বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় তাই আমরা ঘরেই অবস্থান করছি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক আগে থেকেই বন্ধ। কিন্তু কতো দিন আর দেশের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা যায়! তাই এখন ঘরে বসেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস শুরু হয়েছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, অনেক স্কুল-কলেজেও অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছে। কোভিড-১৯ এর এই ভয়াবহ সময়ে যেহেতু আমরা এই প্রথম এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি, তাই পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে, অনলাইন ক্লাস এটিকেট বা শিষ্টাচার সম্পর্কে অনেকেই জানি না। আজ তাই আপনাদের সামনে তুলে ধরছি অনলাইন ক্লাসের শিষ্টাচার বিষয়টি। চলুন তবে কথা না বাড়িয়ে এবার শুরু করি!
অনলাইন ক্লাস এটিকেট নিয়ে কিছু কথা
অনলাইন ক্লাস শুনেই তাড়াহুড়ো করে ল্যাপটপ বা ফোনে ঝাপ দেয়ার আগে, আমাদের আগে এর শিষ্টাচার সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত। যদিও বেশিরভাগই আমাদের কমন সেন্স-এ থাকার কথা কিন্তু, রেগ্যুলার অভ্যাস না থাকায়, এ ব্যাপারে সতর্ক না হলে, অজান্তেই কিছু ভুল হয়ে যেতে পারে। তাই, অনলাইন ক্লাস এটিকেট নিয়ে নিচে তুলে ধরা হলো-
১) পোশাক
প্রথমেই অনলাইন ক্লাস এর কথা চিন্তা করলে আমরা রাস্তার যানজট আর প্রতিদিন ব্যস্ত হয়ে রেডি হবার কথা ভেবে নিশ্চিন্ত হবো। তাই না? কিন্তু যানজটের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললেও অ্যাটায়ার বা পোশাকের কথা ফেলে দেয়া যাবে না মোটেও। ঘরে বসে ক্লাস করলেও, আপনাকে অনলাইন ক্লাসের জন্য ফরমালিটি মেনে চলতে হবে। এতে অনলাইন ক্লাসের প্রতি আপনার গুরুত্ব কতটুকু তা প্রকাশ পায়। তাই অন্তত যেটুকু স্ক্রিনে দেখা যাবে সেটুকু যেন পরিপাটি দেখা যায়। তবে, আপনার ক্লাস যদি ভিডিও না হয়ে অডিও নির্ভর হয়, সেক্ষেত্রে এই এটিকেটটি বাদ দিতে পারেন।
২) ক্লাসের আগেই টুলস ব্যবহার জানা
“ক্লাস যখন হবে তখন ভেবে দেখবো“- এই বলে অনলাইন টুলস সম্পর্কে ভালো মতো না জানলে পরে ক্লাস টাইমে উপস্থিত হতে দেড়ি হয়ে যায়। তাই, ক্লাস শুরুর আগেই সেই টুলস অর্থাৎ অ্যাপস সম্পর্কে ধারণা নিয়ে রাখা দরকার। সতর্ক না থাকলে এবং এই সকল টুলসের ব্যবহার না জানার কারণে অনেকেই ভুল বশত ক্লাস চলাকালীন শিক্ষককে মিউট করে দিতে পারে, যা খুবই অসম্মানজনক হবে। তাই এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে টুলস সম্পর্কে জানুন। সাধারণত, জুম, সিসকো ওয়েবএক্স, গুগল মিট অ্যাপগুলো অনলাইন ক্লাসের জন্য জনপ্রিয়।
৩) ক্লাসের পরিবেশ
