আয়নায় ফাইন লাইনস কিংবা স্মাইল লাইন দেখে খুব চিন্তিত? মনে হচ্ছে বয়সের ছাপ পড়া শুরু হয়ে গেছে! চিন্তারই কথা! রোদ, দূষণ, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অপর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ আমাদের ত্বকের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অনেকের স্কিনে তো বয়স বাড়ার আগেই পড়া শুরু করেছে বয়সের ছাপ! বয়স বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে বলিরেখা পড়াটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু অল্প বয়সে যদি স্কিনে বলিরেখা দেখা দেয়, এটা অব্যশই চিন্তার বিষয়। না জেনে বুঝেই অনেকেই কিছু টোটকা ফলো করে ত্বকের ক্ষতি করে ফেলছেন, যা আসলে শুধুই মিথস। আজকে জানবো বয়সের ছাপ দূর করতে ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কে।
বয়সের ছাপ দূর করার কিছু ভুল ধারণা
এজিং সাইনস দেখা গেলে তারপর স্কিনকেয়ার শুরু করবো
আপনি কি জানেন বয়সের ছাপ পড়ার প্রথম লক্ষণটি কি? ডার্ক প্যাচেস, স্মাইল লাইনে ফাইন লাইনস অথবা কপালে বলিরেখা। একেকজনের ক্ষেত্রে লক্ষণ একেক রকম। ড্রাই স্কিনে একটু তাড়াতাড়ি এই বিষয়গুলো চলে আসে। রিংকেলস পড়লে তারপর ব্যবহার করা শুরু করি অ্যান্টি এজিং ক্রিম! এটাই ভুল! কথায় আছে না, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। বয়স ২২-২৫ থেকেই ফলো করুন অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিন। রিংকেলস পড়লে সেটা কিন্তু পুরোপুরি দূর করা সম্ভব হয় না, কিন্তু আগের থেকে যত্ন নিলে এই এজিং সাইন পড়া কমানো পসিবল।
এজিং সাইনস কমাতে খাবারের কোনো ভূমিকা নেই
অনেকের ধারণা আর্লি এজিং সাইনে খাবার কোনো ভূমিকা রাখে না। আর আমরা হেলদি খাবারের চেয়ে টেস্টি খাবার খেতে পছন্দ করি। বার্গার, পিজ্জা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী। কিন্তু জানেন কি, এই খাবারগুলো শুধু যে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে তা নয়, এর কারণে স্কিনে বয়সের ছাপও তাড়াতাড়ি পড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে যেসব খাবারে হাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স আছে (যেমন পাস্তা, হোয়াইট ব্রেড, আলু ইত্যাদি) এটি রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যা শরীরে কোলাজন এবং ইলাসটিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, নিউ সেলস টার্নওভারেও বাঁধা সৃষ্টি করে। আর এই কারণে এজিং সাইন খুব দ্রুত ভিজিবল হয়।
অ্যান্টি এজিং উপাদান মানেই শুধু রেটিনল
অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ার রুটিনে রেটিনল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একমাত্র এই উপাদানটিই যে অ্যান্টি এজিং এর কাজ করে তা না। রেটিনল কিন্তু সব স্কিন টাইপে স্যুট করে না, এটা অনেকেই বুঝতে পারে না। ড্রাই, সেনসিটিভ স্কিনে রেটিনল ইরিটেশনের কারণ হতে পারে। যদি আপনার স্কিন ব্যারিয়ার হেলদি না হয় অথবা ত্বকের বাইরের লেয়ার পাতলা হয়, তাহলে স্কিনে রেটিনল স্যুট করবে না, বরং ইরিটেশন হবে। এক্ষেত্রে অন্য অ্যান্টি এজিং ইনগ্রেডিয়েন্টস বেছে নিতে পারেন, যেমন- Bakuchiol, Peptides ইত্যাদি।
সানস্ক্রিনের সাথে ত্বকের বলিরেখার কোনো সম্পর্ক নেই
