বাংলার সবচেয়ে রঙিন উৎসব আর দিনকয়েকের দূরত্বে। লাল-সাদা কাপড়, ফুলের বাহার, চুড়ি আর মালা, দিনভর পরিকল্পনা! বাংলা নববর্ষ এসে পড়লো বলে, আর মাত্র কয়েকটা দিন। উৎসব যদিও শুরু হয়ে গেছে এর মধ্যেই। এই উৎসবের মৌসুমটা আপনি কেমন কাটাবেন, ভাবনা শুরু হয়েছে কি?
এসেছে মেলার পালা
চৈত্রের শেষদিকে মেলার ধুম লেগে যায়। বিভিন্ন বুটিক শপ বা গহনার দোকানিরা নিজেদের জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন। রেস্তোরাঁ বা পার্টি সেন্টার কিংবা মাঠেও আয়োজন করা হয় এই মেলাগুলো। যাদের কাজ অনলাইন ভিত্তিক, বিভিন্ন জিনিস আনিয়ে যারা অনলাইনে বিক্রি করছেন, আবার নিজেদের নকশায় কাপড় আর গহনা বানিয়ে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছান যারা, তাদের পণ্য ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরতে এরকম মেলা হয়ে থাকে। এই সময়টায় এমন অনেক মেলা বা ইভেন্ট চলছে আশেপাশে, বৈশাখের কেনাকাটা থেকে থাকলে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন মেলাতে। কেনাকাটার খানিক ভিন্ন আমেজও পাবেন তাতে। তাছাড়া অনেক পেজেই বেশ নান্দনিক নকশার কাপড় আর গহনা পাওয়া যায়, যেগুলো বাজারে চোখে পড়বে না সচরাচর। আর অনলাইনে অর্ডার দিয়ে কেনাও অনেকের পছন্দ নয়। তারা অবশ্যই মেলায় ঘুরে আসুন, যেন দেখে আর যাচাই করে পছন্দের জিনিসটা কিনতে পারেন।
সাজে ভিন্নতা
এই কথা বলতে গেলে সেই থোর-বড়ি-খাড়া আর খাড়া-বড়ি-থোর হয়ে যায়! আমি বরাবরই বলে থাকি, ভিন্নতা মানে আপনার আগেকার রূপ থেকে অন্যকিছু হলেই হয়। সবার মাঝে খুব ভিন্ন আসলে কি হওয়া সম্ভব? এই যেমন আপনি হয়তো বৈশাখের লাল আর সাদাকে কাঁচকলা দেখিয়ে নীল পরেছেন সেদিন, পরিচিত এক আপুও যে নীলচে বেগুনি শাড়িতে সেজেছেন, আপনাদের দেখাও হলো, ছবিও তোলা হলো ঢের, সেই ছবিতে নিজেকে দেখে আলাদা আর লাগবে কই?
তাই ভিন্নতার চিন্তাটাকে নিজের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখা ভালো। আমি সচরাচর কেমন রঙ পরি, কোন ধাঁচের গয়না পরি, তার থেকে আলাদা কী হতে পারে, কপালে টিপ আঁকবো নাকি কেনা টিপ পরে নেবো, সবসময় তো চুল খোলাই থাকে, এবার কি খোঁপা করবো; অন্যরকম সাজের ভাবনাও এমন ‘আমাকে’ ঘিরেই হোক। মানে আপনি কেবল নিজের কথা ভাবুন, সেটাই কাজের কথা!
গোটা দিনের পরিকল্পনা
বৈশাখের প্রথম দিনটা কীভাবে কাটাবেন, আপনার উৎসব কি সাজগোজ, খাওয়া আর ছবি তোলাতেই পার হয়ে যাবে নাকি মনমত ঘুরতেও চান, বর্ষবরণের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে চান, এইসব জিনিস আগেভাগেই ঠিক করে নিন। সেদিন এত ভীড় আর গরম থাকে বাইরে, হুটহাট সিদ্ধান্তে কোনোদিকে যাওয়াটা বোকামিও হতে পারে। তাই কোনো অনুষ্ঠানে যাবেন নাকি সেজেগুজে বের হয়ে কয়েকটা ছবি তুললেই খুশি মনে ঘরে ফেরা যাবে, সেই ভাবনা আগেই সেরে রাখুন। এই যেমন রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অংশ হতে চাইলে ভোরবেলার পাখি হতে হয়, সেক্ষেত্রে তৈরি হবার প্রস্তুতি নিতে হবে ভোর হবার আগেই।
অতিথি আপ্যায়ন
ছুটির বাহানায় আর পহেলা বৈশাখের উৎসব আমেজে অনেকে বাসায়ই দাওয়াতপর্ব আয়োজন করে ফেলেন। বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী বা আত্মীয়-কুটুম, তাদের সাথে ভোজনে আর হাসি-গল্পেই ভালো কাটে সময়টা। শখ করে গিন্নিরা মাটির বাসন-কোসনে খাবারের আয়োজন করেন সেদিন। তেমন কোনো শখ হয়ে থাকে যদি, তবে জিনিসপত্র কিনে রাখুন যত আগে সম্ভব। কারণ পহেলা বৈশাখের ঠিক আগের সময়টা মাটির তৈজসপত্র দামে আকাশের তারা হয়ে যেতে পারে!
দেশজ মোটিফের ঘর সাজানোর অনুষঙ্গাদিও আগেভাগেই কিনে ফেলুন কেনার থাকলে। আর অবশ্যই, বৈশাখী দাওয়াতে পাতে ভর্তা-ভাত তুলে দিন অতিথিকে। ইলিশ না হোক, ঝালে-ঝোলে শোল বা পাবদা, কিংবা চিংড়ি ভাজা, ঘন ডাল আর কাঁচা আমের শরবতে আপনার ঘরের দাওয়াত-পর্ব জমে উঠুক সেদিন।
লিখেছেন- মুমতাহীনা মাহবুব