আজকাল মেয়েদের অনেকেরই ডিম্বাশয়ে এক ধরনের সিস্ট হয়, যে সিস্ট সম্পর্কে আমাদের সকলের ধারণা অতি সীমিত। সেটি হচ্ছে চকলেট সিস্ট। চকলেট সিস্ট হচ্ছে এক ধরনের এন্ডোমেট্রিয়াল সিস্ট (Endometrial cyst)। এন্ডোমেট্রিওসিস হচ্ছে জরায়ু ব্যতীত অন্য কোথাও এন্ডোমেট্রিয়ামের উপস্থিতি। যখন ডিম্বাশয় আক্রান্ত হয় তখন একে ডিম্বাশয়ের চকলেট সিস্ট বলে। এন্ডোমেট্রিওসিস এর সবচেয়ে কমন জায়গা হচ্ছে এই ডিম্বাশয়। এটি সাধারণত হলে দুই দিকেই হয় অর্থাৎ দুই পাশের ডিম্বাশয় আক্রান্ত হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ডিম্বাশয়ের চকলেট সিস্ট হওয়ার লক্ষণ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পদ্ধতি ও জটিলতা নিয়ে বিস্তারিত।
ডিম্বাশয়ের চকলেট সিস্ট
সাধারণভাবে জরায়ু ব্যতীত এন্ডোমেট্রিয়াম অন্যত্র থাকার কথা নয়। কিন্তু যখন অল্প কিছু এন্ডোমেট্রিয়াল কলা (জরায়ুর সবচেয়ে ভেতরের দিকের কলা) ডিম্বাশয়ের ভেতরে তৈরি হয়, রক্তপাত করে ও বেড়ে উঠে তখন এই রোগ হয়ে থাকে। মাসের পর মাস এভাবে রক্ত ভাঙতে থাকলে এটি এক সময় বাদামি আকার ধারণ করে। যখন এটি ফেটে যায় তখন ভেতরের সব কিছু আশেপাশের অঙ্গ সমুহের (জরায়ু, মুত্র থলি, অন্ত্র) উপর ছিটকে পড়ে।
চকলেট সিস্টের লক্ষণসমুহ
১. কোন লক্ষণ নাও থাকতে পারে (২৫%)।
২. তলপেটে ব্যথা (৫০%) (মাসিকের কিছুদিন আগে থেকে কিন্তু মাসিকের সময়ে বেশি)।
৩. মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত ও বার বার মাসিক হওয়া (৬০%)।
৪. দীর্ঘদিন তলপেটে ব্যথা থাকা।
৫. উদরে ব্যথা।
৬. সন্তান না হওয়া (৪০-৬০%)।
তলপেটের পরীক্ষা করলে পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে। পাউচ অফ ডগ্লাসে (Pouch of Douglas) ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এডনেক্সাতে (Ednaxa) একটি অথবা দুটি বিভিন্ন সাইজের সিস্ট বোঝা যায় অনেক সময়।
অন্যান্যঃ প্রস্রাব ঘন ঘন হওয়া, প্রস্রাবে রক্ত আসা, জ্বালা পোড়া হওয়া,পায়খানায় কষ্ট হওয়া ও রক্ত যাওয়া।
কীভাবে রোগ নির্ণয় করবেন
১. তলপেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম (ultrasonogram)
২. ট্রান্স ভিশন সনোগ্রাফি (Trans Vision Sonography)।
৩. সেরাম মার্কার সি এ- ১২৫ (Serum Marker CA- 125)।
৪. ল্যাপারোটমি (laparotomy)।
৫. বায়োপসি (Biopsy)।
চকলেট সিস্টের চিকিৎসা
এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসা করা হয় ওষুধের মাধ্যমে কিন্তু কাজ না হলে অপারেশন করে কেটে ফেলা হয়। যাদের কোন লক্ষণ থাকে না তাদের ক্ষেত্রে কিছু করার দরকার নেই। একজন কম বয়সী বিবাহিত মেয়ের বিয়ের পরে বাচ্চা ধারণ করলে এমনিতেই এটি সেরে যায়। ব্যথা থাকলে রোগীর ধরণ ভেদে মেফেনামিক এসিড (Mefenamic acid) বা ইবুপ্রফেন (ibuprofen) খেতে দেন অধিকাংশ চিকিৎসকেরা।
হরমোনের মাধ্যমে চিকিৎসা
১. খাবার জন্ম বিরতিকরণ পিল।
২. শুধু প্রোজেস্টেরন (Progesterone)।
৩. গোনাডোট্রপিন রিলিজিং হরমোন (Gonadotropin-releasing hormone)।
৩. ডানাজল।
অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা
১. সিস্টটি যতটুকু সম্ভব কেটে ফেলা হয়।
২. যদি পরিবার সম্পূর্ণ হয়ে থাকে এবং বয়স চল্লিশের বেশি হয় বা যদি এন্ডোমেট্রিওসিস পেলভিসের (Endometriosis pelvis) সর্বত্র ছড়িয়ে একটা আরেকটার সাথে লেগে থাকে যা ছোটানো কষ্টকর সেক্ষেত্রে জরায়ু সম্পূর্ণরূপে দুই দিকের টিউব ও ডিম্বাশয়সহ কেটে ফেলা হয়।
কী কী জটিলটা দেখা দিতে পারে
১. এন্ডোক্রাইন প্যাথি (Endocrine Pathway)।
২. সিস্টটি ফেটে যেতে পারে।
৩. চকলেট সিস্ট এ ইনফেকশন হয়ে থাকতে পারে।
৪. অন্ত্রে অবস্ট্রাকশন (Intestinal obstruction) হতে পারে।
৫. খুব বিরল হলেও ক্যান্সার হতে পারে।
সাধারণত এই রোগটি ৩০-৪৫ বছর বয়সের নারীদের হয়ে থাকে। এদের অধিকাংশেরাই একটি সন্তানও হয় নি এমনটাই দেখা যায় অথবা সিস্টের লক্ষণ দেখা দেওয়ার অনেক আগে একটি বা দুটি বাচ্চা হয়ে থাকতে পারে। এই রোগটি বংশগত হতে পারে।
নারীদের নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হলে নিজের শরীর সম্পর্কেও সঠিক ধারণা থাকতে হবে। সুতরাং, নিজেকে জানুন ও সুস্থ থাকুন।
ছবি – সংগৃহীত: ডিপলি.কম, গ্রাফিখাবার.নেট, মাহোসোট.কম, আলেক্ট.কম