এটি ভুল ধারণা! সানস্ক্রিন নিয়মিত ব্যবহার করে আর্লি এজিং সাইন রোধ করা সম্ভব। কেননা UVA (Ultraviolet A) আমাদের ত্বকের ডার্মিস লেয়ারে যেয়ে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করতে পারে। প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস যেমন- বলিরেখা, ফাইন লাইনস, শুষ্কতা এই ধরনের সমস্যার জন্য এই UVA রশ্মি দায়ী। এটি ত্বকের উপরিভাগ অর্থাৎ এপিডার্মিস লেয়ারের ক্ষতিসাধন করে। রোদ হোক কিংবা মেঘলা দিন, দিনের বেলা অব্যশই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
অ্যান্টি এজিং প্রোডাক্ট রিংকেল ভ্যানিস করে দিবে
অ্যান্টি এজিং ইনগ্রেডিয়েন্ট (যেমন রেটিনল) বলিরেখা হালকা করতে সাহায্য করবে, কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়াবে। কিন্তু নিমিষে গায়েব করে দিতে পারবে না। রাতারাতি কোনো প্রোডাক্টই আপনাকে ইয়াংগার লুকিং স্কিন দিতে পারে না। হেলদি লাইফস্টাইল এর সাথে সাথে প্রোপারলি স্কিনকেয়ার রুটিন মেনটেইন করলে একটা সময়ে আপনি পজেটিভ চেঞ্জ দেখতে পাবেন।
দামী প্রোডাক্ট বেশি কাজ করে
অনেকের ধারণা বেশি দামী প্রোডাক্ট বেশি ভালো কাজ করবে। প্রোডাক্টটি ভালোভাবে স্যুট করবে কিনা, তা একেকজনের স্কিনের উপর ডিপেন্ড করে। আমাদের সবারই স্কিন বায়োলজি আলাদা। সঠিক ইনগ্রেডিয়েন্ট ও কনসেন্ট্রেশনের প্রোডাক্ট চুজ করাটাই সবচেয়ে জরুরি, দাম নয়। সেই স্পেসিফিক উপাদানটি আপনার স্কিন টাইপের জন্য উপযুক্ত কিনা, সেটাও বড় কনসার্ন। কোন স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড আপনি চুজ করবেন, সেটা একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু শুধুমাত্র বিদেশি আর দামী হলেই সেই প্রোডাক্টটি ভালো, এমন ধারণা ঠিক নয়।
রাতের স্কিনকেয়ার বেশি জরুরি, সকালের স্কিনকেয়ার দরকার নেই
মর্নিং স্কিনকেয়ারকে অনেকেই ইগনোর করেন। কিন্তু দিনের শুরুতে আপনার স্কিনকে প্রোপারলি প্রিপেয়ার করে নেওয়া দরকার। যেমন ভিটামিন সি দিনের বেলা ব্যবহার করা ভালো। যেহেতু এটি একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, তাই সানস্ক্রিনের সাথে এটি বেশ ভালো রেজাল্ট দেয়। সকালে স্কিনের প্রয়োজন হয় সূর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষা, আর রাতে স্কিন প্রোপারলি ক্লিন ও নারিশ করা। তাই একবেলা স্কিনকেয়ার করবেন আর একবেলা করবেন না, এই ভাবানাটা ঠিক নয়। দিন কিংবা রাত, দুইবেলাতে হোক প্রোপার স্কিন কেয়ার।
এজিং সাইনস কমিয়ে আনতে কিছু টিপস
আমেরিকান একাডেমি অফ ডার্মাটোলজিস্ট এসোসিয়েশন, প্রি ম্যাচিউর এজিং থেকে রক্ষা পাওয়ার কিছু টিপস শেয়ার করছে। জেনে নেওয়া যাক সেগুলো,
- সূর্যের হাত থেকে স্কিনকে সুরক্ষিত রাখতে সঠিক এসপিএফ বেছে নেওয়া
- স্মোকিং ত্যাগ করা
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- কথা বলার সময় মুখে বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গি করার অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করা
- ত্বকের ধরন বুঝে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা
- অ্যাডেড সুগার, অতিরিক্ত কার্ব, জাংক ফুড ইনটেক না করা
বয়সের ছাপ দূর করতে এই ভুল ধারণাগুলো ফলো করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা এতে করে স্কিনের ক্ষতিটাই বেশি হবে। এর চেয়ে নিজের স্কিনের কনসার্ন বুঝে যত্ন নেওয়া শুরু করুন। এতেই আপনার স্কিন থাকবে হেলদি। অথেনটিক স্কিন ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস পারচেজ করার জন্য সাজগোজ হতে পারে আপনার জন্য বেস্ট অপশন। তাই ভিজিট করুন সাজগোজের ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ফিজিক্যাল স্টোরে। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ণ মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক