ডিটক্স ড্রিংকস বা ডিটক্স ওয়াটার, স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের কাছে এই নামটি বেশ পরিচিত। ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে প্রাণবন্ত রাখতে অনেকেরই প্রথম পছন্দ ডিটক্স ড্রিংকস। গরমে হাইড্রেটেড ও ফিট থাকতে বিভিন্ন ফল বা সবজি দিয়ে এটি নিজেই বানিয়ে নিন। বাইরে থেকে কেনা প্যাকেটজাত জুসের থেকে এই ডিটক্স ড্রিংকস অনেক বেশি উপকারী। আজকের ফিচারটি সামার স্পেশাল ডিটক্স ড্রিংকস এর রেসিপি নিয়ে। চলুন তাহলে দেখে নেই!
এই জিনিসটা আসলে কী?
বিষয়টা খুবই সহজ। এক কথায় বলতে গেলে, শরীরের ভেতরে থাকা সব দূষিত উপাদান বের করে দেওয়ার জন্যই ডিটক্স ওয়াটার এর ব্যবহার। কোনো ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া বানিয়ে নেওয়া যায় ডিটক্স ড্রিংকস। এক্ষেত্রে পানি, বিভিন্ন ধরনের ফল, পুদিনা পাতা, আদা এই ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়। তবে কিছুক্ষেত্রে সবজিও ব্যবহার করা হয়। এগুলোর বিভিন্ন ধরনের হেলথ বেনিফিটস আছে।
ডিটক্স ড্রিংকস বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে এটি খুব দ্রুত রেডি করা যায়। দেখে নিন এমনই কিছু ডিটক্স ড্রিংকস এর প্রস্তুত প্রণালী।
১) লেবু-পুদিনার ডিটক্স ওয়াটার
সবচেয়ে সহজ উপায়ে ডিটক্স ওয়াটার বানিয়ে নিন লেবু আর পুদিনা পাতা দিয়ে। আর যদি সম্ভব হয় তবে বাড়তি স্বাদের জন্য কমলালেবু, শসা কুচি, আনারস ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারণত সকালে নাশতার টেবিলে এই পানীয় রাখার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। এতে করে শরীরের বাড়তি ওজন ঝড়িয়ে ফেলাটাও অনেকটা সহজ হবে। নরমাল পানিতে সব উপকরণ অন্তত ত্রিশ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর সেই পানি ছেঁকে নিলেই পেয়ে যাবেন কাঙ্খিত ডিটক্স ওয়াটার। সকালবেলা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে দিন শুরুর জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় এটি।
২) ডাবের পানি সাথে লেবু আর পুদিনা পাতা
সেই লেবু আর পুদিনা পাতা দিয়েই আরেকটি রিফ্রেশিং ডিটক্স ড্রিংক বানিয়ে নেওয়া যায়। অবশ্য পানি না, এবার আপনার দরকার ডাবের পানি। আমাদের দেশে ডাব সব সময়ই পাওয়া যায়। এটি সারদিনের ক্লান্তি যেমন দূর করে, তেমনি শরীরের পানির অভাবও পূরণ করে। ডাবের পানি সাথে সামান্য লেবুর রস আর পুদিনা পাতা কুঁচি অ্যাড করলে তৈরি হবে দারুণ এক পানীয়। এই ডিটক্স ড্রিংকে আপনার হজমশক্তি যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা।
৩) কমলা আর গাজর দিয়ে ডিটক্স ড্রিংক
কমলালেবু আমাদের সবারই পছন্দের ফল। কমলা আর গাজর দিয়ে ঝটপট বানিয়ে নিতে পারেন ডিটক্স ড্রিংক। দুটো উপাদানই ভিটামিন সি তে পরিপূর্ণ। সঙ্গে ভিটামিন বি, ভিটামিন এ ও অন্যান্য পুষ্টিগুণে ভরপুর। প্রথমে জুসারের সাহায্যে আলাদাভাবে গাজর আর কমলার জুস তৈরি করে নিন। এবার সামান্য আদা দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে ছেঁকে নিন। মাত্র কয়েক মিনিটে তৈরি হয়ে যাবে আপনার ডিটক্স ড্রিংক। এই পানীয়টি ছোট-বড় সবার জন্যই পারফেক্ট। গরমে হাইড্রেটেড থাকতে ও রিফ্রেশিং ফিলিং পেতে বরফ দিয়েও পান করতে পারেন।
৪) শসার ডিটক্স ড্রিংক
সাধারণত শসা আর পুদিনা পাতা, এই দুটো উপকরণ আমাদের কাছে সালাদ হিসেবেই বেশি পরিচিত। আর এই উপাদানগুলো দিয়ে খুব সহজে ডিটক্স ওয়াটার বানিয়ে নেওয়া যায়। শসা আর পুদিনা পাতা পরিমাণমতো পানিতে ব্লেন্ড করে ছেঁকে নিন। পরে তাতে সামান্য গোল মরিচ গুঁড়া ও লেবুর রস ছিটিয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে শসা-পুদিনার হেলদি ড্রিংক।
৫) কলা দিয়ে ডিটক্স স্মুদি
এবার আসি মজাদার একটি ডিটক্স স্মুদির রেসিপিতে। একটি কলা, ৩/৪টি খেজুর, সামান্য আদা কুঁচি, মাল্টা বা লেবুর রস ও চিয়া বীজ পরিমাণমতো পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। রেডি হয়ে গেলো হেলদি ও টেস্টি বানানা স্মুদি, যা নিমিষেই শরীরে এনার্জি যোগাবে। এতে বাড়তি কোনো চিনি যোগ হচ্ছে না, তাই যারা ডায়েট কন্ট্রোল করছেন তাদের জন্য এটি একদম পারফেক্ট।
৬) লিচু-আদার ডিটক্স ড্রিংক
ডিটক্স ড্রিংকসের ক্ষেত্রে যেকোনো মৌসুমী ফল ব্যবহার করা যেতে পারে। সামারে লিচু দিয়ে দারুণ মজাদার পানীয় বানিয়ে নিন। কুঁচি করে কাটা আদা, অর্ধেক লেবুর রস আর ১ কাপ লিচুর জুস একই পাত্রে রাখুন। তাতে বরফকিছু আর সামান্য লবণ দিন। এরপর সরাসরি ব্লেন্ড করুন। রিফ্রেশিং ফিলিং পাবেন প্রতিটা সিপে, একবার বানিয়ে টেস্ট করেই দেখুন!
গরমে হাইড্রেটেড ও ফিট থাকতে এই হেলদি ডিটক্স ড্রিংকগুলো ট্রাই করুন। এছাড়াও বিভিন্ন ফল, মসলা, সবজি এগুলো দিয়ে আপনার পছন্দ অনুযায়ী ডিটক্স ড্রিংকস বানিয়ে নিতে পারেন। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এসব পানীয় শরীরের বাড়তি মেদ ঝড়ানো, খাবারের রুচি এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দারুণ সহায়ক। সুযোগ পেলে হাতের কাছে থাকা উপাদান দিয়ে নিজেই তৈরি করুন ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের ডিটক্স।
ছবি- সাটারস্টক