শুষ্ক ত্বক মানে হল সেই ত্বক যা নিজে নিজের যত্ন নিতে পারে না, বাইরের পরিবেশ থেকে রক্ষা করতে পারে না। ত্বক শুষ্ক হলে ত্বকের বাইরের লেয়ারে খুব ছোট ছোট ফাটল দেখা দেয়। এই ফাটল দিয়ে ত্বকের প্রয়োজনীয় ময়েশ্চার বের হয়ে যায়। এই কারণে ত্বকে টানটান অনুভূতি হয়, ত্বক দেখতে ডাল লাগে, ইলাস্টিসিটি কমে যায়, ফ্লেকি প্যাচ, লালচে ভাব এসব দেখা যায়। এসব যদি পরিচিত মনে হয় তাহলে আপনার ত্বক শুষ্ক। শুষ্ক ত্বকের জন্য সকালবেলা অর্থাৎ দিনের শুরুতেই ত্বককে সারাদিনের জন্য প্রস্তুত করে নেয়া হলে তা সুরক্ষিত থাকে। চলুন দেখে নেওয়া যাক শুষ্ক ত্বকের যত্ন কীভাবে করবেন।
ত্বক পরিস্কার করা
ত্বকের যত্ন শুরু হয় ত্বককে পরিষ্কার করার মধ্য দিয়ে। শুষ্ক ত্বক পরিষ্কারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যেন ওভার ক্লেনজিং না করা হয়, কারণ তাতে ত্বকের ন্যাচারাল ময়েশ্চার চলে যায়। শুষ্ক ত্বকের ক্লেনজার হিসেবে বেছে নিতে হবে যেটি হবে খুব জেন্টেল ও হাইড্রেটিং। শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্লেনজার কেনার সময় এই বিষয় মাথায় রাখবেন। আর শুষ্ক ত্বকের জন্য অবশ্যই একটা নন ফোমি , অয়েল বেজড ক্রিমি টেক্সচারের ক্লেনজার বেছে নিবেন। এই ধরনের ক্লেনজার আপনার ত্বকের আউটার লেয়ারকে ঠিক রেখে ত্বকের ভেতরের ইম্পিউরিটিকে বের করে আনবে। অনেকে শুষ্ক ত্বকে নিয়মিত এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করেন না, এতে করে স্কিন দ্রুত ফ্লেকি এবং প্যাচি দেখায়। শুষ্ক ত্বকে সপ্তাহে অন্তত একবার AHA আছে এমন এক্সফলিয়েটর ব্যবহার করা উচিত।
হাইড্রেশনের যোগান দেয়া
ত্বকের হাইড্রেশন লেভেল ঠিক রাখতে কয়েকটি ধাপ মেনে চলতে হয়। এগুলো একে একে নিচে আলোচনা করা হল।
টোনার
ত্বক পরিষ্কারের পরে ড্যাম্প থাকা অবস্থাতেই প্রয়োজনীয় হাইড্রেশন যোগান নিশ্চিত করে সেটাকে ত্বকের মধ্যেই লক করে দিতে হবে। এর জন্যে বেস্ট আইডিয়া হল একটা ভালো ফেইস মিস্ট বা টোনার ব্যবহার করা। এটা ব্যবহার করবেন সিরাম বা ময়েশ্চারাইজার লাগানোর আগেই। এটি হবে আপনার ময়েশ্চারাইজেশন এর প্রথম ধাপ যেটা আপনার ত্বকের হাইড্রেশন প্ল্যানকে আরও বেটার করবে। টোনার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অ্যাসিড বেজড টোনার ব্যবহার না করে সেরামাইড আছে এমন টোনার ব্যবহার করবেন।
সিরাম
শুষ্ক ত্বকের জন্য সবচেয়ে বেস্ট অপশন হল ভিটামিন সি সিরাম। এটাকে যদি আরেকটু কার্যকরী করতে চান তাহলে ভিটামিন সি সিরামের উপরে হায়ালুরনিক অ্যাসিড দিয়ে লেয়ার তৈরি করে নিন। এতে করে লম্বা সময় ধরে ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকবে, ফাইনলাইন ও রিংকেল দেরিতে আসবে।
ময়েশ্চারাইজার
হাইড্রেশনের ফাইনাল ধাপে আসে ময়েশ্চারাইজার। এটা সিরামকে ত্বকে লক করে দেয়। পরিবেশ বুঝে আপনি SPF যুক্ত একটা ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে পারেন, আবার চাইলে ময়েশ্চারাইজারের পরে আলাদাভাবেও সানস্ক্রিন লাগাতে পারেন। শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার খুঁজতে অবশ্যই সেরামাইড, হাইয়ালুরনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন ও নিয়াসিনামাইড আছে এমন ময়েশ্চারাইজার খুঁজে বের করুন।
আইক্রিম
আপনার ত্বক শুষ্ক মানে হল মুখের তুলনায় চোখের চারপাশের এরিয়া আরও বেশি শুষ্ক। মুখে লাগানোর ময়েশ্চারাইজার এই এরিয়ার জন্যে যথেষ্ট না। আর এই এরিয়াতে ফাইনলাইন ও রিংকেল সবার আগে দেখা যায়। তাই সকাল সকাল আই এরিয়াতে একটা ভালো আইক্রিম লাগিয়ে নিলে এই এরিয়ার ফাইনলাইনস ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব।
ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করা
সবকিছু নিশ্চিত করার পর সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। এটা ত্বক শুষ্ক হোক বা না হোক সবক্ষেত্রেই লাগাতে হবে। প্রোপার সান প্রটেকশন দেয়া হলে ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির ড্যামাজ থেকে রক্ষা করা যায় এবং ত্বক হেলদি থাকে। অনেকে SPF যুক্ত একটা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে কাজ শেষ করে ফেলেন, কিন্তু এটা আসলে খুব বেশি কার্যকরি উপায় না। ত্বককে সান ড্যামাজ থেকে রক্ষা করতে চাইলে আলাদা ভাবে সানস্ক্রিন লাগানো জরুরী। এক্ষেত্রে কেমিক্যাল বা ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন। সানস্ক্রিন বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন সেটা যেন SPF ৫০ এর নিচে না হয়। আর সানস্ক্রিন শুধু মুখে লাগালেই হবেনা, ঘাড় এবং গলাতেও লাগাতে হবে।
শুষ্ক ত্বকের সার্বিক যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়
-
মুখ পরিষ্কারের সময় গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না। এতে ত্বকের ন্যাচারাল অয়েল ব্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যায়। খুব প্রয়োজন হলে হালকা বা উষ্ণ গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন।
-
মুখ ভেজা বা আদ্র থাকতেই ময়েশ্চারাইজার লাগান, পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না।
- যেসব প্রোডাক্ট অ্যালকোহল আছে, সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
শুষ্ক ত্বকের জন্য দরকার একটু বাড়তি যত্ন, ব্যস আর কিছুই না। সকালে ও রাতে দুইবেলাতেই রুটিন মেইনটেইন করে স্কিনকেয়ার করলে স্কিন থাকবে হেলদি ও গ্লোয়ি। স্কিনকেয়ার করতে অবশ্যই অথেনটিক প্রোডাক্ট চুজ করুন। তাহলে আজ এই পর্যন্তই। অনলাইনে অথেনটিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবিঃ সাজগোজ।