বাসার সবচেয়ে ছোট সদস্যাটির হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট! সারাঘর যে চঞ্চলতায় মুখর করে রাখে, তাকে কষ্ট পেতে দেখে মা যেন আরও বেশি ছটফট করছে। এই সময় নেবুলাইজারই যেন ভরসা। অথবা যাদের পরিবারে অ্যাজমা বা ফুসফুসের কোনো অসুখে ভোগা রোগী আছে, তাদের জন্য নেবুলাইজার খুব পরিচিত একটি নাম। এক পরিসংখ্যান বলছে, “প্রতিবছর আবহাওয়াজনিত কারণে শিশুদের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ এবং বড়দের ৪০ শতাংশ হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের তীব্রতা বাড়ে।” ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আশরাফুল ইসলামের মতে, “বাংলাদেশের আবহাওয়া ও ধুলোবালির কারণে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত অসুখে আক্রান্তের হার বেশি।” শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তির জন্য এটা বেশ কষ্টদায়ক। শ্বাসকষ্টজনিত রোগে নেবুলাইজারের মাধ্যমে ওষুধ ব্যবহার নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা। কিন্তু নেবুলাইজারের ব্যবহার কী, কিভাবে যত্ন নিতে হয় বা কোন সতর্কতাগুলো অবশ্যই মেনে চলা উচিত। কিন্তু এগুলো সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? অনেকেরই কিন্তু এই ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা নেই। চলুন তাহলে জেনে নেই নেবুলাইজারের সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি, ভালো নেবুলাইজার চেনার উপায় ও যত্ন সম্পর্কে!
নেবুলাইজার কী?
নেবুলাইজার কোনো ওষুধ নয়, এটি ওষুধ প্রয়োগ করার একটি মেশিন। খাওয়ার বদলে শুধু সরাসরি ওষুধের মিশ্রণকে বাষ্পাকারে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ব্যবহার করতে হয়। এই যন্ত্রটি দিয়ে লিকুইড মেডিসিনকে সংকুচিত করে বায়ু বা অক্সিজেন দিয়ে স্প্রে বা অ্যারোসলে রূপান্তরিত করা হয়। তাই এই বাষ্পটি খুব সহজে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসের শ্বাসনালিতে ঢুকে শ্বাসকষ্ট দূর করে। আর নেবুলাইজার দিয়ে শ্বাসকষ্ট দূর করার চিকিৎসাটি নেবুলাইজ নামে পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের নেবুলাইজার আছে। কিন্তু আজকাল আল্ট্রাসনিক মেশিন মেকানিজম বেশি ব্যবহৃত হয়। কারণ এটা ব্যবহার করা সহজ ও সুবিধাজনক।
নেবুলাইজারের অংশসমূহ
নেবুলাইজারে কয়েকটি অংশ থাকে। কমপ্রেসরের মাধ্যমে প্রেশার দিয়ে স্প্রে বের করা হয়। এতে টিউবের মাধ্যমে কমপ্রেসরকে নেবুলাইজারের ওষুধ চেম্বারের সঙ্গে যুক্ত করে। আর নেবুলাইজারে ওষুধ চেম্বারের তরল ওষুধটি অ্যারোসোল বা স্প্রেতে রূপান্তরিত হয় বা দ্রুত শ্বাসযোগ্য করে তোলে। মাউথপিচ, মেডিসিন ক্যাপ, মাস্ক এগুলো তো থাকছেই। আধুনিক প্রযুক্তির নেবুলাইজারে স্পীড রেগ্যুলেট করার জন্য বাটন থাকে।
নেবুলাইজারের কাজ কী?
সাধারণত খুব ছোট শিশু এবং বৃদ্ধ যারা সরাসরি ইনহেলার টানতে পারে না বা কোনো কারণে মেডিসিন নিতে পারে না, তাদের গ্যাসের মাধ্যমে নেবুলাইজার দেওয়া হয়। নেবুলাইজার কী কী কাজ করে জেনে নেই তবে চলুন!
১) রেসপাইরেটরি ইনফ্লামেশন হ্রাস করে।
২) ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী পরিমিত ডোজের ওষুধ গ্রহণ করা যায়।
৩) ব্রঙ্কিয়ালে অস্বাভাবিক স্ফীতি কমায়।
৪) শ্বাসনালীর সংক্রমণকে দ্রুত সারিয়ে তোলে।
সুতরাং বলা যায়, অ্যাজমা বা ফুসফুসের যেকোনো সমস্যায় নেবুলাইজারের কোনো বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে ইনহেলারের চাইতে সহজে এবং আরও ভালোভাবে ওষুধ প্রয়োগ করা সম্ভব।
ভালো নেবুলাইজার চেনার উপায়
বাজারেতো কতরকম নেবুলাইজার পাওয়া যায়। কোনটা ভালো হবে এটা নিয়ে আমাদের অনেকেরই কনফ্যুশন থাকে। নেবুলাইজার কেনার সময় কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত, চলুন জেনে নেই।
১) রিচার্জেবল এবং আকারে ছোট নেবুলাইজার সুবিধাজনক। তাহলে এটি যেকোনো সময়ে, যেকোনো জায়গায় অতি সহজেই বহন ও ব্যবহার করা যায়।
২) নেবুলাইজারের মেকানিজম, মেডিসিন নেবুলাইজেশনের রেট, পার্টিকেল সাইজ এগুলো চেক করে নেওয়াটা ভীষণ জরুরি। মেডিসিন ফুসফুসের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছাবে কিনা, নেবুলাইজার কতটুকু কাজ করবে এগুলো এই প্রোপার্টিজগুলোর উপর অনেকটাই নির্ভর করে।
৩) শব্দ কম হয় এবং ওষুধের অপচয় হয় না এমন নেবুলাইজার ব্যবহার করা ভালো।
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
অবশ্যই ব্যবহারের সময় নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে, নেবুলাইজারে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশসমূহ সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সঠিকভাবে সংযোজিত কিনা। ব্যবহারের আগে মাউথপিস ও মাস্ক গরম পানিতে ৩০ সেকেন্ড রেখে ধুয়ে নিন। এরপর বাতাসে এগুলো শুকিয়ে নিতে হবে। ওষুধ প্রয়োগ করার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে যে এটি যেন পরিপূর্ণভাবে ড্রাই ও ক্লিন থাকে। নেবুলাইজ করার সময় রোগীকে আরামদায়কভাবে শোয়া বা আধ-শোয়া অবস্থায় রাখতে হবে। তবে বসেও করা যায়।
ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নির্ধারিত ডোজ মেডিসিন কাপে দিয়ে সেফটি ক্যাপের সাহায্যে ঢেকে দিতে হবে। আধুনিক নেবুলাইজারে রেগ্যুলেটর থাকায় স্পীড কমানো বা বাড়ানো যায়। আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবারও সিস্টেম আছে। মাউথপিস বা মাস্ক নির্ধারিত জায়গায় লাগিয়ে ব্যবহার করতে হয়। ধীর গতিতে গভীরভাবে মাস্কের ভেতর থেকে শ্বাস নিতে হবে যা ছেড়ে দেয়ার আগে ২-৩সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। ৩-৬মিলি তরল ৫/১০মিনিটে নেবুলাইজ করা হয়। ওষুধের তারল্য, পরিমাণ, নেবুলাইজারের মোড এগুলোর উপর নির্ভর করে যে কত সময় লাগতে পারে।
নেবুলাইজার মেশিনের যত্ন
নেবুলাইজ করার পর এটি যে ভালো করে পরিষ্কার করে রাখতে হয়, অনেকে সেটি মনে রাখেন না বা জানেন না। কিন্তু এ ব্যপারে অবহেলা করা যাবে না। যারা নেবুলাইজার মেশিন ব্যবহার করেন, এটি ভালো রাখার জন্য কিছু টিপস ফলো করতে পারেন। যেমন-
১) মেডিসিন নেবুলাইজ করার পর ৩-৪এমএল গরম বিশুদ্ধ পানি দিয়ে চালু করে রাখুন। সম্পূর্ণ ড্রাই হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
২) রিচার্জেবল হলে মেশিনটিকে ওভার চার্জ করবেন না।
৩) আয়রন বা আর্সেনিক আছে এমন টিউবঅয়েলের পানি ও পুকুরের দূষিত পানি কখনোই ব্যবহার করা যাবে না।
কী কী সতর্কতা মেনে চলা উচিত?
নেবুলাইজ করার পর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার ইনস্ট্যান্ট সমাধান হয়। দুইবারের বেশি ব্যবহারে শ্বাসকষ্ট না কমলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কোন পেশেন্টের জন্য কতবার ইউজ করতে হবে, ওষুধের ডোজ কেমন হবে এগুলো ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই করতে হবে। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে মাউথপিস ব্যবহার করা নিরাপদ। নেবুলাইজার ব্যবহারের আগে ও পরে সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে এবং ইকুইপমেন্টগুলোও গরম পানিতে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
ব্যস, কিছু সতর্কতা মেনে চললে ও সঠিক ব্যবহারবিধি জানা থাকলে নেবুলাইজার আপনার দুঃসময়ের সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে। পোর্টেবল সাইজ, রিচার্জেবল, সহজে ব্যবহার করা যায় এমন একটি নেবুলাইজারের সন্ধান অনেকেই খোঁজেন। আপনার দরকারি এই পণ্যটি নিচের এই লিঙ্ক থেকে নিতে পারেন। সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন!
পেইজ লিংক- https://www.facebook.com/medicatechltd/
ছবি- সংগৃহীত: শাটারস্টক + সাজগোজ