দিন দিন একনে প্রবলেম বেড়ে যাচ্ছে বলে ময়েশ্চারাইজার সিলেকশন নিয়ে অনেকেই কনফিউশনে পড়ে যান। একনে প্রন স্কিনের যত্নে কোন ময়েশ্চারাইজার ভালো কাজ করবে সেটা নিয়ে সঠিক তথ্য জানা না থাকায় শেষ পর্যন্ত প্রোডাক্ট সিলেকশনে ভুল হয়ে যায়। যার কারণে সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। আজকে আপনাদের জানাবো একনে প্রন স্কিনের জন্য কীভাবে ময়েশ্চারাইজার সিলেক্ট করবেন সে সম্পর্কে।
একনে প্রন স্কিনের যত্নে ময়েশ্চারাইজার
‘একনে! এখন তো স্কিনে কোনোভাবেই ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করা যাবে না! এতে স্কিন আরও অয়েলি হয়ে যাবে। একনে প্রবলেম বাড়তেই থাকবে!’ আপনিও কি এমনটাই ভাবছেন? তাহলে ভুল ভাবছেন। সাধারণত অয়েলি স্কিনে একনে সমস্যা বেশি হয়। আর এ ধরনের স্কিনে যেহেতু তেল নিঃসরণ বেশি হয়, তাই অনেকেই ভাবেন এমন স্কিনে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। অথচ অয়েল ও ময়েশ্চারাইজার দুটো আলাদা বিষয়। স্কিনের সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে অতিরিক্ত সেবাম নিঃসরণ হওয়ার কারণে স্কিন অয়েলি হয়ে যায়। এই সেবামই ত্বককে বাইরের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে, যার কারণে স্কিন থাকে হেলদি। স্কিনের এই সুস্থতা ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন আর্দ্রতা বজায় রাখা। এই আর্দ্রতা ধরে রাখার কাজটাই করে ময়েশ্চারাইজার। তাই একনে প্রন বা অয়েলি স্কিনে ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করা মাস্ট।
শুধু অয়েলি স্কিনেই যে একনে প্রবলেম হয় তা কিন্তু নয়। ড্রাই স্কিনেও নানা কারণে ব্রণের সমস্যা হতে পারে। তাই ড্রাই স্কিন যেন ময়েশ্চারাইজড থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি।
ময়েশ্চারাইজার সিলেকশনে যা খেয়াল রাখবেন
সব ধরনের ময়েশ্চারাইজার একনে প্রন স্কিনে অ্যাপ্লাই করা যায় না। কিছু ইনগ্রেডিয়েন্ট আছে যেগুলো স্কিনে ইরিটেশন তৈরি করে। এতে একনের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। ময়েশ্চারাইজার কেনার সময় খেয়াল রাখবেন প্রোডাক্টের প্যাকেজিংএ এই কথাগুলো লেখা আছে কিনা-
- অয়েল ফ্রি
- নন-কমেডোজেনিক
- স্যুইটেবল ফর অল স্কিন টাইপ
উপাদান
যে উপাদানগুলো থাকলে ময়েশ্চারাইজার সিলেক্ট করবেন-
যেহেতু অয়েলি স্কিনে একনে প্রবলেম বেশি হয়, তাই এমন স্কিনের যত্নে এমন প্রোডাক্ট বেছে নিতে হবে যেগুলো অয়েল প্রোডিউস কম করে। একনে প্রন স্কিনের যত্নে ময়েশ্চারাইজার সিলেকশনে যেসব দিকে খেয়াল রাখবেন-
১) ওয়াটার বেইজড প্রোডাক্ট বেছে নিন। এতে স্কিনে গ্রিজিনেস ফিল হবে না। এই প্রোডাক্টগুলোতে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ও গ্লিসারিন থাকে, যা স্কিনের অয়েলিনেস কমায় এবং স্কিনকে রাখে হাইড্রেটেড।
২) স্যালিসাইলিক, গ্লাইকোলিক বা ল্যাকটিক অ্যাসিডযুক্ত প্রোডাক্ট ইউজ করুন। এই উপাদানগুলো এক্সফোলিয়েটর হিসেবেও কাজ করে। অয়েল কন্ট্রোল এবং একনে রিডিউস করতে হেল্প করে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড।
৩) একনে প্রন স্কিনের যত্নে বেছে নিন Dimethicone যুক্ত ময়েশ্চারাইজার। এটি সিলিকন বেইজড স্কিন প্রোটেকট্যান্ট। স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে এই উপাদানটি থাকার অর্থ হচ্ছে এর ব্যবহারে স্কিন সফট ও ময়েশ্চারাইজড থাকবে।
৪) লাইট টেক্সচারের জেল বেইজড ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন।
৫) দিনের বেলা এসপিএফ যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। নাইট স্কিন কেয়ার রুটিনে রাখুন হাইড্রেটিং ও নারিশিং ময়েশ্চারাইজার।
৬) দিনের বেলা বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করে নিন। নইলে শুধু ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করে স্কিনে তেমন কোনো বেনিফিট পাওয়া যাবে না।
যে উপাদানগুলো থাকলে ময়েশ্চারাইজার সিলেক্ট করবেন না-
একনে প্রন স্কিনের যত্নে ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করা ভালো হলেও কিছু ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহারে এমন স্কিনের ক্ষতি হতে পারে। যেমন-
- হেভি অয়েল, ওয়্যাক্স ও Petrolatum – এই ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো স্কিনের পোরস ক্লগ করতে পারে
- ফ্রেগ্রেন্স ও পারফিউম – এগুলো ব্যবহারে স্কিনে ইরিটেশন বা অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন হতে পারে
- প্যারাবেন – এই প্রিজারভেটিভগুলোর কারণেও স্কিনে অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন বা পোরস ক্লগ হতে পারে
বছরের কোন সময় কেমন ময়েশ্চারাইজার?
গ্রীষ্মকাল
গ্রীষ্মকাল মানেই গরম ও ঘামের সমস্যা। এ সময় যদি ক্রিমি বা হেভি লোশন জাতীয় ময়েশ্চারাইজার ইউজ করা হয় তাহলে এ সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাই এই সিজনে ইউজ করতে হবে ওয়াটার বা জেল বেইজড জাতীয় লাইট ময়েশ্চারাইজার। স্কিনে ইজিলি অ্যাবজর্ব হয়ে যায় বলে তেল চিটচিটেভাব থাকে না। ঘামের সমস্যাও কম হবে।
শীতকাল
উইন্টার সিজনে ইউজ করতে হবে নারিশিং এলিমেন্টসযুক্ত ডিপ ময়েশ্চারাইজার। এতে শীতের শুষ্ক আবহাওয়াতেও স্কিন ভালো থাকবে।
একনে প্রন স্কিনের জন্য কয়েকটি ময়েশ্চারাইজার আমি সাজেস্ট করছি-
Pond’s Super Light Gel Moisturiser
Groome Skin Regenerist Brightening & Moisturizing Cream
Simple Kind to Skin Hydrating Light Moisturiser
Neutrogena Hydro Boost Water Gel
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের সঠিক সময়
১) প্রতিবার ফেইস ক্লিন করার পরের সময়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। এ সময় প্রোডাক্টের কার্যকারিতা বেশি ভালোভাবে পাওয়া যাবে। এরপর অবশ্যই স্কিন টাইপ অনুযায়ী টোনার ইউজ করতে হবে।
২) বেটার রেজাল্টের জন্য অবশ্যই মর্নিং ও নাইট স্কিন কেয়ার রুটিনে ময়েশ্চারাইজার রাখতে হবে।
৩) ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাইয়ের সময় স্কিনে জোরে জোরে রাব করা যাবে না।
৪) বাইরে যাওয়ার আগে ফেইসে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই অথবা মেকআপ করা হয়। এ জন্য বাসায় ফিরে অবশ্যই আগে ডাবল ক্লেনজিং করে নিতে হবে। এরপর স্কিন টাইপ অনুযায়ী অ্যাপ্লাই করতে হবে ময়েশ্চারাইজার।
৫) উইন্টার সিজনে যাদের স্কিন ড্রাই হয়ে যায়, তাদের স্কিনে অন্যান্য প্রোডাক্ট ভালোভাবে বসে না বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। এজন্য ফেইস ভালোভাবে ক্লিন করে নিয়ে আগে ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করে পরে অন্য প্রোডাক্টস ব্যবহার করুন।
একনে প্রন স্কিনের যত্নে করণীয়
এতক্ষণ তো জানলাম একনে প্রন স্কিনের যত্নে ময়েশ্চারাইজার সিলেকশনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। কীভাবে এমন ত্বকের যত্ন নেয়া যায়, চলুন এ বিষয়ে এখন জেনে নেয়া যাক-
১) রেগুলার মর্নিং ও স্কিন কেয়ার রুটিনে ক্লেনজিং স্টেপটি অবশ্যই রাখতে হবে। অয়েলি বা একনে প্রন স্কিনের জন্য এমন ক্লেনজার বেছে নিন যেগুলোতে বেটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (BHA) রয়েছে। এছাড়া এমন ধরনের স্কিনের জন্য জেল বেইজড ক্লেনজার আরও একটি বেস্ট অপশন। জেল কনসিসটেন্সির এই ক্লেনজারগুলো স্কিনের এক্সেস সিবাম রিমুভ এবং পোরস ডিপলি ক্লিন করতে হেল্প করে।
২) ক্লেনজিং এর পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করতে হবে।
৩) একনে প্রন স্কিনের যত্নে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর করতে পারেন। বিগেইনার হিসেবে সপ্তাহে ১ দিন, এরপর স্যুট করে গেলে সপ্তাহে ২ দিন করা যায়। হার্শ বিডস যুক্ত এক্সফোলিয়েটর একনে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। সে কারণে মাইল্ড কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বেছে নিন।
৪) একনে প্রন স্কিন ভালো রাখার জন্য রেগুলার বেসিসে সিরাম ইউজ করলেও বেটার রেজাল্ট পাওয়া যাবে। এমন স্কিনের জন্য স্যালিসাইলিক অ্যাসিড যুক্ত সিরাম অথবা একনে ট্রিটমেন্ট সিরাম ইউজ করতে পারেন।
উইকলি স্কিন কেয়ার প্যাক
একনে রিমুভ করার জন্য ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টযুক্ত মাস্কও বেশ ভালো কাজ করে। এজন্য উইকলি স্কিন কেয়ার রুটিনে অ্যাড করতে পারেন Skin Cafe Acne Care Mask। একনে দূর করার জন্য এই মাস্কে আছে মুলতানি মাটি, নিম পাউডার, অরেঞ্জ পিল পাউডার, Kaolin Clay, হলুদ এর মতো বেনিফিসিয়াল ইনগ্রেডিয়েন্ট। ১ টেবিল চামচ মাস্ক এর সাথে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। ফেইস ও নেক এরিয়াতে অ্যাপ্লাই করে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। বেটার রেজাল্টের জন্য সপ্তাহে ২/৩ দিন প্যাকটি ইউজ করতে পারেন।
একনে প্রন স্কিনের যত্নে ময়েশ্চারাইজার কীভাবে সিলেক্ট করবেন এবং এমন স্কিনের যত্ন কীভাবে নিবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দিলাম। এখন নিশ্চয় এ ধরনের স্কিনের যত্ন নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ রিলেটেড অথেনটিক সব প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন সাজগোজে। সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