নিজের ত্বক নিয়ে কনফিডেন্ট ফিল করেন না। কিন্তু ঠিক উপাদান দিয়ে যত্ন নিয়ে আর সঠিক স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করে কিন্তু মেসতার দাগ কমিয়ে আনা সম্ভব। সেই সাথে ডাক্তারের সাজেশন মেনে চলবেন। সাজগোজে মেসতা রিমুভালের জন্য অনেকগুলো প্রোডাক্ট রয়েছে দেখতে পারেন। আর অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে আমার সবসময়ই ভরসা শপ.সাজগোজ.কম। নানারকম স্কিন ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন এখানে। অনলাইনে অর্ডার করে ঘরে বসেই প্রোডাক্ট হাতে পেয়ে যাই। তাছাড়া সাজগোজের দুইটা আউটলেট আছে, যেটা যমুনা ফিউচার পার্ক আর সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। তাহলে আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
ছবি- সাজগোজ, shopify.com