আপনি বাসায় বসে ক্লাস করছেন বলে কি ক্লাসের পরিবেশ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না? উঁহু, এমন হলে তা আপনার ভুল ধারণা। বরং বাসায় বসে ক্লাস করার সময় আপনাকে অনেক বেশি সিরিয়াস হতে হবে। আপনার ব্যক্তিগত জীবনের চিত্র ক্লাস টাইমে যতটা কম পারা যায় শেয়ার করা ভালো। আর ক্লাস চলার সময় এমন জায়গা বেছে নেয়া ভালো, যেখানে বেশি শব্দ হবে না, আর ব্যাকগ্রাউন্ড যেন প্লেন থাকে তেমন। যদি আপনার বাসার আশেপাশের শব্দ কন্ট্রোল করা সম্ভব না হয়, তবে নিজেকে মিউট করে রাখা ভালো। যখন কোনো প্রশ্ন করা দরকার বা ডিসকাশন প্রয়োজন, তখন আনমিউট করে আপনার কথা বলে নিবেন।
৪) অনলাইন ক্লাস চলাকালীন অন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার
যখন আপনি অনলাইন ক্লাস করবেন, তখন হয়তো পাশে অন্য একটি ট্যাব খুলে কিংবা স্মার্ট ফোনটি বারবার চেক করে আপনার সোস্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে ইচ্ছা করবে। অথচ এটা একেবারেই উচিত নয়। পরবর্তীতে আপনিই লেকচার মিস হওয়াতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এছাড়া, আপনার শিক্ষকের কথা মনোযোগ দিয়ে না শোনাটাও কিন্তু সাধারণ শিষ্টাচারের বহির্ভূত।
৫) সময়ানুবর্তী হওয়া
বাড়িতে বসে ক্লাস করলেও সময়ানুবর্তী হতে পারে না অনেকেই। আসবো, বসবো করে অনেকেই নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ক্লাস শুরুর পরে অনলাইন ক্লাসে অ্যাটেন্ড করেন। এটা একদম উচিত নয়। কারণ, এতে করে আপনি ক্লাসের বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন, অন্যদের কাছে যা বিরক্তিকর হতে পারে। তাই, সময়মতো ক্লাস অ্যাটেন্ড করা জরুরি তা মাথায় রাখবেন আর অনলাইন ক্লাসে যেসকল অ্যাসাইনমেন্ট বা বাড়ির কাজ দেয়া হয়, তাও সময়মতো সাবমিট করবেন।
৬) রেগ্যুলার ক্লাসরুম এটিকেট ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহন
অনলাইনে ক্লাস করছেন বলে রেগ্যুলার ক্লাসরুম এটিকেট বাদ দিয়ে, যেমন মন চাইবে, শুয়ে-বসে খাটে হেলান দিয়ে ক্লাস করবেন, তা একেবারেই কাম্য নয়। আপনি হয়তো বন্ধুদের সাথে পাশাপাশি বসে ক্লাস করবেন না, তবে একসাথেই তো ক্লাস করবেন। তাই, ক্লাসের পরিবেশ ঠিক রাখাটা আপনার দায়িত্ব। আপনি পড়ার টেবিলে অনলাইন ক্লাস করুন অথবা সোফায় নয়তো ডাইনিং টেবিলের যেদিকে দেয়াল আছে সেদিকে। আর অবশ্যই সিনসিয়ারলি অনলাইন ক্লাস অ্যাটেন্ড করা উচিত। সাথে খাতা-কলম রাখবেন অবশ্যই। এছাড়াও, ক্লাস মিস করা একদম ঠিক নয়। মনে রাখবেন, শিক্ষকরা আপনাদের জন্যই ক্লাস নিচ্ছেন। তাদের যথাযথ সম্মান দেয়া আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
শেষ করার আগে অনুরোধ করছি, অনলাইন ক্লাস এটিকেট মেনে চলার জন্য। এই অভ্যাসগুলো ভবিষ্যতে আমাদের কাজে দিবে। শিক্ষা জীবন শেষে যখন আপনি চাকরি কিংবা ব্যবসায় করবেন, তখন আপনাকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘরে বসেই হয়তো ইম্পর্টেন্ট অফিসিয়াল মিটিং করতে হতে পারে। এখন যদি অনলাইন ক্লাসের এই এটিকেটগুলো অভ্যাসে নিয়ে আসেন তবে আপনার ভবিষ্যতের জন্যই ভালো হবে। সবাই জন্য শুভ কামনা রইলো। ভালো থাকবেন সবাই।
ছবি- সংগৃহীত: ইউসি.ডেভিস.এডু; সাটারস্টক