বেজ মেকআপ এর জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস কি? উত্তরটা হলো – ফাউন্ডেশন। যত সুন্দর করেই মেকআপ করি না কেন, ফাউন্ডেশন যদি স্কিন টোনের সাথে ম্যাচ না করে এবং স্কিনের টেক্সচারের সাথে না যায়, তাহলে আপনাকে ‘flawless’এর জায়গায় ‘awful’ দেখাতে কিন্তু আর সময় লাগবে না।
আজকে যে প্রোডাক্টটা নিয়ে লিখতে যাচ্ছি সেটা আমাদের দেশে এখনো খুব বেশি প্রচলিত হয়নি, মিলানি ব্র্যান্ডের ফাউন্ডেশন প্লাস কনসিলার টু ইন ওয়ান।
[picture]
আমার একনে-প্রোন স্কিন, বছরখানেক আগে ও ফুল অয়েলি টেক্সচার ছিল, কিন্তু এখন সময়ের ব্যবধানে কম্বিনেশন স্কিন হয়ে গিয়েছে। আমি মোটামুটি আমাদের দেশে অ্যাভেইলেবল বেশ অনেকগুলো ফাউন্ডেশনই ব্যবহার করেছি। ওয়েবে বেশ কিছুদিন ধরে মিলানি ফাউন্ডেশন এর বিজ্ঞাপন দেখে মনে হলো এটা একবার ইউজ করে দেখি কেমন! মিলানি একটি আমেরিকান ব্র্যান্ড। তো কিনে ফেললাম শেড নাম্বার – ০৩, light beige, এবং ব্যবহার করা শুরু করলাম।
প্যাকেজিং এবং পরিমাণ
বোতলটি বেশ সুন্দর বিজ আর কালচে রঙের মিশ্রণে কাঁচের তৈরি যার মুখে একটি পাম্প আছে ফাউন্ডেশন বের করার জন্য। আউটলুকটা আমার বেশ ভালো লেগেছে। প্যাকেজিং এ পরিমাণ ৩০ এম.এল.।বোতলের গায়ে লেখা আছে যে এটি মিডিয়াম থেকে ফুল কাভারেজ দেয়, অয়েল ফ্রি, সোয়েট (sweat) ফ্রি, লং ওয়্যার এবং ওয়াটার প্রুফ।
প্রোডাক্টটি ফুল কাভারেজ দেয়, বোতলের গায়ে লেখাই আছে যে এটি ফাউন্ডেশন প্লাস কনসিলার। টেক্সচারটা বেশ ক্রিমি, পাতলা লিকুইডনয়, এবং তুলনামূলক কিছুটা ভারী। যারা ফুল কাভারেজ চান তাদের জন্য বেশ ভালো একটি প্রোডাক্ট, কিন্তু যাদের স্কিনে তেমন কোন খুত নেই এবং বিবি/সিসি ক্রিম ব্যবহার করে অভ্যস্ত তাদের কাছে এটা ভালো নাও লাগতে পারে। পরিমাণে বেশ অল্পই লাগে এবং ভেজা বিউটি ব্লেন্ডার দিয়ে ব্লেন্ড করলে স্কিনের সাথে ভালোভাবেই ব্লেন্ড হয়ে যায় , কিন্তু ফাউন্ডেশন ব্লেন্ডিং ব্রাশ দিয়ে ব্লেন্ড করে আমার খুব একটা ভালো লাগেনি।
আমার স্কিনে বেশ কিছু পুরোনো পিম্পল মার্কস আছে এবং আমার আন্ডার আই ও কনসিলিং এর আওতায় পড়ে। আমি অন্যান্য ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে তারপর অবশ্যই কনসিলার ব্যবহার করি। কিন্তু এটা ব্যবহার করে আমার আলাদা করে কনসিলার ব্যবহার করতে হয়নি, আমি একবারই পুরো মুখে অ্যাপ্লাই করে ভেজা বিউটি ব্লেন্ডার ব্যবহার করে ব্লেন্ড করেছি। আমার একনে-প্রোন স্কিনে এটি স্যুট করেছে এবং নতুন করে কোন পিম্পল ওঠেনি। তো মিলানির এই প্রোডাক্টটি ব্যবহার করে আমার অবজারভেশনে যে যে দিকগুলো আমার চোখে পড়েছে সেগুলো হলো –
ভালো দিক যেগুলো চোখে পড়েছে
(১) বাজেট ফ্রেন্ডলি
(২) সুন্দর আউটলুক, আলাদা ঢাকনাসহ কাঁচের বোতলে আসে যার মুখে পাম্প আছে, ফাউন্ডেশন বের করা সহজ এবং নোংরা হবার সম্ভবনা কমএবং হাইজেনিক।
(৩) ফুল কাভারেজ দেয়, সত্যিই আলাদা করে কনসিলারব্যবহারের প্রয়োজন পড়েনি।
(৪) আমার একনে-প্রোন স্কিনে স্যুট করেছে। নতুন করে কোন একনেআমাকে গুড মর্নিং জানাতে আসেনি এখনো পর্যন্ত।
(৫) মোট ১৫টি শেইডে আসে এই প্রোডাক্টটি, শেইডের ভ্যারাইটি থাকায় আমাদের এশিয়ান স্কিন টোনের সাথেমানানসই শেইডটি খুঁজে পাওয়া তুলনামূলক সহজ।
(৬) বেশ সুন্দর করে ব্লেন্ড হয়, কেকি হয়ে থাকে না।
(৭) লং ওয়্যার, আমি প্রায় ৮ ঘণ্টা একটানা থেকেছি এটা ইউজ করে কোন মেজর প্রবলেম ছাড়াই।
(৮) ওয়াটার প্রুফ। কিছুদিন আগে বাসায় ফেরার পথে বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলাম কিছুটা, কিন্তু ফাউন্ডেশন ঠিকই ছিল।
ভালো লাগেনি যে দিকগুলো
(১) টেক্সচারটা তুলনামূলক কিছুটা ভারী (thick & creamy)।
(২) বোতলের গায়ে লেখা থাকলেও এটি পুরোপুরিভাবে সোয়েট (sweat) ফ্রি নয়। (৩) ফাউন্ডেশন ব্লেন্ডিং ব্রাশ ব্যবহারের চেয়ে ভেজা বিউটি ব্লেন্ডারে ভালো ব্লেন্ড হয় স্কিনে।
(৪) ৫-৬ ঘণ্টা পর আমার টি জোন অয়েলি হয়ে যায়।
সব মিলিয়ে আমার কাছে প্রোডাক্টটি ভালোই মনে হয়েছে, তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে যে, যাদের পুরোপুরি অয়েলি স্কিন, তাদের এটি ব্যবহার করার আগে ম্যাট প্রাইমার এবং এবং পরে ম্যাট সেটিং পাউডার আর ম্যাট ফিনিশ সেটিং স্প্রে ব্যবহার করলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে।
রেটিং এবং দরদাম
৫-৬ ঘণ্টা পর ‘টি জোন’ অয়েলি হবার কাহিনীটুকু বাদ দিলে আমার জন্য এটি মোটামুটি বেশ ভালোভাবেই কাজ করেছে। রেটিং যদি দিতে হয় আমি ব্যক্তিগতভাবে একে ৮/১০ দিবো। এর বর্তমান মার্কেট প্রাইস ১,২০০-১,৪০০/- টাকার ভিতরে।
যদি আমার মতো আপনার ও ডিফারেন্ট ফাউন্ডেশন ট্রাই করার fetish থাকে, তাহলে এটা ট্রাই করে দেখতে পারেন। আশা করি ভালোই লাগবে।
Stay Beautiful, Stay Gorgeous.
লিখেছেন- ফারহানা প্রীতি