মায়ের যত্ন | বাচ্চা হওয়ার পর সেলফকেয়ার কিভাবে করবেন?

মায়ের যত্ন | বাচ্চা হওয়ার পর সেলফকেয়ার কিভাবে করবেন?

মায়ের যত্ন পাচ্ছে নবজাতক

মা হওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতিগুলোর মধ্যে একটি। এই মাতৃত্বের জন্য একজন নারীকে দীর্ঘ ১০ মাস এক নাজুক শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মা হওয়ার পরবর্তী কয়েক মাস বা কয়েক বছর পর্যন্ত চলে এই টানাপোড়েন। কিন্তু মা হওয়া মানেই যে পুরোনো “আমি” কে হারিয়ে ফেলা তা কিন্তু নয়। সন্তান জন্মের পর নবজাতকের প্রতি সমস্ত মনোযোগ ও যত্ন নেয়ার ফলে নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া হয় কম। অথচ মায়ের যত্ন নেয়াটাও অনেক জরুরি। তাহলে চলুন দেখা যাক মা হবার জন্য কী কী পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় ও কিভাবে নিজের যত্ন নেয়া উচিত সে সম্পর্কে!

একজন মেয়ে থেকে মা হবার পথে পরিবর্তনসমূহ

গর্ভধারণ থেকে শুরু করে প্রসব পরবর্তী সময়গুলোতে একজন নারীর অনেক মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন হয়। বিশেষ করে ত্বক, স্বাস্থ্য ও চুলের ক্ষেত্রে অপরিমেয় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এছাড়া ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যাতো আছেই।গর্ভাবস্থায় ওজন বাড়াটাই স্বাভাবিক। প্রসব পরবর্তী সময়ে যেহেতু মা শিশুকে স্তন্যপান করান সেহেতু তার খুব বেশি খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করাও উচিত না। এসময়ে একজন নারীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্যালরিযুক্ত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন।বিশেষজ্ঞদের মতে- “সন্তান জন্মের পর মা আবার আগের স্বাভাবিক ওজন ফিরে পেতে পারেন, যদি কিছু ব্যাপারে খেয়াল রাখা হয়।” শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য মাকে বেশি করে খেতে হবে এটা যেমন ঠিক, তেমনি খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া না হয়। সেই সাথে মাকে স্বাভাবিক কাজকর্মও করে যেতে হবে।

প্রসবের পর কিছু সাধারণ ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন-

১) ফাটা দাগ

মায়ের পেটের স্ট্রেচ মার্ক - shajgoj.com

ওজন বৃদ্ধির কারণে প্রসবের পর মহিলাদের শরীরের অনেক অংশে বিশেষ করে পেটে প্রসারণ চিহ্ন বা ফাটা দাগ দেখা দেয়। এ নিয়ে প্রায় সব মা-ই অস্বস্তিতে ভুগেন।

২) চোখের নীচে ফোলাভাব ও কালি পড়া

শিশু জন্মের পর হরমোনের পরিবর্তন এবং ঘুমের অভাবের ফলে চোখের নীচে ফোলাভাব ও কালো দাগ দেখা দেয়। প্রসব পরবর্তীতে যে ক্লান্তি থাকে যা চোখ প্রকাশ করে। আর শিশুকে খাওয়ানোর জন্য বার বার জেগে ওঠার কারণে কালো দাগ পড়ে যায়।

৩) ব্রণের সমস্যা

গর্ভাবস্থার সময় বা পরে শরীরে উচ্চ প্রোজেস্টেরনের মাত্রা ব্রণ তৈরি করতে পারে।

৪) মানসিক অবসাদ

সন্তান জন্মের পর অনেক মায়েরাই মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পরেন। একে তো নিজের শারীরিক পরিবর্তন তার সাথে পুরোনো রুটিন পরিবর্তন আর বাড়ির সবার বাচ্চার প্রতি মনোযোগের কারণে নতুন মায়ের প্রতি অমনোযোগ সব মিলিয়ে মায়েরা অবসাদে ভুগতে থাকেন।

মায়ের যত্ন যেভাবে নেয়া যাবে

একজন মা চাইলেই খুব সহজে ফিরে পেতে পারেন আগের মতো ফিটনেস। প্রয়োজন নিজের প্রতি সামান্য যত্নশীল হলেই। কিভাবে চলুন দেখে নেই তবে-

১) স্ট্রেচ মার্ক দূরীকরণ

পেটে প্রসারণ চিহ্ন বা ফাটা দাগ দূর করার জন্য অলিভ অয়েলের তুলনা হয় না। কোনো ঝামেলা ছাড়াই অল্প সময়ে দূর করা যাবে এই দাগ। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে দাগের ওপর অলিভ অয়েল লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন এবং সকালে গোসল করে ফেলুন। এতে ত্বক থাকবে মসৃণ। দেখবেন কিছুদিন পর দাগ হালকা হওয়া শুরু হয়েছে। অ্যান্টি স্ট্রেচ মার্ক ক্রিম ব্যবহার করলেও ভালো ফল পাবেন। এছাড়াও পেটের দাগ দূর করার আরো নানা রকম ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে।

২)  হালকা কিছু ব্যায়াম করুন

নরমাল ডেলিভারি হলে অন্তত দেড় মাস এবং সিজারিয়ান হলে অন্তত তিন মাস থেকে ছয় মাস কোন প্রকার ভারী ব্যায়াম করা উচিত না। কিন্তু প্রতিদিন হাঁটা এবং ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করাটাকে ইদানিং চিকিৎসকরা উৎসাহ দিয়ে থাকেন। এই হাঁটাহাঁটি শুরু করা যায় একেবারে ৩/৪ সপ্তাহ পর থেকেই। তলপেটের চামড়া, পেশি ও অঙ্গগুলোকে পুনরায় টাইট করার জন্য পেলভিক এক্সারসাইজও শুরু করতে হবে একবারে প্রথম দিকেই।

৩) নিয়মিত ব্রেস্ট ফিডিং করান

মায়ের ক্যালরি খরচে ব্রেস্ট ফিডিং - shajgoj.com

ব্রেস্ট ফিডিং বা স্তন্যপান করানোর মাধ্যমে একজন মা প্রতিদিন প্রচুর ক্যালরি খরচ করেন। সত্যিকার অর্থে ব্রেস্ট ফিডিং-ই হচ্ছে মায়ের ওজন কমানোর সবচেয়ে প্রথম ও ভালো পদ্ধতি। ব্রেস্ট ফিডিং শুধু শিশুর জন্যই যে দরকার তা নয়, মায়ের হরমোনাল ও মানসিক শারীরিক পরিবর্তনের জন্যও এটি সহায়ক।

৪) ত্বক ও চুলের যত্ন

প্রচুর পানি পান করুন। এতে ত্বক হাইড্রেটেড থাকবে এবং ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসবে। সময়মতো ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস নতুন মায়ের ত্বক ও শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের তারতম্যের কারণে মুখ সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বাদামী বা কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে। এগুলোকে মেলাজমা বা মেছতা বলে। গর্ভাবস্থার পর এই হরমোন ধীরে ধীরে হ্রাস পায় যার কারণে দাগগুলোও ধীরে ধীরে মুছে যায়। ব্রণের জন্য ভালো ক্লেনজার ব্যবহার করুন ও মুখ পরিষ্কার রাখুন। আর সবসময় সানস্ক্রিন ব্যবহারতো অবশ্যই করতে হবে। এছাড়াও সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খান। সুষম খাবার খাওয়ার পাশাপাশি চুলের যত্নও নিতে হবে। ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ভিটামিন-ই, আইনোসিটোল, জিংক, বায়োটিন ও কো-এনজাইম কিউ-১০ চুলের উপকারী বন্ধু।

৫) যা আপনার পছন্দ তাই পরবেন

সন্তান জন্মের পর শারীরিক পরিবির্তন ও মুটিয়ে যাওয়ার কারণে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে মায়েরা হীনমন্যতায় ভুগেন। ভাবেন কোন পোশাকেই তাদের মানবে না। এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নিজের যা পছন্দ তাই পরবেন। নিজের পছন্দের পোশাকে নিজেকে সাজান, এতে করে মন ভালো থাকবে। নিজের পছন্দ মতো বই পড়ুন, গানও শুনতে পারেন। একজন নতুন মায়ের মন ফুরফুরে থাকলে সন্তানের উপরও ভালো প্রভাব পড়ে।

৬) অন্য মায়েদের সাথে তুলনা বন্ধ করুন

পাশের বাড়ির ভাবী সন্তান জন্ম দেয়ার পরও কী সুন্দর শরীর ফিট রেখেছে বা ত্বক কত সুন্দর, কোন পরিবর্তন হয় নি, অনেক সুন্দর দেখায় তাকে অথচ আমি কেন এত মোটা হয়ে গেলাম, আমার ত্বক কেন উজ্জ্বলতা হারালো-এসব তুলনা বন্ধ করুন। ঐ মানুষটা আর আপনিতো এক না, দু’জনেই আলাদা দুটো মানুষ। দু’জনের স্বভাব, ব্যক্তিত্ব, রুচি, মানসিকতা সব আলাদা। কাজেই কেন আপনি অন্য মায়েদের সাথে নিজেকে তুলনা করবেন? নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্য আবার কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় আর ফিট হওয়া যায় সেইভাবে নিজের যত্ন নিন।

৭) পজেটিভ চিন্তা করুন

মায়ের মানসিক যত্নে পজিটিভ চিন্তা - shajgoj.com

নিজেকে নিয়ে পজেটিভ চিন্তা করুন। এতে আপনার, আপনার সন্তান এবং পরিবার সব কিছুতেই ভালো প্রভাব পরবে। সন্তান ধারন থেকে জন্ম দেয়ার পর আপনাকে যেসব সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে হয় এগুলো সব সাময়িক সমস্যা। সময়ের সাথে সাথে আর আপনার চেষ্টায় সব আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। এই পজেটিভ চিন্তা যদি সবসময়  মাথায় রেখে চলেন তাহলে আপনি দ্রুত আপনার আগের ফিটনেস ফিরে পাবেন।

আশা করি লেখাটি সবার ভালো লাগবে। মায়েদেরও অধিকার রয়েছে নিজের জন্য একটু ভাবা। এতে কেউ স্বার্থপর হয়ে যায় না বরং মায়ের মানসিক ও শারীরিক উভয় শক্তিই দৃঢ় হয়। আর এই শক্তিই তাকে করে তোলে একজন মহীয়সী নারী। প্রসব পরবর্তীকালীন কোন সমস্যাই যে স্থায়ী নয় এটা মনে রাখলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আজ এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!

আর হ্যাঁ, নিজের যত্নে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে মায়েরা তা কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে আর সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকে যা সীমান্ত স্কয়ার ও যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত।

SHOP AT SHAJGOJ

    ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক

    43 I like it
    6 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort