আচ্ছা! একটি কমপ্লিট মেকআপ লুকের জন্য কী কী প্রোডাক্ট লাগে, বলুন তো? বেইজের জন্যে প্রয়োজন হয়- ফাউন্ডেশন, ফেইস পাউডার, কনসিলার, কন্ট্যুরিং ক্রিম! এরপরই আসে হাইলাইটার, ব্রোঞ্জার এবং ব্লাশ এর জাদু। এই স্টেপগুলো যত সুন্দর করে করা যাবে, মেকআপ লুকটিও দেখতে তত বেশি আকর্ষণীয় লাগবে। আজকে আমি শেয়ার করবো, আমার পছন্দের একটি ফেইস প্যালেট এর রিভিউ। এই ফেইস প্যালেটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো একটি ফেইস প্যালেটেই সবকিছু অর্থাৎ হাইলাইটার, ব্রোঞ্জার এবং ব্লাশ পেয়ে যাবেন একসাথেই, তাও আবার বাজেটের মধ্যেই। আর প্যালেটটি হচ্ছে Nirvana Color Face Palette – Windy Monsoon (নিরভানা কালার ফেইস প্যালেট – উইন্ডি মনসুন)। চলুন তাহলে জেনে নেই কেন এই প্যালেটটি আমার এত পছন্দের!
নিরভানা ফেইস প্যালেটটি দেখতে কেমন?
নিরভানা ফেইস প্যালেটটি প্রথম হাতে নিয়েই আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। এলিগেন্ট প্যাকেজিং, আর হালকা ওয়েট হওয়াতে ব্যাগে ক্যারি করা যায় নিশ্চিন্তে।
কী কী আছে নিরভানা ফেইস প্যালেটে?
এই ফেইস প্যালেটে মোট ৬টি শেইড রয়েছে। প্যালেটটির শেইডগুলো দুটি সেকশন এ ভাগ করা। এর মধ্যে দুটি হাইলাইটার, দুটি ব্রোঞ্জার এবং দুটি ব্লাশ এর শেইড দেয়া আছে। দুটি রো এবং তিনটি কলাম ধরে প্যালেটের শেইডগুলো সাজানো। শেইডগুলো দেখেই বোঝা যায় কোনটার কী কাজ।
প্রথম সেকশনে রয়েছে হাইলাইটার
দুটি হাইলাইটার রয়েছে নিরভানা ফেইস প্যালেটে। শেইড দুটির নাম- ক্যান্ডি গ্লো (Candy Glow), গোল্ডেন কয়েনস (Golden Coins) ।
১) ক্যান্ডি গ্লো (Candy Glow) হাইলাইটার শেইডটি কিছুটা লাইট কালার। যারা হাইলাইটার হিসেবে লাইট কালার প্রিফার করেন তাদের জন্যে এটি বেস্ট একটি শেইড। ক্যান্ডি গ্লো রেগুলার ইউজের জন্যে পারফেক্ট। পাশাপাশি মানিয়ে যাবে যেকোনো পার্টি লুকের সাথে। তবে আমার মনে হয়েছে এই হাইলাইটার শেইডটি কুল ও নিউট্রাল আন্ডারটোনের জন্য পারফেক্ট।
২) গোল্ডেন কয়েনস (Golden Coins) এই শেইডটি গোল্ডেন শিমারি লুক দিবে। আমার মোস্ট ফেবারিট একটি হাইলাইটার শেইড! গোল্ডেন কয়েনস ব্রাইডাল কিংবা পার্টি মেকআপের সাথে দারুণ মানিয়ে যাবে। এশিয়ান স্কিনটোনকে এই হাইলাইটার শেইডটি বেশ কমপ্লিমেন্ট করে। যারা ডাস্কি স্কিনটোনের আছেন, তাদের জন্য পারফেক্ট অপশন এটি।
তবে যে কথাটি না বললেই নয়! দুটি শেইডের পিগমেন্টই খুবই ভালো। একবার নিলেই সুন্দর বসে যায় স্কিনে।
দ্বিতীয় সেকশনে রয়েছে ম্যাট ব্রোঞ্জার
এতে আছে ম্যাট ব্রোঞ্জার এর দুটি শেইডস। একটি শেইডের নাম পিস্টাশিও (Pistachio) এবং আরেকটির নাম চকো চকো (Choco-choco)।
১) পিস্টাশিও (Pistachio) শেইডটি চকো চকো (Choco-choco) থেকে একটু লাইট, তবে খুবই পিগমেন্টেড। যারা ফেয়ার বা ফর্সা এবং মিডিয়াম স্কিনটোনের আছেন, তাদেরকে দারুণ কমপ্লিমেন্ট করবে এই ব্রোঞ্জার শেইডটি। খুব হার্শ ব্রোঞ্জিং যারা প্রিফার করেন না, তাদেরকেও এটি রেকমেন্ড করতে চাই। রেগুলার বা ক্যাজুয়াল লুকের জন্যে এটি পারফেক্ট একটি শেইড।
২) চকো চকো (Choco-choco) শেইডটি আমার কাছে খুবই চমৎকার লেগেছে। খুব বেশি ডার্কও না, আবার লাইটও না। আমার আন্ডারটোনের সাথে এটি পারফেক্টলি মানিয়ে গেছে। যাদের ওয়ার্ম আন্ডারটোন, তারা এটি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।
সবচেয়ে বেশি আমার ভালো লেগেছে এই শেইডগুলোর ম্যাট ফিনিশিং। জ-লাইনের পাশাপাশি আপনি আপনার চিকবোন, নাক, থুতনি এবং কপালেও ইউজ করতে পারবেন। খুবই ন্যাচারাল ফিনিশ দেয়, যার কারণে ফেইস ফিচার এনহ্যান্স হয়।
তৃতীয় সেকশনে রয়েছে ব্লাশ
প্যালেটের তৃতীয় সেকশনে রয়েছে ব্লাশের দুটি শেইডস। শেইডের নামগুলো আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লেগেছে। একটির নাম বাবলগাম (Bubblegum), আরেকটির নাম পিচ প্লিজ (Peach Please)।
১) বাবলগাম (Bubblegum) শেইডটির কালার অনেকটাই বাবলগাম চুইংগাম এর মত দেখতে। তাহলে বুঝতেই পারছেন এটি খুবই মিষ্টি রোজি পিংক কালার টাইপের শেইড। পিংকিশ ব্লাশ এখন বেশ ট্রেন্ডি। রেগুলার ব্যবহারের জন্যে বা কিংবা যেকোনো পার্টিতে খুব সহজেই মানিয়ে যাবে।
২) পিচ প্লিজ (Peach Please) শেইড অনেকটা অরেঞ্জিশ টোন দিবে। ফেয়ার টু মিডিয়াম স্কিনটোনকে কমপ্লিমেন্ট করে, তাই কনফিডেন্টের সাথেই ক্যারি করা যায়।
দুটি শেইডের পিগমেন্টই আমার কাছে দারুণ লেগেছে, আর এত স্মুথ টেক্সচার! তবে পিচ প্লিজ শেইডটি থেকে বাবলগাম শেইডটি আমার স্কিনটোনের সাথে বেশি মানিয়ে গেছে। আমি রেগুলার অফিস লুকেও এই ব্লাশটি ব্যবহার করি।
যা যা আমার ভালো লেগেছে খুবই
- হাতের কাছে ব্লেন্ডার বা ব্রাশ না থাকলেও হাতের আঙ্গুলের সাহায্যেই খুব সহজেই এটি অ্যাপ্লাই আর ব্লেন্ড করা যায়
- বেশ ভালো পিগমেন্টেড
- রেগুলার ব্যবহার করার জন্যে বেস্ট একটি অপশন
- একদমই ফল আউট করে না
- একের ভেতর অনেক কিছু একসাথে থাকায় আলাদা আলাদা করে প্রোডাক্ট ক্যারি করতে হচ্ছে না
- সাথে একটি আয়না দেয়া আছে। তাই আলাদা করে আমার কোনো আয়নাও ক্যারি করতে হয় না
- ম্যাট, শিমারি সব ধরনের শেইডস আছে
- দিনে আর রাতে ব্যবহারের জন্য হালকা-গাঢ় সব শেইডই পেয়ে যাচ্ছি একসাথেই
- যেকোনো লুকের সাথেই মানিয়ে যায় প্যালেটের শেইডগুলো
সবশেষে যেটা না বললেই নয়! এত রিজেনেবল এমন একটি প্যালেট পেয়েছি যেখানে একই সাথে যেমন রয়েছে হাইলাইটার, ব্রোঞ্জার এবং ব্লাশ, তেমনি প্রোডাক্টের কোয়ালিটিও খুবই ভালো। যারা মেকআপের বিগেইনার, তারাও এটি পারচেজ করতে পারেন। তাহলে আলাদা আলাদা করে আর অন্য প্রোডাক্ট কিনতে হচ্ছে না!
কোথায় পাবেন?
আমি সাজগোজ থেকে অনলাইনে অ্যাপ এর মাধ্যমে অর্ডার করেছিলাম। এছাড়াও সাজগোজের ওয়েবসাইট থেকে প্রোডাক্টটি কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম এ পেয়ে যাবেন। যারা নিজেরা দেখে শুনে কিনতে চান, তারা সাজগোজের যেকোনো আউটলেট থেকে কিনে ফেলতে পারেন।
আচ্ছা! শুধু কি মেকআপের জন্যে এক্সপার্ট হ্যান্ড হলেই যথেষ্ট? মোটেও নয়! একটি পারফেক্ট মেকআপ লুকের জন্যে যেমন মেকআপ করা জানতে হয়, তেমনি মেকআপের জন্যে সিলেক্টেড প্রোডাক্টসগুলোও মানসম্মত হওয়াটা জরুরী। আমার ব্যবহার করা নিরভানা ফেইস প্যালেটটি একই সাথে আমার যেমন মানসম্মত লেগেছে, তেমনি ব্যবহার করেও আমি খুব স্যাটিসফাইড, বিশেষ করে বিয়ে-শাদী আর দাওয়াতের সিজনে, যখন অনেক সময় দূরেও দাওয়াত অ্যাটেন্ড করতে যেতে হয়, তখন অনেকগুলো প্যালেট না নিয়ে আমি এই একটি প্যালেট নিয়েই সহজেই কাজ চালাতে পারি। এই প্যালেটটি শেষ হলে আমি অবশ্যই আরেকটি কিনবো। আশা করছি, আজকের রিভিউটি আপনাদের জন্য হেল্পফুল ছিলো।
ছবিঃ সাজগোজ